গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৯
লেখাঃ #Mst_Liza
মায়া ফোনটা চার্জে লাগিয়ে অন করে ওয়াশরুমে যায়।এর মধ্যে রুসার অনেক গুলো মিসড কল।মায়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে রুসাকে ফোন করলে রুসা মায়াকে পার্টিতে যাওয়ার কথা বলে।মায়া প্রথমে না করে দেয়।কিন্তু পরে কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়।এরপর শ্বাশুড়ি মায়ের অনুমতি নিয়ে চলে যায় মির্জা প্যালেসে।
,
মির্জা প্যালেস,
রুসাঃ চলো না মামা সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে
সোহাগ মির্জাঃ তুই কি পাগল হয়েগেলি মা, এই বয়সে জন্মদিনের কেক কাটবো?
রুসাঃ তুমি যাবে কিনা তাই বল?
সোহাগ মির্জাঃ তোরা তোরা যা করবি কর আমাকে প্লিজ ডাকিস না।
রুসাঃ দেখো তোমার জন্যই এই পার্টির আয়োজন করেছি এখন তুমি না করলে হবে না
সোহাগ মির্জাঃ রাইসূল বোঝাও তোমার মেয়েকে!
রাইসূল সিকদারঃ কি বুঝাবো ভাইয়া? আপনাদের ব্যাপার আপনারাই বুঝে নিন এর মধ্য আমাকে কেন টানছেন?
রুসাঃ প্লিজ, মামা! তুমি সারাদিন মামির ছবি নিয়ে এভাবে পরে আছো এখন তো একটু বাইরে চলো।
সোহাগ মির্জাঃ আজ আমাকে একটু একা থাকতে দে মা
রুসাঃ তাহলে তুমি যাবে নাতো?
সোহাগ মির্জাঃ নাহ।
রুসাঃ ঠিক আছে, আমার কথা তুমি শুনলে নাতো!আমি কালই হোস্টেলে চলে যাব।থেকো তুমি একা।
সোহাগ মির্জাঃ তোকে নিয়ে আর পারি না।চল তবে আমি বেশীক্ষণ থাকতে পারব না
রুসাঃ আগে চলো তো সেটা পরে দেখা যাবে
পার্টির এক কোণে বসে আছে মায়া।এদিকে সবাই পার্টিতে মেতে আছে।চারিদিকে হৌ হুল্লোড় কেমন যেন একটা অন্যরকম পরিবেশ।এতোটা গান-বাজনা আর ঝাঁক ঝমক পরিবেশের মধ্য মায়া আগে কখনও আসে নি।কেমন যানি একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।আবার ভালোও লাগছে।
মায়াঃ আচ্ছা এই বাড়িটা তো সোহাগ মির্জার।এই শহরের অনেক বড় বিসনেজম্যান সে।মা তো তার নাম শুনতেই ফ্যান।ইসস রে! আজ যদি মা থাকতো! যাই হোক, যেই জন্য আশা, সোহাগ মির্জার সাথে কয়েকটি ছবি তুলে বড় করে বাঁধিয়ে মাকে পাঠিয়ে দেব।মা যা খুশী হবে নাহ।উফফ আমার তো তরই সইছে না।ইচ্ছা করছে এখনই মায়ের সেই খুশী হওয়া মুখটা দেখি।
হঠাৎ পার্টির সবগুলো লাইট অফ হয়ে যায়।সবাই সামনে তাকায়। একটি আলো এসে সোহাগের উপরে পরেছে।পুরো অনুষ্ঠানের সবার নজর সোহাগের দিকে।সোহাগ সিঁড়ি থেকে নামছে আর সবাই হাত তালি দিচ্ছে।মায়াও সবার দেখাদেখি জোড়ে জোড়ে হাততালি দিতে থাকে।সোহাগ নিচে নেমে আসলে সবাই হাততালি বাজানো বন্ধ করে দেয়।আর মায়ার হাত এখনও তালি বাজিয়ে যাচ্ছে।সোহাগ আস্তে করে হেটে মায়ার কাছে এসে দাড়ায়।আলোটা গিয়ে সোহাগ আর মায়ার উপরে পরে।সবার দৃষ্টি এবার সোহাগ আর মায়ার দিকে।সোহাগের কেমন যানি মায়াকে খুব চেনাচেনা লাগছে।মনে হচ্ছে খুব কাছের আপন কোনো এক স্বত্ত্বা।মায়ার মুখটাও যেন খুবই পরিচিত।একদম মিরার মতো তাকানোর অঙ্গভঙ্গি।আর চোখটা হুবোহু মিরার।
সোহাগ মির্জাঃ কে তুমি?
