গল্প :- পরী বউ,পর্ব :- ০৫
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”তারপর ওখানে এক জাগায় সাফা আর আমি পাশাপাশি বসলাম। আকাশে আজকে বড় একটা চাঁদ আছে। চাঁদের আলোতে চারপাশ অনেক সুন্দর
লাগতেছে। এই রাতের বেলাও পুকুরের পানিতে
দুই তিনটা হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে। এই হাঁসের জন্য
পানিতে ছোট ছোট ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে আর
সেই ঢেউয়ের পানির মধ্যে চাঁদের
প্রতিবিম্বটাকে রুপার মত ঝিকমিক করতে দেখা
যাচ্ছে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। সাফা আমার কাঁধে মাথা
রেখে বসে আছে। দেখছে চার পাশের দৃশ্য।
সাফা বললো,
– সিয়াম? তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসতে
পারোনি?
কি বলবো এখন আমি? পেরেছি তাই বলবো? কিন্তু
আমি তো মেনে নিতে পারছি না। এই কথাটা ওকে
কিভাবে বলি? আমি তো বলতে পারছি না ওকে। কি
ভাববে ও? যদি কষ্ট পাই? যদি কান্না করে?
– সাফা বাদ দাও না এখন এই সব?
– আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিলাম। এখন কি করবা এখানে
বসে থাকবা? না অন্য কোথাও যাবা?
– অন্য কোথাও না। বাসায় যাবো। আর ভাল্লাগছে না।
সাফা বললো,
– এখনই বাসায় যাবা? তার চেয়ে চলো আজকে
তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।
– কি জিনিস? জানতে চাইলাম আমি।
– তুমি একদিন বলেছিলে না? আমার ডানা আছে কিনা?
আর দেখতেও চাইছিলা মনে আছে?
আমি বললাম,
– হ্যাঁ মনে আছে তো।
– আজকে তোমাকে আমার ডানা দেখাবো তারপর
তোমাকে নিয়ে এই পূর্নিমার রাতের আকাশে
ঘুরবো।
বলতে বলতে সাফার পিঠের দু পাশ থেকে দুটো
বিশাল বিশাল ডানা বের হয়ে গেলো। ডানা দুটোর রং
সাদা। সাফাকে দেখতে এখন অন্য রকম লাগছে
ডানার জন্য। আমার একটু ভয় ভয় লাগতেছে। সাফা
পাখির মত ডানা ঝাপটালো তারপর বললো,
– সিয়াম আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরো?
– কিভাবে? ডানার জন্য আমার ভয় লাগতেছে। আমি
ধরতে পারবো না। উড়তে হবে না। তার চেয়ে
বাসায় চলো।
– হিহিহিহি কিসের ভয় পাচ্ছো? আমি আছি না? তোমার
কিছু হবে না। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।
আমি সাফার কথা মত সাফাকে পেছন থেকে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরলাম। সাথে সাথে সাফা আমাকে
নিয়ে উড়তে শুরু করলো। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ
করে রাখলাম। চোখ খুলে দেখি আমি আকাশে।
নিচের গাছপালা ছোট ছোট দেখা যাচ্ছে। এটা
দেখে ভয়ে একটা চিৎকার দিলাম আমি। সাফা বললো,
– এই সিয়াম। চিৎকার করে উঠলে কেনো?
– আমার ভয় করছে। আমি কত উপরে। আমাকে
মাটিতে নামাই দাও। নয়তো এখান থেকে একবার
পড়ে গেলে ছাতু হয়ে যাবো আমি।
– হিহিহি তোমাকে তো পড়তে দিবো না। তাহলে
ছাতু হবা ক্যামনে?
– জানিনা আমার ভয় লাগছে।
– তুমি এতো ভিতু কেনো সিয়াম?
