গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৭
লেখাঃ #Mst_Liza
,
সোহাগ মির্জাঃ এ আমি কি করেছি?
সোহাগ নিজের হাতদুটো সামনে নিয়ে আসে, এই হাত দিয়ে আমি আমার ফুলের মতোন নিষ্পাপ মিরাকে মেরেছি।ওর শরীরকে করেছি ক্ষত-বিক্ষত।না যানি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছে আমার মিরা।এক্ষুনি আমি আমার মিরার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো।
,
রাইশাঃ কি বলছো ভাইয়া? কে মিরা?
,
সোহাগ কোনও উত্তর না দিয়েই ছুটে রুমে চলে যায়।মিরা? কোথায় তুমি? এই মিরা? সোহাগ মিরাকে ওয়াশরুমেও পাই না।
সোহাগ সারা বাড়িতে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। কোথাও মিরাকে পাচ্ছে না।রাইশা সোহাগের পিছন পিছন ছুটছে।কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
রাইশাঃ তোমার কি হয়েছে ভাইয়া? এরকম কেন করছো?
সোহাগ মির্জাঃ মিরা কোথায় তুমি??? মিরা কি আমায় ছেড়ে চলে গেল?
বাড়িতে যা ঘটেছে,, তাহলে কি নেহা আমার মিরাকে…..
কিছু ভাবতেই,,সোহাগ পাগলের মতো হয়ে যায়।
রাইশাঃ শান্ত হও ভাইয়া! আমাকে বল কি হয়েছে?
সোহাগ মির্জাঃ ছুটকি, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি..
সোহাগ মিরার সাথে করা সব অন্যায়ের কথা বোনকে খুলে বলে।
নেহা আমাকে ভুল বুঝিয়েছিল ছুটকি।এখন আমি কি করব? কোথায় পাব আমার মিরাকে?
সোহাগ নিজের হাত দুটো দেয়ালের সাথে বার বার আঘাত করতে থাকে।
জালেমের মতো এই হাত দিয়ে অত্যাচার করেছি তোমার উপর মিরা।আমি সত্যিই খুব খারাপ।
রাইশাঃ এ কি করছো তুমি ভাইয়া? রক্ত ঝড়ছে তোমার হাত থেকে।
সোহাগ মির্জাঃ ঝড়ুক রক্ত! আমি আমার মিরার শরীর থেকে এর থোকেও বেশি রক্ত ঝড়িয়েছি।
রাইশাঃ প্লিজ শান্ত হও। আমাদের এখন পুলিশ স্টেশন যাওয়া উচিত। তাহলেই ভাবির খোঁজ পাবো।
,
,
পুলিশ স্টেশনে,
অফিসার জসীমঃ একি মি. সোহাগ মির্জা!আপনি এখানে? কোন অসুবিধা? আমাকে একটা ফোন করলেই পারতেন।আপনি কেন কস্ট করে আসতে গেলেন।
রাইশাঃ স্যার, একটা বিপদে পরে এসেছি আমরা।
অফিসার জসীমঃ কি বিপদ?
রাইশা আর সোহাগ অফিসার জসীমকে সব খুলে বলে।
অফিসার জসীমঃ আচ্ছা, মি.মির্জা আপনার পি.এ হাসানের ফোন নাম্বার আর গাড়ীর নম্বরটা আমাদেরকে দিয়ে যান। আমরা দেখছি কিছু করতে পারি কিনা।হাসানের সাথে যদি নেহার কোনও যোগাযোগ থেকে থাকে তাহলে নেহাকে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে দাড়াবে।
,
ওদিকে….
,
মিরাঃ নাআআআআ… এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না হাসান ভাই।যেতে দিন আমায়! আমি আপনার ছোট বোনের মতোন।মিরা নিজের হাতটা হাসানের থেকে ছাড়ানোর অহেতুক চেস্টা চালাচ্ছে !
হাসানঃ প্লিজ মিরা! প্লিজ! তুমি আমায় ভাই বলো না! আমার খুব কস্ট লাগে কস্ট! কাজী সাহেব তারাতাড়ি বিয়েটা পড়ান না।
কাজীঃ বল মা কবুল?
