গল্প:ভাইরাল,শেষ পর্ব

0
1145

গল্প:ভাইরাল,শেষ পর্ব
লেখনীতে:#এস_এ_তানিশা_রহমান।

তোরা তো কেউ টিভি দেখিস না তাই এই বিষয়টা তোদের সামনে পড়েনি। তোদের সামনে পড়লে তোরা মেনে নিতে পারতি না, হয়তো তোরাও অন্যদের মতো আমাকে ভুল বুঝতি। ফেসবুকে যাঁরা আমায় চিনতো সবাই একের পর এক মেসেজ দিয়ে নোংরা ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। আমি এই অপমানগুলো কি করে মেনে নিতাম বল, যেখানে আমি অন্যায়কারী নয়, আমি এসব কাজ করা তো দূর এসব কথা কল্পনাও করতে পারি না। আমার নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হচ্ছিল, আমি কি করে সবাইকে মুখ দেখাবো বল।

অপরাধ না করেও আমি দোষী হয়েছি,
বিনা অপরাধে আমি শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি।
তবুও সুখে থেকো আশেপাশের মানুষগণ,
খতিয়ে দেখো সত্যি মিথ্যে তারপর নষ্ট করিও জীবন।

ভাইয়া রে আমি তোদেরকে সবার কাছে হাসির পাত্র করতে চাইনি তাইতো নিজের কষ্ট নিজে একা বইয়ে চলেছিলাম। আমি নিজে কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে চলে গেলাম, তোরা আমাকে মাফ করে দিস প্লিজ। আমার কারণে তোদেরকে ছোট হতে হবে হয়তো, তবুও প্লিজ আমাকে দোষী করিস না তোরা। মা বাবা আর নীলিমার খেয়াল রাখিস তুই, আর একটা পরী দেখে বিয়ে করে নিস, সুখে থাকিস তোরা সবাই।

আর একটা কথা- আদনানের খেয়াল রাখিস ভাইয়া পাগলটা আমাকে খুব বেশি ভালোবাসতো। আমার মতো যেনো কষ্টের ভার সহ্য করতে না পেরে উড়াল যেনো না দেয়। পাগল’টা না অনেক আবেগী আমার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারতোনা। সাংবাদিক আর লোকজন আমাকে ছোট করে কথা বলায় ও কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলছিলো। ও চেয়েছিলো সাংবাদিক এম আর জিল্লুর চাকরি কেড়ে নিতে ওর বাবার মারফতে, কিন্তু আমি শান্ত করে বলেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার পাগল’টা কে একটু দেখে রাখিস প্লিজ ভাই আমার।

“আগলে রাখতে চেয়েছি সারাজীবন সযত্নে তোমাকে,
হতে দিলো না কিছু লোক সেটা যেতে পারলাম না তোমায় দেখে। প্রিয় ভালোবেসেছি তোমাকে, এখনো তোমাকেই বাসি, পরজনম বলতে কিছু নেই, তবুও অপেক্ষায় আছি।”
আমি তিশা তুমি আদনান,
দিয়ে যাবো ভালোবাসার দাম।

রাফি এসবকিছু দেখে ডায়েরি টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রাফি চিৎকার দিয়ে বলছে বোন তুই ফিরে আয়, এত অপমান ঘৃণা নিয়ে তুই চলে গেলি। আমি এখন কাকে পেত্নী বলে খেপাবো, কাকে আমি চুল টেনে দিয়ে লুকিয়ে পড়বো। কে আমাকে কফি বানিয়ে সকালে আমন্ত্রণ জানাবে। কে আমাকে আমার কলিজার ভাইটা বলে আদুরে ডাক দিবে। কে আমার এই হাহাকার দূর করবে,বোন কলিজা তুই এত অভিমান করে থাকিস না প্লিজ ফিরে আয় না। রাফি পাগলের প্রলাপ বকছে বোনের শোকে। নীলিমা কাঁদছে আর রাফিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রহমান সাহেব আর রেজিয়া বেগম এতক্ষণে সব শুনেছে পেছনে দাড়িয়ে কি কারণে এমন হলো। তিশার বাবা শুধু একটা কথায় বলেছিলো আমার ঘরে শোকের ছায়া এনে দিয়ে তাঁরা ও ভালো থাকতে পারবেনা রে মা। রাফি নীলিমা সবাই যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে।

