গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৫

0
2530

গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৫
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

– শেষ পর্যন্ত পতিতা?
রাজিবের মুখে এমন কথা শুনে, প্রাচী মাথা নিচু করে বসে রইল। প্রাচী কাছে প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই এখানে তো ভাগ্য টেনে এনেছে। প্রাচীর নিরবতা দেখে রাজিব বলে,
– এখানে কি করে আসলে?
– যেদিন কোর্টে দেখা হয়ে ছিল, সেদিন আমার ডিভোর্স হয়ে গেছিল। তারপরে এই শহরে এসেছিলাম একমুটো ছাই আগলে ধরে বাঁচতে কিন্তু ভাগ্য এখানে বিক্রি করে দিল।

রাজিব প্রাচীর কথা শুনে বিছানায় প্রাচীর কাছে গিয়ে বসলো আর বলল,
– চলো শুরু করি, পুরাতন সেই জিনিস আবার কখনো ফিরে পাবো ভাবতেই পারছিনা!
– এই তোমার আসল রুপ, তুমি না আমাকে ভালোবাসতে!
– সারারাতের জন্য টাকা দিয়ে নিছি, টাকা উসল না করেই ছেড়ে দিব!

প্রাচী অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে রাজিবের দিকে। রাজিব কোন দিক না ভেবেই প্রাচীকে বিছানায় শুয়ে দিল। প্রাচীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলো। সকাল হতেই প্রাচীর নিথর দেহ ফেলে চলে গেলো রাজিব। প্রাচীর শরীরে যেনো কোনো শক্তি নেই, এভাবেই চলছে প্রাচীর পতিতালয়ের জীবন।

এদিকে আমার আর সিমার জীবন ভালোই কাটাচ্ছে। এখনো আমি প্রায় খুঁজে বেড়ায় প্রাচীকে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।

কয়েক মাস পরই সিমার বাচ্চা হবে। মা, ছোট বোন, সিমার পরিবার সবাই অনেক খুশী। আমি প্রাচীকে প্রায় ভূলেই গেছি এখন আর প্রাচীকে খুঁজতে যায় না। আমার জীবন ভালোই চলছে, চাকুরী আর পরিবার এ যেনো এক সুখ রাজ্য। হঠাৎ একদিন সুমন কল দিল,

– ইথান কেমন আছস?
– ভালো, তুই?
– আমি মনে হয় আর বাঁচবো না।
সুমনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, কি যাতা বলছে এসব!
– কেনো? কি হয়েছে?
– আমার শরীরে HIV ধরা পরছে, ডাক্তার বলছে আর ১ মাস বাচঁবো!

এই কথা বলেই সুমন কেঁদে দিলো। সুমন কাঁদো কন্ঠে বলতে থাকে, আমার পাপের শাস্তি মনে হয় পেয়ে গেছি। এখানের একটা পতিতালয়ে প্রায় যেতাম, কয়েক মাস আগে ডাঃ বলছে ওই পতিতালয়ের কয়েক জন নারী নাকি এইস আক্রাতন! আমি শেষ বন্ধু, আমাকে ক্ষমা করে দিস আর প্রাচী ভাবীকে যদি কখনো খুঁজে পাস তাহলে বলিস আমাকে ক্ষমা করে দিতে।

সুমন কলটা কেটে দিল, আমি নিজেও কান্না করতেছি প্রিয় বন্ধু আজ মরনের পথে। কয়েক দিন পরই সুমন মারা গেলো, তাদের পরিবার যেনো দুঃখের সমুদ্রে ভাসছে। সুমনকে মাটি দেওয়া হলো পারিবারিক কবরস্থানে!

অন্যদিকে প্রাচীর জীবন বন্ধী চার দেওয়ালে। প্রাচী পতিতালয় থেকে বের হতে চাইলে তারা বলে ১ লাখ টাকা দিয়ে কেউ কিনে নিলেই মুক্তি পাবে।

প্রাচী আল্লাহর কাছে শুধু বলে, আল্লাহ যে করে হউক এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। দিনরাত একটাই চাওয়া এখান থেকে মুক্তি। প্রাচীর ছেলের কাছে যেতে খুব ইচ্ছে করে কিন্তু পতিতালয় থেকে বেরতে দেয় না।

হঠাৎ একদিন রাতে, মদ খেয়ে হেলেধুলে একজন লোক প্রাচীর রুমে ঢুকল। প্রাচী দেখেই ভয় পাচ্ছে, একটা মাতাল লোক তার সাথে আজকে। লোকটা প্রাচীর দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে বলল,

– এই মেয়ে ওখানে কি করস! আমার কাছে আয় তোকে আদর করবো।
প্রাচী ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– না, মানে না…
– আমার কাছে এসে বস! আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রাচী ভয়ে ভয়ে লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। প্রাচী খেয়াল করে দেখে, তার সাথে কিছু করতে চাওয়ার কোনো আগ্রহ নাই লোকটার। প্রাচী লোকটার কাছে যেতেই বলে,

– এখানে বসো।
প্রাচী ভয়কে জয় করে লোকটার পাশে বসলো। লোকটা প্রাচীকে ভালো করে দেখে বলল,
– দেখতে তো ভালোই, এমন কাজ কেনো করো?

