গল্পের_অন্তরালের_অপূর্ণতা,পর্ব-১

0
2133

গল্প:#গল্পের_অন্তরালের_অপূর্ণতা,পর্ব-১
লেখা:#নাজিফা_তাবাসসুম।

পূর্ণতা রেগে খাবারের ট্রে টি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিল এবং প্রচন্ড জোরে চেঁচিয়ে বলল আপনি আর কত নাটক করবেন ? দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কি দোষটা করেছি?

পূর্ণতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি বলল – তুমি কোন অপরাধ করনি তবে তুমি ভুলে যেওনা গত তিনদিনে ২৬ বার পালানোর চেষ্টা করেছো।

পূর্ণতা প্রথমে চেঁচিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো; তারপর পরক্ষনেই নিজেকে শান্ত করে বলল, আশ্চর্য! সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? একজন কিডন্যাপড হওয়া মানুষ কী পালানোর চেষ্টা করবে না! না কি সে সুন্দর করে বসে থাকবে!!
অবশ্যই একজন মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে। তবে তুমি অস্বাভাবিক রকম পালানোর চেষ্টা করেছ।

তোমাকে একটি বিশেষ কারণে আমি এখানে রেখেছি, তার আগে তুমি এখান থেকে যেতে পারবেনা।
আপনার সমস্যাটা কি? কি চান আপনি আমার কাছে? আমি তো কোন বড়লোকের মেয়ে না ;যে আপনি আমার বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করবেন কিংবা আমি তো বিশ্বসুন্দরী না। আপনার সমস্যা কি? আপনি আমার কাছে কি চান?
মানুষটি গম্ভীরভাবে বললো এখনই তোমাকে আমি কারণ জানাতে পারব না। তার জন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আপনি একজন খুবই জঘন্য মানুষ ।আমি আপনাকে ঘৃণা করি। প্রচন্ড ঘৃণা করি।
পূর্ণতা খেয়াল করল তার সামনে থাকা মানুষটির মুখের পেশি হঠাৎ করে শক্ত হয়ে উঠল।
– আচ্ছা তাই, আমি একজন জঘন্য মানুষ?
পূর্ণতার শক্ত মুখে বলল , হ্যাঁ।
সে পূর্ণতার সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো, আমি তোমার সাথে কি এমন করেছি ?যার জন্য তুমি এক বাক্যে আমাকে জঘন্য বলে আখ্যায়িত করলে, আমি কি তোমার সাথে কোন প্রকার জোর জবরদস্তি করেছি? নাকি তোমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেছি? নাকি তোমাকে টর্চার করেছি? এর কোনটাই কিন্তু আমি করিনি।

আপনি তার চাইতে ও অনেক খারাপ কাজ করেছেন। আপনি আমাকে আটকে রেখেছেন । আমি আপনাকে চিনি না। জানি না। কেন আমাকে আটকে রেখেছেন? আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন?

– সেই উত্তরটি দেয়ার জন্য আমি বাধ্য নই। তবে তুমি যে খাবারটি এখন নষ্ট করেছো সেটা কিন্তু ঠিক হয়নি। আমি কোন কিছুর অপচয় একদমই পছন্দ করি না। এইবারের মত তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম দ্বিতীয়বার যদি এরকম কোন আচরণ করো তোমাকে কোন খাবার দেওয়া হবে না। এখন একজন এসে তোমাকে সকালের নাস্তা দিয়ে যাবে। চুপচাপ খেয়ে যাবে।

পূর্ণতা খেয়াল করল তার সামনে লোকটি দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে । খুট করে দরজায় শব্দ হলো। অর্থাৎ সে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

