#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি,সূচনা পর্ব
#সমুদ্রিত_সুমি
তুমি আর আমার হলে কই! হলে তো গিয়ে অন্য কারো। বুকের ভেতরে তোমায় হারানোর তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে আজ ঘুমাতে যাই। কারণ কাল সকালে তো তোমাকে বর আমাকেই সাজাতে হবে। আর হলো না,তোমার সাথে পথচলা। চাঁদের আলো গায়ে মেখে তোমার বুকে মাথা রাখা,বোনা হলো না স্বপ্ন । হলো না ডিঙি নৌকায় পা ভেজানো। সব শেষে তুমি আর আমার হলে না।
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললো রজনী। আর সেই কথাগুলো চোখ বন্ধ করে শুনলো পল্লব। রজনীর শেষ কথাটা ধারালো ছুরির মতো বুকে গিয়ে বিঁধলো। কি সুন্দর করে রমনী বলে দিলো! তুমি আর আমার হলে না। তাহলে কি পল্লবেরও বলা উচিত! তুমি আর আমায় ভালোবাসলে কই? মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে কত রকমের ভাষা যে পল্লব শিখে গেছে! তা পল্লব জানে না। শুধু শিখতে পারেনি, সামনের এই মেয়ের মনটা কীভাবে পড়তে হয় তা। কতদিন কতরাত এই মেয়ের সাথে গল্প করে পার করেছে। কত-শত বার ঝগড়া করে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করেছে। আজ সব অতীত। আজ সব ভুলে যেতে হবে। আচ্ছা সব কি চাইলেই ভোলা যায়। যায় না। ভালোবাসা কেন জীবনে আসে। আর আসেই যদি কেন সেটা আবার ফিরেও যায়। একটা ছোট্ট জীবনের অনেকটা জুড়ে এই ভালোবাসা নামক অধ্যায়টা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। আর সেই অধ্যায়টা কাল নাকি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। এই কঠিন মনের মেয়েটাকে কিভাবে যে এই সহজ সরল মনটা ভালোবেসে ফেললো সেটাই আজও জানে না পল্লব। চাঁদ থেকে শুরু করে সাগরটাও বিশ্বাস করে নিয়েছিলো আমরা দু’জন দু’জনার শত্রু। অথচ আজ কেউ কাউকে না পাবার বেদনায় ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছি। দাউদাউ আগুনের ফুলকি গুলো বারবার জ্বালিয়ে দিচ্ছে এই হৃদয়টাকে। আচ্ছা কেউ কি সেই ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। কেউ সেই পোড়া গন্ধ পাচ্ছে না। নাকি মন পোড়ার গন্ধ হয় না। মনের হাড় নেই তবুও মন ভাঙে। কি দরকার ছিলো এই মেয়েটার আমার জীবনে আসার। খোলা ওই আকাশপানে তাকিয়ে গোপন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল পল্লব। যে দীর্ঘশ্বাসের বাতাস ছুঁয়ে দিলো রজনীকে। সে-ও ছাদের ছোট্ট দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে চাঁদের দিকে তাকালো। কারো মুখেই কোন কথা নেই। দু’জনেই ভেতর থেকে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারছে কি তাঁরা সেই কাজে সফল হতে। এক সময় রজনীর মনে হলো। ভালোবাসার মানুষটির সামনে থেকে তাঁকে ভোলার চেষ্টা করা বেমানান। কারণ কাছে থেকে কাউকে অনুভব করা যায়! ভোলা নয়। তাই সে উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে তাকিয়ে সিড়ির পথে পা বাড়ালো। কিন্তু তাঁর এক পা বাড়াতেই কেউ হাতটা আগলে ধরলো। পিছু না ফিরলেও রজনী বেস বুঝলো মানুষটা ব্যর্থ নিজেকে সামলে নিতে। এবার যে রজনীকে শক্ত হতেই হবে। রজনী যদি শক্ত না হয় তাহলে যে দেওয়া কথা ভঙ্গ হবে। তাই রজনী পিছু ফিরে খুব যত্নে নিজের হাতখানা ছাড়িয়ে নিলো। পল্লব তখনও নিশ্চুপ। রজনী আবারও পা বাড়ালো যাবার পথে। এবারও সে আটকা পড়লো কারো শক্ত বাঁধনে। এবার হাতের বাঁধনে বাঁধা পড়েনি! পড়েছে শক্ত হাতের বাহুডোরে। এই বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাদ্ধ রজনীর কোন কালেই ছিলো না। তাই আজও নেই। চাঁদের আলোয় পল্লবের চোখের জল কেমন চিকচিক করে উঠছে। এই চোখের পানি উপেক্ষা করা কোন নারীর সম্ভব নয়। পুরুষ যে সহজে কাঁদে না! আর যখন কাঁদে তখন সয্য করা যায় না। তাই তো রজনীও পারলো না। বুকফাটা এক চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো সে। পল্লবের বুকে হাজারটা কিলগুঁতো দিয়ে বললো।