সাথে সাথেই পার্টির সবগুলো লাইট জ্বলে ওঠে। রুসা এসে মামার হাত ধরে বলে,
রুসাঃ আরে মামা এ আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড মায়া।এবার আসো তো কেক কাটবে।সবাই সেই কখন থেকে ওয়েট করছে
রুসা সোহাগকে টেনে নিয়ে যায় কেকের কাছে।মায়াকেও ডাকে।
রুসাঃ কি হলো মায়া ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন এদিকে আয়।
মায়া এদিকে ওদিকে তাকিয়ে মাহিরকে কোথাও খুঁজে পাই না।তারপর এসে সোহাগের পাশে দাড়ায়।সোহাগ কেক কেটে অচেতন ভাবে মায়ার মুখের কাছে ধরে।মায়া হা করে যেই কেকের টুকরাটা মুখে দিতে যাবে ওপাশ থেকে,
রুসাঃ একি মামা আমি তো এপাশে!
সোহাগ মির্জাঃ ওহহ সরি, ভুল হয়ে গেছে।
সোহাগ রুসার মুখে কেকের টুকরোটা দিলে মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়।মনে মনে ভাবে, রুসা কত ভাগ্যবতী যে কিনা বাবার সাথে মামার ভালোবাসাটাও পেয়েছে। কত হাসি, খুশি, ভালোবাসা আর কেয়ারিং এ ভরপুর এই পরিবারটা।যেখানে সব আছে।ইসস! এরকম একটা পরিবার যদি আমারও থাকতো! তাহলে হয়তো আজ সমাজের মানুষের এতো অবহেলা সহ্য করতে হতো না।
এমন সময় রুসা এসে মায়ার মুখে মধ্যে কেকের একটা টুকরো ঢুকিয়ে দেয়।
রুসাঃ কি রে মুখপুড়ি! ওভাবে মুখ পুড়িয়ে থেকে কি ভাবছিস?
মায়াঃ কিছু না! ভাবছিলাম তোর মামার সাথে কয়েকটি ছবি তুলবো
রুসাঃ তোল তোকে কে বারন করেছে?
মায়াঃ না কেউ বারন করে নি কিন্তু তোর মামা যদি না বলে দেয়? তুই যা গল্প শুনিয়েছিলি আমার তো দেখেই ভয় লাগছে যদি চর, থাপ্পড় কিছু একটা বসিয়ে দেয়
সোহাগ মির্জাঃ কে কাকে মারবে?
মিরা তাকিয়ে দেখে সোহাগ সামনে দাড়ানো
মায়াঃ আপনি মারবেন
সোহাগ মির্জাঃ মানে?
মায়াঃ হ্যাঁ।আমি রুসার কাছে শুনেছি খুব মারতেন আপনি আপনার স্ত্রীকে।
মায়ার এমন কথা শুনে সোহাগের মাথাটা নিচু হয়ে যায়।মায়া আবার বলে,
মায়াঃ কিন্তু খুব ভালোবাসেন।একদম সিনেমার হিরোদের মতো
সোহাগ মায়ার এই কথাটা শুনে হেসে দেয়।
সোহাগ মির্জাঃ তাই বুঝি! তুমি কিভাবে যানলে আমি আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি?
মায়াঃ কেন আঙ্কেল আমি কি মিথ্যা বলেছি? আপনি ভালোবাসেন না আপনার স্ত্রীকে।
সোহাগ মির্জাঃ হুমম।বাসি তো।
এভাবে মায়া আর সোহাগের ভেতর কথা শুরু হয়।অনেক কথা হয় দুজনের মধ্যে কিন্তু কেউ যানে না দুজনের মাঝে থাকা রক্তের সম্পর্কের কথা।কথা বলতে বলতে মায়া কয়েকটা ছবিও তুলে নেয় সোহাগের সাথে, মাকে পাঠাবে বলে।অতঃপর মায়া পুরো পার্টিতে মাহিরকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও না আছে মাহির আর না আছে স্নিগ্ধা।
চলবে……