গল্প:#গল্পের_অন্তরালের_অপূর্ণতা,পর্ব-৩
লেখা:#নাজিফা_তাবাসসুম
পূর্ণতা বাসায় এসে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকল তারপর সিদ্ধান্ত নিলো রামিশার এর সাথে সরাসরি কথা বলবে। কিন্তু এই মুহুর্তের রামিশার নাম্বার বন্ধ। রামিশা তার ছোট ভাবির বোনের গায়ে হলুদে গিয়েছে।
সেই জন্যই হয়তোবা আজকের রামিশাকে ফোনে পাওয়া যাবে না।
তবে আজকে রাত্রে কিভাবে সে একা একা থাকবে সে কথা চিন্তা করতেই পূর্ণতার শরীর শিউরে উঠল তারপর পূর্ণতা সাহস সঞ্চয় করে ঠিক করল , একাই থাকবে। তাছাড়া এখন আর করার ও কিছু নেই।
রাত প্রায় ১১ টার দিকে পূর্ণতা এসাইনমেন্ট শেষ করে বিছানায় ঘুমাতে যাবে। এমন সময় তার হঠাৎ মনে হল রামিশা তার ল্যাপটপটি রেখে গেছে। আচ্ছা সেখানে যদি আজকে সকালে দেখা গেমটা সম্পর্কে কিছু তথ্য যদি পাওয়া যায়!
যেভাবে সে কাজ রামিশা ল্যাপটপটি নিয়ে বসলো। কিন্তু বসার পরক্ষণেই অনেক হতাশ হয়ে গেল ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দেয়া। সে কিভাবে রামিশার পাসওয়ার্ড জানবে?
এমন সময় তার কাছে কবীরের ফোন আসলো। পূর্ণতা কবীরের সাথে কথা বলার সময় আজকে সকালে ঘটে যাওয়া সব কিছুই খুলে বলল।
কবীর সবকিছু শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো।
তারপর বলল, এসব বিষয় নিয়ে এত বিশ্লেষণে যাচ্ছিস কেন? এগুলো থেকে যত দূরে থাকবি ততই ভালো। বলেই কবীর কট করে কলটা কেটে দিল।
পূর্ণতা বেশ হতাশ হয়ে গেল।
তারপর অনেকটা অনধিকার চর্চা করেই হয়ত সে রামিশার ল্যাপটপে বারবার পাসওয়ার্ড দিতে থাকলো, একবার একবার করে তার যত কিছু মনে করল সে সবকিছু দিল।
কিন্তু কিছুতেই সে খুলতে পারল না,
তবে যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছিল তখনই হঠাৎ করে কবিরের নামটা তার মনে আসলো। কবীর তার এবং রামিশার ভালো বন্ধু হলেও রামিশা তাকে একটু অন্য নজরে দেখে।
সেটা পূর্ণতা ভালোভাবেই বুঝতে পারে.. সেই চিন্তা থেকেই সে এবারে শুধু কবীরেরই নাম লিখল এবং বিস্ময়কর ভাবে ল্যাপটপ ওপেন হয়ে গেল। পূর্ণতা হতভম্ব হয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। অবিশ্বাসের দৃষ্টি চোখ মুখে।
তার মানে রামিশা সত্যিই কবিরকে ভালোবাসে!!
অবাক করা বিষয়।
ল্যাপটপে সে যখন একটি ফাইল ওপেন করতে যাবে তখন একটা নোটিফিকেশন আসলো, সে খেয়াল করে দেখল Save me নামক গেম থেকে সেই নোটিফিকেশনটি এসেছে। সে বেশ অবাক হয়ে গেল, তারমানে রামিশা ও এই গেমটি খেলে!!