_ তুমি কেন আমার হলে না। কি দোষ ছিলো আমার। আমার এই ভাগ্যে কেন তুুমি লেখা নেই। আমি তো আমার এই ভাঙাচুরা জীবনকে মেনে নিয়েছিলাম! তবে কেন আজ তোমাকে হারানোর ব্যথা মানতে পারছি না। তুমি কেন আমার হলে না। তুমি আমার নও অন্য কারো। হ্যা অন্য কা—-।
কথা শেষ হলো না। তাঁর আগেই পল্লবকে ধাক্কা মেরে রজনী পালিয়ে গেলো। আর পল্লব হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে রইলো। ছেলেদের যে কাঁদতে নেই! তাই হয়তো সে নিরবেই তাঁর চোখের জল বিসর্জন দিলো,যাঁর সাক্ষী চাঁদ-তারাও হলো। মুখ ঢেকে বললো।
পল্লবরানীর গল্প শুনো,
পল্লবের বুকে বাড়ি।
পল্লবের রানী রাগ করেছে
তাই দিয়েছে আড়ি।
পল্লবেররানী জানে না খবর
বুকের ভেতর ঝড়ের প্রবল।
দুঃখ গুলো আমায় দিয়ে
সে কাঁদে মুখ লুকিয়ে।
—————–
অতীত
———
পার্সে রাখা ফোনটা অনবরত বাজতে রইলো। নিরিবিলি সময়টা হঠাৎ করেই শব্দে কেমন করে উঠলো। আশেপাশের সবাই আড় নজরে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার অসস্থি হতে রইলো সবার চাহনি দেখে। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা বের করে রিসিভ করলো। ফিসফিস আওয়াজ করে কথা শুরু করলো।
_ হ্যা বল নিলি,কি খবর?
_ এই তো ভালো,তোর কি খবর।
_ ভালো,ডাক্তারের কাছে এসেছি চোখের জন্য। তুই হঠাৎ এই সময়ে ফোন দিলি! কোন সমস্যা।
_ তোর বাবা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে।
_ কি বলিস,কিভাবে?
_ আমি সেটা জানি না,পাড়ার মোড় থেকে ব্যথার ঔষধ এনেছে। বললাম কাকু আগে এক্সরে করা-ও! কিন্তু শুনলো না।
_ শুনবে কি করে? এই মাস তো প্রায় শেষ, তাই হাত খালি। আর আমাকে পালানোর সময় পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন বাবা-র হাতে হয়তো টাকা নেই।
_ আমার মনে হলো,তোকে খবরটা দেওয়া উচিত, তাই ফোন করলাম।
_ আমি কিছু টাকা পাঠাচ্ছি তোকে! সেটা দিয়ে বাবাকে জোর করে হলেও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি।
_ তুই কোথায় পাবি। তুই তো নিজেই ডাক্তারের কাছে আছিস।
_ দেখি আল্লাহ ভরসা।
মেয়েটা ফোন কেটে দিলো। পার্সে থাকা অবশিষ্ট টাকা গুলো বের করলো। গুনে দেখলো মাত্র পাঁচশ টাকা আছে। ডাক্তার ভিজিট সাতশো দিয়েছে,আসার জন্য একশো টাকা খরচ হয়েছে। এখন উপায়। নিজের সমস্যাটা গুরুতর না হলেও বাবা-র সমস্যাটা গুরুতর। এখন উপায়। কিছুটা সময় ভাবতেই তাঁর একটা আইডিয়া মাথায় এলো। যদি কাজটা করতে পারে! তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। মেয়েটার চিন্তার মাঝেই একজন ছেলে এসে জানালো! এবার তাঁর সিরিয়াল। তিনি যেন ভেতরে যায়। বুকে ফুঁ দিয়ে নিজেকে অনেক স্থির করলো সে। কিছুটা পাগলামি করতে হবে! না হলে হবে না। যা হবে দেখা যাবে? এই কথা গুলো ভেবেই কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো মেয়েটা। সামনে বসে থাকা এই সুদর্শন যুবককে কিভাবে সে বোকা বানাবে,সেটা ভেবেই তাঁর ঘাম ছুটে গেলো। কোন মতে চেয়ারে গিয়ে বসলো সে। মেয়েটা বসতেই গম্ভীর কণ্ঠে সামনের যুবক বলে উঠলো।
_ কি সমস্যা আপনার??
