গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৪
লেখাঃ #Mst_Liza
,
জুলি এসে বন্দুকটা ধরে উপরের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।
মোনাঃ জুলি তুই এখানে।
জুলিঃ এ তুমি কি করছিলে আপু?
মোনাঃ প্রতিশোধ নিচ্ছিলাম।
জুলিঃ কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃস্টি হচ্ছে আপু।
মোনাঃ কি বলতে চাস তুই?
জুলিঃ আপু আমার মনে হয় সোহাগ ভাইয়া নির্দোষ।
মোনা ঠাসসসস করে জুলির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
মোনাঃ তুই কি বলছিস যানিস?
জুলিঃ হ্যাঁ, আপু আমি যা বলছি ভেবেই বলছি।
সোহাগ এসে রাইশার বাঁধনটা খুলে দিয়ে রাইশাকে জড়িয়ে ধরে।
সোহাগ মির্জাঃ তুই ঠিক আছিস তো বোন?
রাইশাঃ ভাইয়া…
রাইশা কাঁদতে থাকে।
সোহাগ মির্জাঃ কাঁদছিস কেন পাগলি? আমি চলে এসেছি না? সোহাগ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে, মিরা কোথায়?
রাইশাঃ ভাইয়া… ভাবি…
সোহাগ মির্জাঃ কি?
রাইশাঃ ভাবিকে মোনা আপু
সোহাগ মির্জাঃ হুমম।তারপর?
রাইশাঃ মোনা আপু ভাবিকে
সোহাগ মির্জাঃ আমার এবার খুব ভয় করছে কিন্তু ছুটকি, তারাতাড়ি বল? কি করেছে মোনা আমার মিরার সাথে?
রাইশাঃ তুমি শান্ত হও ভাইয়া আমি বলছি
সোহাগ মির্জাঃ কি করেছে মোনা ওর সাথে?
রাইশাঃ মেরে ফেলেছে। মোনা আপু ভাবিকে মেরে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়েছে।
সোহাগ মির্জাঃ নাআআআআ।
সোহাগ চিৎকার করে বসে পরে।খুব জোড়ে কাদঁতে থাকে সোহাগ।এমন সময়ে হঠাৎ কেউ এসে তার রক্তে ভেজা নরম হাতটি দিয়ে সোহাগের কাঁধ স্পর্শ করে।সোহাগ ঘুরে দাড়িয়ে দেখে মিরা রক্তাক্ত অবস্থায় দুলছে।সোহাগ মিরাকে ধরতেই মিরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
সোহাগ মির্জাঃ এই মিরা কথা বল? কথা বল বলছি? কি হয়েছে তোমার মিরা?
রাইশাঃ ভাইয়া ভাবির গুলি লেগেছে।এক্ষুণি ভাবিকে নিয়ে আমাদের হসপিটালে যেতে হবে আর দেরি করও না।
সোহাগ মিরাকে কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালে যাবে মোনা এসে সোহাগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
মোনাঃ ভেবেছিলাম তোর বউকে মারব!বোনকে মারব! কিন্তু না তোর বউ বেঁচে ফিরে আসলো।তবে এখন যখন তুই এসেই গিয়েছিস।আজ নিজের হাতে তোদের সবাইকে খুন করবো।
সোহাগ মির্জাঃ দেখ মোনা তোর রাগ আমার উপর আমার মিরাকে তুই বাঁচতে দে।
মোনাঃ বাঁচতে দেব? হাহাহা! তুই বাঁচতে দিয়েছিলি আমার বাবা, বোনকে?
সোহাগ মির্জাঃ তুই ভুল করছিস মোনা!
মোনাঃ আমি ভুল করছি? আজ আমি আমার বাবা, বোনের প্রতিশোধ নিচ্ছি।এখন যখন সুযোগ পেয়েই গেছি নিজের হাতে তোকে আর তোর পরিবারকে খুন করে প্রতিশোধ পূর্ণ করব।
মোনা সোহাগের দিকে বন্দুকটা ধরে।যেই গুলি ছুড়তে যাবে তখনই পুলিশ এসে মোনার হাতে ঘ্যাচাং করে একটা গুলি বসিয়ে দেয়।মোনার হাত থেকে বন্দুকটা ছিটকে দূরে গিয়ে পরে।তারপর পুলিশ মোনাকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় মোনা সোহাগকে বলে যায় আমি আবার ফিরে আসবো সোহাগ মির্জা।তোর প্রতি প্রতিশোধ নিতে, তোকে শাস্তি দিতে, কথাটা মনে রাখিস!
।
সোহাগ মিরাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।মিরার শরীরে গুলি ছুয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার কারণে মিরা এখন বিপদ মুক্ত।মিরাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। রাইশা আর সোহাগ মিরার পাশে বসে রয়েছে।
রাইশাঃ আচ্ছা ভাবি তোমাকে না নদীতে ফেলে দিয়েছিল?
মিরাঃ পালিয়ে ছিলাম।
রাইশাঃ মানে?
মিরাঃ আমাকে জাহাজে উঠিয়ে গুন্ডাগুলো গল্প করছিল।আমি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালায়।তারপর গুন্ডাগুলোর মধ্যে একজন আমাকে চিনতে পেরে পালাতে সাহায্য করেছে। আর তার সাথীদের বলে আমাকে সে নদীতে ফেলে দিয়েছে।
রাইশাঃ কিভাবে চিনলো ঐ গুন্ডাটা তোমাকে?
মিরাঃ রাইসূলের ডাক্তারি পরার টাকার জন্য একদিন তার স্ত্রীকে আমি কিডনি ডোনেট করেছিলাম।
রাইশাঃ ওহহ।
সোহাগ মির্জাঃ এসব কথা এখন বাদ দাও! আগে সুস্থ হও তারপর বলবে!
