গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ০৪

0
3914

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৪
লেখাঃ #Mst_Liza
,

(ফ্লাশ ব্যাক)
খাবার টেবিলে বসে আছে রাইশা।

সখিনাঃ খাইয়া লউ মেম সাব!

রাইশাঃ না খালা! যতক্ষণ না ভাইয়া আসছে আমি কিছুই খাবো না।

সখিনাঃ এইডা কোনো কথা হইলো? সাহেব যদি রাতে না আহে তাইলে কি না খাইয়াই থাকবা?

রাইশাঃ হুমম খালা।তুমি আর কথা বলো নাতো।দেখছোই তো সেই কখন থেকে পেটের ভেতরে ইঁদুরে দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে।

সখিনাঃ হের লাইগাই তো কইতাছি খাইয়া লউ।সাহেব না যানি কহন আইবো আর তোমারে আমি খাওয়াই নায় দেইখ্যা আমারেই কথা হুনাইবো।

রাইশাঃ প্লিজ খালা আর জোড় করো না।ভাইয়া হয়তো খুব বিজি আছে।দেখি না আরেকটু অপেক্ষা করে!

সোহাগ মির্জাঃ আর অপেক্ষা করা লাগবে না আমি এসে গেছি।

রাইশা উঠে গিয়ে সোহাগের সামনে এসে দাড়াই, এতো রাত করে কেন আসো ভাইয়া? যানো না আমি না খেয়ে বসে থাকি?

সোহাগ কান ধরে বলে, সরি ছুটকি। আসলে সারাদিন খুব বিজি ছিলাম।আজ তো লান্সটাও করার সময় পাই নি।

রাইশাঃ আচ্ছা হয়েছে এখন চলো ডিনার করবে।

সোহাগ মির্জাঃ হুমম চল।
,
মির্জা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি,

-আই লাভ ইউ জানু
-আই লাভ ইউ টু
-উম্মাহ
-উম্মাহ উমম

মিরা দরজার কাছে দাড়িঁয়ে কান পেতে হেলান দিয়ে কথাগুলো শুনার চেস্টা করছে আর বার বার নাক মুছছে।বিরবির করে বলছে ব্যাটা বেঈমান, খবিস, লুচ্চা সামুক।তোকে আমি দেখে নেব! এবার আসিস আমার কাছে? ভালোবাসা দাও না সোনা! ভালোবাসা দাও! ফাঁটা বাশ ধরাই দেব হাতে। আমার জীবনডারে ত্যানা ত্যানা কইরা এখন অন্য মেয়ে নিয়ে ফুরতি! তোরে তো আমি….

সোহাগ দরজাটা খুলতেই মিরা পরে যাবে।সোহাগ অমনি মিরার হাতটা ধরে বসে।মিরাকে নিজের খুব কাছে টেনে নেয়।তারপর মিরার কোমড়টি খুব শক্ত করে চেপে রেখে,

সোহাগ মির্জাঃ এই এক্ষুণি তো পড়ে যাচ্ছিলে।একটু সাবধানে থাকতে পারও না? মেয়েটিকে চোখের ইশারার চলে যেতে বলে।

মিরাঃ সরুন তো আপনি! আপনি একটা খারাপ লোক।আপনার সাথে কোনো কথা নেই।

সোহাগ মির্জাঃ কেন আমি আবার কি করলাম?

মিরাঃ সেটা আপনি খুব ভালো করেই যানেন।

সোহাগ মির্জাঃ কি যানি আমি?

মিরাঃ উহফ আপনি আসলেই একটা বজ্জাত।

সোহাগ মির্জাঃ ওই বজ্জাতের কি করেছি আমি?

মিরাঃ কি করেছেন আবার বলছেন ছি! ছি, ছি, ছি, ছি! মিরা ছি ছি করতে করতে মুখটা ঘুরিয়ে নেয় সোহাগের থেকে।

সোহাগ মির্জাঃ তোমার ছিঃ এর লিস্ট এতো লম্বা যে আমি বুঝে উঠতে পারছি না কি করেছি।যদি একটু বুঝিয়ে না বল….

সোহাগ আর কিছু বলার আগেই মিরা সোহাগের গালে একটা কিস বসিয়ে দেই।উম্মাহ!

মিরাঃ এই করছিলেন ওই মেয়েটার সাথে।মুখটা মলিন করে বলে।

সোহাগ একটু মুচকি হেসে, তাই বুঝি? তো আমি যাই করি না কেন তাতে তোমার কি? তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না।তাছাড়াও আমি তো সালমান খান নই যে যুগ যুগ মেয়েরা আমার অপেক্ষায় বসে থাকবে।একবার মাথার চুল পাঁকতে শুরু করলে সুন্দরী মেয়েরা আমায় আংকেল বলে ডাকবে, তুমি বোঝা না?

