গল্পটা তোমার আমার ৮ম পর্ব

0
6025

গল্পটা তোমার আমার
৮ম পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin

ফারহান অরনীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। দুজনের চোখ বন্ধ।ফারহান চোখ খুলে অরনীর দিকে তাকিয়ে দেখে অরনী কাদছে। অরনীকে কাদতে দেখে ফারহান ঘারড়ে যায়।
“আমি কি তোমাকে হার্ট করে ফেললাম, সরি আমি বুঝি নি। এক্সটিমলি সরি, আমি তোমায় টাইম দিতে চাইছিলাম।নেক্সট টাইম আর হবে না। সরি। ” বলেই ফারহান চলে যেতে যাচ্ছিল। অরনী পেছন থেকে ফারহানকে জরিয়ে ধরলো। অরনীর এমন কাজে ফারহান খুব অবাক হয়ে যায়।ফারহানকে জরিয়ে হাউমাউ করে কাদছে অরনী। কতদিনের জমানো কষ্ট সব অশ্রুতে বিসর্জন দিচ্ছে। ফারহান বারবার কারন জিজ্ঞেস করছে কিন্তু অরনী কেদেই যাচ্ছে। ফারহান অরনীকে বুকে জরিয়ে ধরে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর অরনী ফারহানের বুকে মাথা রেখে বলে, “আমায় কোনদিন একা ছেড়ে যাবে নাতো? আমি বড্ড একা ফারহান। আমি কি খুব খারাপ বলো? কেন স্বপ্ন আমায় ছেড়ে গেলো। আমার কি দোষ ছিলো ও তো আমায় তাও বলে নি। ওর কি কিছুই মনে নেই।আমাকে যে কথা গুলো দিয়েছে? কেনো এমন করলো বলো ফারহান। বলো”

কি বলবে? কিছুই বলার নেই। এইটুকু বুঝছে অরনী কেন বিলাপ বকছে, না জানি কত দিন কষ্টগুলো মনের মধ্যে চেপে রেখেছিল।যতই স্ট্রং বাইরের থেকে দেখাক না কেনো ভেতর থেকে খুবই দূর্বল এবং ভাঙাচোরা। শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো। এতটাই শক্ত যে তাকে হারিয়ে যেতে দিবে না। বিলাপ বকতে বকতে অরনী ফারহানের বুকে ঘুমিয়ে পরে। তাই ফারহান ওকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল।তার পাশে নিজে শুয়ে ওকে বুজে জরিয়ে নিল। অরনীর মাথায় বিলি কাটতে কাটতে নিজেও কখন ঘুমিয়ে গেলো জানা নেই।

সকালে ফারহানের ঘুম ভাঙার আগে অরনীর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে নিজেকে ফারহানের বুকে আবিষ্কার করে।মাথায় কিছুই আসছে না, তারপর রাতের কথা মনে পরে।রাতের কথা মনে পরায় খুবই লজ্জা লাগছে অরনীর। এতটা কাছে ফারহানের আসবে কোনদিন ভাবে নি। ভাবতে ভাবতে অরনীর চোখ ফারহানের দিকে আটকে গেলো। আজ বড্ড মায়াবী লাগছে ফারহানকে। ওর ঘুমন্ত মুখতো আগেও দেখেছে আজ অন্যরকম লাগছে। অজান্তেই ফারহানের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। কেনো করলো জানে না,ওকি তবে ফারহানকে মেনে নিয়েছে মন থেকে? ভালোলাগা কাজ করছে ফারহানের প্রতি?
“এভাবে ঘুমের মধ্যে ইজ্জত নিয়ে টানাটানি কিন্তু ঠিক না।” চোখ বন্ধ করেই ফারহান কথাটা বলছে আর হাসছে।
কথাটা শুনে লজ্জা পাচ্ছে আবার ভালোও লাগছে।
“নিজের বরের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছি তোমার কি?” (অরনী)
“আপনি থেকে তুমি, দেখো আবার তুমি যাতে থাকে তুই না হয়।” (ফারহান)
“আমার বর যা খুশি বলবো তোমার কি!” (অরনী)
“তাই বুঝি, একটা কথা দাও কোনদিন এই বরকে ছেড়ে যাবে না। অতীত কত গভীরই হোক কোনোদিন আমাদের মাঝে আনবে না।” (ফারহান)
“প্রমিস করছি, কালই শেষ ছিলো।আজ থেকে অতীতের বইটা বন্ধ আর গল্পটা যেহেতু তোমার আমার তাই এখানে শুধু তুমি আর আমিই থাকবো।” (অরনী)

