গল্পটা তোমার আমার
৫ম পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin
” আমি আসছি নেক্সট মাসে। যদিও ছমাস পর আসার কথা ছিল। কিন্তু সামনের মাসে আসবো। আমার কাজ শেষ।” ( রিয়া)
” তা আপনি ফারহানকে কেনো ফোন দিয়েছেন”( অরনী)
কিছুক্ষন আগে,
ফারহান ফোনটা চাইলে অরনী ফোনটা লুকিয়ে বললো,
“আপনার ফোন ভাংগে নাই? এত জোরে আছাড় দিলাম”
” ডিসপ্লে ফাটছে, ঠিক করাবো কালকে। দাও “( ফারহান)
” খেতে যান। এখন ফোন নিয়ে খুটখুট করা লাগবে না। “( অরনী)
” সেটা কি তুমি বলে দিবা?”( ফারহান)
” হ্যা। এখন থেকে আমিই বলবো। যান খেতে যান নয়তো আবার আছাড় দিবো এবার ভেংগে যাবে।”(অরনী)
ফারহান কথা বাড়ালো না কারন এতো সকালে ওর কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ফোন ও আসবে না। আর খাবার টেবিলে ফোন নেয়া বাবা পছন্দ করে না। ফারহান চলে গেলে অরনী ফোন চেক করে। কলটা কেটে গেসিলো ফারহান এর ডাকে। আবার কল আসলে অরনী রিসিভ করে কথা বলে। অরনীর ভয়েজ শুনে রিয়া জিজ্ঞেস করে,
” আপনি কে?”
” ওর স্ত্রী”(অরনী)
” ফারহান বিয়ে করেছে?” ( রিয়া)
” এমা আপনি জানেন না” (অরনী)
” না…… গত পরশু কথা হয়েছে, ও তো কিছুই বললো না।” কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো রিয়া। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। কিছুক্ষন চুপ থেকে অরনী বললো, ” হয়তো আপনাকে বলা জরুরি মনে করে নি।”
” তাই হবে হয়তো। আমি ওর সাথে যা করেছি তাতে এটাই প্রাপ্য। যাক congratulations and wish u a very happy married life.” বলে ফোনটা রেখে দিলো রিয়া।
একরাশ চিন্তা নিয়ে ডাইনিং এ যায়।প্রথমে ছেলেদের খাওয়া হলে মেয়েরা বসে। খাওয়ার পর রিমা বেগম (মামুনি) অরনীকে তাদের রুমে নিয়ে গেলো।
” এটা পরবে আজকে, আর এই গয়নাগুলো ও। নীলিমা বা ফাবিহা শাড়ি পরিয়ে দিবে। এখন রুমে যাও। দুপুরে তো বেয়ানরা আসবেন,তাই গোছগাছ করে নেও। আর শোনো যা দেখা যায় তা আসলে হয় না।”(মামুনি)
“আচ্ছা মামুনি” বলেই রুমে চলে এলো। মাথা যেনো কাজ করছে না, কি হচ্ছে ওর সাথে। রিয়ার কথাতে ওর সব এমনেই এলোমেলো লাগছিলো, এখন মামুনি কি ইঙ্গিত করলো? অনেক প্রশ্ন উত্তর একজন দিতে পারে ফারহান। রুমে ডুকতেই দেখে ফারহান রুমে নেই।বেলকনি দিয়ে ধোঁয়া আসছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফারহান সিগারেট খাচ্ছে। মেজাজ বিগড়ে আছে এমনেই রিয়ার কথা শুনে,উপরদিয়ে এই মহাশয় সিগারেট খাচ্ছে। দ্রুত গতিতে হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে নিচে ফেলে দিলো অরনী।
” আর যেন না দেখি ছাইপাশ খেতে।সোজা মামুনিকে বলে দিবো।” ( অরনী)
” তোমরা বউরা একে তো দাদাগিরি করবা উপর দিয়ে থ্রেড দিবা কই যামু।” (ফারহান)
” হুম দাদাগিরি করার সার্টিফিকেট পেয়েছি। ব্যাগ গুছিয়ে নিন, আমারটা গুছানো আছে। আমি একটু ঘুমাবো,মাথা ব্যাথা করছে।”( অরনী)
” না গেলে হয়না?”( ফারহান)
” একদিনের জন্য যাচ্ছেন তাই এমন করছেন,আর আমিতো সারাজীবনের জন্য আসলাম।তাও যদি হাসবেন্ডটা জাতের হতো।মরিচিকার পেছনে সারাজীবন বাজি ধরে বসে আছি।” অরনী কথাটা বলেই চলে যেতে চাইছিলো।ফারহান হাত টেনে ধরে বললো, “আমার সাথে আসলেই ঘর করতে চাও?”
