গল্প:নিষিদ্ধ_ভালোবাসা পর্ব_৪প

0
5071

গল্প:নিষিদ্ধ_ভালোবাসা
পর্ব_৪
#Nowrin_Khan

প্রাক্তন প্রেমিক আদিবের সাথে অন্য মেয়ে দেখে বুকটা কেমন ধরাস করে উঠলো।তাও আবার হোটেলের রুম বুক দেওয়ার সময়…..
এমন দিন দেখতে হবে আগে থেকে জানলে আমি কখনই হয়তোবা আমার বরের সাথে কক্সবাজার আসতাম না।
“আচ্ছা আমিও তো বিয়ে করে ফেলেছি,তাহলে আদিবই বা কেন আমার জন্য অপেক্ষা করবে?”মনকে এই কঠিন সত্যি কথাটি বুঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছি বারবার।আর ব্যর্থ এই আমার আমিকে নিয়ে এখনও হতবাক হয়ে আদিবের দিকে তাকিয়েই আছি,তবে আদিবের আমার প্রতি নেই কোন ভ্রুক্ষেপ।হয়তো দেখেনি বা দেখতে চায়নি।মন শুধু বলে যাচ্ছে একটি কথায়, আর কিছুদিন তো অপেক্ষা করতে পারতো!আমার চলে যাওয়া কি তার মনে একটুও দাগ ফেলেনি,কষ্ট কি হয়নি একটুও!প্রতারকের থেকে প্রতারিত হওয়ার পরেও আমার তো ঠিকই তার বিরীহে প্রায়ই হাহাকার করে ওঠে মনটা,ইচ্ছে হয় চিৎকার দিয়ে উঠি!
” ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মন যে সত্যিই খুব নরম তা আবারও প্রমাণিত”

নীলয়ের সাথে হোটেলের ঘরে চলে এলাম।নিথর আমি আমাকে কিছুতেই আর ধরে রাখতে পারছি না,এক বুক দমবন্ধ অনুভূতি আমাকে গ্রাস করে রাখছে।নীলয় মানে আমার বর জানতে চাইলো বাইরে যাবো নাকি,না করে দিয়ে শুয়ে পরলাম।আর পারছি না আমি এখানে থাকতে পারবোই না!যত তাড়াতাড়ি না এই স্থান ত্যাগ করছি আমার মুক্তি নেই।নিজেকে জেল খানার কয়েদি মনে হচ্ছিলো।

নীলয় ঘরে আসতেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম ফিরে চলো।নীলয় অনেকটা চমকে ওঠলেও যেহেতু সে আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না আর আমাদের সম্পর্কের কোন নাম নেই তাই অজুহাতও চাইলো না।শুধু বললো ব্যবস্থা করছি।

মনে ভয় নিয়ে একরাত রয়ে গেলাম সেই হোটেলেই।ভয়টা ছিল এই যে,যদি বের হলে আদিবকে আবার ওই মেয়ের সাথে দেখে ফেলি!

পরেরদিন,চলে এলাম আর বাড়ি আসতেই আবার সেই প্রশ্নের মুখে।কেন এতো তাড়াতাড়ি আর তাড়াতাড়ি বললেও ভুল হবে একদিন থেকেই কেন কক্সবাজার থেকে চলে এলাম!আমার শরীর খারাপ আর নীলয়ের অফিসের জরুরি মিটিং এর কথা বলে নীলয় আবারও আমায় বাঁচিয়ে নিলো একগাদা প্রশ্নের মুখ থেকে।

কিন্তু সন্দেহ যেন যায় না শ্বশুরবাড়ির লোকের।তার উপর নতুন বউ!সবাই যেন,ভুল ধরায় মত্ত।

বিএসসি টা শেষ করে ওই ফাঁকে বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল।এমএসসি টা করতে চাইছি এখন।আসলে,এসব থেকে দূরে থাকারও এটা একটা পন্থা।আর ইচ্ছা তো আছেই!কিন্তু,আবার পড়াশুনা শুরুর নাম শুনার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেলো শ্বশুর বাড়ি থেকে নানাধরণের কথাবার্তা যা আমার দেহে কাঁটার মতো বিঁধছে।আমার দাদি শ্বাশুড়ির ভাস্য মতেঃ
“আমরা বউ ঘরে তুলছি,কোন ইস্কুল-কলেজের ছাত্রী না।আর নতুন বউ অনেক তো পড়াশুনা করছে এখন কই বাচ্চা-কাচ্চা,সংসারের কথা ভাব্বো….তানা আবার কলেজে ভর্তি হইবো!কতদিন আর হয়ছে বিয়ার”
আমার শ্বাশুড়িও সম্মতির সুরে মাথা নাড়লেন।
কিন্তু আমি আমার ইচ্ছায় অনড়।তাই শ্বশুড়বাড়িতে খুব অল্প দিনেই জেদি,বেয়াদব বউয়ের উপাধিও পেয়ে গেলাম।বদলে গেলো সকলের আচরণ। আর পেরে উঠতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুদিন বাবার বাড়িতে থেকে আসি।

