গল্পটা_তোমার_আমার ৬ষ্ঠ পর্ব

0
3964

গল্পটা_তোমার_আমার
৬ষ্ঠ পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin

“আপনি কি আমায় চালকুমড়া বললেন? মানছি আমি একটু হেলদি তাই বলে চালকুমড়া? ” মুখ ফুলিয়ে অরনী বললো।
“আমি মোটা বলে চালকুমড়া বলি নাই, তুমি একটা অকর্মা।চালকুমড়া যেমন কাজে আসে না তেমন।কোন মেয়ে শাড়ি পড়তে পারে না বলো?” (ফারহান)
“আমি পড়াশুনা নিয়ে 12 পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম।আর ভার্সিটিতে উঠার পর সময় পেতাম না শাড়ি পড়া শেখার।আর একটা কথা বলি? চালকুমড়া কিন্তু খেতে মজা,মোরাব্বা বানিয়ে।” (অরনী)
“তাইলে তো খেয়ে দেখতে হবে” বাঁকা হাসি দিয়ে ফারহান বললো।
“খান কে মানা করছে,আমার মামি ভালো মোরাব্বা বানায়।” (অরনী)
“আমার ওই চালকুমড়া ভালো লাগে না, হ্যা তবে নিজের এই ঘরের চালকুমড়া খেতে আপত্তি নেই।” বলেই অরনীর কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
“এই চালকুমড়া সবার পক্ষে খাওয়া পসিবল না,ঝাঝ আছে। অনেকটা বোম্বাই মরিচের মতো। ছোট, মোটা আর খুব ঝাল।ট্রাই করতে পারেন।” বলে অরনী ফারহানের গলা জরিয়ে ফারহানের আরোও কাছে চলে এলো।
ফারহান অরনীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।চশমার ভেতরে গোলগোল রসগোল্লার মত চোখ, হালকা গোলাপি ঠোঁট আর গুলুগুলু গাল। ব্যাঙ্গসগুলা কপাল ঢেকে আছে। অনেক বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে ফারহান। অরনী ওর অনেক কাছে, নিজেকে সামলিয়ে রাখা দায় হয়ে যাচ্ছে। না ফারহানকে নিজেকে সামলাতে হবে,অনেক কিছুই আছে যা অরনীর অজানা।ওগুলো জানলে অরনী ওকে ঘৃণাও করতে পারে।সব দ্বিধাদ্বন্দ মিটিয়েই এই সম্পর্কে পা রাখবে ফারহান। তাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ফারহান। আর এটা দেখে হো হো করে হেসে দিলো অরনী আর বলতে লাগলো
“আপনি যে স্কুলে এসব টিজিং শিখেছেন আমি ওই স্কুলে হেডমাস্টার। So be careful next time.”
ফারহান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে অরনীর শাড়িটা হাতে নিলো। কাতান ক্রিম কালারের উপর গোল্ডেন কাজের শাড়ি,ভারি অনেক। ফারহান অরনীর দিকে তাকিয়ে বললো, “এ শাড়ি তো অনেক ভারি থাকতে পারবা তো এটা পরে?”
“আপনি পড়াতে পারলে আমি থাকতে পারবো, পারবেন পরাতে?”
” চলো ট্রাই করি।আচ্ছা এক কাজ করো তুমি আগে এক পেচ দাও, তারপর আমি বাকিটা দেখতেছি।”