পূর্ণতা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে থাকল মাথায় তার চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
গত তিনদিন ধরে সে এই ঘরে বন্দি। ঠিক কোন কারণে লোকটি তাকে বন্দি করে রেখেছে। সেটা সে ধরতে পারছে না ।তবে তাকে কিডন্যাপ করার মতো কোনো কারন সে খুঁজে পাচ্ছে না। তবে এটা বুঝতে পারছে তাকে এখান থেকে বের হতে হবে । তবে যা করার মাথা ঠান্ডা করে করতে হবে । প্রচন্ড রাগ বারবার তাকে আটকে দিচ্ছে এই ঘরে। সে রাগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নিতে পারছে না।

দরজা আবারো খুট করে শব্দ হলো পূর্ণতা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল সেই লোকটি আবার প্রবেশ করছে ঘরে ।
আচ্ছা এই লোকটি তো বলেছিল যে অন্য কেউ আসবে খাবার নিয়ে। এই লোকটিই আবার আসলো। পূর্ণতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লোকটিকে দেখল। লোকটি বেশ দীর্ঘকার , শ্যাম বর্ণ। তার গায়ে একটি হলুদ পাঞ্জাবি। পরনে কালো জিন্স। হাতে একটি খাবারের ট্রে।

– আপনি আবার আসলেন?
– তোমার জন্য খাবার এনেছি।
– আপনিতো বলেছিলেন যে ,আপনি আর আসবেন না আরেকজন আসবে।
– আমাকে কি সহ্য করতে পারছো না।
– সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।
– দয়া করে আর কথা বলবেনা।
খাবারের ট্রে রেখে লোকটি চলে যাচ্ছিল।
পূর্ণতা তাকে পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল আপনার নাম কি?
লোকটি থমকে দাঁড়ালো অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে বলল- আমার কোন নাম নেই।আই এ্যাম নো বডি।

পূর্ণতা মৃদু হেসে বললো, হিমু হবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করবেন না। নিজেকে হিমু হিসেবে দাবি করতে যেয়ে দেখবেন শেষমেষ একটা বিপদে পড়ে গেছেন।
– নিজেকে হিমু কেন দাবী করব! তুমিতো আর রুপা নাও।
কথাটি শেষ করেই লোকটা হন হন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
পূর্ণতা বেশ চিন্তিত বোধ করলো এখান থেকে বের সে কিভাবে হতে পারে?
গত তিন দিন আগের কথা তার মনে পড়ে গেল সন্ধ্যায় টিউশনি শেষ করে ঘরে ফিরছিল। ফেরার সময় তাকে কেউ একজন নাকে রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেলে। জ্ঞান ফিরেই সে তার নিজেকে এই বদ্ধ ঘরে আবিষ্কার করেছে।

পূর্ণতা নিজের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক দিয়ে কিছু না কিছু একটা বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে সে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তার কাছে এই মুহূর্তে সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর যেন ঘুম থেকে উঠলেই যেন দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে।
সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না তাকে কিডন্যাপ করার কারণটা কি ?
সে খুবই মধ্যবিত্ত ঘরের একজন মেয়ে। এখন যদি তার বাবার কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয় তাহলে তার বাবা কখনোই দিতে পারবে না। পঞ্চগড়ের সাধারণ একজন কৃষক তার বাবা। ভাই বোনদের মধ্যে পূর্ণতা সবার বড়।
অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সে উঠে আসলোও সে প্রচন্ড মেধাবী। ঢাকায় পড়াশোনা সূত্রেই পূর্ণতার থাকা।
অত্যন্ত সাধারণ জীবনের মধ্যে হঠাৎই যেন এক অন্ধকার ছায়া নেমে এসেছে… সাধারণ জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।

এসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎই তার চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেল, সে আবিষ্কার করল ঘরের এক কোনায় সিলিং এর পাশের ভেন্টিলেটরটি বেশ বড়। সেখানে একজন মানুষ অনায়াসে তার ভেতর থেকে বাইরে যেতে পারবে। কিন্তু ঘরের উচ্চতা অনেক বেশি। সেখানে ওঠা খুবই কঠিন । সে এবার একটু বুদ্ধি খাটানোর চেষ্টা করলো।