_ স্যার আমার চোখের বিরাট এক সমস্যা।
_ খুলে বলুন
মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে ইশারায় বুকে ফুঁ দিলো সে। চোখ টাকে এদিক ওদিক করে বলে উঠলো–
_ স্যার,আমি যদি পেয়াজ কাটি আমার কান্না পায়। যদি পেয়াজ বাটি তাও কান্না পায়। যদি পেয়াজ খাই তাও কান্না পায়। এখন আমার উপায়। আমার এতো সুন্দর দু’টো চোখ! যদি অকালেই ঝড়ে পড়ে আমার স্বামীর কি হবে।
এই কথা বলেই বুকফাটা চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো মেয়েটা। মুখে গ্রামের মেয়েদের মতো ওড়না গুঁজতে ভুললো না। আর সামনে বসে থাকা ডাক্তার তো অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো।
_ আচ্ছা জ্বালায় পড়লাম তো? এই আপনি কি বলছেন ভেবে বলছেন তো?
_ এই আপনার কি মনে হয় আমি সব বানিয়ে বানিয়ে বলছি।
মেয়েটার কথায় ভরকে গেলো ছেলেটা। আসলে সে বুঝতে চাইছে! মেয়েটা কোন পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছে কিনা। না হলে কেউ এভাবে কথা বলে। ছেলেটা ভালো করে লক্ষ্য করলো মেয়েটাকে। শ্যামলা চেহারায় তাঁকে বেস লাগছে। ছোট্ট চোখ দু’টো বারবার এদিক ওদিক ঘুরিয়ে কথা বলছে। যেন বিরাট অন্যায় করে এখন পালানোর চেষ্টা। কালো চশমাটা বারবার ঠিক করছে। সচার-আচার এই বয়সের মেয়েরা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে, আর সে চোখ দু’টো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে কথা বলছে।
_ওভাবে দেখবেন না স্যার আমার নজর লেগে যাবে।
_ মেয়েটার কথায় ডাক্তার সাহেব যেন লজ্জায় যায় যায় অবস্থা। তাই নিজেকে সামলে বললো।
_দেখুন আমার কাছে এই সমস্যার কোন চিকিৎসা নেই। আপনি অন্য কোথাও ট্রাই করুন।
_ তাহলে আমার সাতশ টাকা ফিরিয়ে দিন।
কাটকাট উত্তর দিয়ে মনে মনে নিজেকে হাজারখানে গালাগাল দিলো সে। আর এদিকে মেয়েটার কথায় ছেলেটা হা করে রইলো। সাতশো টাকা ফেরত দিবে মানে কি। সে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। রেগে বললো।
_ এখনি আমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে যান। না হলে সিকিউরিটি ডাকবো।
_ তো ডাকুন, কে বারন করেছে। দেখুন ডাক্তার! সিরিয়াল দিয়ে, একশো টাকার সাতটা নোট দিয়ে তারপর এখানে এসেছি। যদি কোন লাভই না হয়! তাহলে টাকা কেন আমি এমনি এমনি দেবো। আমার টাকা তো আমি জলে ফলে দিতে পারি না। টাকা দিন আমি চলে যাচ্ছি।
ইউ
_ আরে ইংলিশ পড়ে ছাড়বেন,আগে আমার টাকা দিন। রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন না! আর সে কিনা চেম্বার খুলে বসেছে। আমার শ্বশুর একজন বড় পুলিশ অফিসার। তাঁকে দিয়ে যদি আপনার লাইসেন্স না নষ্ট করতে পারি,তাহলে আমার নামও, না থাক বলবো না।
_ স্যার টাকাটা দিয়ে দেন,এসব মেয়েদের দিয়ে বিশ্বাস নেই। এরা যা খুশি তাই করতে পারে। বেশি ঝামেলা না করাই ভালো এসব মেয়েদের সাথে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এসিস্ট্যান্টের কথা শুনে ডাক্তার সাহেব চোখ গরম করে তাকালো। ছেলেটা চুপসে গিয়ে অন্য দিকে ফিরলো। পকেট হাতরে সাতশো টাকা বের করে দিলো মেয়েটাকে। মেয়েটা ভালো করে গুনে নিয়ে বললো।
_ হ্যা ঠিক আছে। কিন্তু এখনো একশো টাকা বাকি।
_ একশো টাকা বাকি মানে। আমার ভিজিট সাতশো,ফেরত দিলাম সাতশ,তাহলে আরো একশো কিসের?
