গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৯
লেখাঃ #Mst_Liza
,
রাইসূল খবর পাঠায় ডাক্তার, নার্স এবং হসপিটালের যতো স্ট্রাফ আর স্টুডেন্ট আছে সকলকে নিয়ে মিটিং হবে।রাইসূলের ডাক পরতেই হসপিটালের সকলে এসে হাজির।শুধু মায়ার মনের অবস্থা ভালো না থাকায় মাহির মায়াকে নিয়ে মিটিংয়ে পৌঁছাতে একটু লেট করে ফেলে।
যখন মায়া আর মাহির আসে তখন তাদেরকে সামনে দাড় করিয়ে রাখে রাইসূল।
এক সারিতে সকল ডাক্তার এবং এক সারিতে সকল স্টুডেটরা দাড়িয়ে আছে।মায়ার চোখ মুখ কাঁদতে কাঁদতে অনেকটা শুকিয়ে আছে দেখে মাহির মায়ার খুব কাছে এক হাত পিঠে, আরেক হাত কোমড়ে রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে।স্নিগ্ধা তো মাহির আর মায়াকে দূর থেকে এই অবস্থায় দেখতেই পারছে না। শুধু ভেতরে ভেতরে জ্বলছে।আর মায়ার ফ্রেন্ডরাও একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে আর ফিসফিসিয়ে বলছে,, আজ মায়া শেষ।
ডা. মানহাঃ দেখেছেন স্যার এদের কোনও লজ্জা নেই।সকলের সামনেও
রাইসূল হাতটা উঁচু করে ডা.মানহাকে থামতে বলে।হাতের ইশারায় বোঝায় এখানে আমিও উপস্থিত আছি।তারপর রাইসূল মায়া আর মাহিরের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
রাইসূল সিকদারঃ এটা হসপিটাল ডা.মাহির খান।এখানে কিছু রুলস আছে। আপনি কি রুলসগুলো যানেন?
মাহিরঃ ইয়েস স্যার।
রাইসূল সিকদারঃ তাহলে এসব কি? আপনি সব রুলস ভেঙে একটা স্টুডেন্টের সাথে হসপিটালের মধ্যে বিশৃঙ্খলা কেন করছেন? এতে অন্য স্টুডেটদের মধ্যে কি প্রভাব ফেলবে বুঝতে পারছেন? আপনি কি যানেন এর শাস্তি আপনার জন্য কি হতে পারে?
মাহিরঃ সরি স্যার।আমার সত্যিই ভুল হয়ে গেছে।আর আমি জানি এর শাস্তি আমার জন্য কি হতে পারে।
হঠাৎ স্নিগ্ধা এগিয়ে এসে বলে,
স্নিগ্ধাঃ ডা.মাহিরের কোনও দোষ না স্যার।সব দোষ এই নষ্টা মেয়েটার।একটা পিতৃ পরিচয়হীন মেয়ে। হয়েছেও একদম মায়ের মতোন।এর থেকে বেশি কি আর করতে পারে? আ.এম শিওর ও-ই মাহিরকে ফুসলিয়ে এসব নষ্টামি করছে হসপিটালের মধ্যে।
স্নিগ্ধার কথাটি শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।মায়া তো কেপেঁ ওঠে।হঠাৎ এতো মানুষের ভীরে এভাবে কথাটা উঠার জন্য।মায়া সহ্য করতে না পেরে সাথে সাথেই মাহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।সবাই ব্যাপারটা নিয়ে ফিসফিসে বলতে থাকে ডা.স্নিন্ধা কি বলছে এসব? মায়া কি সত্যিই পিতৃ পরিচয়হীন একটি মেয়ে?
মাহির মুখ খোলে,
মাহিরঃ স্নিগ্ধা তুমি কিন্তু এবার সত্যিই অনেক বারাবাড়ি করে ফেলেছো।
স্নিগ্ধা মাহিরের কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে,
স্নিগ্ধাঃ আমি তো তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছি জান।
মাহির সেই মুহূর্তেই ঠাসসস করে স্নিগ্ধার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।শব্দটা এতো জোড়ে হয় যে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে যায়।তারপর মাহির বলতে শুরু করে।
মাহিরঃ হ্যাঁ আমি ভুল করেছি।নিজের স্ত্রীর পরিচয় গোপন রেখে।তাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
সবাই মাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।মাহির রাইসূলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
মাহিরঃ ক্ষমা করবেন স্যার। সত্যটা গোপন রাখার জন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু আমার যে কিচ্ছু করার নেই।মায়া আমার স্ত্রী। আজ মিরা মায়ের এক্সিডেন হয়েছে।এই সময়টা যে আমাকে ওর খুব প্রয়োজন। কোনও রুলস পারে না স্বামী কে তার স্ত্রীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে।আমি যে অপরাধ করেছি এতোদিন ধরে আমার স্ত্রীকে কস্ট দিয়ে। তা আমি শুধরে নিতে চায়।
মাহির মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া খুব ভেঙে পরেছে।মাহির আবার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,
মাহিরঃ মায়ার দুটো পরিচয় একটা মায়ার বাবাও মিরা মা আর মাও মিরা মা।অন্য টা হচ্ছে মায়া আমার স্ত্রী। যেখানে আমার স্ত্রীর সম্মান নেই সেখানে আমি থাকবো না। চলো মায়া।
মাহির মায়াকে ধরে চলে যেতে লাগে এমন সময়ে মায়ার গলা থেকে লকেট টা খুলে পরে যায়।যেই লকেটে মিরার ছবি আছে।মায়া লকেট টা সবসময় নিজের কাছে রাখে।কারণ এটা থাকলে মায়া তার মাকে অনুভব করে।মনে হয় সবসময় মা তার আশেপাশেই আছে।
মাহির আর মায়া চলে যাওয়ার পর রাইসূলের চোখ লকেটের উপর পরে।দেখে তাতে মিরার ছবি।নিচু দিয়ে রাইসূল লকেটটা উঠায়।ঝাপসা চোখে খুব কাছে থেকে লকেটটা দেখে রাইসূলের চোখে আনন্দের অশ্রুতে ভরে ওঠে।
রাইসূল সিকদারঃ এই লকেট টা কি মায়ার? তাহলে মায়া কি আমার মিরা আপুর সন্তান?
এ আমি কি করলাম?
ডা.মানহাঃ কিছু ভাবছেন স্যার? ওদের শাস্তির ব্যাপারটা…
রাইসূল ডা.মানহাকে একটা উচ্চ স্বরে ধমক দেয়।
রাইসূল সিকদারঃ সমস্যাটা কি আপনার?
ডা.মানহাঃ মানে?
রাইসূল সিকদারঃ এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান।
ডা.মানহাঃ কিন্তু স্যার…
রাইসূল সিকদারঃ আবার কথা বলছেন? আমি এখন একটু একা থাকতে চায়। সবাই প্লিজ এখান থেকে চলে যান।
চলবে….