গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ২২
লেখাঃ #Mst_Liza
,
হসপিটালে
রাইসূলের দেওয়া ২৪ ঘন্টা পার হতে আর মাত্র ২ ঘন্টা বাকি।এর মধ্যে পুলিশ এসেও বসে আছে।হসপিটালের সব ডাক্তার ধরে নিয়েছে মাহিরের ডাক্তারি আজ এখানেই শেষ।মাহির হসপিটালে এসে দেখে শ্যামলি বসুর বাড়ির লোকজন অনেক চিৎকার চ্যাচামেচি করছে।সাথে চলছে জনগনের আহাযারি।মিরা মেডিকেল হসপিটাল হায়! হায়! মিরা মেডিকেল হসপিটাল হায়! হায়! ইট,পাটকেল যে যা পাচ্ছে সবাই হসপিটালের উপর ছুড়ে মারছে।মাহির এসে ভীর ঠেলে রাইসূলের কেবিনে যায়।রাইসূল খুব ক্ষিপ্ত হয়ে বসে আছে।মাহির রাইসূলের সামনে গিয়ে দাড়ালে রাইসূল পুলিশকে দেখিয়ে দেয়। এই সেই ব্যক্তি নিয়ে যান একে।পুলিশ এসে মাহিরের সামনে দাড়ালে মাহির রাইসূলের কাছে ২ ঘন্টা সময় চাই। রাইসূলের মাথার ঠিক থাকে না। সে অনেক রেগে পুলিশকে বলে মাহিরকে যতদ্রুত সম্ভব চোখের সামনে থেকে নিয়ে যেতে।মাহির অনেক বোঝানোর চেস্টা করে রাইসূল কিছুতেই শুনতে চাই না।তারপর পুলিশ মাহিরকে এ্যারেষ্ট করে বাইরে আনলে সবাই জোরে জোড়ে ইট,পাটকেল ছুড়তে থাকে।একটা ইটের টুকরো এসে মাহিরের কপালে লেগে কপালটা কেটে যায়।পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে জনগনকে পিটিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে মাহিরকে জীপে উঠিয়ে খালিশপুর থানায় নিয়ে আসে।
মায়া ইজিবাইকে করে হসপিটালে আসায় একটু দেরি হয়ে যায়।মাহিরকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরে মায়া হসপিটালের মধ্যে ঢোকে।এতো চিৎকার চ্যাচামেচি কিসের সেটা ভাবতে ভাবতে ক্লাসরুমে যায়।আজকের প্রথম ক্লাসটা ছিল ডাক্তার মাহিরের সাথে।মাহিরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় সব স্টুডেন্ট ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মায়া ক্লাসরুম ফাঁকা পেয়ে সবাইকে খুঁজতে খুঁজতে ক্যান্টিনে গিয়ে সকলের আলোচনা শুনে কেঁপে ওঠে।মাহিরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে শুনে মায়া কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের কেবিনে ছুটে যায়।পুরো কেবিনে তন্ন তন্ন করে খোঁজে গতকালকের স্টোররুমে পাওয়া শ্যামলি বসুর সেই নকল ফাইলটি। তারপর খেয়াল করে টেবিলের উপর গতকালের স্টোররুমে পাওয়া সেই নকল ফাইলটি পরে আছে।মায়া আর কিছু না ভেবেই ফাইলটা নিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যায়।এমন সময় রাস্তায় বেরিয়ে তারাতারি কোনও রিক্সা বা ইজিবাইক না পেয়ে দৌড়াতে থাকে। পুরো রাস্তা দৌড়াতে দৌড়াতে থানায় আসে।
মায়া থানায় আসার পর খুব ক্লান্ত হয়ে যায়।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।পাশে একটা পুলিশকে যেতে দেখে ডাক দেয়।
মায়াঃ ভাইয়া শোনেন, এখানে ডাক্তার মাহিরকে ধরে এনে কোথায় রেখেছে বলতে পারেন?
পুলিশটা মায়ার মাথার থেকে পা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে মায়ার হাত পা কাপছে।
পুলিশঃ আপনি কে?
