গল্প :-পরী বউ,পর্ব :- ০৬

0
2519

গল্প :-পরী বউ,পর্ব :- ০৬
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”আচ্ছা সাফা তো আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি
তো ওকে মেনে নিতে পারছিনা। তাহলে ওর
সাথে এই মেলামেশা, এই সম্পর্কটার মানে কি? আমি
তো চাই ওর কাছ থেকে দুরে থাকতে কিন্তু ও
তো থাকছে না। ছোট বেলায় দাদির কাছে গল্প
শুনতাম পরীরা যদি কাউকে পছন্দ করে তাকে
ছেড়ে যেতে চাই না। তাকে নাকি তাদের রাজ্য
পরীস্থানে নিয়ে যায়। আবার অনেকের নাকি-
অনেক বড় রকমের ক্ষতি করে দিয়ে যায়-যখন
তাকে না পাই। কিন্তু সাফার বিষয়টা ভিন্ন। ও আমাকে
ভালোবাসে সত্যি কিন্তু আমাকে কখনও বলেনি ও
আমাকে সারাজীবনের জন্য পরীস্থানে নিয়ে
যাবে বরং আমার সাথে এখানেই থাকবে এটা
বলেছে। কখনো আমার ক্ষতি করার কথা চিন্তাও
করেনি ও। হয়তো আমাকে সত্যিই ভালোবাসে
বলে। কিন্তু পরী আর মানুষ? এটা কিভাবে সম্ভব?
হ্যাঁ আমিও ওকে ভালোবাসলাম বিয়ে করলাম। তারপর
ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। তারপর যদি
কখনো আব্বা, মা বা পরিবারে অন্য কেউ বুঝতে
পারে ও মানুষ না পরী তাহলে? তাহলে কি হবে?
মানুষ হলে না হয় সবাইকে বুঝিয়ে বলতাম একটা সময়
মেনে নিতো। আর এটাও না হয় সবার কাছ থেকে
গোপন করে রাখলাম। তারপর একদিন না একদিন তো
জেনে যাবে। আর জেনে না গেলেও অলটাইম
একটা ভয় নিয়ে থাকতে হবে। না এইভাবে হয় না।
সাফাকে যে করেই হোক আমার জীবন থেকে
সরাতেই হবে। তাতে ওর জন্য ভালো আর আমার
জন্য ও। সাফা অনেক ভালো একটা মেয়ে আমি চাই
ও ওদের ভিতরে কাউকে বিয়ে করে সুখি হোক।
তখনই হঠাৎ রিফাতের কথা মনে পড়লো আমার।
সেদিন কি যেনো একটা বলছিলো আমাকে বাট
অতোটা খেয়াল করে শুনিনি আমি। জ্বীন কে
নিয়ে কি যেনো বলছিলো? ওর কাছ থেকে
শোনার জন্য ফোনটা বের করলাম। তারপর
রিফাতকে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে বাট ধরছে না। শালা
ফোন রেখে কোই গেলো? এবার রিসিভ
হলো। তারপর রিফাত বললো,
– কিরে সিয়াম কি মন করে ফোন দিলিরে আজকে?
– শালা তোর কাছে কি ফোন ও দেয়া যাবে না নাকি?
– দিসই না তো প্রয়োজন ছাড়া এজন্য বললাম।
– রিফাত তুই ও না…..
– হাহাহা সরি দোস্ত মজা করলাম। এখন বল কেমন
আছিস?
– ভালোই। তোর কি অবস্থা?
– এই তো চলে যাচ্ছে এক রকম।
– আচ্ছা রিফাত তুই যে ঐ দিন জ্বীন নিয়ে কি
যেনো বলছিলি আমাকে?
– জ্বীন নিয়ে মানে?
– আরে গাধা জ্বীন আর তোর ভাবির কথা কি একটা?
– ওও হ্যাঁ। আমার একটা ভাবিকে জ্বীনে আছর
করছিলো। উনাকে নাকি জ্বীনে নিয়ে চলে
যাবে। তাই তো আব্বা আর মা গেছিলো ভাবিকে
নিয়ে একটা তান্ত্রিকের কাছে।
আমি বললাম,
– তান্ত্রিকের কাছে কেনো?
– তান্ত্রিক ভাবির কাছ থেকে ঐ জ্বীনটাকে
তাড়িয়ে দিবে তাই।
– এখন তোর ভাবির কি অবস্থা?
ঐ জ্বীন কি তোর ভাবিকে ছেড়ে চলে
গেছে?
– হ্যাঁ গেছে।
– আচ্ছা দোস্ত তুই ঐ তান্ত্রিকের এ্যাড্রেসটা
আমাকে মেসেজ করে দিস তো?
– এ্যাড্রেস নিয়ে তুই কি করবি সিয়াম?