অরনী ফিরে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহানের চোখ আজ যেনো অন্যকিছু বলতে চাচ্ছে। অনেক কিছু আছে এই চোখে দ্বিধা,জিজ্ঞাসা,শুন্যতা।
” আমি একবার যখন আপনার হাত ধরতে চেয়েছি, তখন আপনার খারাপ ভালো মিলিয়েই আপনার হাত ধরবো। শুধু ভালোটাকে আপন করবো এরকম ইচ্ছা নেই। কালকের কথা শুনে যখন এখানে আছি তাহলে আপনার বুঝা উচিত।”(অরনী)
” অতীত কিন্তু পিছু ছাড়ে না। আর আমার মাঝপথে হাত ছেড়ে দেয়া লোক পছন্দ নয়।”( ফারহান)
” তবে আমার মিথ্যাবাদী পছন্দ না।”( অরনী)
” সত্যিটা আপেক্ষিক, কিছু সত্যি দূরত্ব বাড়ায়, আর কিছু সত্যি দূরত্ব কমায়। আমাদের সত্যির পরিনাম অজানা।তাই বলছি একটু সময় নেয়া উচিত। “(ফারহান)
” ফারহান একটা কথা বলি?”(অরনী)
” বলো শুনছি।”(ফারহান)
“সম্পর্কের শুরুটা মিথ্যা বা সত্যি লুকিয়ে রেখে করলে,পরে যন্ত্রণা বাড়ে। প্রথমেই সব স্পষ্ট থাকলে, বিশ্বাস আর সম্মান দুই বজায় থাকে।” (অরনী)
“ঠিক আছে, আমাকে ২ দিন সময় দাও। আর এখানে একটু দাঁড়াও।( ফারহান)
” আমার মত অ্যারোগেন্ট মেয়েকে সহ্য হবে তো?”(অরনী)
“উপায় আছে? নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল দিয়েছি” ( ফারহান)
বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো দুজন।খারাপ লাগছে না অরনীর, গতদিন বা সকালে রিয়ার কলের পরে যতটা বিরক্ত ছিল ফারহানের প্রতি এখন তা লাগছে না,বরং ভালো লাগছে। ফারহানের অনুভূতি একই। সত্যি বলতে অরনীর খচ্চরভাব ইন্সট্যান্ট বিরক্ত লাগলেও ফারহানের ভালো লাগে যখন অরনী ওর আশেপাশে থাকে।
“চলুন,ব্যাগ গুছাবেন।”(অরনী)
ফারহান ব্যাগ গুছিয়ে দেখে অরনী এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। সব ছোট চুলগুলো মুখের উপর পড়ে আছে। একটা মেয়ে এমনে ঘুমায় কেমনে।এই দুদিনে এই প্রথম অরনীকে ঘুমাতে দেখছে।মানুষ বলে ঘুমের মধ্যে নাকি মায়াবি লাগে মেয়েদের।এই মেয়ে যেমনে ঘুমাচ্ছে মায়াবি কম পাগল বেশি লাগছে।
” উফ বউ দিছে একটা আল্লাহ আমারে। Best of luck to me. পাগলি। ” মনে মনে ভাবছে আর হাসছে ফারহান।
“ওই উঠো। রেড়ি হবানা ১ টার দিকে ওই বাড়ির লোক আসবে। উঠো।(ফারহান)
” উঠি পাঁচ মিনিট। “( অরনী)
” আচ্ছা পাঁচ মিনিট।”বলে ফারহান নিচে গেলো।
“অরনীর গোছগাছ হয়ে গেছে ফারহান?” ( নীলিমা)
” হ্যা ভাবি হয়ে গেছে, ওর মাথা ব্যাথা করছে তাই আমি ওকে একটু ঘুমাতে বললাম।আসলে ওর এই দুদিনে নতুন বেডে ঘুম ভালো হয় নি।এখন মাথার রগ ফুলে গেছে,তাই আর ওকে উঠায় নি।”(ফারহান)
“ভালো করছিস আজকে আবার মানুষজন আসবে। রেস্ট নিক।” (মামুনি)
