গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৭
লেখাঃ #Mst_Liza
মায়া দুই ঘন্টা ধরে স্টোর রুমে শ্যামলি বসুর ফাইলটি খুঁজে চলেছে। আর মাহির আড় চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।একটা মুহূর্তও মায়াকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না।এদিকটায় খোঁজও ওদিকটায় খোঁজও পায়ের উপর পা তুলে হুকুম করে চলেছে।মায়া চেয়ার নিয়ে উপরের তাকের ফাইল গুলো নামাতে চেস্টা করে।হাতটি উঁচু করে ফাইলগুলো নামাতে গেলেই পুরোনো ফাইলগুলোর ভেতর থেকে কিছু ছোটো ছোটো তেলাপোকা বেরিয়ে এসে মায়ার হাত বেয়ে কামিজের মধ্যে ঢুকে যায়।মায়া চিৎকার করে লাফাতে লাফাতে চেয়ার থেকে নেমে মাহিরের সামনে এসে কামিজ ঝাড়তে থাকে।
মায়াঃ আআআআআ
মাহির খপ করে মায়াকে ঠেলে পাশের দরজাটার সাথে মিশিয়ে মায়ার মুখটা হাতদিয়ে চেপে ধরে রাখে।
মাহিরঃ সমস্যাটা কি তোমার? এইভাবে চিৎকার করছো কেন?
মায়া মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলে,
মায়াঃ তেত.. তত.. তেলাপোকা
মাহিরঃ হোয়াট?
তেলাপোকা মায়ার কামিজের মধ্য পিঠের দিকে চলে যায়।মায়া উল্টো ঘুরে মাহিরকে ইশারায় দেখায় যে সে হাতে পাচ্ছে না।
মাহির দেখে খেয়াল করে হ্যাঁ সত্যিই মায়ার কামিজের মধ্যে কিছু একটা দৌড়া দৌড়ি করছে।তাই আর কিছু না ভেবেই মাহির মায়াকে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।মায়ার ঘারের উপর থেকে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কামিজের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেয়।তারপর হাতিয়ে তেলাপোকা ধরে বের করে আনে।আচমকা মাহিরের এমন আচারণে মায়া হতবম্ব হয়ে যায়।গলা থেকে কোনো স্বর বের হয় না।মাহিরও বুঝতে পেরে মায়ার থেকে অনেকটা দূরে সরে দাড়ায়।
পাশের পরে থাকা অনেকগুলো ফাইলের মধ্যে চোখ যেতেই শ্যামলি বসুর নামটা দেখে ফাইলটা টেনে তোলে মাহির।
মাহিরঃ পেয়েছি!
এক্ষুণি ফাইলটার থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিপোর্ট বের করতে হবে।তাহলেই জানা যাবে হসপিটালের আর কে কে এই ফাইলটা স্পর্শ করেছে।আর এই হসপিটালের এমন কে আছে যে আমাকে ফাঁসাতে চাই!
মায়াঃ আপনাকে কেউ কেন ফাঁসাতে চাইবে?
মাহিরঃ সেটা যেনে তোমার কি কাজ? যাও এখান থেকে।
মায়া মুখটি ফ্যাকাসে করে চলে যাবে বলে স্টোর রুমের দরজাটা খুলছে যা জ্যামে আটকে আছে।
মাহিরঃ কি হলো যেতে বলেছি না তোমাকে?
মায়াঃ স্যার দরজাটা খুলতে পারছি না!
মাহিরঃ একটা দরজা খুলতে এতো ঢং?
চোখ পাকিয়ে মায়াকে সরতে বলে মাহির দরজাটা টেনে দেখে সত্যিই খোলা যাচ্ছে না।
মাহিরঃ ওহহ সিট! আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম।
মায়াঃ কি স্যার?
মাহিরঃ দরজাটা একবার বন্ধ করলে বাইরে থেকে ধাক্কা না দিয়ে খোলা যায় না।
মায়াঃ তাহলে এখন কি হবে?
মাহিরঃ যানি না! আমার ফোনটা কেবিনে রেখে এসেছি! নইলে স্নিগ্ধাকে ফোন করতাম!
মায়াঃ সমস্যা নেই স্যার আমার কাছে ফোন আছে।আমি এক্ষুণি রুসাকে ফোন করে আসতে বলছি।
মায়া রুসাকে ফোন করে,
রুসা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলে,
আর কিছু বলার আগে মায়ার ফোনটা বন্ধ হয়ে যায়।মায়া হ্যালো হ্যালো করে তাকিয়ে দেখে ফোনটা বন্ধ।
মাহিরঃ কি হলো?
মায়াঃ ফোনে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে।
মাহিরঃ সারাদিন ফোনে কি এমন কর যে চার্জ থাকে না!
প্রচন্ড বকা খায় মাহিরের কাছে মায়া।এমন সময় হঠাৎ বিদুৎ চলে যায়।মায়া অন্ধকারে খুব ভয় পেয়ে চিৎকার করে মাহিরকে জড়িয়ে ধরে।
মাহিরঃ এই মেয়ে কি হচ্ছে কি! ছাড়ো আমাকে!
মায়াঃ নাহ স্যার, প্লিজ ছাড়তে বলবেন না আমাকে।আমি অন্ধকারকে ভীষণ ভয় পায়।
মাহিরঃ ন্যাকামু হচ্ছে? ছাড়ো বলছি।
মায়াঃ আপনি পরে দরকার হলে আমাকে দু’চারটা চর বসিয়ে দিয়েন আমি তবুও এখন আপনাকে ছাড়তে পারব না।
মাহিরঃ ফাজলামু করছো কিন্তু তুমি! ছাড়ো!
