গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৭ শেষ

0
2300

গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৭ শেষ
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

আমি বুঝতেই পারছিনা আমার সাথে কেনো এমন হচ্ছে! এ কোন পাপের শাস্তি ভোগ করছি আমি! এটা কি প্রাচীর সাথে করা অন্যায়ের কর্মফল, প্রাচী কেমন আছে এখন! প্রাচীর কি আমার কথা মনে পরে? আমি যদি সেদিন ভার্জিন না খুঁজতাম তাহলে হয়তো এখন জীবনটা অনেক রঙিন থাকতো।

এখন আমি বড় একা, প্রাচীর কথা খুব মনে পড়ে। প্রাচীর সাথে করা খারাপ ব্যবহার গুলো মনটাকে কুঁড়ে খায়। এখনো প্রাচীকে প্রায় খুঁজি কিন্তু ভাগ্য প্রাচীর সন্ধান দেয় না।

অন্যদিকে প্রাচী অনেক ভেবে চিন্তে সেই টাকা দিয়ে একটা ছোট গার্মেন্টস দিলো, তাতে কয়েকটা মেশিন ও লোক নিয়ে ব্যবসা শুরু করলো। কয়েক মাস পরই ব্যবসায় অনেক লাভ হতে শুরু করে, প্রাচীও লাভের টাকায় গার্মেন্টস বড় করতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রাচীর বাড়ি গাড়ি সবই হতে লাগলো।

এদিকে আমার হঠাৎ করেই চাকরী চলে যায়। আমার কাছে তেমন জমানো টাকাও ছিল না তাই ঘরে অভাব অনটন দেখা দেয়। চাকরীর জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম, বাধ্য হয়ে ঢাকা শহরে চলে আসি।

একটা মেসবাড়িতে অনেক কষ্টে থাকার ঠায় করলাম। প্রতিদিন চাকরীর খুঁজে বেরিয়ে যেতাম কিন্তু কোথাও চাকরী হতো না। বুঝতে পারলাম, চাকরী পেতে হলে বাবার টাকা নয়তো মামা-চাচার ক্ষমতা থাকাটা বাধ্যতামূলক এখানে সার্টিফিকেট কোনো বিষয় না।

একদিন এক কম্পানিতে ম্যানেজার পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে সামনে যাকে দেখলাম, সে আর কেউ না প্রাচী! অবাক নয়নে প্রাচীর দিকে তাকিয়ে রইলাম, নিজের চোখের দেখাকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। প্রাচীকে দেখে খুশি হবো নাকি প্রাচীর অবস্থান দেখে অবাক হবো কিছুই মাথায় ঢুকছে না! আমি অবাক কন্ঠে বললাম,

– প্রাচী তুমি এখানে?
ফাইল দেখা বাদ দিয়ে প্রাচী আমার দিকে ফিরে তাকাল আর অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
– এটা অফিস! এটা কারো বাসা বাড়ি না, আশা করি আপনি আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছেন।
প্রাচীর কথা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলাম! মুচকি হেসে বললাম,
– সরি মেম!
– হুম এবার ঠিক আছে, আপনি কি চাকরীর জন্য এসেছেন?
– জ্বি, আমার একটা চাকরী খুব দরকার।
– দেখি আপনার CV.

প্রাচী আমার CV কিছুক্ষণ দেখে বলে, আপনি এখন আসতে পারেন আপনাকে কল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে চাকুরীটা হবে কিনা। প্রাচীর কথা শুনে মুচকি হেসে চলে আসতে যাব কিন্তু নিজের বিবেক বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। প্রাচীর দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে বললাম,

– আমার ছেলেটা কেমন আছে?
প্রাচী আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
– ও আপনার ছেলে ছিল না!
– ও আমার নিজের ছেলে ছিল। বিয়ের আগে সেই কলঙ্কিত রাতে তোমার জীবনে যে এসেছিল সে আর কেউ না আমি! আমিই সেদিন তোমাকে কলঙ্কিত করে ছিলাম, তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না।

আমার কথা শুনেই প্রাচী চেয়ার থেকে উঠে এসে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল আর রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
– শুধু তোমার জন্যই আমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও আর কখনোই এখানে আসবে না।

গালে হাত দিয়ে প্রাচীর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতে যাব তখনি প্রাচী আবার বলে,
– আমাদের ছেলেটা মারা গেছে আর ওর মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী।
প্রাচীর কথা শুনে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। নিজেকে আজ বড় অপরাধী মনে হচ্ছে, চোখের পানি মুছে প্রাচীকে বললাম,
– আমি জানি ক্ষমা চাইলে এখন আর আগের মতো কিছুই ঠিক হবে না তবুও তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, যদি পারো এই অমানুষটাকে ক্ষমা করে দিও।

বলেই প্রাচীর কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম, আমি জানি প্রাচীর এখানে আমার মতো কোনো অমানুষের চাকরী হবে না। বিকালে বসে আছি এমন সময় একটা কল আসে, কলটা রিসিভ করে জানতে পারলাম প্রাচীর ওখানে আমার চাকরী হয়ে গেছে। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, প্রাচী তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেছিল তবে প্রাচী কেনো আমাকে চাকরী দিল!