মিনিমাম ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর অবশেষে শাড়িটা পরানো গেলো। ফারহান আর অরনী ঘেমে নেয়ে শেষ। অন্য কাপলের মধ্যে কিছু রোমান্টিক মোমেন্ট হয় কিন্তু এদের মধ্যে মোমেন্টের ম ও হয় নি, বরং শাড়ি পরাতে আর পরাতে ২ জন নাজেহাল।
” এই আর কোনদিন আমারে শাড়ি পরাতে কবা না।”(ফারহান)
“পরাতে পারেন না তাই বলেন, বড় বড় কথা।আমি নাকি চালকুমড়া নিজে কি মিষ্টি কুমড়া?” (অরনী)
“এখনকি আটা ময়দা সুজি মাখবা?”(ফারহান)
” আজিব তা সাজবো না?”(অরনী)
“এমনেই মাশাল্লাহ ভালো লাগতেছে,দেখতে তো খারাপ না তাইলে প্লাস্টার কেনো দিবা মুখে? আমার বউরে এমনেই অনেক ভালো লাগে শুধু কাজল আর ডার্ক কালারের লিপস্টিক দাও।” (ফারহান)
“মানে কি! এটা আমার ঘরোয়া বউভাত। আমি আমার বউভাতে এমন ডার্ক সার্কেল ওয়ালা আর পিম্পলভরা ফেস নিয়ে যাব।” (অরনী)
“ঘুমাও আর পানি খাও এমনেই সুন্দর হয়ে যাবা।” (অরনী)
“তাই ঘুমাবো? কে জানি কালকে আমার জায়গায় পানি দিয়ে দিছিল যাতে আমি সোফায় ঘুমাই! সারারাত আমার ঘুম হয় নি ছোট একটা সোফা।” (অরনী)
“এমনে তো কচুগাছের মতো হাইট। সোফা তোমার থেকে মেলা বড়।” (ফারহান)
“ওই নিজেকি তালগাছ? হাহ আমার বড় স্পেস বাদে ঘুম হয় না।” (ফারহান)
“এই শোনো এমনে আমাদের সম্পর্ক নরমাল হলে আমি তোমাকে খাটে শুতে দিতাম না, আমার বুকের উপর নিয়ে ঘুমাতাম।” বলেই ফারহান চুপ করে যায়। অরনীর কথাটা শুনে অন্যরকম ভালোলাগে।
“আমি চেঞ্জ করে আছি।” বলেই ফারহান পাঞ্জাবি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
দুপুরে অনেক মেহমান এসেছে। অরনীর বাবা রবিউল চৌধুরী, মা হুসনেয়ারা চৌধুরী আর বোন অদ্রি এসেছে। ওর ফুফ-ফুফা,চাচারা,মামা-মামী সবাই এসেছে। অরনী আর ফারহান একসাথে নিচে এসেছে। অরনীকে অনেক কিউট লাগছে, চুল সামনে হালকা বেনী করে স্টাইল করা,হালকা মেকাপ,চোখের চশমার নিচে কাজল দেখা যাচ্ছে আর ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক যেমন ফারহানের পছন্দ। আর ফারহান একটা ক্রিম কালারের উপর গোল্ডেন কাজের পাঞ্জাবি আর জিনস। দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে। ফারহানের বন্ধুরা এসেছে।যেহেতু ঘরোয়া তাই ভুবন আর প্রিন্স এসেছে। ওদের সাথে অরনীকে পরিচয় করিয়ে দিল ফারহান। অরনী অন্য জায়গায় কথা বলতে গেলে প্রিন্স আর ভুবন ফারহানকে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো।
“কিরে এখানে নিয়ে এলি কেনো?” ( ফারহান)
“কি ভাবলি? অরনীর সাথে এমন অন্যায় কি চালিয়ে যাবি?(প্রিন্স)
” না, মেটার সলভ হয়ে গেছে।এখন অরনীকে সত্যিটা বলে দিবো।”(ফারহান)
“আঙ্কেল রাজি হয়ে গেছেন জমিটা বিক্রি করতে?” (ভুবন)
“হ্যা, এখন আমরা প্রজেক্টটা নিতে পারবো।” (ফারহান)
“আর রিয়ার কথাটা?”(প্রিন্স)
“ওইটা তো মিথ্যা ছিলো।আমি মেইনলি অরনীকে টেস্ট করার জন্য ওই মিথ্যাগুলো বলছিলাম।কারন রিয়া যা ছেচড়া ও ছয় মাস পর এসে আবার আমার পিছনে পরবে।অরনী যাই হোক না কেন আমাকে ছেড়ে যাবে না।আর আমি যে অরনী কে বিয়ে করেছি
শুধু বাবার শর্ত পূরণের জন্য যাতে বাবা জমিটা বিক্রি করতে রাজি হয়, এটা জানলেও ও আমাকে ছেড়ে যাবে না এটাও আমি নিশ্চিত। যে তার বরের পরকিয়ার কথা জেনেও ডিভোর্স এ রাজি হয় না, উপর দিয়ে আমি অহেতুক মেন্টাল টর্চার ও করছি সেই মেয়ে আমার এই সত্যি জেনে আমাকে ছেড়ে যাবে না।আমি দুদিন সময় নিছি যদিও তাও আমি আজকে ওকে সব বলে দিবো।”(ফারহান)
” যাক তাহলে তো হলই। আমি অনেক হ্যাপি। যাক তুই রিয়ার প্রতারণার ট্রমা থেকে বের হতে পারছিস এই মেলা।”(প্রিন্স)
“কিন্তু আমার টেনশন অন্য জায়গায়, অরনী যেমন কোল্ড ব্লাডেড বললি তাতে ওর এই কথাগুলো আবার ইগোতে না লাগে।” (ভুবন)
“হুম আমি এটা ভেবেছিলাম কিন্তু মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক হয় না।”(ফারহান)
” যা ভালো ভাবিস।তবে ওকে হার্ট করিস না নিজেও হার্ট হয়িস না।”(ভুবন)