,,,,
,,,
,
।
,
,,,
,,,,
২০ বছর পর,
মায়াঃ হাহাহা
রুসাঃ হাসছিস কেন মায়া?
মায়াঃ কি করব বল?
তোর এই গল্পটা শুনে আমার মুভি মুভি লাগছে!
রুসাঃ সেই তো! তোর বিশ্বাস হলো না? এইজন্যই বলতে চাচ্ছিলাম না।
মায়াঃ না না বল তারপর কি হলো?
রুসাঃ আমি আর কিচ্ছু বলব না! তোর বিশ্বাস হলো নাতো যা ভাগ!
মায়াঃ ওই সালি একটা গল্প শেষ না করে বাহানা শুরু করেছিস? আগে বল তারপর কি হলো?
রুসাঃ এটা গল্প না মায়া এটা আমার মামা মামির…
মায়াঃ কি??
রুসাঃ মা আমাকে এই গল্পটা ছোটবেলা থেকেই শোনাতো। আমার মামা মামি এখন আর একসাথে থাকে না।
মায়াঃ মানে?
রুসাঃ বাদ দে ওসব কথা।এখন জলদি চল তো অফ টাইম শেষ! দেরি করলে ডাক্তার মাহির এসে তোর ব্যন্ড বাজাবে।
মায়াঃ ওই এক যন্ত্রণা! লোকটার কাছে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ ভালো শুধু আমি ছাড়া! যখন তখন শুধু আমাকে জ্ঞান দেয়!
রুসাঃ কারণ তোর কাজগুলো এমন যে তোকে জ্ঞান না দিলে হয় না!
মায়াঃ জ্ঞান কি মা কম দেয়? তবুও কি ভেবে যে মেডিকেলে পড়তে পাঠালো! আমি তো এ্যাডমিশন টেস্টেও ফেল করার কত চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু কি করতাম ওই মাহির বজ্জাতটা এসে যেহারে খাতার উপর হুমরি খেয়ে পরেছিল।বজ্জাতটাকে দেখাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছি।কপাল আমার সেই ডাক্তারি পড়তে আসা লাগলো।
রুসাঃ ওভাবে বলিস না মায়া! স্যার কত্ত ভালো।আমাদের বকে তো ভালোর জন্য!
মায়াঃ থামবি তুই? ওই বজ্জাতটার হয়ে আর সাফায় গায়তে আসবি না!
,
,
মাহিরঃ কে বজ্জাত মায়া?
হঠাৎ মাহিরের কন্ঠস্বর শুনে মায়া তাকিয়ে দেখে মাহির সামনে দাড়ানো।মাহিরের চোখ দুটো রাগে গজগজ করছে। ভয়ে মায়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মাহিরঃ রুসা ক্লাসে যাও।
রুসাঃ ওকে স্যার।
মাহিরঃ দাড়াও মায়া! তুমি কোথায় যাচ্ছো?
মায়াঃ আপনি বললেন তো ক্লাসে যেতে।
মাহিরঃ কানে কি সমস্যা আছে তোমার?
মায়াঃ কেন স্যার?
মাহিরঃ আবার বলছো কেন?
মায়াঃ সরি স্যার!
মাহিরঃ সরি? কিসের জন্য?
মায়াঃ আর কখনও আপনাকে কিচ্ছু বলব না!
মাহিরঃ তোমার মধ্যে শিক্ষা দিক্ষার খুব অভাব।শিক্ষকদের কিভাবে সম্মান দিতে হয় সেটাও যানো না।
মায়াঃ স্যার আমি আসলে
মাহিরঃ কি??? শোনও মেয়ে এটা লাস্ট। নেক্সট টাইম যেন এভাবে কোনও শিক্ষকদের নিয়ে বলতে না শুনি। মনে থাকবে?
মায়া মাথা কাত করে হ্যাঁ বলে।
মাহির ধমক দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে, মুখে বল মনে থাকবে?
মায়াঃ জ্বী স্যার।
মাহিরঃ হুমম।এবার ক্লাসে যাও।
,
,
,
,
,
,
আজ সোহাগের জন্মদিন।মিরা বাড়িতে অনেক ভালো ভালো রান্না করছে। যা যা খেতে সোহাগ পছন্দ করে তার সব।রান্নার শেষে মিরা খাবারগুলো নিয়ে বাইরে আসে।কিছু সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু বসে আছে খাবারের অপেক্ষায়। তাদেরকে পাত পেরে খেতে দিয়ে শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছছে মিরা।খাওয়ানোর শেষে যখন শিশু গুলো চলে যায় মিরা দৌড়ে গিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা সুটকেসটা বের করে।সোহাগের ছবিটা হাতে নিয়ে কাঁদে।অনেক অসম্মান, অবহেলা আর অপমান নিয়ে মিরা সোহাগের বাড়ি থেকে সেদিন রাতে বেরিয়ে এসেছিল।তারপর আর নিজের আপনজন কারও সাথে যোগাযোগ রাখে নি!
মিরা সোহাগের ছবিতে হাত বুলাছে আর কাঁদছে।মিরার চোখের পানি গড়িয়ে সোহাগের ছবির ফ্রেমে পড়ছে,,
মিরাঃ আপনি আমাকে ভুল বুঝলেন? এতো বড় অপবাদ দিলেন আমাকে আপনি? মায়া! ওতো আমার আর আপনার সন্তান। কিন্তু আপনি ভাববেন না! আমি কক্ষনো মায়াকে যানতে দেব না ওর পিতৃ পরিচয়। ওর মাও আমি আর বাবাও আমি। ও কক্ষণো আপনার কাছে নিজের পরিচয় নিয়ে যাবে না।আপনি ভালো থাকুন! খুব ভালো থাকুন!
চলবে….