আমি ভিতু? আমার জাগায় তুমি হইলে বুঝতে। মনে
মনে বললাম আমি। সাফা ডানা ঝাপটিয়ে আরো উপরে
উঠতে লাগলো। এই ডানা ঝাপটানোর কারনে ডানা
থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। এখন ভয়টা একটু
সহে এসেছে। মাঝে মাঝে কুয়াশার মত কিসের
ভিতর দিয়ে যেনো যেতে হচ্ছে। সাফার কাছে
জানতে চাইলাম। এই গুলো ধোয়া নাকি কুয়াশা। ও
বললো যে এই গুলো মেঘ। মেঘ? নিজের
মনে উচ্চরন করলাম একবার। ওর কথা শুনে তো
আমার মাথা ঘুরছে। কত উপরে আমি। আমি তারা দেখার
জন্য উপরের দিকে তাকালাম। দেখলাম মাটি থেকে
যতটা দুরে দেখা যায়? তারা গুলোকে এখান
থেকেও ঠিক ততোটা দুরেই মনে হচ্ছে।
আরো একটু ভালো করে দেখতে যেয়েই
বিপদ ঘটলো। হাত ফসকে পড়ে গেলাম আমি। কি
জোরে নিচের দিকে নামতেছি। চোখ বন্ধ
করে ফেললাম। মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই আমি
শেষ এটা ভেবে কান্না পাচ্ছে এখন। হঠাৎই মন
হলো কে যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
চোখ খুলে দেখি সাফা আমাকে ওর বুকের সাথ
জড়িয়ে ধরে আছে। বিশ্বাসই করতে পারছিনা আমি
বেঁচে গেছি। সাফা আমাকে বললো,
– তুমি পড়ে যাচ্ছিলে কিভাবে সিয়াম? তোমাকে না
বলেছিলাম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে?
– শক্ত করেই তো ধরেছিলাম কিন্তু তারা দেখার
জন্য উপরে তাকাতে যেয়ে কিভাবে যে হাতটা
ফসকে গেলো বুঝতে পারলাম না।
– হিহিহি পাগল একটা তুমি। উপরের দিকে তাকালে মাথার
ভিতর চক্কর দিয়ে উঠে, এটা কি তুমি জানো না?
– জানি তো কিন্তু বুঝতে পারিনি যে পড়ে যাবো।
আমি তো ভাবলাম আজকে আমি মরহুম হয়ে সিয়াম
হয়ে যাবো।
এই কথাটা বলার সাথে সাথে সাফা একটা হাত দিয়ে আমার
মুখ চেপে ধরলো। তারপর বললো,
– এমন কথা আর কখনো বলবা না। আমি বেঁচে
থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না।
বলে আরো শক্ত করে ওর বুকের সাথে
জড়িয়ে ধরলো আমাকে।
– আচ্ছা সাফা অনেক তো ঘোরা হলো। এবার
চলো ফেরা যাক।
– হুম চলো।
তারপর আমরা চলে আসলাম বাসায়। আসার আগে একটা
হোটেল থেকে রাতের খাবারটা খেয়ে আসছি
দুজনই। তারপর সাফা ওর ওখানে চলে গেলো আর
আমি আমার রুমে চলে আসলাম। এসে ফ্রেশ হয়ে
শুয়ে পড়লাম। হালকা হালকা ঘুম চলে এসেছে আমার।
তখনই ফিল করলাম আমার পাশে যেনো কেউ
শুয়ে পড়লো। ঘুমের কারনে সেটাকে পাত্তা
দিলাম না। তার একটু পরেই আমার বুকের উপর কে
জানি মাথা রাখলো। পুরোপুরি জেগে গেলাম আমি।
তাকিয়ে দেখি সাফা শুয়ে আছে আমার বুকে মাথা
রেখে।
– এই এই কি করছো সাফা? তুমি আমার বুকের উপর
শুয়ে আছো কেনো? বাসায় যাওনি?
– বাসায় গেছিলাম তো সিয়াম বাট কিছুতেই ঘুম
আসতেছিলো না। শুধু তোমার কথা মনে
পড়ছিলো। তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো।
তাই চলে আসলাম। ভাবলাম আজকে তোমাকে
জড়িয়ে ধরে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো
হিহিহিহি।
কিছু বললাম না আমি আর বলেও কোনো লাভ
হতো না। তাই চুপচাপ শুয়ে থাকলাম।
কিছু সময় এইভাবেই কেটে গেলো। নিরবতা
ভাংলো সাফার ডাকে।
– সিয়াম? ঘুমিয়ে পড়ছো নাকি?