সবার খাওয়া দাওয়া শেষে অরনীর আম্মুকে অরনী রুমে নিয়ে গেলো। অনেকদিন মনে হচ্ছে মা মেয়ে কথা বলে না।
“মারে তুই সুখী তো?” (আম্মু)
“মা সবাই কি একসাথে সুখী হতে পারে” মুচকি হেসে অরনী বললো।
“এভাবে কেনো বলছিস?” (আম্মু)
“আম্মু তোমাদের কথায় বিয়ে তো করলাম এখন সুখীও হতে হবে? তোমরা তো সুখী আমাকে বিয়ে দিয়ে, একটা হিল্লে তো হলো বলো।”(অরনী)
“মা-বাবা হিসেবে এটা চাওয়া কি আমাদের ভুল? তুই তো এভাবে বলছিস যেনো আমরা তোর কোন বড় ক্ষতি করে দিছি।হ্যা তুই বিয়েটা করতে চাস নি কিন্তু ওই ছেলের জন্য তো আমরা তোর জীবন নষ্ট করে দিতে পারবো না।” (আম্মু)
“আচ্ছা মা,বিয়েই কি সব। বিয়ের পর জীবন নষ্ট হয় না?” (অরনী)
“ফারহান ভালো ছেলে।ও তোকে মাঝপথে ছেড়ে যাবে না স্বপ্ননীলের মতো। তুই যখন যা বলেছিস করতে দিসি। বলেছিস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বি,দিয়েছি। বলেছিস মা মেকানিকাল পড়ব, দিয়েছি।বলেছিস মা একটা ছেলেকে পছন্দ করি,কিছু বলি নি।বলেছিস মা একেই বিয়ে করব,কিছুই বলি নি। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে ছেলে বলেছে তোকে বিয়ে করতে পারবে না,আমরা একশন নিতে চেয়েছিলাম।তুই মানা করায় কিছু বলি নাই। এখন আমরা যখন তোকে সুখী দেখতে চাই তখনও তোর সমস্যা।” (আম্মু)
“আম্মু সমস্যা না, আমি ভয় পাই।আমি স্বপ্নের প্রতারণাকে মেনে নিতে পারি নাই।এখন আমার অবস্থা এমন যে সিঁদুর দেখলেও আগুন লাগে।আমি চেয়েছিলাম ফারহানকে একটু জেনে বুঝে আগাতে। ৪ বছরে একটা মানুষকে চিনতে পারি নি, ৪ দেখায় কাউকে কিভাবে চিনবো? আর দু দিনও হয় নি।এখন কিভাবে বলবো আমি সুখী না অসুখী। তবে এবার তোমার মেয়ে নিজেরটা বুঝে নিবে।আমিও সুখী হব দেখো।আমিও সুখী হব।” (অরনী)
অরনীর আজকেও কাদতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পানি আসছে না। আসলে স্বপ্ননীলের প্রতারণা অরনীকে পাথর বানিয়েছে।ওর কাছে এখন কোন কষ্ট ততোটা বড় লাগে না যতোটা কষ্ট তখন পেয়েছিল। চার বছরের বিশ্বাস, ভালোবাসা সব এক মুহূর্তে কাচের মত ভেঙ্গে ফেলেছে স্বপ্ননীল।এক বছর আগে সেদিন স্বপ্নের সামনে অনেক কেদেছিল,অনেক।তার পর থেকে যেন অরনী কাদতে পারে না।চাইলেও মরার পানি আসেই না।গতকাল সকালে ফারহানের কথাগুলো অনেক অনেক কষ্ট দিয়েছিলো,কিন্তু কাদতে পারে নি। এক বছর অরনী কাদে নি। ও কাদতে চায় সবার মতো। অরনীও সুখী হতে চায়।
“সরি,ভুল সময় ঢুকে পড়লাম বোধহয়।”(ফারহান)
” না না বাবা আসো।”(আম্মু)
“মা ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেছেন তো? আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম।” (ফারহান)
“হ্যা বাবা,তুমি চিন্তা করো না। বাবা আমার একটা কথা রাখবে?” (আম্মু)
“জ্বী মা,আদেশ করেন।”( ফারহান)
“আমার মেয়েকে একটু মানিয়ে নিয়ো বাবা,বড্ড জেদি আর একরোখা। একটু দেখো বাবা।” (আম্মু)
“মা কথা দিচ্ছি সারাজীবন ওকে দেখে রাখবো।একা ছাড়বো না ইনশাআল্লাহ বেচে থাকা অবধি।”(ফারহান)
ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে অরনী। কি বললো ও। এইতো কালই সে অরনীকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো। তবে আজ কি হলো? এই মানুষটা এমন কেনো। বুঝা দায় একে। তবে ওর চোখ যেন বলছে যে যা বললো মন থেকে বললো। চোখ নাকি মনের কথা বলে।স্বপ্নের চোখও বলতো যে তাকে ভালোবাসে।তবে কেনো কথা রাখেনি ও?