“কিছুদিনের জন্য আমার বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকতে চাই”
সকলেরই নতুন বউকে বাবা বাড়িতে এখনি কিছুদিনের জন্য পাঠানো নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই কিন্তু নীলয় বলে ওঠলো:
“আমি কাল দিয়ে আসবো আপনাকে”
নীলয় কি আমায় সাপোর্ট করলো নাকি আমায় অসহ্য লাগছে বলে আমার থেকে মুক্তি পেতে রাজি হয়ে গেলো!দ্বিধায় পরে গেলাম…..

আসলে অনেকদিন যাবত আদিবের আমার থেকে মুক্তি চাওয়ার আকাঙ্খা দেখে আমার মনে এটাই গেঁথে গিয়েছে যে,আমাকে কারোরই হয়তো সহ্য হয়না!আমার থেকে সকলেই মুক্তিই কামনা করে!এখন সেটা সাপোর্টই হোক!

আসলে,মানুষ যা দেখে অভ্যস্ত হয়ে যায় বাকি সব তার কাছে তেমনি লাগে।

তবে,বাবার বাড়ি এসেছি বলে বাবা-মা যে খুব খুশি হয়েছে তাদের মেয়েকে দেখে এমনও নয় কিন্তু।আমার আসাটা তাদের কাম্য ছিলো না,আমার মায়ের বড় বড় চোখ করে বলা কথাগুলো শুনেই সেটা স্পষ্ট বুঝলামঃ
“সুপ্তি তুই?এখন?আর হাতে ব্যাগ কেন?”
অনেকদিন পর আমি যাচ্ছি তাই বাবা-মা খুশিই হবে হয়তো-আসলে আমার এই ভাবনাটাই ছিলো ভুল!
এবার বাবার দিকে তাকালায়,তার কপালেও ভাঁজ আর বিন্দু বিন্দু ঘামও জমেছে।আমাদের দেশে, প্রায় পরিবার গুলোতেই বিয়ে দিলেই দায়মুক্ত আর বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে শত অশান্তি নিয়েই শ্বশুরবাড়িতেই থাকবে এই রীতি চলে এসেছে বহুদিন ধরেই।কিন্তু বিয়ে হলেই যে,মেয়ের প্রতি দায়িত্ব আরোও দ্বিগুন বেড়ে যায় তা মানতে প্রতি পরিবারই নারাজ।তাদের কথা হলো যাই-ই হোক না কেন,শ্বশুর বাড়ির মাটি কামড়েই থাকতে হবে।
প্রতি পরিবারই যদি বিয়ের দিনই তাদের মেয়েকে বলে দিতঃ
(“আমরা ছেলে আর তার পরিবারের আর্থিক আর সামাজিক অবস্থা দেখেছি মনের অবস্থা নই তাই যাই-ই হয়ে যাক আমাদের দরজা তোমার জন্য চিরদিন খোলা থাকবে”)
তাহলে হয়তো মেয়েদের স্বামীর বাড়িতে নির্যাতন আর নিজের ডিপ্রেশন দুই-ই কমে যেতো।কিন্তু, আফসোস!
মা-কে জানালাম নীলয়ই আমায় দিয়ে অফিসে চলে গিয়েছে।কিন্তু নীলয় আমার সাথে বাড়ির ভিতরে কেন এলো না এর দায় আসলো আমার উপর।
“তুই নিশ্চয় জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে চলে এসেছিস তাই জামাই ভিতরে আসেনি।আচ্ছা তুই কি আমাদের একটুও শান্তি দিবি না?”
মায়ের কথায় এবার কিছুটা না ঠিক অনেকটাই রাগ হচ্ছে।কারণ ঝগড়া তো আমি করিনি,শুধু মনের বিরুদ্ধে যাইনি।
“নীলয়ের অফিসে কাজ আছে তাই চলে গিয়েছে”
এটা বলেই চলে এলাম আমার ঘরে আর পেছন থেকে শুনতে পারছিলাম মা জিজ্ঞাসা করছে রাতে নীলয় আসবে কিনা।কিন্তু আমি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না।দড়জাটা বন্ধ করে নাম্বার খুঁজছি…..আদিবের এক বন্ধুর নাম্বার।আদিবের বিয়ের বিষয়টা খোলাশা না হওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না।খুব খোঁজে অবশেষে এক ডাইরির পাতায় নাম্বারটা পেলাম……
~হ্যালো আকাশ ভাইয়া?আমি সুপ্তি।
~হ্যাঁ আকাশ বলছি।সরি আপু ঠিক চিনতে পারলাম না।কোন সুপ্তি?
~আমি এখন আদিবের প্রাক্তন।
~ও হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।
~ভাইয়া আদিব কি বিয়ে করেছে?
~হ্যাঁ প্রায় ১.৫ বছর সম্পর্কের পর বিয়ে করেছে।
~কয় বছর ভাইয়া?
~দেড় বছর।
~আচ্ছা ভাইয়া রাখছি।
কিন্তু আমার সাথে আদিবের সম্পর্ক শেষ করে আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক মাস।তার মানে আমাকে অবহেলার এই ছিলো কারণ।এখন পুরোটা স্পষ্ট আমার কাছে।সব দিক থেকেই নিঃসঙ্গ লাগছে।আচ্ছা আমাকে দেখতে দেখতে আদিবের কি বিতৃষ্ণা চলে এসেছিলো?কই আমার তো আসেনি!তবে,এখন অনেক বিতৃষ্ণা অনুভব করছি!হয়তো আদিবের থেকেও বেশি…..
নীলয়কে ফোন দিলাম।এক্ষুনি এসে আমাকে নিয়ে যেতে বললাম।নীলয় শুধু আচ্ছা বললো।

