গল্প :-পরী_বউ,পর্ব :- ০২
লেখা :- কাব্য আহমেদ
-:”কিন্তু এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না। আমি
পারবো না তোমাকে ভালোবাসতে।
– কিন্তু কেনো? আমি কি দেখতে খারাপ?
– না তা না। তুমি দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু
কেনো ভালোবাসতে পারবো না সেটা তো
তোমাকে অনেক বার বলেছি।
– কিন্তু আমি এতো সহজে হার মানবো না।
আমি তোমার হৃদয়ে আমার ভালোবাসার বিচ
ঠিকই বুনবো। আমার ভালোবাসা দিয়েই আমি
তোমার মন জয় করবো।
আমি কিছু বললাম না। ভাল্লাগছে না কিছু।
ও বললো,
– সিয়াম তুমি আজকে সারাদিন অনেক কষ্ট
করেছো আমি যানি। আর এই কারনে তোমার
খাওয়া দাওয়াও হয়নি। আমি তোমার জন্য
খাবার নিয়ে এসেছি। হাত মুখ ধুয়ে এসো।
আমি তোমার খাবার দিচ্ছি।
– আমার খেতে ইচ্ছা করছে না। খাবো না
আজকে রাতে। তুমি খাবার নিয়ে চলে যাও।
– একদম মিথ্যা বলবা না। তোমার অনেক
খিদা লেগেছে আমি যানি। না খেয়ে
তোমার মুখটা একদম শুকায় গেছে। যাও
তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে এসো?
আমি চলে গেলাম হাত মুখ ধুতে। আমি না
গেলে ও শুনতো না। রেগে যেতো আবার। তাই
চুপচাপ চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ও
খাবার প্লেটে দিছে।
আমি দেখে হেসে বললো,
– নাও ভাত নাও।
আমি হাত দিতে যাবো তখন বললো,দাড়াও
আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। বলে আমাকে
খাইয়ে দিতে লাগলো। আমি বললাম,
– তুমি খাইছো?
– হুম খাইছি।বললো ও
আমি একটা প্লেটে খাবার দিয়ে বললাম,
তুমিও খাও আমার সাথে। দেখলাম খুশিতে ওর
চোখ দুটো চকমক করছে। হয়তো এমনটাই ও
আশা করেছিলো আমি যেনো ওকে খাইতে
বলি। তারপর আমরা খাওয়া শেষ করলাম। ও
সব কিছু আবার গুছিয়ে রাখলো।
আর বললো,
– তুমি এবার শুয়ে পড়ো। আমি এবার চলে
যাবো। অনেক ক্লান্ত তুমি। তোমার রেষ্ট
দরকার।
বলে চলে গেলো। আমি শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম
আসতেছে না। কিভাবে আসবে? আমি বুঝতে
পেরেছি ও আমার পিছু ছাড়বে না। ও হ্যাঁ ওর
পরিচয়টা এখনো দেয়া হয়নি। ওর নাম সাফা।
প্রায় তিন মাস আগের কথা। আমার এক বন্ধুর
বার্থ ডে পার্টি থেকে অনেক রাতে বাসায়
আসছিলাম। আমি যে বাসায় থাকতাম ওটার
সামনে একটা বড় জঙ্গলের মত আছে। আর ঐ
জঙ্গলের মাঝ খান দিয়ে একটা রাস্তা
আছে। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারনে একটু
তাড়াতাড়ি আসার জন্য ঐ রাস্তা দিয়েই
আসতে লাগলাম। কিছু দুর এসে দেখি একটা
গাছের নিচে একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে
আছে। আমি মেয়েটার কাছে যেয়ে দেখি
অপরুপ একটা মেয়ে। এমন মায়াবি চেহারা
আমি আগে কখনো দেখিনি। এতো সুন্দর?