ফারহান হেসে অরনীকে জরিয়ে ধরলো। এই গল্পটা তাদের তাই তারা কোন রিয়া বা স্বপ্ননীলকে তাদের মধ্যে আস্তে দিবে না। হয়তো তারা একে অপরকে ভালোবাসে না তবে বিশ্বাস করে,আর তারা একে অপরের পরিপূরক। ভালোবাসা তো মাঝে মাঝে হয়ে যায় মনের অজান্তেই আবার মাঝে মাঝে বিশ্বাস ভরসায় তৈরি হয়। ফারহান আর অরনীর ক্ষেত্রেও তাই। ওদের ভাঙা মনদুটো ওদের দুজনের সংস্পর্শে জোড়া লাগছে। হয়তো আজ না ভালোবাসলেও সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসাটা জম্মাবে, পূর্নতা পাবে।

৭ বছর পর,
“কি গো হলো তোমার? উফফ আর কত প্লাস্টার মারবা?” (ফারহান)
“আচ্ছা একটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যাবো রেডি হবো না? তুমি বেশী জ্বালাও গো।” (অরনী)
“আচ্ছা, পাবো তো আমি অ্যাওয়ার্ড। তুমি এতো সাজো কেন?” (ফারহান)
“আমি কই সাজলাম তোমার মেয়েরে রেডি করছি এতোক্ষন আর যেই না একটু সাজতে বসলাম অমনি শুরু হলো তোমার ফালতামি। যাবোই না আমি যাও তুমি তোমার মেয়ে নিয়ে।” রেগে অরনী বললো।
“ওরে বাবা এতো রাগ। আচ্ছা আমার বউটা এমনেই সুন্দর। এই সুন্দর চেহারায় কি দরকার বলো এমন আটা ময়দা দেওয়ার। আমার তোমাকে এভাবেই ভালো লাগে। এমনভাবেই চলো না৷ Natural beauty.” (ফারহান)
“হইছে আর পাম দিয়ো না এবার ফেটেই যাবো। আর অথৈ কোথায়?” (অরনী)
“মায়ের রুমে, তুমি রেডি হও আমি ওকে নিয়ে গাড়িতে বসছি।”(ফারহান)
হ্যা আজ entrepreneur হিসেবে ফারহান অ্যাওয়ার্ড। ফারহানের ইভেন্ট মেনেজমেন্ট কোম্পানি আজ শীর্ষস্থানে আছে। অরনীর হেল্প আর কন্ট্রিবিউশান আজ ফারহানকে একজন সাক্সেস্ফুল বিজনেসম্যান সাথে একজন সাক্সেস্ফুল ফ্যামিলিম্যানও করেছে। তাদের পাঁচ বছরের একটা মেয়েও আছে অথৈ। অনেক ঝড় তারা সামলেছে। একে অপরের হাতে হাত রেখে। কিন্তু কোনদিন হাত ছাড়ে নি তারা। তাদের ভালোবাসার প্রতিক অথৈ। দোয়া করবেন ওদের জন্য।

সমাপ্ত

কিছু গল্পে প্যাঁচ থাকে না।এটাতেও নেই।এখানে ভিলেন ও তারা নায়ক নায়িকাও তারা। আশা করি গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে।আরোও টান্তে পারতাম। কিন্তু আমি বোরিং করতে চাই নি গল্পটা। যদি আপনারা আমার আরোও নতুন কোনো গল্প পড়তে চান তাহলে আমাকে কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here