নীলয় চলে আসবে কিছুক্ষণের মাঝেই।ব্যাগ নিয়ে আবার আমার রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম।বের হতেই মায়ের প্রশ্ন।কি ঝামেলা বাঁধিয়ে এসেছি।মা’কে জানালাম কিচ্ছু হয়নি।আর কিছু হলেও তোমাদের আর আমার দায় নিতে হবে না,আমি আমার নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারি।আর এ বাসায় আমি আর আসবোও না।কথা শুনেই মা চড় মেরে বসলেন আর এরই মাঝে নীলয় চলে এলো।
গালে হাত দিয়েই নীলয়কে বললামঃ
“চলো”
নীলয় কিছুটা বিভ্রান্তিতে পরে গেলো।কিন্তু,আমি এসব কিছু অগ্রাহ্য করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।নীলয় গাড়িতে ওঠে বললোঃ
~”কোথায় যাবো?”
~”জানি না।”
নীলয় গাড়ি চালাতে থাকলো হঠাৎ করে অনুভব করছিলাম এই একজনই হয়তো আছে যে রেগে থাকলেও আমি কিছু বলার সাথে সাথেই কখনই না করেনি।
~”নীলয় আমি এমএসসি করতে চাই”
নীলয় সেইবারও শুধুই বললোঃ
“আচ্ছা”
শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নীলয় জানালো আমাকে ভর্তি করিয়ে দিবে আবার….
আবার সকলেই আপত্তির সুর তুললো কিন্তু নীলয়ের এক কথা সবাইকে চুপ করিয়ে দিলোঃ
“আমি চাই আমার বউ উচ্চশিক্ষিত হোক।”…….
আসলে,শ্বশুড় বাড়িতে সবাই এক হবে না এটাই বাস্তবিক।কিন্তু, যদি স্বামী পাশে থাকে তাহলে যে যেমনই হোক না কেন সবার সাথেই মানিয়ে থাকা যায় আর প্রাপ্য সম্মানও পাওয়া যায়, তা প্রমাণিত করতে পেরে নীলয়ের প্রতি সত্যিই আজ খুব কৃতজ্ঞতা বোধ হচ্ছে।

আজ সকালে আমি নীলয়ের সাথে এমএসসি তে ভর্তি হতে যাচ্ছি।এরই মাঝে কয়েকমাস পর আবার আদিবের কল……..
চলবে…
(আগের পর্বের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া থাকবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here