পূর্ণতা বেশ অবাক হয়ে দেখতে পেল ল্যাপটপের বিভিন্ন ফাইল সেভ করে রাখা। সে একটি ফাইলে ঢুকে দেখলো সেখানে একটা ভিডিও আছে। কৌতুহলী হয়ে ভিডিওটা চালু করতেই তার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। তার মেরুদন্ড দিয়ে যেন শীতল স্রোত নেমে গেল।
ভিডিওটি একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ভিডিওতে আর কাওকে না রামিশাকে দেখা যাচ্ছে। অবাস্তব এবং অসম্ভব একটি দৃশ্য তার কাছে লাগলো এটি।
এটা কিভাবে সম্ভব হয়!! সে দেখতে পেল রামিশাকে পাশের ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। রামিশার সাথে সেই একই ঘটনা ঘটছে, যা তার সাথে ঘটেছে।
সে বিষ্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছে গেল। তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা সে যেন ফুটেজ দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু পার্থক্যটা এটাই যে সেখানে পূর্ণতা জায়গায় রামিশা রয়েছে আর সেই অচেনা লোকটির জায়গায় পূর্ণতা রয়েছে। তার কাছে যেন সবকিছু গুলিয়ে গেল। সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
সেই যদি রামিশাকে আটকে রাখে তবে সে এতদিন কোথায় ছিল?? রামিশা যে বলেছিল সে আর কবীর দুজনে থানায় পূর্ণতার জন্য নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়েছিল!! পূর্ণতা যদি বাসায় থেকে থাকে…তবে এতদিন ধরে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এর ব্যাখ্যা কি?
তবে কি রামিশা এখনো এই বাসাতেই আছে!!আচ্ছা রামিশার তো সাথে আজ তার ভাবির বোনের গায়ে হলুদে থাকার কথা… তবে এসব কি হচ্ছে?
পূর্ণতা তার টেবিলের কোন থেকে তার নোটবুকটি বের করল, পূর্ণতার অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার একটি বাতিক রয়েছে। এ কয়েকদিনে কি হয়েছে সেটি বের করার উদ্দেশ্যে নোটবুকের পাতা উল্টাতে গিয়ে একটি লেখা তার চোখে পড়ল।
সেখানে স্পষ্ট অক্ষরে তার নিজের হাতের লেখা,
“আজ কবীরের সাথে রামিশার নিখোঁজ ডায়েরি করতে থানায় যাচ্ছি। রামিশা গত চার দিন ধরে নিখোঁজ। কোথায় আছে জানিনা। রামিশার মা ফোন করেছিল, আমি রামিশা সেজে কথা বলেছি, কারণ আমি ভালো ভেন্টিকুয়েলিজম করতে পারি। আজকে আমার আমার প্রতিভাই রামিশাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে”।
এই লিখাটি দেখি পূর্ণতা চোখ কপালে উঠে গেল! সে কখন এই লেখা লিখেছে? তার তো কিছুই মনে পড়ছে না!! কিন্তু সে বুঝতে পারছে লেখাটি তার নিজের হাতের লেখা!!
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় সে শুনতে পেল পাশের ঘর থেকে খুট খাট শব্দ আসছে। সে ভয়ে ভয়ে পাশের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। লক্ষ্য করলো দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করা। দরজাটি খুলে ভেতরের দিকে তাকাতেই তার আত্মা জমে গেল। একি দেখছে সে?
বাস্তব এবং অবাস্তবের এর মাঝে পূর্ণতা যেন চাপা পড়ে যাচ্ছে…. ‘সে নিজের চোখের সামনে রামিশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখলো’। রক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে… ‘রামিশার মৃতদেহের দিকে এগিয়ে যেতেই মাথায় যেন প্রচন্ড চাপ অনুভব করল’। যেন প্রচন্ড শক্ত কিছু তার মাথা ভেদ করে চলে গিয়েছে…. প্রচন্ড যন্ত্রণায় সে মূর্ছা যেতে লাগলো….
বিশেষ দ্রষ্টব্য: (পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। আজকের পর্বে রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে… তবে আস্তে আস্তে আগামী পর্বগুলোতে এই রহস্যের সমাধান হবে। সবার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আশাকরি আমি কাউকে নিরাশ করবো না। যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।)