বিকেলে ফারহান আর অরনী অরনীদের বাড়ি যেতে রওনা দিবে। একটা ভাড়ার মাইক্রোতে যাবে সবার সাথে।হুট করে ফারহান লজ্জার মাথা খেয়ে বললো,
” আচ্ছা আপনাদের আপত্তি না থাক্লে আমি আর অরনী আলাদা যাই?”
“হ্যা আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”(আব্বু)
অরনীর কাছে সকাল থেকেই ফারহানকে অন্যরকম লাগছিলো,এখন তো ওর পুরাই মাথা হ্যাঙ্গ। এ কি ফারহান? সেই ফারহান??কেউ আমারে মাইরালা টাইপ ফিলিং হচ্ছে।ফারহান পাগল হয়ে গেছে, এখানে ওর শ্বশুর বাড়ি, বাপেরবাড়ি দুইই আছে।কেমন দেখায় এভাবে আলাদা গেলে।
” আপু,ভাইতো সেই রোমান্টিক।”(পুচকি/অদ্রি)
“থাবড়া খাবি চুপ।” (অরনী)
মাথা কাটা যাচ্ছে লজ্জায় আর এই ফকিন্নি আছে রোমান্টিক নিয়ে।
“এই আপনি ওভাবে কেন বললেন?? সবার সামনে কি লজ্জায় পরতে হলো” রিক্সায় উঠে অরনী।
“আজিব নিজের বউকে নিয়ে এসেছি,অন্যের বউকে নিয়ে তো বের হই নি তাই না?” (ফারহান)
“রাখেন আপনার বউকে।বিয়ের দুদিন ও হয়নি এখনি এভাবে সবার সামনে বলার কি দরকার ছিল?” (অরনী)
“প্রথম শ্বশুর বাড়ি খালি হাতে যাবো? একটু ফল,মিষ্টি নিব না?”(ফারহান)
” ও আমরা এজন্য আলাদা হয়েছি?”(অরনী)
“হ্যা।ওদের সাথে গেলে মা-বাবা কি আমাকে কিনতে দিতো? তুমি কি ভাবছো?” (ফারহান)
“না,কিছু না।কি ভাববো?” (অরনী)
ফারহান বাঁকা হাসি দিলো আর কিছু বললো না। হ্যা অরনীকে নিয়ে ঘুরতেই বের হয়েছে। রুমে ঢোকার সময় মা-মেয়ের কথা ফারহান শুনেছিল। ফারহান ও একই নৌকার যাত্রী,প্রতারণার শিকার সেও। ও অরনীকে মন ভালো করতে নিয়ে এসেছে। ধরা চাইলেই দিতে পারে, কিন্তু দিবে না।ও চায় অরনী নিজ থেকে ফারহানকে সব বলুক। নিজের মন হালকা করুক। গল্পটাতো দুজনের তাই দুজনকেই গল্পটা লিখতে হবে।

