গল্পটা তোমার আমার ৭ম পর্ব

0
5077

গল্পটা তোমার আমার
৭ম পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin

“আমার আর রিয়ার রিলেশন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকে। সাড়ে ছ বছর আমি এই রিলেশনে ছিলাম।” (ফারহান)

কিছুক্ষন আগে,
“আপনি এখন যে মিথ্যে বলছেন না তার কি গ্যারেন্টি?”(অরনী)
“আমি তোমাকে আমার জীবনের সবথেকে বড় সত্যিটা বলতে যাচ্ছি। এটাই আমার জীবনের সত্যি। জানি না তুমি বিশ্বাস করবে কিনা! তবুও তোমাকে বলবো। রিয়া আমার জীবনের একটা বড় অংশ ছিলো।একটা ফেলে আসা স্মৃতি ও।” (ফারহান)
“ছিল? এখন নেই?” (অরনী)
“না নেই। তোমাকে আমি ১০ বছর আগে নিয়ে যেতে চাই।শুনবে তো আমার গল্পটা?” (ফারহান)
“I am good listener,you can continue.” (অরনী)
“আমার আর রিয়ার রিলেশন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকে। সাড়ে ছ বছর আমি এই রিলেশনে ছিলাম।আমরা একই ফ্রেন্ড সার্কেলে ছিলাম, আমি,ভুবন,প্রিন্স,রিয়া।আমাদের রিলেশনটা অনেক সুন্দর ছিলো।রিয়া অনেক ভালো ছাত্রী ছিলো।। সারাদিন পড়াশোনায় ব্যস্ত। আমি অতটা পড়াশোনা করতাম না।ওর বাবা অনেক বড় ব্যবসায়ী।অনেক বড়লোক ওরা। ওর সাথে আমার অমিল ছিল অনেক। ভাগ্যক্রমে একই ভার্সিটিতে চান্স পাই। ভার্সিটির চার বছর আমাদের রিলেশনে অনেক কিছুই ফেস করি।ও বরাবর ফার্স্ট হত। ওর অ্যাম্বিশন অনেক।আমার তাতে কোন আপত্তি ছিলো না।ও জব করবে, আমার কোন অবজেকশন ছিলো না।আমার বরাবর সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট মেয়ে ভালো লাগে।তাই তো তোমাকে দেখতে যাওয়ার আগে শর্ত ছিলো তুমি যেন চাকরিজীবী হও। কিন্তু আমার জয়েন্ট ফ্যামিলি ওর পছন্দ ছিলো না।এটা নিয়ে অনেক খুটাখুটি হতো। যাক গে, পাশ করলাম আমি চাকরি শুরু করি আর ও ভার্সিটির টিচার হয়।বেতন যা স্টার্টিং এ পেতাম তা হল ২০ হাজার,বলে রাখি এটা রিয়ার মাসিক হাত খরচা। আমি কেনো চাকরি করছি, কেন বাবা ব্যবসায় জয়েন করি নি, এ নিয়ে পাশ করার পর অনেক বাধতো।ছ বছরের রিলেশনটা নেক্সট ছ মাসে খুব বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল। হুট করে একদিন রিয়া বললো ও ব্রেকঅাপ করবে। আমি কারন জানতে চাইলে সে বললো তার আমাকে আর ভালো লাগে না, আমাদের মধ্যে স্পার্কটা নাকি নেই।আমার জন্য ওর MSC পড়া হ্যাম্পার হচ্ছে। যাক, আমি ওকে অনেক আটকানোর ট্রাই করি, ও শোনে না। পড়ে দেখি আমাকে ব্লক করে দিয়েছে সব জায়গা থেকে।দু মাস আমি পাগলপ্রায় হয়ে গেছিলাম।আমার MBA, job লাটে উঠেছিল। তারপর আমি জবটা ছেড়ে দেই।ডিপ্রেশনে চলে গেছিলাম,প্রতিদিন একবার ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম ওকে দেখার জন্য।পাগলামিটা ঘরের মানুষের কাছে ধরা পড়লো যখন জব ছেড়ে দেই।তারপর একদিন হুট করেই এক ফ্রেন্ডের পোস্টে দেখি রিয়ার বিয়ের ছবি। ও বিয়ে করেছে,ওর বাবার বন্ধুর ছেলেকে। অনেক বড়লোক সে,ব্যবসায়ী।” বলেই কিছুক্ষণ চুপ করে আছে ফারহান।
“তারপর?” (অরনী)
“আমি ট্রমায় চলে গেলাম।নিজেকে রুমবন্দি করে ফেল্লাম। আমার কাছে সব যেনো স্পষ্ট ছিল। কেনো আমাকে ওর ভালো লাগতো না।বাসায় বাবা,বড়বাবা আমার উপর বিরক্ত। আমি সে বারের সেমেস্টার দেই নাই।চার মাস পর আমি নরমাল হয়েছিলাম তাও ভুবন আর প্রিন্সের বদলতে। চার মাস পর আমি নতুন জব এ জয়েন করি। তারপর ওরাই এই ইভেন্ট মেনেজমেন্টের আইডিয়া দেয়। আমরা তিন জন মিলে এই কোম্পানিটা খুলি। প্রথমে কোন কেপিটাল লাগে নি,তাই চলে গেছে।এখন এই কোম্পানির দু বছর ৮ মাস হবে। আমি প্রতারণার শিকার হওয়ার পর একটাই টার্গেট ছিলো অনেক বড় ব্যবসায়ী হবো,নিজের যোগ্যতায়। তাই এই কোম্পানি,এতে বাবার আপত্তি প্রচুর ছিলো।কিন্তু ২ মাসের পরই আমরা লাভের মুখ দেখি।অনেক বড় বড় ইভেন্টে কাজ করতে থাকি। এবার যদি এটা কোটির বেপার না হত তাহলে হয়তো আমাকে এই স্টেপ নিতে হত না। তোমার কাছে লাগছে আমি তোমায় ইউজ করেছি।কিন্তু সত্যি আমি তোমায় কোনদিন ইউজ করতে চাই নি।হ্যা এটা সত্যি যে আমি বাবাকে জমিটা বিক্রির জন্য বিয়েটা করেছি তবে তোমায় ঠকাতে নয়।”(ফারহান)
