গল্পটা তোমার আমার ১ম পর্ব

0
5514

গল্পটা তোমার আমার ১ম পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin

“কাইন্ডলি আঁচলটা ঠিক করো” কথাটা শুনে যেনো দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় অরনীর। আজ তার বিয়ে হয়েছে। হুট করেই হয়েছে ,দু সপ্তাহের মধ্যে মেয়ে দেখে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হয়েছে। যদিও বিয়েটা কেঁচে দেবার চেষ্টা করেছিলো অরনী। কিন্তু ছেলে নাকি এ মেয়ে বাদে বিয়ে করবে না। আজ বাসর রাত তাদের। রাত ১২.৩০ টা অবধি অরনী একা বসেছিলো। একে গরম তার উপর এতো ভারি সাজ। হয়তো একটু আঁচলটা সরে গেছে। এরমধ্যে মহাশয় এসে এই বাক্য ঝারলেন। ভাবটা এমন যেন অরনী ইচ্ছা করে খুলে বসে আছে। অরনী কিছু না বলে আঁচল ঠিক করে নিলো। ও পা ধরে সালাম করা পছন্দ করে না তাই উঠে সালাম করলো না। আচ্ছা বরের নাম বলা হয় নাই , বরের নাম ফারহান। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, তিন বছর হয়েছে জব করে। যদিও দরকার নেই । বাপের অঢেল টাকা আছে। বাবা ব্যবসায়ী তার। কিন্তু ফারহান নিজের ক্ষমতায় কিছু করতে চেয়েছে। বাবা মাকে খুব সম্মান করে, বাবাকে ভয়ও পায়। ৩ বছর বড় অরনী থেকে। পরে আরোও বিবরণ দিবো। এই মহাশয় রাত ১২.৩০ টায় এসে এখন এ কথা বলছে , লজ্জায় এখনো কিছু বলতে পারছে না অরনী। এবার আবার বললো ফারহান, “যাও চেঞ্জ করে আসো, রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যাও । সকালে উঠতে হবে।“ অরনী কোনো ভাবে কাপড় নিয়ে চেঞ্জ করে আসলো। মেকাপ তোলার পর অরনীকে আরোও ফ্রেশ লাগছে। অরনী বের হবার পর ফারহান ওকে একবার আপাদ মস্তক দেখলো। ছোটখাটো মেয়ে ৫ ফুট হবে। গোলগাল ,মোটামুটি ফর্সা আর শ্যামলার মধ্যের গায়ের রঙ, বর্ণনা করা যাচ্ছে না । একটু হেলদি, চশমা পরে। চুল বেশি বড় না কাঁধ অবধি। সুন্দরই বলা যায়। আসলে সৌন্দর্য চোখের বেপার। একবার আপাদমস্তক দেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লে। অরনী চুপচাপ খাটে বসে আসে। ফারহানকে বের হতে দেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলো। ফারহান ভাবলো অরনী ঘুমায়ে গেছে। তাই আস্তে করে বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরিয়ে ধোয়ায় উরাতে থাকে তার চিন্তা। শুয়ে থাকতে থাকতে অরনী ও ঘুমায়ে যায়, সারাদিন অনেক ধকল গেছে।

সকাল বেলা অরনীর ঘুম ভেঙ্গে যায় চোখে আলো পড়ায়। উঠে ওর চক্ষু চরাগ গাছ। রুমে একটা সোফা আছে ফারহান ওখানে ঘুম। খকটা লাগলো অরনীর। একটু পর সবাই ডাকতে আসবে। তাই ঘুম থেকে তুলতে গেলো। চোখ যেন আটকে গেলো অরনীর। এত সুন্দর ছেলে হয়! উজ্জ্বল শ্যামলা , লম্বাটে মুখ, পাপড়িগুলা বড় বড়, গোলাপি ঠোঁট। ভীষন মায়াবি , এমনে সময় চশমা পড়ে, লম্বা ও খারাপ না ৫ ফুট ১১ । সুদর্শন পুরুষ, তাও অরনীর যেন প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করছে না, কিছু মিসিং। চোখ খুলে দেখে কেউ ওর উপর উবু হয়ে অর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আতকে উঠে বসলো। চোখ ঢলে ঠিক ভাবে দেখতে পারছে না তাই চশমা নিতে হাতরাচ্ছে পাশের টেবিলে। তখন অরনী বললো “উঠুন সকাল হয়ে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।“ ফারহান বুঝলো এটা অরনী । চশমা পরে বেলকনিতে গেলো সে। অরনী একটা মিষ্টি কালারের লং কামিজ পরে বের হলো অরনী ৩০ মিনিট পর। ভেজা চুল মুছতে মুছতে বের হলো অরনী। ফারহানকে ফ্রেশ হতে বললো সে। ফারহান একপলক অরনীকে দেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে , এই মেয়ে এভাবে চলে কেন । যদিও সে তার হাসবেন্ড তাই বলে ওরনা বাদে চলবে ফারহানের সামনে। না কথা বলতেই হবে।