কয়েকদিন পরেই প্রাচীর অফিসে জয়েন করলাম। অফিসের কাজ ছাড়া প্রাচী আমার সাথে তেমন কথা বলে না, আমি কথা বলতে চাইলে কোনো গুরুত্ব দেয় না। প্রাচীর এমন ব্যবহার আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল, প্রাচীকে করা আমার অবহেলা আর অপমানের কথা।

একদিন অফিসের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম এমন সময় প্রাচী এসে বলে,
– এটা অফিস, সিগারেট খাওয়ার জায়গা না!
– সরি মেম!
– তা সিগারেট খান কেনো? আপনার স্ত্রী কি খুব চাপে রাখে নাকি?
– স্ত্রী নাই!
– কেনো, বিয়ে করেননি নাকি?
– বিয়ে করেছিলাম, সে মারা গেছে মাস ছয়েক আগে।
– ওহ, আচ্ছা আপনি আপনার কাজে যান আর সিগারেট বেশি খাবেন না।

বলেই প্রাচী চলে গেল। আমার সাথে প্রাচীর অপরিচিত ব্যবহার হউয়ারি কথা, প্রাচী এখন কম্পানির মালিক আর আমি তার কর্মচারী। মাঝে মাঝে প্রাচীর দিকে দূর থেকে তাকিয়ে আর প্রাচীর সাথে করা অবহেলার কথা মনে করি। নিয়তির বিধান বুঝা বড়ই কঠিন, কার জীবন কখন তিনি পরিবর্তন করে দিবে বুঝা বড় দায়।

অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম এমন সময় একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে! আমি রাস্তার পাশে পরে গেলাম, চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল কিছু মানুষের হইছই কানে ভেসে আসছিল তারপরে আর কিছু মনে নেই।

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি। আমার পাশেই প্রাচীকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলাম! আমি উঠে বসতে যাব তখনি প্রাচী বলে উঠল,

– আরে আরে কি করছো,
বলেই প্রাচী আবার আমাকে শুয়ে দিল। আমি শুয়ে প্রাচীকে অপলকে দেখতে লাগলাম, প্রাচীর চোখ দুটা লাল হয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,
– আমি এখানে কি করে আসলাম?
– তুমি কি করে আসবে! তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়ছে আর একটু হলেই তো মরে যেতে।
– তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি, আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিল।
মৃত্যুর কথা শুনেই প্রাচী আমার মুখ চেপে ধরলো আর বলল,
– মরার কথা আর কখনো বলবে না! আমার সাথে যা হয়েছে এটা আমার ভাগ্যে ছিল, ভাগ্য আমাদের সাথে এক আজব খেলা খেলছে এতে তোমার কোনো দোষ নেই।

প্রাচীর কথা শুনেই বুঝতে পারলাম, আমার জন্য একটু হলেও তার মায়া হয়। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি নিরবতা ভেঙে প্রাচী বলল,
– আচ্ছা, আমি যদি তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই তবে কি আমায় গ্রহণ করবে?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
– না কারণ আমি তোমার যোগ্য না।
প্রাচী আমার কথা শুনে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলল,
– চলোনা দুজনে আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করি?

সেদিন প্রাচীর চোখে আমার জন্য গভীর ভালোবাসা দেখে ছিলাম। হাসপাতালে আমি ২ দিন ছিল, এই দুই দিন প্রাচীর সাথে অনেক পুরাতন কথা শেয়ার করেছিলাম। আমার আর সিমার বিয়ে, বাচ্চা ছেলেটা ব্লাড ক্যান্সার আমার বন্ধু সুমনের অকাল মৃত্যু সব কিছু প্রাচীর কাছে বলেছিলাম। প্রাচীও তার পতিতালয় থেকে শুরু করে সব কিছুই আমার সাথে শেয়ার করলো।

আমি আর প্রাচী আজ দেশের বাড়ির উদ্দ্যশে রওনা দিলাম। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাত্রাপথে দুজনে চিন্তা করলাম, বাড়ি গিয়ে দুই পরিবারকে একত্র করে দুজনে আবার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হব।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here