গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ০৫

0
3698

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৫
লেখাঃ #Mst_Liza
,
হসপিটালে রাইশা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।কেবিনের সব কিছু ভাংচুর করছে।হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ছে।দুই-তিনজনের তো মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছে।ডাক্তার, নার্স কেউ রাইশাকে সামলাতে পারছে না।

ডাঃ শিহাবঃ মিছ রাইশা, এখন একটু শান্ত হোন। আপনার ভাই এক্ষুণী চলে আসবে।

সবাই রাইশার হাত, পা শক্ত করে ধরে রেখেছে।তবু্ও রাইশার ঝাঁপাঝাঁপি বন্ধ হয় নি।একটা সময় পর রাইশা নিজেই ক্লান্ত হয়ে পরে।বিরবির করে বলে,
রাইশাঃ আমাকে ছাড়ুন! যেতে দিন আমার সন্তানের কাছে।নেহা ওকে মেরে ফেলবে।কথাটা বলে বেডে ঢলে পড়ে।

সোহাগ এসে বোনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

সোহাগ মির্জাঃ ডাক্তার আপনি তো বলেছিলেন আমার বোনের জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলতে পারছে।তাহলে?

ডাঃ শিহাবঃ আমি ভুল বলিনি মি.মির্জা! আপনার বোন এখন ঘুমোচ্ছে।আমরা উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রেখেছি।ইনজেকশনটা না দিলে আমাদের পক্ষে পেশেন্টকে সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না।এই যে, এদেরকে দেখুন! মাথা ফাটিয়ে কি অবস্থা করেছে!

সোহাগ মির্জাঃ সরি,ডাক্তার। কিন্তু আমার বোন এমনটা কেন করছে?

ডাঃ শিহাবঃ যানি না। আমরা তো কথায় বলতে পারছি না।আপনি বরং উনাকে বাড়িতে নিয়ে যান।বাড়িতে গেলে অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক সময়ে পেশেন্টের এমন অবস্থায় চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের আপনজনদের সঙ্গ প্রয়োজন।

সোহাগ আর কোনো কথা না বলে, নিরবে রাইশার পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে।রাইশার ঘুমোন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে দু’ফোঁটা চোখের পানি ফেলে।তারপর বোনকে কোলে তুলে বাড়িতে নিয়ে যায়।
,

মির্জা প্যালেস,
সোহাগের কোলে রাইশাকে দেখে মিরা রেগে ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে।শাড়ির আচল কোমরে গুজে,
মিরাঃ আপনি আজও??
সোহাগ কিছু না বলেই, মিরার পাশ কেটে রাইশাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।মিরাও সোহাগের পিছন পিছন যায়।
মিরাঃ আমি আপনাকে কিছু বলছি! আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন?
সোহাগ বোনকে নিয়ে রুমে শুইয়ে দেয়।
মিরা সোহাগে হাত ধরে এক টানে নিজের সামনে নিয়ে আসে।সোহাগের শার্টের কলারটি টেনে ধরে,
মিরাঃ কেন এমন করছেন আপনি? আজ কিছুতেই এসব দুশ্চরিত্রা মেয়ের সাথে আপনাকে আমি থাকতে দেব না।
মিরার মুখে রাইশাকে বলা দুশ্চরিত্রা কথাটা শুনে সোহাগ প্রচন্ড আকারে রেগে যায়।মিরার গালে ঠাসসসস করে একটা চর বসিয়ে দেয়।মিরা গালে হাত দিয়ে সোহাগের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

সোহাগ মির্জাঃ তোর সাহশ তো কম না। ওকে দুশ্চরিত্রা বলছিস তুই! তোকে তো আমি..

মিরাঃ দুশ্চরিত্রাকে দুশ্চরিত্রা বলব না তাকি সতি সাবিত্রী বলব? যে অন্যের স্বামীর সাথে বেড শেয়ার করতে দিন দুপুরে অন্যের বাড়িতে চলে আসে তাকে আর কি বলা যায়? ওকে এখন আমি কি করি আপনি দেখুন।
মিরা রাইশার কাছে গিয়ে ঘুমন্ত রাইশাকে ঝাকাতে শুরু করে।এই মেয়ে ওঠ! ওঠ বলছি! বের হ আমার বাড়ি থেকে।তোদের মতোন নস্টা মেয়ের জন্য আমাদের মতো মেয়েদের আজ কপাল পুরছে।
,
সোহাগ মিরার হাত ধরে রাইশার থেকে দূরে সরিয়ে আনে।তুই কিন্তু এবার সত্যিই অনেক বারাবাড়ি করে ফেলছিস।
,
মিরাঃ আমি বারাবাড়ি করছি? একটানে মিরা বুক থেকে নিজের শাড়ির আচলটি টেনে খুলে ফেলে। কি আছে এসব মেয়েদের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? কেন বারবার আপনি যৌবনের চাহিদা মেটাতে এসব মেয়েদের ব্যবহার করেন? বাড়িটাকে তো পতিতালয় বানিয়েই ফেলেছেন! এসব মেয়ের প্রতি যদি এতই আসক্ত থাকবেন তাহলে আমায় কেন বিয়ে করেছিলেন?
সোহাগের রাগ এবার চরম আকার ধারণ করে।এক ধাক্কায় মিরাকে মেঝেতে ফেলে দেই।কি বললি তুই?বেল্ট খুলে মিরার পিঠে মারতে থাকে।তারপর মিরার এক মুষ্টি চুল শক্ত করে ধরে কপালে আঘাত করে। মিরার কপাল ফেটে রক্ত ঝড়তে থাকে। ফর্সা পিটটা কেটে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।মিরা সোহাগের প্রতিটা আঘাতে আর্তনাদ করে, সেই দিকে সোহাগের কোনো খেয়াল নেই।সোহাগ মিরাকে মারে।এতো মারে যে মিরার নিঃশ্বাস নিতে খুব কস্ট হয়।মারতে মারতে সোহাগ যখন খুব ক্লান্ত হয়ে পরে তখন মিরার গালটি শক্ত করে চেপে ধরে রাইশার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
দেখ ওকে!
জানিস তুই কাকে কি বলেছিস?
ও তোর কাছে দুশ্চরিত্রা?
নস্টা মেয়ে তাই না?
তুই জানিস আামার জীবনে ওর কি স্থান?
কেউ যদি আমায় বলে ওর জন্য আমার কলিজাটা ছিড়ে দিতে তাহলে আমি সেটাও দিয়ে দিতে পারি।আর তুই কিনা….?
মিরা সোহাগের পা ধরে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ায়।নিজের রক্তাক্ত কপালটা সোহাগের বুকের সাথে মিসিয়ে কম্পিত ঠোঁটে বলে, আপনি আমার কাছে সব সময় জানতে চাইতেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা? ভালোবাসি! খুব ভালোবাসি আপনাকে! এজন্যই তো অন্য কারও সাথে আপনাকে আমি কল্পনাও করতে পারি না।আমার খুব কস্ট হয় যখন চোখের সামনে অন্য মেয়েদের নিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দেন।আমি তো আপনাকে ভালোবাসি বলেই আপনার এতো অত্যাচার সহ্য করেও আপনার কাছে পরে আছি।আমি তো আপনার কাছে বেশি কিছু চাই নি? আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতোন একটু সুখে থাকতে চেয়েছি।আর আপনি আমার সাথে….
মিরা আর কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে……

(গল্পের মোড় পাল্টাতে চলেছে, আর দুই-এক পর্বের মধ্যেই গল্পে নতুন চমক দেখতে পাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here