মিরাঃ প্লিজ, আপনারা বোঝার চেস্টা করুন আমি বিবাহিতা।এই লোকটা আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে। মিরা চিৎকার জুড়ে দেয়।কেউ আছেন?বাঁচান আমায় এই রাক্ষসটার কাছ থেকে।
হাসানঃ আহহা জান এতো চিৎকার চ্যাচামেচি কেন করছো? এখানে কেউ আসবে না।আর তোমার শরীরটা খারাপ না? এতো উত্তেজিত হইও না। শুধু একটাবার বিয়েটা হতে দাও দেখও সব ঠিক হয়ে যাবে।
মিরাঃ আপনাকে খুব ভালো ভেবেছিলাম ভাইয়া।আমি কখনও ভাবতে পারি নি সেই আপনিই এভাবে আমায় নিজের নোংরা রূপটা দেখাবেন।
হাসানঃ তুমি আমাকে যায় বলো, তোমাকে আমি ভালোবাসি মিরা।খুব সুখে রাখবো।ওই সোহাগ মির্জা তোমায় কখনও সুখে রাখতে পারবে না। ও তো কখনও তোমায় ভালোবাসে নি।আমি তোমায় ভালোবাসাতে ভরীয়ে দেব।একটা বার বিয়েটা হতে দাও। বিয়ের পর তোমায় আমি কখনও ওর মতো অত্যাচার করবো না শুধু আদর দেবো দেখও।
মিরাঃ আমি যানি উনি আমার উপর অনেক অত্যাচার করেছে।অত্যাচারী বীরপুরুষের মতো নিজের পুরুষত্ব খাটিয়েছে।হয়তো উনি আমাকে কখনও ভালোই বাসে নি।তবু্ও উনি তো আমার স্বামী! ভালোবাসি উনাকে আমি।আমি কিছুতেই এই জীবনে আর উনার জায়গায় কাউকে বসাতে পারবো না।আর তোর মতোন সয়তানকে তো নয়ই।
হাসানঃ এই., মিরা! জান আমার।দেখ তুই তুকারি করো না।একটু পরেই তোমার স্বামী হব।এখন এমন ব্যবহার করলে চলে?
মিরাঃস্বামী আর তুই? তুই ভাবলি কিভাবে যে তোকে আমি বিয়ে করবো?
হাসানঃ বিয়ে তো আমাকে তোমায় করতেই হবে।আর সেটা আজই।
মিরা কিছু বুঝে উঠতে পারে না! কি করবে? তারপর অনেক ভেবে বলে, আমি ওয়াশরুমে যাবো।
হাসানঃ আগে বিয়েটা হোক তারপর যেও।
মিরাঃ নাহ এক্ষুনি যাবো।
হাসানঃ ঠিক আছে চলো।
মিরা ওয়াশরুমের ভেতরে গেলে হাসান বাইরে দরজার কাছে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।অনেক্ষন হয়ে যায় মিরা বাইরে আসে না। হাসান ওয়াশরুমের জরজাটা ভাঙে।কিন্তু এখানে মিরা নেই। জানালার কাচগুলোও খোলা।
হাসানঃ নাহহ মিরা এভাবে তুমি পালাতে পারও না।অনেক সাধনা করে তোমাকে আমি পেয়েছি।
এমন সময়ে, পুলিশ এসে হাসানকে ধরে নিয়ে যায়।পুলিশের কেলানি খেয়ে হাসান যা করেছে সব শিকার করে আর হাসানের মাধ্যেমে নেহাকেও পুলিশের কাছে ধরা পরতে হয়।
[আপনারা ভাবছেন মিরা ওয়াশরুমের থেকে পালিয়ে সোহাগের কাছে গিয়েছে? নাহহ, মিরা আর সোহাগের কাছে যায় নি।তবে মিরার শরীর এতোটা দূর্বল ছিল যে মিরা নিজের সর্বচ্চো প্রচেষ্ঠা দিয়ে হাসানের কবল থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় ঢলে পড়ে]
হুমাইরা বেগম আর তার স্বামী শাহীন খান মেয়ের শ্বশুড়বাড়ির থেকে ফিরছিল।তাদের গাড়ির সামনে এসেই মিরা ঢলে পরে।
হুমাইরা বেগমঃকি করলে এটা?
শাহীন খানঃ আমি কি ইচ্ছা করে করেছি?
হুমাইরা বেগমঃ এতো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে চলো মেয়েটির কাছে।
শাহীন খানঃ হ্যাঁ, চলো।
দুজনে মিরার কাছে যায়। মিরাকে টেনে মুখ দেখেই দুজনে হতভম্ব হয়ে পড়ে।
হুমাইরা বেগমঃ ওগো, এতো মিরা। মিরা মা কি হয়েছে তোমার? আমাকে শুনতে পারছো? এতো রাতে এখানে কিভাবে এলে?
শাহীন খানঃ হুমাইরা, দেখছো তো মেয়েটার অবস্থা ভালো না।আগে বাড়িতে নিয়ে চলো পরে মেয়েটা চোখ খুললে সব জিজ্ঞাসা করো।
হুমাইরা বেগমঃ হুমম।
দুজনে মিরাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
চলবে….