“কই যাচ্ছি?আপনি না বললেন যে ফল কিনতে যাবেন?” (অরনী)
“ভালো লাগছে না, চলো না একটু নদীর পাড়ে যাই।” (ফারহান)
“সন্ধ্যা হয়ে আসছে তো,চলুন বাড়ি যাই।সবাই কি ভাববে?” (অরনী)
“তুমি যাবা কিনা বলো নয়তো আমি একাই যাচ্ছি।” (ফারহান)
“চলুন, বেহোতার জানে কোন জায়গার।” (অরনী)
কিছুক্ষন পরে নদীর পাড়ে পৌছালো ফারহান আর অরনী। মৃদু বাতাসে চুল উড়ছে। ছোট চুলগুলোকে বার বার আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে অরনী। ফারহান মুগ্ধ নয়নে তার স্ত্রীকে দেখছে। তারপর এগিয়ে এসে চুল গুলোকে এলোমেলো খোপা করে দিল।
“এটা পাঁচ মিনিটও টিকবে না।” (অরনী)
“তা এত ছোট চুল রাখছো কেন? একটু বড় করতে পারো না? ফয়িন্নি লাগে তোমারে দেখতে।” (ফারহান)
“জানি কিউট লাগে হাহ,আইছে।গেজায়েন নাতো।” (অরনী)
“কি ভাষা,মুখ একটু ভালো করো।”(ফারহান)
” এখনো তো মুখই খুলি নাই। ৬০ জনের ডিপার্টমেন্টে আমি একা মেয়ে ছিলাম।এবার বুঝে নেন আমি কি রকম।”(অরনী)
“মাফ কর মা। চলো ওখানে গিয়ে বসি।” (ফারহান)
একটা বড় গাছের নিচে বসে ফারহান আর অরনী। অরনীর ভালো লাগছে পরিবেশটা। পানির শব্দ, পাখির কিচিরমিচির আর ঠান্ডা হাওয়া। গোধূলির ক্ষনে তারা বসে আসে। নিশ্চুপ, শুধু আগামির নতুন সুর্যোদয়ের অপেক্ষা। অরনীর খুব ইচ্ছে হলো ফারহানের কাধে মাথা রাখার। কিন্তু কোথাও একটা বাধা অনুভব করছে,তাদের সম্পর্ক পাঁচটা সম্পর্কের মতো নয়।। সাত পাঁচ অনেক ভেবে নিজের মনের সাথে পারলো না। মাথা রাখলো ফারহানের কাধে,ফারহান একটু হেসে বা হাত দিয়ে অরনীকে জরিয়ে ধরলো। দুজন দুজনকে দেখছে,কোন না বলা কথা যেন চখের ভাষায় বলছে দুজন। কি হত তাদের সম্পর্কে কোন অতীত না থাকলে? কি হত যদি কোন শর্তবিহীন তাদের সম্পর্কটা হত। তবে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে৷ শত বাধা আসুক বিয়ে যখন হয়েছে। এই বিয়ে তারা টিকিয়ে রাখবে। দেখতে দেখতে সূর্য অস্তো গেলো। বাড়ি যেতে হবে দুজনকে।

