গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ৩১

0
1895

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ৩১
লেখাঃ #Mst_Liza
,
সকলের উপস্থিতির এই শুভক্ষণে মিরা পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নেই।কাউকে যেন মিরা খুঁজছে।

মিরাঃ মা কোথায় রাইসূল?

রাইসূল মিরার ডাকে ছুটে এসে মিরার পাশে বসে।

রাইসূল সিকদারঃ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপু যে তুমি ফিরে এসেছো।

মিরাঃ মা আসে নি ভাই?

রাইসূল চুপ করে থাকে।

মিরাঃ কি হলো বল? মাকে কেন আনলি না? আমারতো মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।

রাইসূল এবার মিরার কোলে মাথা ঠেকিয়ে কান্না জুড়ে দেয়।মিরা রাইসূলের মাথায় হাত ছুঁইয়ে বলে।

মিরাঃ এই বোকা কাঁদছিস কেন?

রাইসূলে মাথা তুলে মিরাকে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কাঁদে।

রাইসূল সিকদারঃ এইভাবে আমাদের ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলে আপু? কতো খুঁজেছি তোমাকে যানো? অনেক মিস করেছি তোমাকে আমি।

মিরাঃ আমিও মিস করেছি তোদের।প্রত্যেকটা মুহূর্ত তোদের সবার কথাই শুধু ভেবেছি।

রাইসূল সিকদারঃ তাহলে এতোদিন কেন আসলে না?তুমি যানো? মা মৃত্যুর আগে বলেছিল তোমাকে একবার দেখবে।কিন্তু

কথাটা বলে রাইসূল থেমে যায়।আর কিছু বলতে পারে না।শুধু কাঁদে।

মিরাঃ কিন্তু কি? মৃত্যুর আগে মানে?

রাইসূল মিরার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।

রাইসূল সিকদারঃ মা আর আমাদের মাঝে নেই আপু।অনেকদিন আগেই মা মারা গেছে।

কথাটা শুনে মিরা একটা বড় ধাক্কা খায়।অনেকটা কস্ট হয় মিরার।কস্টে মিরা কাঁদে আর ভাবে, সে এতো অভাগী যে মায়ের মৃত্যুর আগে একটাবার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পারলো না।এমন সময় মিরার বুকের ভেতর এক অসহনীয় ব্যাথা শুরু হয়।মিরা খুব জোড়ে কাশতে থাকে।কাশতে কাশতে মুখ থেকে খানিকটা রক্তও বেরিয়ে যায়।শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটা চেপে ধরে রাখে মিরা।যেন নিঃশ্বাসটায় বন্ধ হয়ে আসছে।সোহাগ এসে মিরাকে ধরে।মিরা সোহাগের মুখটার দিকে তাকায়।কিন্তু কিচ্ছু স্পষ্ট দেখতে পায় না।মিরার দু’চোখের সামনে সবকিছু ঝাঁপসা আধার নেমে আসে।

সোহাগ মিরাকে ঝাকাতে শুরু করে।

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে তোমার?

মিরা দুলে পরে যেতে লাগে।

সোহাগ মির্জাঃ মিরা কথা বলো।কেউ আছো? রাইসূল, মাহির প্লিজ দেখও না! মিরা কেন এমন করছে?

তখনই মিরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সোহাগ মিরার রক্তাক্ত মুখটা ধরে ডাকে, এই মিরা ওঠো! ওঠো বলছি! ওঠো না!

রাইসূল আর মাহির এসে কিছু একটা ভেবে মিরাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গাড়িতে,

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে মিরার?

রাইসূল আর মাহির চুপ করে আছে।দুজন একে অপরের চোখের দিকে তাকাচ্ছে আর নিরবতা পালন করছে।

সোহাগ মির্জাঃ কি হলো তোমরা তো ডাক্তার। বলো কি হয়েছে আমার মিরার?

