গল্প :-পরী বউ,পর্ব :- ০৪

0
1616

গল্প :-পরী_বউ,পর্ব :- ০৪
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”আর কোনো কথা না বাড়িয়ে দুজনে নাস্তাটা
সেরে নিলাম। বিকালে হঠাৎ আমার একটা বন্ধু ফোন
দিলো। ওর নাম রিফাত। ওর বাসায় থাকতে হবে দুই
দিন। ওর আব্বা মা কেউ বাড়ি থাকবেনা। যার কারনে
আমাকে ওর সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করলো।
কি আর করা? আমিও রিফাতকে বলে দিলাম আমার
কোনো সমস্যা নাই থাকতে পারবো। আমি
সাফাকে বলে চলে গেলাম। ভাবলাম দুই দিন তো
নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। কিন্তু নিশ্চিন্তে আর
থাকা হলো না। সাফা তবুও দেখা করতে আসতো
তবে বেশিক্ষন থাকতো না। দুইদিন পর আংকেল
আন্টি আসলে আমি চলে আসলাম। বিকালে ছাদে
দাড়িয়ে আছি ভাবছি সাফার কথা। মনে হলো আমার
পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। ভাবলাম সাফা হয়তো
এসেছে। তাকিয়ে দেখি সাফা না অন্য একটা
মেয়ে। মেয়েটা বললো,
– আপনি বুঝি এই চিলেকোটার নতুন ভাড়াটিয়া?
– হ্যাঁ। কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
– আমি নীলা। এই বাড়ির মেয়ে। হোষ্টেলে থাকি
তো তাই আগে দেখেননি। আজই আসলাম।
– ওও। আমি সিয়াম।
– ও। কি করেন?
– আপাতত বেকার কিছুই করছি না। আগে একটা জব
করতাম। একটু সমস্যার কারনে ওটা ছেড়ে দিয়েছি।
– আর করবেন না জব?
– হ্যাঁ করবো। চেষ্টা করতেছি বাট হচ্ছে না। চা
খাবেন আপনি?
– আপনি খাওয়ালে খাবো।
– আচ্ছা একটু ওয়েট করেন আনছি।
নীলাকে অপেক্ষা করতে বলে রুমে আসলাম চা
বানাতে। তারপর দু কাপ চা করে আসলাম ওর কাছে।
দেখলাম আগের মতই দাড়িয়ে আছে। মনে
হলো কিছু ভাবছে।
– এই নেন চা। বললাম আমি।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো,
– হুম চা টা দারুন হইছে। আপনি তো খুব ভালো চা
বানাতে পারেন।
– ধন্যবাদ। ভালো বানাতে পারি কিনা ঠিক জানিনা তবে
চেষ্টা করি।
– হুম আসলেই ভালো বানাতে পারেন। মাঝে মাঝে
কিন্তু আসবো আপনার হাতের চা খেতে। বিরক্ত
হবেন না তো?
– না না কি বলেন? বিরক্ত হবো কেনো?
আসবেন যখন ইচ্ছা।
নীলা বললো,
– এই যে ছাদে ফুলের বাগানটা দেখছেন? এটা
আমার নিজের হাতে বানানো। ফুল আমার পছন্দের
একটা জিনিস। আগে বাড়িতে থাকলে প্রায় সারক্ষন
আমার এখানেই কাটতো। জানেন সবাইকে ছেড়ে
হোষ্টেলে থাকতে আমার একদমই ভালো লাগে
না বাট কিছু করার নাই। অনিচ্ছা থাকা সত্তেও থাকতে
হয়। আপনি যতদিন থাকবেন আমার ফুলের বাগানটাকে
একটু পরিচর্যা করবেন কেমন?