– নাহ। ঘুমাইনি বলো।
– আচ্ছা আজকে আমার সাথে আকাশ ভ্রমনটা
তোমার কেমন লাগলো? আমার কিন্তু অন্নেক
ভালো লেগেছে। এতোটা ভালো আগে
কখনো লাগেনি আমার।
– আমারো ভালো লেগেছে কিন্তু কখনো
তো আকাশে উড়া হয়নি আর এমন ভাবে তো
স্বপ্নেও না। তাই ভয়টা একটু বেশি ছিলো। কিন্তু
আমি একটা জিনিস বুঝলাম না।
– কোন জিনিস? বললো সাফা।
– তুমি তো পরী। আর উড়াটাও তোমাদের কাছে
স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তারপরও আজকে উড়ে
তোমার বেশি ভালো লেগেছে কেনো?
– হিহিহি আরে বুদ্ধ আজকে যে আমার সাথে তুমি
ছিলে এজন্য বুঝেছো? পাগল একটা হিহিহি।
– আমার জন্য কেনো?
– শোনো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর
আগে তো বান্ধবীদের সাথে ঘুরতাম।
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে তো আর ঘোরা হয়নি।
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘুরলে কেমন ফিল হয়
সেটা তো জানতাম না কিন্তু আজকে জানছি।
তোমার সাথে হাটাহাটি করা। ফুসকা, চটপটি খাওয়া, রাতের
আকাশে ভ্রমন করা। সব শেষে রেষ্টুরেন্টে
রাতে ডিনারটা করা। সব মিলেয়ে আজকের দিনটা
আমার কাছে ষ্পেশাল একটা দিন। এবার বুঝেছো?
– হুম বুঝলাম।
কিছুতেই ঘুম আসতেছে না আমার। দেখলাম সাফা
আমার বুকের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
তারপর আমিও কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে
পারিনি। সকালে সাফার ডাকে ঘুম ভাংলো। সাফার দিকে
তাকানোর সাথে সাথেই সাফা বললো,
– শুভ সকাল। ঘুম ভাংলো তাইলে?
– শুভ সকাল। তুমি কখন উঠছো?
– আমি তো সেই কখন উঠছি। উঠে ফ্রেশ হলাম।
তারপর নাস্তা বানালাম তোমার জন্য।
ও হ্যাঁ কালকে বাজার করে এনেছিলাম আমি। চাল, ডাল,
ডিম, আটা। আটা নিয়ে আসা রুটি বানানোর জন্য। আমি
সাফাকে বললাম,
– এই গুলো যে আনছি তুমি কিভাবে দেখলে?
– দেখলাম কিছু আনছো কিনা, না আনলে তো অন্য
ব্যবস্থা করতে হতো আমাকে। কিন্তু খোজার
সাথে সাথে পেয়ে গেলাম। তাই রুটি আর ডিম ভাজি
করছি এখন।
– ও আচ্ছা।
– হুম এবার উঠো? উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো
একসাথে খাবো।
আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। এসে
দেখি ও খাবার নিয়ে বসে আছে। তারপর খেতে
বসলাম। সাফা বললো,
– কেমন হইছে রুটি বানানো? আসলে আমি আগে
কখনো রুটি বানাইনি।
– হুম অনেক সুন্দর হইছে। ওর মন রক্ষার্থে বলা
না। আসলেই অনেক মজা হইছে।
– ধন্যবাদ সুইটহার্ট হিহিহি।
খাওয়া শেষ হলে সাফা সব কিছু গুছিয়ে রেখে
চলে গেলো। আবার কখন আসবে এটা বলে
যাইনি। ওর যখন মন চাইবে তখনই চলে আসবে এটা
তো আমি যানি। আমি এক কাপ চা নিয়ে ছাদের উপর
হাটাহাটি করছি। আর সাফাকে নিয়ে ভাবছি।।
.
.
চলবে……..