মায়াঃ আমি উনার…
মায়া কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না আমতা আমতা করে যায়
পুলিশঃ কি হলো বলুন আপনি উনার কে?
মায়াঃ আমি উনার স্টুড…
পাশ থেকে মাহিরের বাবা সোহেব খান এসে বলে
সোহেব খানঃ স্ত্রী। উনি ডা.মাহির খানের স্ত্রী
পুলিশঃ ওহহ।আর আপনি?
সোহেব খানঃ আমি ডা.মাহির খানের বাবা
পুলিশঃ আচ্ছা, তাহলে ভেতরে আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি।
বলে পুলিশটি সামনে আগাতে থাকে।
মায়া সোহেব খানকে এখানে দেখে অবাক হয়।তাই জিজ্ঞেসা করে,
মায়াঃ বাবা আপনি এখানে? আপনি কিভাবে জানলেন?
সোহেব খানঃ টিভিতে দেখলাম।প্রতিটা চ্যালেনে এই একই নিউজ।ডা.মাহির খান ভুল অপারেশন করে একজন সুস্থ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।তাই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ হসপিটালের সুনাম নস্ট হওয়ায় কেস করেছে মাহিরের নামে।
মায়াঃ বাবা! এসব টিভিতেও দেখাচ্ছে?
সোহেব খানঃ হ্যাঁ রে মা।বাবা হয়ে কি এসব দেখে আর চুপচাপ বসে থাকতে পারি? তাই চলে আসলাম!
সোহেব খান কথাটা বলে খুব ভেঙে পরে।মায়া তাকে ধরে মাহিরের সাথে দেখা করতে যায়।
মায়াঃ স্যার
মাহির গারদের ভেতর থেকে তাকিয়ে দেখে মায়া আর বাবা এসেছে।
মাহির এগিয়ে আসলে মায়া মাহিরের কপাল থেকে রক্ত ঝড়তে দেখে।মায়ার খুব কস্ট হচ্ছে মাহিরকে এই অবস্থায় দেখে।
মাহিরঃ মায়া।বাবা বিশ্বাস করো কেউ আমাকে ফাঁসানোর চেস্টা করেছে।
সোহেব খানঃ আমি যানি বাবা তুই এমনটা করতে পারিস না।
মাহির মায়ার দিকে তাকালে, মায়া ওড়নার আঁচলটা উঠিয়ে গারদের গ্রিরিলেল ফাঁক দিয়ে মাহিরের মুখটা ছুয়ে দেখে।তারপর কপালের থেকে রক্ত মুছে দেয়।মাহির মায়ার নাম ধরে ডেকে উঠলে।মায়া মাহিরের সামনে ফাইলটা ধরে।
মায়াঃ স্যার এই সেই ফাইলটা এটা পুলিশকে দিলে তারা কি আপনাকে ছেড়ে দিবে?
মাহিরঃ না মায়া এই ফাইলে কিছু প্রমাণ হবে না।পুলিশ তো ভাববে আমি এই ফাইলটা বানিয়ে রেখেছি নিজেকে বাচাঁনোর জন্য।
মায়াঃ তাহলে?
মাহিরঃ আমি ফিঙ্গার পেন্ট রিপোর্ট বের করেছিলাম।এই ফাইলটাই আমি ছাড়াও হসপিটালের আরও একজন ডাক্তারের হাতের ছাপ আছে।আমার মনে হয় সেই আমাকে ফাঁসাতে চাই।কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ আমি জোগাড় করতে পারি নি।
মায়াঃ তাহলে কি হবে? কিভাবে প্রমাণ হবে আপনি র্নিদোষ?
মাহিরঃ একটা উপায় আছে।
মায়াঃ কি?
মাহির মায়াকে একটা প্ল্যান দেয়।
মাহিরঃ বুঝতে পেরেছো কি করতে হবে?
মায়াঃ হ্যাঁ।কিন্তু সেই ফিঙ্গার পেন্ট রিপোর্টটা কোথায়?
মাহিরঃ আমার কেবিনে টেবিলের উপর একটা বই রাখা আছে।সেই বইয়ের মধ্যে রেখেছিলাম।
চলবে…….