ওয়াশরুমে টাওয়াল নিতে ভুলে গেছে ফারহান। ডাক দিতেই হবে কিচ্ছু করার নাই । অরনী সুন্দর টাওয়ালটা দিতে আসলো । টাওয়াল নেয়ার সময় হাতে হাত লাগলো দুজনের। কেমন শীতল অনুভূতি হলো অরনীর। কোনো মতে টাওয়াল দিয়ে এসে রেডি হতে লাগলো। সকাল ৯ টা ফারহানের ভাবী, কাজিনরা, বোন ফাবিহা দরজায় কড়া নাড়লো। অরনী দরজা খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড় করে ঢুকলো। অরনীকে দেখে ফাবিহা বললো “ বাহ! ভাবী তুমি রেডি। শাড়ি পরলে না ?”

“ আমি শাড়ি পরতে পারি না। যতবার পরছি পার্লার থেকে।“(অরনী)

“ আচ্ছা আমি পরিয়ে দিচ্ছি” বলে ভাবী শাড়িটা বের করলো। খুব সুন্দর লাল জামদানি, মেচিং ব্লাউজ, গয়নাও আছে। এগুলা পরে নিচে যেতে হবে । ফারহানদের বাড়িটা অনেক পুরানো। ওর দাদা বানিয়েছিলো। দু তালা , দুপ্লেক্স না । নিচে খাবার রুম, ডাইনিং, লিভিং রুম, ফারহানের বাবা মার রুম, চাচা চাচির রুম। উপরে ফারহান, ফাবিহা, ফারহানের চাচাতো ভাই ফাহিম আর চাচাতো বোন ফারিহার রুম। ফাহিম ফারহানের বড়, বিয়ে হয়ে গেছে । যে ভাবী কথা বলছে সে ফাহিমের বউ।

“ উনিতো বাথরুমে।“ (অরনী)

সবাই মুখ টিপে হাসছে। “ঠিক আছে আমার রুমে চলো।“(ফারিহা)

ফারহান বেরিয়ে দেখলো রুমে কেউ নেই। ও ড্রেস পরে নিচে চলে গেলো। খাবার টেবিলে বসে সামনে তাকাতে মুখ হা হয়ে গেলো। লালে কাউকে এত সুন্দর লাগে! লাল শাড়ি, মেচিং ফুল হাতা ব্লাউজ, হাল্কা গয়না, মাথায় কাপড়। জামদানি শাড়ি অথচ এক বিন্দু শরীর দেখা যাচ্ছে না। মুখে কোন মেকাপ নেই শুধু লাল লিপস্টিক। ফাবিহার ধাক্কায় হুশ আসলো। কোন রকম খেয়ে উপরে দৌড় দিলো ফারহান।

সকাল ১১.৩০ । রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো ফারহান, তখন ঢুকলো অরনী। খুবই টায়ার্ড লাগছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এটা আড়চোখে দেখছিলো ফারহান। এবার বলতে লাগলো সে, “ দেখো, তোমার সাথে কথা আছে । একটু উঠে বসলে ভালো হয়”

“কি কথা” উঠে বসতে বসতে অরনী বললো।

“ বিয়েটা করেছি আমি ঠিকই কিন্তু তোমাকে বউয়ের অধিকার দিতে পারবো না। আমার গার্লফ্রেন্ড আছে । আমার কাছ থেকে কিছু আশা করো না। ৬ মাস পর আমরা ডিভোর্স নিতে পারবো। তাই আমার সামনে একটু সভ্যভাবে চলবে শালীনতা বজায় রেখে ” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো ফারহান।

“ মানে?”

“ মানেটা স্পষ্ট মা-বাবার তোমাকে পছন্দ ছিলো, যেকারনে আমি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছি ।“

“আপনি কি সিরিয়াল বেশি দেখেন নাকি গল্প বেশি পড়েন ?”

“ হ্যা?”

“ আপনার কেনো মনে হলো এ কথাগুলো আপনি বলবেন আর আমি শুনে রাজি হয়ে যাবো? আমি যতদূর শুনছি আপনি নাকি আমাকে ছাড়া কাওকে বিয়ে করবেন না।“

“ তোমাকে দেখে মনে হয়েছে তুমি ম্যাচুয়ার। আমার প্রবলেম বুঝবে।“

“ আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। আর আপনার কাছে এই স্ত্রীর অধিকারটা আসলে কি?”

ফারহান হতবাক হয়ে অরনীর দিকে চেয়ে আছে। এরপর যা হলো তাতে ওর হুশ উরে গেলো। এরপর অরনী ………

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here