আমি হা করে চেয়ে রইলাম। ভুলেই গেলাম
মেয়েটা পড়ে আছে। যখন হুশে এলাম। তখন
দেখি ওর মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
বুঝতে আর বাকি রইলো না যে মাথায় আঘাত
পাওয়ার কারনে জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু
একে নিয়ে এখন কি করবো? রাত তো অনেক।
ডাক্তারের দোকান তো বন্ধ আর
হাসপাতালে নিয়ে যাবো কিন্তু গাড়ি
পাওয়াটা কঠিন হবে আর বাড়িতে নিয়ে
যাবো কিন্তু বাড়িওয়ালা যদি দেখে তাহলে
আমাকে তাড়িয়ে দিবে। আবার এই অবস্থায়
এই মেয়েটিকে ফেলে চলে যাবো সেটাও বা
কি করে যাই? মানুষ হয়ে যদি মানুষের বিপদে
সাহায্য না করি তাহলে আমি মানুষ হলাম
ক্যামনে? এমন অবস্থা যদি আমার সাথে হতো
তাহলে? অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম
বাড়িতেই নিয়ে যাবো। তারপর যা হয় হবে,
সেটা পরে দেখা যাবে। ওকে পাজা কোলা
করে নিয়ে বাড়িতে আসলাম। আমার রুমটা
নিচে হওয়াতে নিয়ে আসতে অনেক সুবিধা
হয়েছে। ভয় ছিলো দারোয়ানকে নিয়ে কিন্তু
দেখি দারোয়ান এক পাশে ঘুমচ্ছে। আমি
মেয়েটিকে নিয়ে আমার বিছানায় শুইয়ে
দিলাম। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর। আমি ওর
মাথাটা মুছে ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ
করে দিলাম। তারপর আমি পাশে একটা
চেয়ার টেনে বসে ওর জ্ঞান ফেরার
অপেক্ষা করতে থাকলাম। বসে থাকতে
থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।
সকালে ওর কথা হঠাৎ মনে হতেই আমার ঘুম
ভেঙ্গে গেলে। তাকিয়ে দেখি ওর জ্ঞান
ফিরেছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এখন কেমন লাগছে জানতে চাইলাম। ভালো
লাগছে বললো। বুঝলাম শরীরটা এখনো তেমন
ঠিক হয়নি। অনেক দুর্বল এখনো। আর বেশি
কিছু বললাম না। তারপর ওর জন্য নাস্তা
নিয়ে আসলাম হোটেল থেকে। আর সাথে
ঔষুধ। রুমে এসে দেখি ও ঘুমিয়ে গেছে
আবার। ডাকলাম না। যখন ওর ঘুম ভাংলো তখন
ওকে নাস্তা করিয়ে ঔষুধ খাইয়ে দিলাম।
আজ আর কোথাও যাবো না। বাড়িওয়ালা খুব
দরকার না পড়লে আমার কাছে আসেনা। এই
জন্য ভয় নেই। এই ভাবে দুই দিন কেটে
গেলো। দুই দিন পরে ও মোটামুটি সুস্থ হলো।
তখন ওকে বললাম,
– আচ্ছা কে আপনি? সেদিন রাতে কি
হয়েছিলো আপনার সাথে?
ও বললো,
– সব কিছু শুনে ভয় পাবেন না তো?
আমি তো অবাক কি বলে মেয়েটা? ভয় পেতে
যাবো কেনো? আমি বললাম,
– না ভয় পাবো কেনো? ভয়ের কি আছে বলেন
আপনি?
তারপর ও বললো,
– ঠিক আছে বলছি। এমনিতেই আপনি আমার
উপকার করেছেন। আপনাকে সব বলা উচিত।
আমার নাম সাফা। আমি আপনাদের মত মানুষ
না।
ওকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম,
– মানে ঠিক বুঝলাম না। মানুষ না বলতে কি
বুঝাচ্ছেন?
– মানুষ না বলতে আসলে আমি পরী।
– পরী? অবাক হয়ে বললাম।
– হ্যাঁ পরী।
ওর কথা শুনে আমার ভয় করছিলো। ও যে পরী
এটা ভেবে না। ভয়টা পাচ্ছি এটা ভেবে যে
ওর মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে হয়তো ওর
মাথায় সমস্যা দেখা দিছে। কিন্তু ও আমাকে
অবাক করে দিয়ে বললো,
– না আমার মাথায় কোনো সমস্যা হয়নি। আমি
সত্যি সত্যিই পরী।
সাফা আমার মনের কথাটা বলে দিছে। তবুও
ওকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও পরী।
হ্যাঁ ও দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর। আমরা
যেটাকে বলি পরীর মত সুন্দর। তাই বলে পরী?