প্রাচী চুপ করে আছে দেখে, লোকটা প্রাচীর কাছে আবার জানতে চাইলো। প্রাচী তখন তার জীবনের সকল কিছু লোকটার কাছে বলে। সবশেষে প্রাচী লোকটার কাছে জানতে চাইলো, সে পতিতালয় কেনো আসে।

লোকটা বলতে শুরু করে, আমি বিয়ে করেছিলাম কয়েক বছর আগে। বিয়ের পর আমাদের জীবন ভালোই ছিলো। বিয়ের দুই বছর পরই আমার একটা মেয়ে হয়। আমার বউটা আমাকে ও আমার মেয়েকে রেখে চলে যায় প্রেমিকের সাথে। আমার টাকা পয়সার অভাব ছিলো না, বউকে অনেক ভালবাসতাম। তারপরও সে পালিয়ে গেলো টাকা পয়সা নিয়ে প্রেমিকের সাথে। এখন বাচ্চাটাকে নিজেই কষ্ট করে লালন পালন করি।

প্রাচী দেখলো লোকটা এই সব বলতে বলতে কেঁদে দিচ্ছে। প্রাচী নিজেও কাঁদছে কারন কেউ ভালবাসা পায় না আর কেউ পেয়েও হারায়। সবই যে সময়ের পরিণতি। লোকটা নিজেকে শান্ত করে বলল,

– আচ্ছা, আমি যদি এখান থেকে তোমাকে মুক্ত করি তাহলে কি আমার বাসায় যাবে?
প্রাচী লোকটার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,
– হ্যাঁ যাবো!
– তোমাকে একটা শর্তে নিয়ে যেতে পারি?
প্রাচী কোনকিছু না ভেবেই পতিতালয় নামক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে বলল,
– আমি সব শর্তে রাজি।

লোকটা টাকা দিয়ে প্রাচীকে পতিতালয় থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেল তার বাসায়। প্রাচী বাসার চারদিক ঘুরে দেখতে লাগলো তখন লোকটা বলল,

– আমার শর্ত শুনবে না?
– হুম বলেন!
– আমার নাম মারুফ, এই যে বিশাল বাড়িটা দেখছো এটাই আমার। আমরা বাপ মেয়েই থাকি আর কেউ নাই দুনিয়ায়।
– হুম, এখানে কাজ করতে হবে তাই তো?
– কাজ করতে হবে না, শুধু আমার মেয়েটাকে দেখে শুনে রাখতে।
প্রাচী লোকটার কথা শুনে নিচু কন্ঠে বলল,
– আমার ছেলেকে নিয়ে আসতে পারবো?
– হুম, চলো এখনই নিয়ে আসবো!

প্রাচী আর মারুফ গেলো এতিমখানায়। ওখানে গিয়ে শুনে প্রাচীর ছেলেটা কয়েক মাস আগেই মারা গেছে। প্রাচী কান্না করতে করতে মারুফের বাসায় গেল। এখন প্রাচীর সময় কেটে যায় মারুফের ছোট মেয়েটার দেখভাল করেই।

একদিন প্রাচী মারুফের মেয়েটাকে খাবার খাওয়াচ্ছে তখন বাড়ির দারোয়ান এসে বলে,
– প্রাচী আপা, একজন লোক আসছে আপনার কাছে।
– আমার কাছে! আমার কাছে তো কারো আসার কথা না।
– কি যেনো কথা বলতে চাই!
– আচ্ছা যাও, ভাল মতো জেনে বিতরে নিয়ে আসবে।

দারোয়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটে গেলো। এই যে সাহেব আসেন তার আগে এখানে দাঁড়ান আপনাকে চেক করতে হবে। দারোয়ান লোকটাকে চেক করে নিয়ে আসলো বাড়ির ভিতরে। প্রাচী মেয়েটাকে এখনো খাবার খাওয়াচ্ছে। প্রাচীর উল্টো দিকের রুমের দরজায় লোকটাকে দারোয়ান নিয়ে আসলো। যার কারণে প্রাচীর চেহারা না দেখেই লোকটা বলল,

– আপু, আমি অনেক দিন ধরে চাকুরী খুঁজতেছি। মারুফ স্যারের কোম্পানিতে একটা চাকুরী নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করতেছি। আপনি যদি স্যারকে বলে চাকুরীটা নিয়ে দিতেন অনেক উপকার হতো।

প্রাচী লোকটার কথা শুনে বলে,
– আমি চাকুরী দেওয়ার কে? আমি এখানে মেয়েটার দেখভাল করি!
– তবুও আপনি যদি একটু বলে দিতেন?
প্রাচী এবার মেয়েটাকে খাওয়ানো বাদ দিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাল আর লোকটাকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল,
– তুমি এখানে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here