– হ্যাঁ করবো। আর যেহেতু আমি এখানে থাকি
তো এটা তো আমার দায়িত্ব।
তারপর ও আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই ওর
আম্মু ডাক দিলো।
– আচ্ছা আম্মু ডাকতেছে আমাকে। যাই এখন।
নীলা চলে গেলো। মেয়েটা অনেক ভালো।
মিশুক প্রকিতির। নয়তো ভাড়াটে কোনো
ব্যাচেলর ছেলের সাথে কেউ এতো বিনয়ি
ভাবে কথা বলেনা। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
আমি চায়ের কাপ দুটো হাতে নিয়ে রুমে আসলাম।
রুমে এসে তো আমার চক্ষু চডক গাছ। সাফা বসে
বসে কানতেছে। আমি ভেবে পাচ্ছিনা ও
কানতেছে কেনো? আমি ওর পাশে বসে
বললাম।
– সাফা কি হয়েছে তোমার? কখন আসলে? আর
কাঁদছো কেনো?
ও কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– আমার ইচ্ছা হইছে আমি কাঁদছি তাতে তোমার কি?
তুমি যাও ঐ বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে হেসে
হেসে প্রেমালাম করো।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না ওর কান্নার কারনটা কি।
– আমি তো প্রেমালাপ করছিলাম না। এমনি একটু কথা
বললাম। ও এসে বললো তাই।
– ও কথা বলতে চাইলো আর ওমনি তুমিও বলতে শুরু
করলে? কেনো চুপ করে থাকতে পারোনি।
তাহলে ও ভাবতো তুমি বোবা আর চলে যেতো।
– কি বলছো আমি বোবা হতে যাবো কেনো?
আমি তো কথা বলতে পারি।
আরো জোরে কান্না করে,
– হ্যাঁ তাতো পারবাই। সুন্দরি মেয়ে দেখছো না
অমনি তোতা পাখির মত কথা বলতে শুরু করছো।
কোই আমার সাথে তো একটু কথা বলতে চাও না?
আহা আবার বলে চা খাবেন? নিজের হাতে চা বানিয়ে
খাওয়াইছো। আমাকে একদিনও বলছো চা খাওয়ার
কথা? আমাকে তো তোমার বিরক্ত লাগে।
– আহা তুমি বিষয়টা এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছো
কেনো? বাড়িওয়ালার মেয়ে তাই ভদ্রতার খাতিরে
একটু চা খাওয়ালাম এই যা।
– সিরিয়াস হব না তো কি করবো? তুমি ঐ
মেয়েটাকে চা খাওয়াইছো কেনো? চা
খাওয়াইচ্ছো ভালো কথা আবার হেসে হেসে
কথা বলে? কেনো ঐ মেয়েটা যখন আসলো
দুই একটা কথা বলে চলে আসতে পারলা না? নাকি ঐ
মেয়েটাকে দেখে আর আসতেই ইচ্ছা
করছিলো না তাই তো?
কথা গুলো বলেই আরো কান্না শুরু করে দিলো
সাফা।
– কাঁদছো কেনো? কান্নাটা থামাও প্লিজ? আর কথা
বললে কি এমন হয় বলো তো?
– কি হয় এতো কিছু জানিনা। তুমি আর ঐ মেয়েটার
সাথে একদম কথা বলবা না। শুধু ঐ মেয়েটা না অন্য
কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলবা না আর
তাকাবাও না মনে থাকবে?
– কিন্তু কেনো? যদি কেউ কথা বলতে আসে
তাহলে কিভাবে কথা না বলে চলে আসবো
বলো?
– আমি এতো কিছু জানিনা কথা বলবা না বলেছি ব্যাস
বলবা না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি
অন্য কারোর সাথে কথা বলো। কারন অন্য
কোনো মেয়ের সাথে তুমি কথা বললে আমার
কষ্ট হয়। সহ্য হয়না।
এ কোন বিপদে পড়লাম আমি। আল্লাহ এই বিপদ
থেকে আমাকে বাঁচাও।
– আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।
এই তো আমার সুইট জানুটা বলেই আমাকে জড়িয়ে
ধরলো। তারপর গালে একটা চুমু দিলো। অস্বস্তি
লাগছে আমার। ছাড়িয়েও নিতে পারছি না নিজেকে।
কি হচ্ছে আমার সাথে কিছুই বুঝতেছি না। তারপর সাফা
বললো,
– চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি?
– বাইরে কোথায় যাবো এই সন্ধ্যায়?