রামিশা আর কবীর পূর্ণতার একটি ছবি নিয়ে থানায় মিসিং ডায়েরী করতে এসেছে। কিন্তু মিসিং ডায়েরী করতে এসে যে তাদেরকে এতটা বিড়ন্বনার স্বীকার হতে হবে সেটা তারা বুঝতে পারেনি।
একজন পুলিশ তাদেরকে পূর্ণতার সম্পর্কে এমন এমন প্রশ্ন করছিলো যেসব প্রশ্নে তাদের দুজন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল।
থানা থেকে বের হয়ে কবীর বেশ রেগে রামিশাকে বলল, আমাদের এখানে আসাই উচিত হয়নি!! দেখলি শালার পুলিশ অফিসার আমাদের পূর্ণতাকে নিয়ে কিসব আজেবাজে কথা বলল।
– এভাবে বলিস না। কবীর তোর মুখের ভাষা অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আগে মুখের ভাষা ঠিক কর। এমনিতেই অনেক ঝামেলার মধ্যে আছি।আর ঝামেলা করিস না।

– রাগ করব না তো কি করবো? পূর্ণতা গত চারদিন ধরে নিখোঁজ। ওর একটা খবর নেই। ও কোন বিপদে পড়লো নাকি তাও জানি না।

-এখন কি করা যায়? এদিকে আমি আর পূর্ণতা যেই বাসায় থাকি সেখানকার আশেপাশের বাসার আন্টিরাও পূর্ণতার কথা জিজ্ঞেস করছে।

-তুই কি বলেছিস?আর ওর বাসায় কেউ কি জানে ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?

-না আমি পাশের বাসার আন্টিকে বলেছি ও পঞ্চগড়ে ওর বাড়িতে গিয়েছে। আর ওর মায়ের সাথে আমি পূর্ণতা সেজে কথা বলেছি। আন্টি তেমন একটা সন্দেহ করেনি।
– তুই তো জানিস আমি ভালো ভেন্টিকুয়েলিজম ( এর অর্থ যে অন্যের কণ্ঠ নিজের কন্ঠে রূপান্তরিত করতে পারে ) করতে পারি।
– আজকে তোর এই প্রতিভা পূর্ণতার মান সম্মান বাঁচিয়েছে।

কবীরকে বিদায় দিয়ে রামিশা নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল। কবীর, রামিশা এবং পূর্ণতা ৩জনই ক্লাসমেট এবং পাশাপাশি বেশ ভালো বন্ধু।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি তে পড়ার সুবাদে তাদের বন্ধুত্ব।বর্তমানে তাদের অনার্স ফাইনাল ইয়ার চলছে।
ভার্সিটির প্রথম বছর থেকে রামিশা ও পূর্ণতা দুজনে বাসা নিয়ে থাকে। পূর্ণতা নিখোঁজের বিষয়টি তারা দুজন সবার কাছ থেকে আলাদা রেখেছে কারণ এতে পূর্ণতারই বিপত্তি ঘটবে, পূর্ণতা যদি ফিরে আসে তবে তাকে অনেক অপমানজনক পরিস্থিতিতে পরতে হবে। এসব কিছু চিন্তা করে তারা এখনো কিছুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নিজেরাই পূর্ণতাকে খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছে। এত কিছু চিন্তা করতে করতে রামিশা বাসায় দরজার সামনে চলে এসেছে।

কার্পেটের নিচ থেকে চাবি বের করে, চাবি দিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে সে দেখল দরজা ভেতর থেকে আটকানো। রামিশার বুক কেঁপে উঠলো। ঘরের ভিতরে কে আছে?
দরোজায় আলতো ধাক্কা দিয়ে সে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বিস্মিত হয়ে গেল… এ কাকে দেখছে সে!!
এও কি সম্ভব???

বিশেষ দ্রষ্টব্য:(পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here