মিরা মুখ টিপে হাসতে শুরু করে।সত্যিই আপনার মাথাতে কিছু কিছু চুল পেঁকে গেছে।এখন তো সব মেয়েরাই আপনাকে আংকেল বলবে।এইতো দেখুন না..এখানে একটা, এখানেও আছে।এখানেও আর এখানে…সোহাগের চুলের এখানে-ওখানে আঙুলের ইশারায় দেখায় মিরা।

সোহাগ কিছু না বলেই মিরার কোমড়টা ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার পাঁকা চুলগুলো খুঁজতে থাকে।

মিরা সোহাগের পিঁছন পিঁছন এসে ওয়াশরুমের দরজাটা একটু আলগা করে ব্যাপারটা দেখে মুখ টিপে হাসে।তখন সোহাগ আয়নার ভেতরে মিরাকে দেখতে পেয়ে,

সোহাগ মির্জাঃ এই মিরা কোথায় পাঁকা চুল? একটা পাঁকা চুলও তো খুঁজে পাচ্ছি না।

মিরা ওয়াশরুমের ভেতরে চলে আসে।

মিরাঃ আরে স্যার! আপনি সত্যিই একটা বোকা।আপনার মাথায় পাকা চুল….
মিরা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোহাগ পানি ছেড়ে দেয়।আস্তে আস্তে মিরার সারা শরীর ভিজে যায়।ভিজে গিয়ে মিরা কুকড়ে থাকে।থর থর করে দাঁতগুলো কাপে।একই তো কলকলে শীতের দিন।তার উপর সকাল সকাল ভেজা শরীরে।প্রচন্ড ঠান্ডা আহ্ গাল থেকেই ধোঁয়া বের হচ্ছে।
কেমন লাগে এই সময়ে?
,

মিরা রেগে চলে যায়। পরপর তিনদিন অফিসে আসে না।সোহাগ অনেক চেষ্টা করে মিরার মান ভাঙানোর।যার জন্য একটার পর একটা সারপ্রাইজ প্লান করতে থাকে মিরার জন্য।আর মিরারও সারপ্রাইজ পেতে ভালো লাগে তাই সোহাগের উপর রেগে থাকার নাটক করে যায়। তারপর যখন এক ঝড়-বৃস্টির রাতে মিরার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কলকলে শীতে সোহাগ ভিজছিল তখন গিয়ে মিরা বলে রেগে থাকার নাটক করেছে।
,

সোহাগ মির্জাঃ অতীতের ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো কেন খুব দ্রত গতিতে চলে যায়? কেন সেই মুহূর্তগুলোকে আটকে রাখা যাই না?
,
{বিছানায় পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে বসে মিরাকে শাস্তি দেওয়ার উপায় খুঁজতে গিয়ে মিরার সাথে কাটানো সুখের মুহূর্তগুলোই মনে পড়ে যায় সোহাগের। বুকের ভেতরটাই এক চিনচিনে ব্যাথা হয় মিরাকে কস্ট দিলে। কিন্তু মিরা যে অপরাধী। ওর ভাই যে অপরাধী। ছোটবেলা নৃশংস ভাবে চোখের সামনে বাবা-মাকে হত্যা হতে দেখেও কিছু করতে পারে নি সোহাগ।তারপর থেকে বোনই তো সোহাগের সবটা জুড়ে। খুব বেশি দিন না হলেও সোহাগের জীবনে মিরার আগমন হওয়াতে ভেতর থেকে মিরার অস্তিত্বের জানান দেয়া অস্বীকার করা যায় না।সোহাগ যেদিন মিরাকে প্রথম দেখেছিল সেদিন থেকেই মিরাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আর আজ এতো কাছে পেয়েও পারছে না আপন করে নিতে।এটাই হয়তো বিধির বিধান!}

হঠাৎ সোহাগের সেলফোনটা বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখে হসপিটাল থেকে ডা. শিহাব কল করেছে।কলটা রিসিভ করার পর সোহাগের চোখে মুখে এক উজ্জ্বল রেখা ফুটে ওঠে।

সোহাগ মির্জাঃ কি বললেন ডাক্তার? আমার বোনের জ্ঞান ফিরেছে? কথা বলতে পারছে? আমি এক্ষুনি আসছি!

অনেক আনন্দ আর উল্লাস নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয় সোহাগ মির্জা।

আর এদিকে মিরা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোহাগকে খোঁজে।

মিরাঃ গেল কোথায় মানুষটা? বলে তো ছিল আজ সারাদিন বাড়িতে থাকবে! আসলে এই লোকটা শুধরাবে না কখনও। পরনারীর নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে।যার জন্য বাড়িতে মন বসে না।আজ আসুন আপনি কোনো মেয়েকে সাথে নিয়ে যদি ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের না করেছি তাহলে আমিও আপনার স্ত্রী নই।

চলবে……

(যানি ভালো হয় নি।আমার ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা।অংক করতে করতে গল্প লিখছি।ভুল-ত্রুটিগুলো মার্জনা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here