গল্পটা তোমার আমার ৪র্থ পর্ব

0
3004

গল্পটা তোমার আমার
৪র্থ পর্ব
#Musfikun Nesa Tanjin

” আমাকে কতটা ভালোবাসো?”( অরনী)
” বেশী না এত্তুখানি “বৃদ্ধাআঙ্গুল আর তর্জনী মিশিয়ে দেখালো স্বপ্ননীল। ওর উত্তরে যেন অরনীর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। মুখ ফুলিয়ে,নাক ফুলিয়ে বললো ” লাগবেনা তোর ভালোবাসা রাখ নিজের কাছে।”
” নিলে নাতো যখন থাকবো না তখন এতটুকু ভালোবাসা খুজে বেড়াবা” হাসতে হাসতে স্বপ্ননীল বললো।
ফেলে আসা দিন ফেরত আসে না আসবেও না,শুধু রেশ রয়ে যাবে। বেলকনিতে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছে অরনী। রাত ১১ টা, ফারহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুম নেই অরনীর চোখে।
আধা ঘন্টা আগে, খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে দেখে ফারহান চেগায়ে শুয়ে আছে। অরনী কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। শাড়িটা গুছিয়ে বিছানায় বসতে যাবে দেখে ফারহান এখনো সেভাবেই শুয়ে আছে।
” একটু সরুন আমি শুবো।” ( অরনী)
” আমি প্রতিদিন সোফায় শুতে পারবো না। আর তোমার মত মেয়ের সাথে আমি আমার বিছানা শেয়ার করবো না।” ( ফারহান)
” ভুলে যাচ্ছেন সকালে কি বলেছি, আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। আর এ ঘরে আপনার যেমন অধিকার আছে আমারও তেমন অধিকার আছে। সো সরুন।” ( অরনী)
বাঁকা হেসে ফারহান পানির জগটা অরনীর শোয়ার জায়গায় ফেলে দিলো।
” এটা কি ধরনের ফাজলামি, আপনি কি বাচ্চা??? ” ( অরনী)
” ঘুমাও মানা করেছে কে!” বাঁকা হেসে ফারহান বললো।
” আপনার IQ লেভেল যে বাচ্চার থেকে কম তা আমার অজানা ছিলো।”( অরনী)
” Everything is fair in love and war. লাভের তো প্রশ্নই উঠে না আমাদের মধ্যে ওয়ার ই পসিবল। গেট রেডি। এতো জ্বালাবো যে নিজেই আমাকে ছেড়ে দিবা।” ( ফারহান)
” সিরিয়াসলি এই গেম প্লানিং এ আমার সাথে লাগতে আসছেন। আমার এসবে কিছুই যায় আসে না। ঘুমালাম না বিছানায়। কিন্তু কয়দিন, ভুলে যাচ্ছেন কালকে আমার বাড়ি যাবেন। মোবাইল ভাঙ্গার শোধ এভাবে নিলেন তো। এখনের কান্ডের শোধ আমি কিভাবে নিবো জাস্ট ওয়েট এ্যান্ড ওয়াচ।”( অরনী)
” দেখা যাক। আজ তো ভালো ঘুম আসবে।” ( ফারহান)
সোফায় কিছুতে ঘুম আসছে না। অরনী বেলকনিতে গেলো। আকাশ পরিষ্কার, চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। হালকা বাতাস বইছে,অরনীর খুব ইচ্ছা ছিলো বিয়ের পর স্বপ্নের সাথে এক সাথে চাঁদ দেখবে। স্বপ্নের কাধে মাথা রেখে বৃষ্টিবিলাশ করবে। সবই স্বপ্নতে সীমাবদ্ধ।
” মানুষ কতোরকম হয়। একজন মাঝপথে হাত ছেড়ে দিল আর আরেকজন হাততো ধরলো কিন্তু অন্যজনের হাত ধরার জন্য। তুমি কেনো কথা রাখলে না স্বপ্ন, আমায় মাঝপথে কেন ছেড়ে দিলে। আজ আমি চাঁদ দেখছি, সারাদিন শাড়ি পরে ছিলাম কিন্তু দেখো তুমি পাশে নেই। কেনো ঠকালে, তোমরা ছেলেরা খালি ঠকাতেই কি পারো! ফারহানের সাথে হাতে হাত রেখে চলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও তো রিয়াকে নিয়ে পথ চলতে চায়। আমি কি করবো। না এবার আমাকে স্বার্থপর হতে হবে। আমারটা আমাকেই বুঝে নিতে হবে।” মনে মনে ভাবছে অরনী।
আযানের ধ্বনি কানে আসলে গোসল করে নামাজ পড়তে যায় অরনী। আজ অরনীর বাসার মানুষ আসবে। নামাজ পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল ঝারতে থাকে। খাটের পাশে টেবিলটা হওয়ায় চুলের পানির ছিটা ফারহানের মুখে পড়ছে। চোখ কচলাতে কচলাতে চশমাটা চোখে পড়লো। অরনীকে দেখে হার্টবিট যে বেড়ে গেছে খুব ভালোভাবে বুঝছে৷ খুবই স্নিগ্ধ লাগছে অরনীকে। চুল গুলো বটে আছে। আছরিয়ে ঠিক করেছে। সামনের ব্যাংগসগুলো কপালে পরছে, একচোখ ঢেকে গেছে। অনেক কিউট লাগছে। চোখ কেনো যেনো সরাতে পারছে না। অরনী পাশে তাকিয়ে দেখে ফারহান ওর দিকে নেশাগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে। গলা খাখাড়ি দিয়ে বললো, ” উঠে গেছেন যখন নামাজ পরে রেডি হয়ে নিন। আমি নিচে যাই দেখি কেউ উঠেছে কিনা।”