হঠাৎ পিছনে কারো ডাক শুনে নীলিমা আর রাফি তাকালো সাথে উপস্থিত সকলেও, দেখলো একটা ছেলে ডাকছে রাফিকে কিন্তু কেউ তাকে চিনছে না। লিজা এগিয়ে এসে বললো নীলিমা ইনিই আদনান ভাইয়া, আমাকে তিশা ওনার ফটো দেখিয়েছিলেন আমি চিনি ওনাকে। সবাই আদনানের কাছে গেলো গিয়ে দেখে ওর পেছনে এম্বুলেন্স দাড়িয়ে, সবাই কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো এম্বুলেন্স কেনো। তখন আদনান বললো; আমি আমার তিশাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না, আমার তিশাকে ওরা কাটাছেঁড়া করবে এটা আমি দেখতে পারবোনা। বাঁচাতে তো পারিনি অন্তত মরে যাওয়ার পর আর কষ্ট সহ্য করুক এটা আমি চাইনা। ও এমনিতে আমার ছোট্ট একটা ভুলে দোষী হলো কলঙ্কের দাগ লেগে গেলো ওর চরিত্রে। আমার কারণেই আজ ও আমাদের সাথে নেই। আমি আমার বাবার মাধ্যমে কাজটা স্থগিত করিয়ে ওর লাশ নিয়ে আসি। ওকে বেঁচে থাকতে তো কষ্ট থেকে আগলে রাখতে পারিনি সারাজীবন, অন্তত মরার পর আর কষ্ট দিতে চাই না। আমার বাবার শত্রু গুলো আমাদের ভালোবাসাকে বাঁচতে দিলো না। আমাদেরকে একসাথে থাকতে দেয়নি তাঁরা। আমাদের স্বপ্ন’টা অসমাপ্ত গল্পের মতো অসমাপ্ত রয়ে গেলো। আমার ভালোবাসার মানুষটি কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে তাঁরা মেরে ফেলেছে।

এলাকার একজন বললো রহমান সাহেব মেয়ের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে সবাই চলেন। তিশার হাতটা ধরে আদনান শুধু চোখের পানি ফেলছে, শব্দ করে কিছু বলতে পারছে না। নীরবে নিভৃতে কেঁদেই চলেছে আদনান। রাফি আদনানকে তিশার থেকে ছাড়িয়ে একপাশে বসালো, নীলিমা এক গ্লাস পানি এনে দিলো আদনানকে। কিন্তু আদনান পানির গ্লাস হাতে নিচ্ছে না, পানির গ্লাসটি নিচ্ছেনা দেখে আদনানের গায়ে হাত দিতেই আদনান পরে গেলো ফ্লোরে! সে-ও চলে গেলো তাঁর প্রিয়তমার কাছে। হয়তো একে অপরকে কথা দিয়েছিলো কেউ কাউকে ছাড়া একটা দিনও একা কাটাবে না, একা বাঁচতে পারবেনা প্রিয়জন ছাড়া। “তিশা আর আদনান দুজনকে মাটির ঘরে রেখে আসা হলো” দুজন দুজনার হতে চেয়েছিলো, কিন্তু পৃথিবী তাদের একসাথে থাকার অনুমতি দিলো না। তাঁরা একে অপরকে পছন্দ করলেও এই নিষ্ঠুর দুনিয়া তাদেরকে পছন্দ করলোনা।

“একটা পূর্ণতা পাওয়া ভালোবাসার গল্প পড়তে/দেখতে/ শুনতে পারতো গোটা দুনিয়া কিন্তু কিছু মানুষের কারণে সব আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেলো”।

বিঃদ্রঃ সম্মানিত সাংবাদিক গণ এবং সুবিধাবাদী বহুরূপী মানুষ জাতি, দয়া করে নিজেদের সুনাম অর্জনের জন্য কাউকে দুর্নাম করবেন না। নিজেরা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্য কারো জীবন নষ্ট করবেন না। যা ঘটে যা সত্যি সেটা খুঁজুন সেটাই তুলে ধরুন সকলের মাঝে। এমনকিছু করবেন না আপনাদের স্বার্থের জন্য যেটাতে অন্যের ক্ষতি হয়। আপনাদের মতো কিছু সাংবাদিকের জন্য কত-শত প্রাণ হারিয়ে গেছে তাঁর হিসাব আপনারা দিতে পারবেন না। আসল ঘটনাকে লুকিয়ে চালবাজি করে সম্পূর্ণ কাল্পনিক কথা দিয়ে মানুষের জীবন নষ্ট করে দেন। ভাইরাল করে কি এমন পান আপনারা, সুখ অনুভব করেন? আপনারা সাংবাদিকেরা এত মশলাদি না মিশিয়ে যেটা ঘটেছে সেটাই প্রচার করেন না। অযথা কাউকে হেনস্তা করে কি পান?

সত্য উন্মোচন করুন মিথ্যা কে নষ্ট করুন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। আসল অপরাধী কে সেটা জানুন মূল ঘটনা বের করুন। আদৌ সত্যি কোনটা যা দেখছেন তা না-কি এর পেছনে কোনো রহস্য আছে সেটা জানার চেষ্টা করুন। দালালি ছেড়ে একজন সঠিক মানুষ হোন, নিজের পেশাকে মানুষের উপকারে ব্যবহার করেন অপকারে নয়। পেশাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার প্রমাণ দিতে কাউকে হত্যা করিয়েন না এবং আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করবেন না। কেউ যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আপনাদের কিছু মিথ্যা তথ্যের কারণে। মানুষ হয়ে অমানুষের মতো কাজ করিয়েন না। নিজেদের কিছু ইনকামের জন্য অন্যদের ইজ্জত নিলামে তুলিয়েন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here