” তাহলে আমায় মিথ্যে কেন বললে গতকাল সকালে?”(অরনী)
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারহান বললো,” টেস্ট করতে, আমি ভয় পাই অরনী মাঝপথে একা হয়ার। আমি একা সারাজীবন চলতে রাজি কিন্তু এভাবে মাঝপথে হাত ছেড়ে দেওয়া লোককে আমার ভয় হয়। তুমি বিয়েতে রাজি ছিলে না জোর করেই তোমায় বিয়ে করেছিলাম।তাই ভয়টা বেশি ছিলো।প্রথম দেখায় আমি তোমার চোখে একটা আশার আলো পেয়েছিলাম।তাই ভেবেছি একটু টেস্ট করে দেখি। Sorry,sorry for everything.আর ভেবেছিলাম এই জমি বিষয়ক ব্যাপারটায় তুমি আমাকে ঘৃণা করবে।”
“এখন এটা মনে হচ্ছে না? আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারি?” (অরনী)
“সত্যি আমায় ছেড়ে চলে যাবে? ঘৃণা করবে?”অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ফারহান।
” আচ্ছা এই রিয়া আবার আপনারে কেনো ফোন করে?”(অরনী)
“কোম্পানি খোলার ৩ মাস পরই আমার সাথে যোগাযোগ করে।ওর নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে।ওর হাজবেন্ড নাকি অনেক অত্যাচারী ছিলো।ওর ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চেয়েছে।আমি যাতে ওর লাইফে ব্যাক করি।ওর বাইরের পড়াশোনা শেষে দেশে আসবে।আমি যাতে ওকে ক্ষমা করে দেই আর ওকে বিয়ে করি।ছ মাস পরে আসবে। আমি এভোয়েড করেছি।জানিয়ে রাখলাম তোমায় তুমিও করবে।ও জানে না আমার বিয়ে হয়েছে।আমি ওকে জানাবো আর ও যাতে আমাদের মধ্যে না আসে সেই ব্যবস্থা করবো। I promise.” (ফারহান)
“না ও জানে, আর ও নেক্সট মাসে আসছে।” (অরনী)
“হ্যা?” (ফারহান)
“ও আজ সকালে ফোন দিছিলো,আপনি যখন ফোন চাচ্ছিলাম তখন, আমি আপনাকে দেই নাই। আপনাকে বলিও নাই।ভেবেছিলাম আপনি ওই ছেড়ির সাথে প্রেম করবেন।আর আমি ওকে বলেও দিছি আপনি বিবাহিত।আর এমনে কথা বলছি যাতে ওই ফয়িন্নি আর ফোন না দেয়।আর আপনার কল লিস্ট থেকে ওর কলটা ডিলিট করে দিছি আর ওকে ব্লক ও মেরে দিছি।” বলেই মাথা চুলকাতে আর ঠোঁট কামড়াতে লাগলো।
ফারহান হতবাক। কি বলা উচিৎ এই কাকে ও শান্তশিষ্ট ভেবে বউ করে এনেছে।এতো পুরাই বোম্বাই মরিচ। অনেকক্ষন বেয়াক্কেলের মতো তাকিয়ে ছিলো আর অরনীর কথা শুনেছে।এরপর অরনীর ঠোঁট কামড়ানো দেখে আর বাচ্চাদের মত মাথা দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। এক ঝটকায় নিজের সাথে মিশিয়ে ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্ত করে নিলো। অরনী ঘটনার আকর্ষিকতায় যেন বরফ হয়ে গেছে। ও বুঝতে পারে নি ফারহান এমন কিছুই করবে! এটা কি ছিলো? যখন বেপারটা বোধগম্য হল নিজেকেও ধরা দিল।অরনীর ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ক্ষতি কি একটু সুখ কুড়াতে। হাত দুটো দিয়ে ফারহানের কোমড় জরিয়ে নিল। একটুও ফাঁক নেই দুজনের মধ্যে।ফারহান অরনীকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। দুজনের ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া মাতাল করে দিচ্ছে দুজনকে। এই মুহুর্তে শুধু যেন তারা দুজনই আছে। এই সময়টা যদি থেমে যেতো। অরনীর চোখ থেকে পানি পরছে। হ্যা পানি পরছে। তবে সুখের। কতক্ষন এমনছিলো জানা নেই……

চলবে।

৬ষ্ঠ পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here