” সকালে আমার মনে হচ্ছিলো ভাবির খারাপ লাগছে। কেমন চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ।”(ফাবিহা)
” শোনো ফারহান বিয়ে করেছো, এখন ওর ভালোমন্দের দায়িত্ব তোমার। এমন কিছু করবে না যাতে মেয়েটা কষ্ট পায়।”(বড় মা)
” জ্বী বড় মা। বাবা আর বড় বাবা কোথায়? কিছু কথা ছিলো।”(ফারহান)
“উনারা আমাদের রুমে আছে। যাও দেখ।”( মামুনি)
“আসবো বাবা?”(ফারহান)
ফারহানের মা-বাবার রুমে আসহাব জামান (ফারহানের বাবা) আর ওয়াহিদ জামান ( ফারহানের বড় বাবা) কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
” হ্যা আসো, কিছু বলবে?”( বাবা)
“বাবা আমি বিয়ে করেছি, তোমার পছন্দে। এবার কি তোমরা তোমাদের কথা রাখবা?জোর করবো না, শুধু আমি নিজস্ব কিছু করতে চাই। আমার কাছে যা আছে তাতে হয়ে গেলে আমি তোমাদের হেল্প চাইতাম না। এতোদিনে আমার এভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নিজের সামর্থ্যতে চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখন আমার একটতু হেল্প লাগবে, এই প্রজেক্ট অনেক বড় আর ফান্ড দরকার। যদি এটার উপর আমার কোম্পানির ফিউচার জরিত না থাকতো আমি তোমাদের বলতাম না।” (ফারহান)
“আচ্ছা প্রথম মানে আমার শর্ত তুমি রাখছো। কিন্তু তোমার বড় বাবার একটা শর্ত আছে।” (বাবা)
“আচ্ছা বলো।” (ফারহান)
“তুমি তোমার কোম্পানির সাথে সাথে আমাদের ব্যাবসার ও খেয়াল রাখবে। আমাদের বয়স হয়েছে আর ফাহিম একা হাতে সব পারবে না।” (বড় বাবা)
“ঠিক আছে। তোমরা এটা নিয়ে ভেবো না।”( ফারহান)
” কবে লাগবে টাকাটা?”( বাবা)
” নেক্সট সপ্তাহে। “(ফারহান)
” খরিদদার খুজে রেখো।”( বাবা)
” রেডি বাবা।”(ফারহান)
“বেশ, তবে শ্বশুর বাড়ি থেকে আসো ঘুরে কাজ হয়ে যাবে।” (বাবা)
” থ্যাংকস বাবা,বড় বাবা। আমি আসি তাহলে।”(ফারহান)
“বউমার খেয়াল রেখো।” (বড় বাবা)
“আচ্ছা” বলে রুমে চলে এলো ফারহান। একটা ঝামেলা শেষ,এবার রিয়ার ঝামেলাটা মিটাতে পারবে ফারহানের জীবনে আর ঝামেলা নেই। কিন্তু ও তো জানে না অরনী সেই ঝামেলা আগেই শেষ করে দিয়েছে।রুমে যেয়ে দেখে অরনী শাড়িটা পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“একি সাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?” (ফারহান)
” সবাই ব্যাস্ত আর আমি শাড়ি পরতে পারি না।”( অরনী)
অরনীর কথা শুনে ফারহান হো হো করে হেসে দিলো ভাবটা এমন যেন বেস্ট জোক শুনেছে।
” হাসার কি আছে, হেল্পতো করতে পারেন নাকি???” ক্ষেপে গিয়ে অরনী বললো।
” দাও, কি আর করার চালকুমড়া ঘরে এনেছি।”…..
চলবে