“আমার জন্য চা পাঠিয়ো ময়নাকে বলে।” নিজেকে সামলিয়ে বললো ফারহান।
” হুম।” ফারহান যাওয়ার পর অরনীর হাসি পেলো কারন ফারহান লজ্জা পেয়ে গেছিলো ওকে হঠাৎ করে ডাকায়।
নিচে যেয়ে অবাক অরনী এতো সকালেও মানুষ উঠে গেছে। নিজের বাসায় ছুটির দিন ১২ টার আগে কোনোদিন উঠেছে কিনা সন্দেহ আছে। ১ টাও বাজে মাঝে মাঝে। আজ যদি রাতে ঘুমাতো তাহলে পারফেক্ট বউ হওয়া হয়ে উঠতো না। আসলে অরনীর বাবা মা দুজনেই অসুস্থ তাই তাদের সকালে উঠা হয় না। ১০ টায় সবাই উঠে আর অরনীর বোন ( অদ্রি) ভার্সিটিতে পড়ায় ক্লাসের দিন সকালে উঠে। বড় মা, শ্বাশুড়ি মা রান্না ঘরে নাস্তা বানান। অরনীর যেহেতু এ বাড়িতে টিকে থাকতে হবে তাই বড়দের প্রিয় হতে হবে। কারন ফারহান বড়দের খুব সম্মান করে আর তার বউ হয়ে থাকতে গেলে ওর বাবা মার মেয়ে হতে হবে। তাইলে বাবা মা অবাধ্য হয়ে ফারহান ওকে ডিভোর্স দিবে না।
” আমি কি করবো মামুনি, যদিও কিছু পারি না রুটি না ভেজে দেই?”( অরনী)
” আরে উঠে গেসো? কিছু করা লাগবে না এদিকে আসো। এই দুদিনে কথাই তো ভালো করে হয় নি। আসো দেখ কি করি, যদি কিছুর দরকার হয় তখন বলব।” ( রিমা বেগম)
” শাড়ি পড়তি, ভালো লাগে শাড়ি পড়লে” ( ফরিদা বেগম)
“আমি শাড়ি পড়তে পারি না।আর এই সকালে কাউকে ডিসটার্ব করতে চাই নি।” ( অরনী)
” আচ্ছা আমি শিখিয়ে দেব। যাও ফারহানকে কফিটা দিয়ে আসো। আর শুনো তোমার বাড়ির লোকরা আসলে শাড়ি পরো, আজকে আমি সময় দিতে পারবো না ফারিহা, ফাবিহা বা নীলিমাকে( ভাবি) বলো।” ( রিমা বেগম)
” আচ্ছা। ” বলেই কফিটা নিয়ে রুমে চলে এলো। ফারহান ফ্রেশ হয়ে টি- শার্ট পড়ছে। হুট করে অরনী ঢুকে পড়ায় ফারহান অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
“এই কান্ডবজ্ঞান নেই তোমার! নক না করে এভাবে ঢুকলে কেনো?” (ফারহান)
” নিজের ঘরে নক করবো কেন। নিজের জিনিস যেভাবেই থাকুক আমারই তো।”(অরনী)
“তাই নাকি?” বলেই বেডে টি-শার্ট টা ফেলে অরনীকে হ্যাচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। অরনী শুধু ফারহানকে মজা করে কথাটা বলেছিল। কারন জানতো ফারহান দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু এমন ভাবে নিজের কাছে নিয়ে আসবে এটা কল্পনার বাইরে। ফারহানের এতো কাছে অরনী কখনো আসে নি। এক হাত ফারহানের হাতে অন্য হাত ফারহানের বুকের উপর। বুকের লোমগুলো হাতে বাধছে। ফারহানের নিঃশ্বাস অরনীর মুখে আচড়ে পরছে। ফারহানের মাতাল করা গায়ের গন্ধ নাকে আসছে। এটা কি পারফিউম এর গন্ধ নাকি ওর গায়ের গন্ধ বুঝতে পারছে না। খুবই মাতাল করছে অরনীকে। ফারহান আর অরনীর মধ্যে দূরত্ব এক ইঞ্চিও না। ফারহান অরনীর মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটের দিকে আগাতে থাকে। অরনী আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
” তুমি লজ্জাও পেতে পারো?” কানের কাছে মুখ নিয়ে ফারহান বললো। কথাটা শুনেই অরনী চোখ খুলে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহান চোখ টিপ মেরে অরনীকে ছেড়ে দিলো।
” শুধু তুমি আমাকে টিজ করতে পারো! আমি কি পারি না নাকি!” বলে হাসতে হাসতে নিচে চলে গেলো। অরনী মুচকি হেসে রুম থেকে বের হতে গেলে ফারহানের ফোন বেজে উঠে। অরনী ফোনটা নিয়ে নিচে যাবে বলে ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রিনের নামটা দেখে মনের ভেতরটা যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ রিয়া ফোন করেছে।
” ফোনটা দাও।”….
চলবে

[ আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট প্লিজ n,nice,next কমেন্ট করবেন না। একটু গঠনমুলক সমালোচনা করবেন। আমি বুঝতে পারবো আমার ভুলগুলো। আর এই কমেন্ট আমাকে হেল্প করবে গল্পটা লিখতে। so feel free to give feedback ]

৩য় পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here