বাড়িতে এসে আরেক কান্ড, সবাই তো ফোন দিতে দিতে শেষ। অথচ অরনীর ফোন সাইলেণ্ট। সরি বলতে বলতে শেষ অরনী। সমানে আম্মু আব্বু বকেই যাচ্ছে। মিনিট বিশেক ঝাড়ি শুনে রুমে গেলো সে। ফারহান হেসেই খুন।অরনীর এতো চোটপাটের কোন দাম নেই এই বাড়ি।
“ইচ্ছে করছে আপনার দাত ভেঙ্গে দিতে,এতো হাসির কি আছে?” রেগে ফুসতে ফুসতে অরনী বললো।
” আচ্ছা সরি।”(ফারহান)
“যান বাইরে আমি ফ্রেশ হবো।” (অরনী)
“হ্যা নিজের বাড়ি বলে এতো দাদাগিরি।করে নেও আমার বাড়িতে যাবা না? তখন দেখো। আচ্ছা এক কাজ করি এমনে বাইরে গেলে খারাপ দেখাবে।আমি বরং ওয়াশরুমে যাই,ফ্রেশ হয়ে নেই।” (ফারহান)
” ঠিক আছে, কিন্তু আমি না বলা অবধি বের হবেন না।”(অরনী)
“এমনভাব আমি তোমাকে দেখার জন্য বসে আছি।আচ্ছা শোনো আজকে আমার তোমার সাথে রাতে কিছু কথা আছে। দুদিন সময় চেয়েছিলাম।কিন্তু তার আর দরকার নেই।” (ফারহান)
অরনী কিছু আন্দাজ করেছে কি বিষয়ে ফারহান কথা বলতে চায়। তাই শুধু হুম বলেই নিজের কাজে মন দেয়। আজ যদি ফারহান তাকে সব সত্যি বলে তবে সেও তার বন্ধ বইটা ফারহানের সামনে খুলবে। সব বলবে ফারহানকে।

রাতের খাবাবের পর সবাই মিলে জামাইকে ঘিরে ধরেছে। অনেকক্ষন আড্ডার পর প্রায় ১টার দিকে ফারহান আর অরনী ছাড়া পেলো। রুমে এসেই অরনী নিজের বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আহ নিজের খাট কি শান্তি। ফারহান এসে ওর পাশে শুয়ে পরলো।
“তুমি কি খুব টায়ার্ড? তাহলে কালকে কথা বলবো।” (ফারহান)
“না টায়ার্ড না বলেন শুনছি।” (অরনী)
“চলো বারান্দায়।”(ফারহান)
” হুম” বলেই অরনী বারান্দার দিকে হাটতে লাগলো। আজকে মেঘলা আকাশ,বাতাস প্রচুর বাইরে।হয়তো বৃষ্টি হবে। বেশ ভালো লাগছে অরনীর। ক্লান্তি দুর হয়ে গেছে ওর।
“যা বলবো বুঝতে ট্রাই করবা ফাস্ট অফ অল। হয়তো তোমার ইগোতে লাগতে পারে। কিন্তু আমার কথাগুলো বুঝার ট্রাই করবা প্লিজ।” (ফারহান)
অরনী ফারহানের কথাগুলো শুনছে কিছুই বলছে না।এখন কি করা উচিত আসলেই বুঝতে পারছে না। ফারহান কি আবার নতুন করে মিথ্যা বলছে?………

চলবে

[ অনেকের অনেক প্রশ্ন মনে ফারহান কেন এতো তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে গেলো। আজ ট্রাই করেছি উত্তরগুলা দেওয়ার।আর গল্পটা গুছানোর ট্রাই করেছি যাতে খাপছাড়া না লাগে আর লেখায় অনেক ভুল হয় তার জন্য ক্ষমাপার্থী।চেয়েছিলাম ২টা পর্ব দিতে কিন্তু আমি ২ টা পর্বের কাহিনি একটা পর্বে দিয়েছি।আর এমন বড় পর্ব আমি দিবো না।একটু জানাবেন কমেন্টে যে রিয়া আর স্বপ্ননীলকে কি আমি as negative character আনবো কিনা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here