গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৬
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
প্রাচী এবার মেয়েটাকে খাওয়ানো বাদ দিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাল আর লোকটাকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল,
– তুমি এখানে?
– হুম কিন্তু তুমি এখানে! এখানেও কি পাতিতার কাজ করো?
রাজিবের মুখের কথা শুনে প্রাচী রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
– রহিম মিয়া (দারোয়ান) কি দেখো? ওকে এখনই মেরে বের করে দাও।
– দিচ্ছি আপা,
বলেই রহিম মিয়া রাজিবের কলার ধরে ধাক্কা দিলো। রাজিব কোন রকম দারোয়ানের হাত ছুটে দৌড়ে প্রাচীর পায়ের কাছে বসে পরলো। কাঁদো কন্ঠে রাজিব বলতে শুরু করে,
– আমার চাকরী খুব দরকার, আমি ব্যবসায় অনেক লস খেয়ে পথের ভিখারি। প্রাচী তুমি একটু বললেই চাকরীটা হয়ে যাবে। আমার পরিবারের সবাই খুব কষ্টে আছে।
রাজিবের কথা শুনে প্রাচীর কোন দয়ামায়া হয়নি,
– রহিম মিয়া তোমার চাকরী কি হারাতে চাও নাকি?
প্রাচীর মুখের কথা শুনেই রহিম মিয়া রাজিবকে ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে গেলো। রাজিব তারপরও বাড়ির ভিতর যেতে চাইলো তখন রহিম মিয়া আর কোন পথ না পেয়ে রাজিবকে হাতের বন্দুকটা দিয়ে কয়েকটা লাগিয়ে দিলো।
রাজিবকে মেরে বাড়ির থেকে তাড়িয়ে দিল রহিম মিয়া। রাজিব বাড়ি থেকে বের হয়ে হাটঁছে চাকুরীর খুঁজে। প্রাচী মেয়েটাকে খাবার খাইয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, মানুষের ভাগ্যের পরিণতি বুঝা বড়ই দায়।
এদিকে কয়েক মাস যেতেই সিমার বাচ্চা হওয়ার সময় হলো। আমিও সিমাকে নিয়ে চিন্তিত। একদিন সিমাকে নিয়ে দ্রুত চলে গেলাম হাসপাতালে। ডাক্তার সিমাকে অপারেশন থিয়েটারের নিয়ে গেলো আর অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিল। সিমার বাচ্চা হওয়ার সব কিছু দেখাশোনা করছে ডাঃ জান্নাত।
সিমা অপারেশন থিয়েটারে আছে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে, এখনো অপারেশন শেষ হয়নি। হঠাৎ ডাঃ জান্নাত হতাশা নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। আমি এগিয়ে যেতেই বলল,
– ইথান সাহেব, একটা দুঃসংবাদ আছে।
ডাঃ জান্নাতের কথা শুনে বুকের বিতরে প্রাণ পাখিটা ছটপট করতে শুরু করলো,
– কি দুঃসংবাদ!
– আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে আর আপনার স্ত্রীর জরায়ুর পাশে টিউমার ধরা পড়েছে এখনি অপারেশন করতে হবে আর যদি এখন অপারেশন না করা হয় তাহলে রক্তক্ষরণ হয়ে আপনার স্ত্রী মারা যাবে।
ডাঃ জান্নাতের কথা শুনে পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। কান্না করতে করতে ডাঃ জান্নাতকে বললাম,
– যে করে হউক আমার স্ত্রীকে বাচান।
– ঠিক আছে আপনি আমার সাথে আসুন, কিছু কাগজে সিগনেচার করতে হবে।
ডাঃ জান্নাতের সাথে গিয়ে কাগজে সিগনেচার করে দিলাম। সিমার অপারেশন শুরু করা হলো কিছুক্ষণ পরেই একজন নার্স বের হয়ে রক্তের জন্য ছুটাছুটি করতে লাগলো। সিমার জন্য A+ রক্ত ইমার্জেন্সি দরকার কিন্তু কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলাম রক্তের খোঁজে, অনেক খোঁজে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসলাম। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুঃখের ছায়া, আমি এগিয়ে যেতেই মা জানাই অপারেশন করার সময় সিমা রক্ত স্বল্পতায় মারা গেছে।
কথাটা শুনেই হাটু ভেঙে বসে পড়লাম, মুহূর্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। একজন নার্স এসে, আমার ছেলেকে আমার কোলে দিয়ে গেল। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যেতেই লাগলাম, মা আর ছোট বোন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
অন্যদিকে হঠাৎ একদিন মারুক বাসায় ফিরার পথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। কিছুক্ষণ পরই মারুফে বাসায় হাসপাতাল থেকে কল আসে। প্রাচী কলটা রিসিভ করে জানতে পারে মারুফ আর বেচেঁ নেই।
প্রায় ২ ঘন্টা পর মারুফের লাশ আনা হলো বাড়িতে, প্রাচী ভেবেই চলছে তার জীবনে ভালো সময় কেনো দীর্ঘস্থায়ী হয়না। মারুফের ছোট ভাই আর মা চলে আসলো অন্য শহর থেকে। প্রাচী জানতো না, মারুফের মা, ভাই আছে। মারুফকে মাটি দেওয়া হলে পারিবারিক করবস্থানে।
পরের দিন সকালে প্রাচী মারুফের মেয়েটাকে নাস্তা খাওয়াচ্ছে তখনই মারুফের মা এসে বলে, এই বাড়িতে কি বসে বসে খাওয়ার জায়গা! প্রাচী কোন উওর না দিয়ে মেয়েটাকে রুমে রেখে তাদের সামনে আসলো। তখন মারুফের মা আবার বলে,
– এই বাড়িতে তুমি থাকার কে? এখনই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।
প্রাচী কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারুফের ভাই এসে প্রাচীকে মারতে শুরু করে। প্রাচীর চিৎকার শুনে মারুফের মেয়েটা এসে প্রাচীকে জড়িয়ে ধরলো। মারুফের মেয়েটাকে রেখে প্রাচীকে চলে যেতে বলে মারুফের মা।
প্রাচীর নামে যে ব্যাংক একাউন্ট করে ছিল মারুফ, সেটার কাগজ নিয়ে প্রাচী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল। প্রাচী বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো ব্যাংকে। প্রাচী কিছু না জেনেই একাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে, চলে গেলো একটা বস্তিতে।
প্রাচী বস্তিতে একটা ছোট ঘর ভাড়া নিলো। প্রয়োজনীয় সব কিনে আনার আগেই টাকা শেষ। প্রাচীর মনে পরলো একাউন্টে কত টাকা আছে তা জানা হলো না। পরের দিন প্রাচী একটা চেক লিখে নিলো ২০ হাজার টাকার। ব্যাংকে গিয়ে টাকাও পেয়ে গেলো।
প্রাচী টাকা হাতে পেয়ে ম্যানেজারকে বলে, এই একাউন্টে কত টাকা আছে। ম্যানেজারের কথা শুনে প্রাচী বিশ্বাস করতে পারছে না, মারুফ গত ১ বছরে তার নামে ৫০ লাখ টাকা রাখছে। প্রাচী হাতে আলাদিনের প্রদীপ পাওয়ার মতো অবস্থা। প্রাচী ঘরে ফিরে, বসে ভাবতে লাগলো কি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়।
এদিকে সিমার মৃত্যুর কয়েকদিন পরই আমার ছেলেটা বিষণ অসুস্থ হয়ে পরে। ডাক্তার ছেলেটাকে ভালো করে পরীক্ষা করলো। রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডাক্তার বলল,
– ইথান সাহেব, আপনার ছেলেটার রক্তে একটা রোগ ধরা পরেছে।
– ওর কি হইছে!
– আপনার ছেলের ব্লাড ক্যান্সার।
কথাটা শুনা মাত্রই মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো,
– ভালো হবে না?
– আমার এক বন্ধু ডাঃ রিয়াজ তার কাছে যান ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি।
ঠিকানা নিয়ে পরেরদিন ডাঃ রিয়াজের কাছে গেলাম। ডাঃ রিয়াজ কয়েকদিন চিকিৎসা করার পর হঠাৎ ছেলেটা মারা গেলো। আমি বুঝতেই পারছিনা আমার সাথে কেনো এমন হচ্ছে! এ কোন পাপের শাস্তি ভোগ করছি আমি!
চলবে