কিন্তু কিভাবে? জলিজ্যান্ত একটা মেয়ে
আমার সামনে বসে আছে। আর সে কিনা বলে
আমি পরী। হাসি পেলো একটু। আমি বললাম,
– আচ্ছা আমি শুনেছি পরীদের ডানা থাকে
কিন্তু আপনার তো কোনো ডানা দেখতেছি
না।
– হুম পরীদের ডানা থাকে এটা সত্য। আর
আপনি যে আমার কথা বিশ্বাস করছেন না।
এটা আমি বুঝতে পারছি। আসলে আমাদের যে
ডানা থাকে। এই ডানা সব সময় আমরা
দৃশ্যমান করে রাখি না। অদৃশ্যই থাকে। যখন
দরকার হয় তখন এটা বের করি। আবার ডানা
বাদেও আমরা চলতে পারি।
– ডানা ছাড়াও যদি চলতে পারেন তাহলে
ডানা থাকার দরকার কি?
সাফা আমার কথায় একটু মুচকি হাসি দিয়ে
বললো,
– ডানাটা আমাদের জন্ম থেকেই থাকে। এটা
তো আমরা বাদ দিতে পারিনা। আর তাছাড়া
ডানা অনেক কাজে লাগে আমাদের। এটা
আমাদের একটা অঙ্গ।
যেহেতু ওর কথা আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে
না যে ও রিয়েলি পরী। তারপরও বললাম,
– হুম বুঝলাম। এবার বলেন। সেদিন আপনার
সাথে কি হয়েছিলো?
হুম বলছি বলে বলা শুরু করলো,
– সেদিন রাতে আমি আর আমার
কয়েকটা বান্ধবী মিলে ঘুরতে
বেরিয়েছিলাম। এখান থেকে অনেক দুরে
একটা বিরাট দিঘি আছে। আপনি দেখেছেন
বা শুনেছেন কিনা যানিনা।
আমি বললাম,
– নাহ আমি দেখিনি। আসলে আমার বাইরে
ঘোরার তেমন একটা সুযোগ হয়না। তারপর কি
হলো বলেন?
– ঐ দিঘিতে আমরা প্রায়ই রাতে আসি।
ওখানে আমরা গোসল করি। তারপর একটা বড়
নৌকা আছে। ওটাতে উঠে ঘুরে বেড়াই।
এত্তোমজা করি সেটা আপনাকে বলে
বোঝানো যাবেনা। সেই রকম ঐদিনও
এসেছিলাম। আমরা গোসল করছি। পানি
ছিটিয়ে ছিটিয়ে মজা করছি। পরে গোসল
শেষ করে নৌকায় করে সবে দিঘির
মাঝখানে গেছি। ঠিক তখনই কয়েকটা বদমাশ
জ্বীন আমাদেরকে তাড়া করে। আমার
বান্ধবীরা সব যে যেদিক পারছে ছুটে
পালিয়ে গেছে। আমি ভয় পেয়ে ওদের সাথে
না যেয়ে অন্য দিকে আসতে থাকি। তারপর
একটা গাছের সাথে অনেক জোরে ধাক্কা
খায় তাড়াহুড়া করে পালাতে যেয়ে। তারপর
আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন
দেখলাম আমি আপনার এখানে।
– আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না।
আপনারা তো পরী। আর পরীদেরও তো অনেক
শক্তি তো পালাতে গেলেন কেনো?
– হ্যাঁ আমাদেরও অনেক শক্তি। কিন্তু ঐ
জ্বীন গুলা অনেক বদমাশ। আমাদের শক্তি
থাকলেও আমরা যখন তখন কারোর সাথে লড়ি
না। ওদের কে যদি কিছু বলতে বলতে যাই।
তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চলবে……..