মাহিরঃ বাবা হসপিটালে গিয়ে মিরা মায়ের কিছু টেস্ট করতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সোহাগ মির্জাঃ মানে?

সোহাগ রাইসূলের দিকে তাকিয়ে দেখে রাইসূল মাথাটা নিচু করে শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছছে।মায়া তার মায়ের হাতের তলা ডলতে ডলতে মাকে ডাকছে।অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে আছে সোহাগ।

হসপিটালে এসে মিরাকে খাটনিতে শুইয়ে দিয়ে ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।সোহাগ মিরার হাতটি ধরে আছে।একটা নার্স এসে সোহাগের থেকে মিরার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে মিরাকে ভেতরে নিয়ে যায়। সবাই বাইরে বসে আছে।সোহাগ কাঁদছে। আর মনে মনে বলছে,

সোহাগ মির্জাঃ আজ তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার ছিল মিরা।শুধু তুমি নও আমিও যে তোমাকে খুব ভালোবেসে এসেছি।তোমার সব ভুল ধারণাগুলো আজ ভেঙে দেব আমি।একবার সুস্থ হও।তোমাকে বলব আমার মনের ভেতরে জমিয়ে রাখা কথা গুলো। তুমি বলতে না আমায়? আমার এই চোখ, মুখ, ঠোঁট, নাক আর এই বাঁকা স্বভাব। সব কিছুকেই তুমি ভালোবাসো! তাই তো আমি এতোগুলো বছর ধরে এই সবকিছুই তোমার জন্য তুলে রেখেছি।তোমার আমানত হিসেবে।এগুলো যে অন্য কাউকে কক্ষনও ছুঁতে দেয় নি আমি। একটা সময় তোমার সামনে হিংস্র মানুষ হয়ে দাড়াতে চেয়েছিলাম।তোমায় কস্ট দেব বলে।তোমার প্রতি প্রতিশোধ নেব বলে।কিন্তু তার মানে এই নয় তোমার অধিকারটা আমি অন্য কাউকে দিয়ে দেব।তুমি যা দেখতে সব ভুল। ওগুলো তোমাকে দেখাতাম কস্ট দেব বলে।

সোহাগ বসে থেকে কথাগুলো মনে মনে বলতে থাকে।এমন সময় মায়া এসে নিচে বসে সোহাগের হাঁটুতে মাথা রাখে।সোহাগ তাকিয়ে মায়াকে দেখে মায়ার হাত রেখে বলে,

সোহাগ মির্জাঃ আচ্ছা মায়া! সবকিছুই তো ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।তাহলে এমনটা কেন হলো?

মায়া মুখ তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবার চোখে পানি টলমল করছে।মায়া উঠে বাবার পাশে বসে চোখ থেকে পানি মুছিয়ে দেয়।

মায়াঃ কেঁদো না বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে।ওই আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।সে নিশ্চয় ভালো মানুষের সাথে খারাপ কিছু করতে পারে না।আমার মা তো ভালো তাই না?

সোহাগ মির্জাঃ হুমমমম

সোহাগ মায়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

মাহির বেড়িয়ে আসে ও.টি থেকে।সবাই মাহিরকে দেখে এগিয়ে যায়।মাহির সোহাগ আর মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে মাহির? মিরাকে দেখেছো? ও এখন ঠিক আছে তো?

মাহির মাথাটা নিচু করে আছে।

মায়াঃ কি হলো বলুন?

মাহিরঃ মায়া, বাবা যে কথাটা এখন আমি আপনাদের বলব, প্লিজ আপনারা ভেঙে পরবেন না।

সোহাগ মির্জাঃ এভাবে কেন বলছো বাবা? মিরার কি কঠিন কোনও অসুখ হয়েছে?

মাহির মাথাটা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।

মাহিরঃ মিরা মায়ের শরীরে ক্যান্সার ধরা পরেছে।এখন লাস্ট স্টেজে আছে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here