গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ১৫

0
1929

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৫
লেখাঃ #Mst_Liza
,
জীবন থেকে ২০টা বছর চলে গেল।এর মধ্যে এমন একটা রাত নেই আমি আমার মিরাকে নিয়ে ভাবি নি।এমন একটা দিন নেই তোমায় অনুভব করি নি।তুমি আছো, তুমি ছিলে আর জীবনের শেষ নিশ্বায় পর্যন্ত তুমিই থাকবে আমার জীবনে।তুমি বলতে না মিরা? আমি সত্যিই খুব পঁচা, নোংরা, খারাপ একটা মানুষ।সত্যিই আমি তোমার যোগ্য নই।ভুল বুঝেছি আমি।ভুল বুঝে তোমার মতো একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি।আর আজ আমি তার শাস্তি পাচ্ছি।তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি তুমি কি ছিলে আমার জীবনে! আমি যানি না আর কক্ষণো তুমি ফিরে আসবে কিনা।বলবে কিনা ওগো আমাকে একটু ভালোবাসুন! একটু আদর দিন! তবুও আমি তোমার অপেক্ষা থাকি।খুব ভালোবাসি যে তোমায়।মিরার ছবি বুকে নিয়ে কথাগুলো বলে কাঁদতে থাকে সোহাগ।

হঠাৎ সোহাগের কাঁধে কারও হাত পরে।সোহাগ চোখের পানি মুছে তাকিয়ে দেখে বোন রাইশা ছলছল চোখে সোহাগের দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহাগ মির্জাঃ তুই কখন এলি ছুটকি?

রাইশাঃ,,,,,,

সোহাগ মির্জাঃ কি হলো কথা বলছিস না?

রাইশাঃ আর কত নিজের কষ্টগুলো সবার থেকে লুকাবে ভাইয়া?

সোহাগ মির্জাঃ কিসের কস্ট? মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

রাইশাঃ ভাবির ছবি বুকে নিয়ে এতোক্ষণ তুমি যেই কথাগুলো বলছিলে।তার সব আমি শুনেছি।এতো ভালোবাসো তুমি ভাবিকে? তাহলে কেন ভাইয়া? সেদিন ভাবির কথাগুলো যদি একবার শুনে নিতে তাহলে আজ এই ভাবে তোমাকে কস্ট পেতে হতো না।আমার ভাবি যে ফুলের মতোন পবিত্র।

সোহাগ মির্জাঃ খুব ভুল করেছি আমি।নাহ ভুল কেন বলছি আমি যে অপরাধী।

রাইশাঃ ওই মিথ্যাবাদী হাসানের কথায় তুমি সেদিন বিশ্বাস না করলে ভাবি আজ আমাদের সাথেই থাকত।

সোহাগ রাইশাকে জড়িয়ে ধরে খুব জোড়ে কাঁদে।

সোহাগ মির্জাঃ ভুল করেছি রে বোন।অনেক বড় ভুল করেছি। আমার তখন মাথার ঠিক ছিল না। আর তাই তো মিরাকে কোনও কথা বলার সুযোগ দেয় নি।শুধু আমার সিদ্ধান্তটা ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছি।ও এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? কিছুই আমি যানি না।

রাইশাঃ ভাইয়া কেঁদো না প্লিজ! আমি তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে পারছি না।

রাইশা সোহাগকে বসিয়ে হাতে এক গ্লাস পানি ধরিয়ে দেয়। সোহাগ ডগডগ করে পানিটুকু খেয়ে নেয়।

সোহাগ মির্জাঃ আচ্ছা রাইশা! তোর ভাবি তো যানে আমার খুব রাগ তাহলে এভাবে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল? ও কি পারতো না প্রতি বারের মতো তখনও আমাকে একটু সময় দিতে।একটু বোঝাতে? ওতো যানে আমি ওর উপর যতোই রাগ করে থাকি না কেন ওকে ছাড়া থাকতে পারি না!

রাইশাঃ আত্মসম্মানবোধ! হ্যাঁ ভাইয়া।একটি মেয়ে তার স্বামীর সব অন্যায় সহ্য করে বাকীটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে কিন্তু চারিত্রিক অপবাদ! সেটা কখনও একটি মেয়ে সহ্য করতে পারে না।আজ যদি ভাবির জায়গায় আমি হতাম হয়তো আমিও রাইসূলকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতাম।

সোহাগ মির্জাঃ হ্যাঁ, খুব খারাপ আমি।মিরা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।আর আমি জন্মদিনের পার্টিতে সকলের সামনে ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে আমি আমার নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছি।বলেছি মিরার গর্ভে হাসানের অবৈধ সন্তান।

রাইশাঃ হাসান তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে!

সোহাগ মির্জাঃ কিন্তু মিরা? ওতো কোনও অপরাধ ছাড়াই এতো অসম্মান সহ্য করেছে।ও অনেকবার আমার কাছে নিজের সম্মানটুকু ভিক্ষা চেয়েছে।বলেছে আমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।আর আমি কিনা গোটা সমাজের চোখে আমার মিরাকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিলাম।

রাইশাঃ ভাইয়া শান্ত হও।

সোহাগ মির্জাঃ কিভাবে শান্ত হবো বল? এতোগুলো বছর ধরে ভেতরে ভেতরে আমার যে এই অপরাধবোধ টুকু কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি বোন।মিরা আমাকে পায়ে পরে বলেছিল, বিশ্বাস করুন আমি পবিত্র।আমার সবকিছুই শুধু আপনার।আমি আপনার আমানত ওই হাসানকে নষ্ট করতে দেয় নি।আর আমি মিরাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিয়েছি।ও অনেক বার আমাকে ডেকেছে আমি শুনিনি।আজ যখন ও নেই তখন আমি কস্ট পাচ্ছি। আমার ভেতরটা শূন্য মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে।
আচ্ছা, আমার সন্তান কি পৃথিবীর আলো দেখেছে নাকি আমার অংশ বলে মিরা তাকে…

রাইশাঃ ছিঃ ভাইয়া এমন কথা বলো না।আমার ভাবি কক্ষণো এমন কাজ করতে পারে না।

সোহাগ মির্জাঃ যদি তাই হয় তাহলে তো এতোদিনে আমার সন্তান অনেক বড় হয়ে গেছে।

রাইশাঃ হুমম।একদম আমাদের রুসার সমবয়সী।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here