– এমনি যদি কখনো দরকার হয় তাই রেখে দিবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
– আচ্ছা দোস্ত তাইলে রাখছি এখন। ভালো থাকিস
তুই।
রিফাতের সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
সাফার কথা এখনো কাউকে জানাইনি আমি। জানালে
কেউ বিশ্বাসই করতো না আরও অনেক ঝামেলায়
পড়তে হতো, এটা ভেবে কাউকে বলিনি। হঠাৎ
ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো।
দেখলাম রিফাত তান্ত্রিকের ঠিকানাটা দিয়ে একটা
মেসেজ দিছে। তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে
গেলাম। তারপর রেডি হয়ে তান্ত্রিকের
উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দেরি করতে চাচ্ছিনা আমি।
এজন্য আজই যাচ্ছি। তান্ত্রিকের কাছে যখন পৌছালাম
তখন তিনটা বাজে। দেখলাম উনি চোখ বুজে বসে
আছে। হয়তো ধ্যানে বসেছে। এরা তো এমনই
করে তাই ধারনা করলাম ধ্যানে বসেছে। তান্ত্রিক
কিছু সময় পর চোখ খুলে তাকালো আমার দিকে।
তারপর উনাকে সব কিছু বললাম সাফার বিষয়ে। তান্ত্রিক
আমাকে বলো সাফা এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে
ছেড়ে চলে যাবে। এক সপ্তাহ পর আবার আসতে
বললো উনার কাছে। তান্ত্রিকের কাছ থেকে
বের হয়ে বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে
গেছে। সিড়ি দিয়ে উঠছি আর মনের মধ্যে নানা
রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে কি সাফা আমার
জীবন থেকে সরে যাবে? নাকি তান্ত্রিক
আমাকে মিথ্যা বলেছে? কি হবে শেষ পর্যন্ত
কিছুই বুঝতেছি না। দেখা যাক কি হয়। অপেক্ষা করা
ছাড়া তো উপায় নাই। ভাবতে ভাবতে রুমের দরজা
খুললাম। দরজা খুলে ভিতরে সাফাকে দেখে
চমকে গেলাম। আজকে একটু অন্য রকম ভাবে
সেজেছে এসেছে ও। পরনে নীল শাড়ি,
নীল টিপ, নীল চুড়ি আর চোখে কাজল। অদ্ভুত
রকমের সুন্দর লাগছে ওকে। নীল পরীর মত
সুন্দর। কিন্তু চোখের কাজল লেপ্টে চোখের
চার পাশে লেগে আছে। আর চোখটাও অনেকটা
ফোলা ফোলা। তাহলে কি কেদেছে ও? কিন্তু
কেনো? আমাকে দেখে বললো,
– ও সিয়াম তুমি এসেছো? এতো দেরি করলে
কেনো? জানো সেই কখন থেকে তোমার
জন্য অপেক্ষা করছি।
– অপেক্ষা? কেনো?
– ও ভুল হয়ে গেছে। তোমার জন্য তো
অপেক্ষা করা যাবে না। কারন তুমি তো আমাকে
ভালোইবাসোনা। জানো আজকে তোমার জন্য
সেজে এসেছিলাম। কারন তোমার তো নীল রং
পছন্দ। তাই নিজেকে নীল রং এ রাঙিয়ে নীলিমা
বানিয়ে এসেছিলাম। তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো
বলে কিন্তু কাকে সারপ্রাইজ দিবো? যে আমাকে
ভালোইবাসেনা তাকে? যে আমাকে তাড়ানোর
জন্য তান্ত্রিকের কাছে গেলো তাকে?
কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছে সাফা আর
চোখের পানি মুছছে। চোখের কাজল এখন সারা
মুখে ছড়িয়ে আছে। কালো দেখা যাচ্ছে ওকে।
একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো,
জানো সিয়াম অনেক ভালোবাসি তোমাকে। কিন্তু
আজ যখন জানতে পারলাম আমাকে তোমার বিরক্ত
লাগে, আমাকে তোমার জীবন থেকে তাড়িয়ে
দেয়ার জন্য তান্ত্রিকের কাছে গেছো। তখন
নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে
আমার সিয়াম? আমার সিয়াম আমাকে তাড়াতে চাই?
অনেক কেঁদেছি আমি। আমার লাইফে এতো কান্না
কখনো কাঁদিনি। আমি কাঁদলাম কেনো? আমার
ভালোবাসা কি ভুল ছিলো? নাকি যাকে ভালোবাসলাম
সেই মানুষটা ভুল ছিলো? আমার ভালোবাসা ভুল
ছিলোনা। আমার ব্যর্থতা আমি তোমার মনে আমার
জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারিনি। হেরে গেলাম
আমি। হেরে গেলো আমার ভালোবাসা।আমি
বুঝতে পেরেছি সিয়াম জোর করে ভালোবাসা
হয়না। তাই আমি তোমার জীবন থেকে চিরদিনের
জন্য দুরে চলে যাচ্ছি। কখনো ভালোবাসার দাবি
নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। ও হ্যাঁ ভেবেও
না ঐ তান্ত্রিকের ভয়ে আমি চলে যাচ্ছি? কারন আমি
যদি না চাই এমন কেউ নেই যে এই সাফাকে
তাড়াবে। কিন্তু আমি থেকে কি করবো? তুমি তো
আমাকে চাওই না। ভালো থেকো সিয়াম। নিজের
দিকে খেয়াল রেখো আর একটা ভালো মেয়ে
দেখে বিয়ে করে নিয়ো। যে তোমাকে আমার
থেকেও বেশি ভালোবাসবে।
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here