মায়াঃ বললাম তো না।
মাহির মায়াকে দূরে সরিয়ে দেয়।মায়া আবার মাহিরের বুকের সাথে মিশে যায়।
মাহিরঃ আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি।
মায়াঃ আপনি রাগলেও আমার এখন কিচ্ছু করার নেই।তাছাড়াও আমি আপনার স্ত্রী। আমার সাথে আপনি এমনটা করতে পারেন না।
মায়া মাহিরকে আরও জোড়ে ঝাপটে ধরে।
মাহিরঃ তুমি অনেক বেয়াদব হয়ে গেছো।তোমাকে মাইর দেওয়া উচিৎ।না হলে সুধরাবে না।
মায়াঃ মারুন তবুও আপনাকে আমি এখন ছাড়তে পারব না।আমি আমার স্বামীকে ধরেছি।আর বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত এভাবেই থাকব।
আপনার যা করার বিদ্যুৎ আসলে করবেন।
দুম করে আলো জ্বলে ওঠে।মায়ার চোখদুটি অন্ধকারের ভয়ে এখনও বন্ধ হয়ে আছে।মাহির দেখে বিদ্যুৎ আসার পরও মায়া তাকে ছাড়ছে না।মাহিরের অসহ্য লাগে ব্যাপারটা। মায়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মায়ার চোখ বন্ধ পেয়ে ঝাকাতে থাকে।মায়া চোখ খুলে দেখে বিদ্যুৎ এসেছে।আর মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মাহিরের চোখ রাগে গজগজ করছে।আজ মায়ার রক্ষা নেই।মাহির তো মায়াকে স্ত্রী হিসেবে মানে না তাহলে মায়া কেন বারবার নিজের অধিকার বোধটা জানান দিতে যাবে! মায়া মুখ ঘুরিয়ে মাহিরের থেকে একটু দূরে সরে দাড়ায়।
মায়াকে টেনে সামনে নিয়ে আসে মাহির।
মাহিরঃ ইচ্ছা করছে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিই।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।সভ্যতা বলতে কিছু শেখো নি?
মায়াঃ আমি কি সত্যি কোনও ভুল করেছি?
মাহিরঃ আবার জানতে চাও? আজ তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।একই তো এখানে আটকে আছি বেড়োবার উপায় খুঁজবো তা-না যত্তসব।
মাহিরের এমন কথা বলার পর মায়া কেঁদে উঠে জোড়ে চিৎকার জুড়ে দেয়।
মায়াঃ বাঁচাও বাঁচাও।মরে গেলাম বাঁচাও।
মাহিরঃ এই চিৎকার করছো কেন তুমি? কেউ এখানে আমাদের দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
মায়াঃ কেউ কি আছো বাঁচাও।
মাহিরঃ আমি বলছি থামো।
এতোক্ষণে মায়ার চিৎকার শুনে কেউ একজন এসে পড়েছে।সে দরজা খুলতে গেলে মায়ার কানে আওয়াজ আসে।সাথে সাথে মায়া মাহিরকে ঠেলে দরজার পিছনে লুকিয়ে দিয়ে নিচে বসে পরে।ডা.নাহিদ এসে মায়াকে এখানে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়।ডা.নাহিদ মায়ার পাশে বসে।
ডা.নাহিদঃ একি মায়া তুমি এভাবে এখানে বসে আছো কেন?
মায়া চোখের ইশারায় মাহিরকে চলে যেতে বলে।মাহির স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে কি করতে চাইছে মায়া!
মায়াঃ একটা বেড়ালের পেছনে ছুটতে ছুটতে এখানে এসে পড়ে গেছি। কিছুতে উঠতেই পারছি না স্যার।
ডা. নাহিদ মায়ার পা ভালো ভাবে নাড়িয়ে চারিয়ে দেখে।
ডা.নাহিদঃ নাহ তোমার পা তো ঠিক আছে!
মায়াঃ ঠিক আছে তাই না? কিন্তু আমি তো উঠতেই পারছি না স্যার।
ডা.নাহিদঃ সামান্য মোচ হয়তো।ঠিক হয়ে যাবে।
মায়াঃ ওহহ তাহলে ঠিক আছে।
ডা.নাহিদঃ খুব কি ব্যাথা করছে মায়া?
মায়াঃ হুমমমম
মায়াঃ আমি কি তোমাকে হেল্প করব?
মায়া দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মাহির এখনও আছে।মায়া চোখের ইশারায় মাহিরকে বার বার চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
মায়াঃ হেল্প করবেন? করুন স্যার।
ডা.নাহিদ মায়াকে কোলে তুলে উঠাতে চায়।মাহির দেখে মনে মনে বলে, এই মেয়ে কখনও সুধরাবার নয়।তারপর চোখ পাকিয়ে মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায় মাহির। মায়া মাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে এক লাফে উঠে দাড়ায়।
মায়াঃ থাক স্যার। আমার পা একদম ঠিক হয়ে গেছে।এই দেখুন আমি নারাতে পারছি।এখন হাটতেও পারব।
মায়া স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।আনমনা হয়ে হাটতে থাকে।রুসা এসে মায়াকে ডাক দেয়।মায়া খেয়াল করে না। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে ইজিবাইকে উঠে।
রুসা দৌড়ে মায়ার কাছে আসার আগেই মায়া চলে যায়।
রুসাঃ যাহ বলতেই পারলাম না।
চলবে…..