– চলো হেটে আসি আর ফুসকা চটপটি খেয়ে
আসি। তোমার সাথে তো এখনো কোনোদিন
ঘুরতে যাওয়া হয়নি। চলো যাই?
আমি যানি আমি যদি এখন বলি যাবো না তবুও ও
শুনবেনা। আমাকে নিয়েই যাবে। আমি যেনো
আর আমার নেই। নিজের চাওয়া পাওয়ার কোনো
মুল্য নেই। রাস্তা দিয়ে হাটছি ওর সাথে। বললাম একটা
রিকক্সা নিতে কিন্তু রাজি হলো না। হাটাতে নাকি
অনেক মজা। কিন্তু আমার তো মজা লাগছে না। ও
আমার একটা হাত ধরলো।
– হাত ধরলে কেনো? সবাই দেখছে তো? কি
ভাববে সবাই।
– মানুষ কি ভাবলো তাতে আমার কিছু আসে যাই না।
আমার ধরতে ইচ্ছা হইছে আমি ধরছি। আর তুমি
এতো বেশি কথা বলো কেনো?
– কোই বেশি কথা বললাম? শুধু তো বললাম হাত
ধরলে কেনো এই রাস্তার মাঝে।
– হইছে হইছে এবার চুপ করো। চলো ঐ চটপটির
দোকানটাতে যাই।
– হুম চলো। বললাম আমি।
চেয়ারে বসতে বসতে বললাম মামা আমাদের
দুজনের জন্য চটপটি আর ফুসকা দেন? ঝাল একটু
কম দিবেন। আমার কথা শুনে শুনে চটপটি ওয়ালা
কেমন ভাবে দেখছে আমাকে। এমন ভাবে
দেখার কি আছে বুঝলাম না। আমি বললাম।
– কি হলো মামা দিলেন না?
– মামা আপনের কি শরীরটা একটু খারাপ?
– আচার্য আমার শরীর খারপ হবে কেনো? আমি
তো ঠিক আছি। আপনি এতো কথা না বাড়িয়ে
আমাদের জন্য চটপটি আর ফুসকা নিয়ে আসেন?
সাফা তুমি কি ঝাল কম খাও নাকি বেশি? সাফার কাছে
জানতেই চাইলাম।
– মামা আপনে কার লগে কথা কইতাছেন? আমি তো
কাউরে দেখি না। আবার কন আমাগো দুইজনের
জন্য ফুসকা চটপটি নিয়ে আসেন কিন্তু এই হানে
তো আপনে ছাড়া আর কেউ নাই।
– নাই মানে? আপনি কি একে দেখতে পাচ্ছেন না?
– না। কার কথা কইতাছেন?
তখনই দেখি সাফা মুচকি মুচকি হাসতেছে। আমি বুঝে
গেছি ও আমার সাথে ফাইজলামি করছে। রাগ করে
উঠে হাটতে লাগলাম আমি। সাফাও পিছু পিছু চলে
আসলো।
– এমন করার মানেটা কি? ঐ লোকটা তো আমাকে
পাগল ভাবছিলো। রাগ করে বললাম আমি।
সাফা বললো,
– তোমার সাথে একটু মজা করলাম। তা রাগ করছো
কেনো?
– রাগ করবো না তো কি করবো?
– আচ্ছা স্যরি আর এমন করবো না। চলো চটপটি
খেয়ে আসি।
– না যাবো না আমি।
– চলো না প্লিজজজ?
– ঠিক আছে চলো কিন্তু ঐ দোকানে না অন্য
একটা দোকানে চলো।
– ওক্কে চলো।
ফুসকা চটপটি খেয়ে হাটছি আমরা। আমার অনেক ঝাল
লেগেছে। অল্পতেই ঝাল লাগে আমার। কিন্তু
ওর কিছু হলো না। আমার থেকে অনেক বেশি
ঝাল খেয়েছে ও। ঝাল বেশি না নিলে নাকি খাইতে
মজা লাগে না। কিছু দুর হাটার পর দেখি একটা সান
বাঁধানো বিশাল পুকুর। বসার জায়গা আছে অনেক
সুন্দর। সাফা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো
ওখানে।
.
.
চলবে……….
.
গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here