_ কিসের মানে? আমার পথভারা। বাড়ি থেকে বড় রাস্তায় আসতে রিকশা ভাড়া বিশ টাকা। আর সেখান থেকে আপনার এখানে আসতে সিএনজি ভাড়া আশি টাকা। তো হলো একশো টাকা। যেহেতু আমার কাজ হয়নি এখানে এসে! তো ভাড়া টাকাটা কি আপনার দাদু দিবে।
এবারের কথায় রাগটা আর সামলে রাখা গেলো না। দাঁত কিড়মিড় করে মেয়েটার গলা চেপে ধরতে নিলেই পাশ থেকে সরিয়ে নিলো এসিস্ট্যান্ট । নিজের পকেট থেকে একশো টাকা বের করে দিয়ে মেয়েটার উদ্দেশ্যে বললো।
_ ক্ষেমা করো মা,তুমি এবার যা-ও। আর রাগিও না আমাদের স্যারকে। তুমি যেতেই এমনই কি হয় জানা নেই। আর অশান্তি বারিও না।
টাকাটা নিয়ে মুখ ভেংচি দিলো মেয়েটা। কিছুটা পথ গিয়ে পিছু ফিরে বললো।
_ চিকিৎসা করতে পারে না, আসছে ডাক্তার সাহেব। কোন গরু আপনায় ডাক্তার ঘোষণা করেছে।
মেয়েটার কথায় এবার ছেলেটা কয়েকগুণ রেগে গেলো। ছুটে যেতে নিলেই মেয়েটা দৌড়ে বাহিরে বেরিয়ে গেলো। আর ছেলেটা ধপ করে নিজের চেয়ারে বসে পড়লো। রাগী চেহারায় এসিস্ট্যান্টের দিকে তাকাতেই! সে-ও গুড়িগুড়ি পায়ে বাহিরে চলে গেলো। সে বুঝতে পেরেছে! যখন তখন বোম-ব্লাস্ট হতে পারে। যেচে পড়ে আহত হওয়ার কোন মানেই হয় না।
————
_ বুঝলেন আন্টি,আপনাদের শহরে ভালো কোন ডাক্তার নেই। যা আছে সব ডাক্তারি পোষাক পড়া ভন্ড। ভেতরে তো ডাক্তারের ড-ও জানে না।
_ কী বলছো রজনী? এতো বড় শহর আর ভালো ডাক্তার নেই। কার কি সমস্যা?
_ অন্য কারো না আন্টি আমার। কিছুদিন ধরে চোখ থেকে পানি পড়ছে। গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে! কিন্তু যা ডাক্তার পেলাম তাতে চোখ দেখানোর শখ মিটে গেছে।
_ সব ডাক্তার তো এক নয়,অন্য একদিন আমার থেকে ঠিকানা নিয়ে গিয়ে দেখিও।ভালো ডাক্তারের ঠিকানা দিবো।
_ হুম, কিন্তু এই কথাটা বাবাকে বোঝাতে পারছি না। আপনি একটু বলবেন।
_ হ্যা অবশ্যই বলবো। দাও দেখি তোমার বাবাকে ফোন ধরিয়ে।
রজনি বাবা-র নাম্বারে ডায়াল করলো। কিছু সময় ফোন বাজতেই ধরলেন তিনি।
_ আমার কথা তো তুমি বিশ্বাস করলে না। এই নাও আন্টির সাথে কথা বলো। আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার ভালো নাই সেখানে। একদিন আন্টির থেকে ঠিকানা নিয়ে আবার যাবো ডাক্তারের কাছে।
_ তুই বড্ড চালাক রজনী। টাকা বাঁচাতে নিজের ক্ষতি হলেও তোর কিছু যায় আসে না। যেই শুনলি আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি ওমনি নিজের ডাক্তার দেখানোর টাকা আমায় পাঠিয়ে দিলি।
_ তুমি সব সময় বেশি বলো আব্বু। ডাক্তার দেখাতে পারিনি। আমার কাছে টাকাটা থাকলে ভাঙা হয়ে যেত! তাই তো পাঠিয়ে দিলাম।
_ তুই আমার সন্তান,আমি না।
_ এই জন্যই আন্টির সাথে কথা বলতে বলছি। বলে দেখো আমি মিথ্যা বলছি কিনা।
_ দে দেখি।
রজনী ফোনটা লিমা বেগমের নিকট এগিয়ে দিলো। লিমা বেগম হাত বারিয়ে ফোনটা নিয়ে কানে তুললেন।
_ আসসালামু আলাইকুম ভাইজান। কেমন আছেন।
_ ওলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ আপা। কি খবর আপনাদের।
_ এই তো যাচ্ছে ভাই আপনাদের দোয়ায়। আপনার কি খবর।
_ ওই আল্লাহ রেখেছেন তাঁর রহমতের ছায়া তলে। আপনাদের ভরসায় মেয়েটাকে পাঠিয়েছি একটু দেখে রাখবেন।
_ ইনশাআল্লাহ ভাই। চিন্তা করবেন না।
_ চিন্তা কি আর শুধু শুধু করি আপা। মা মরা মেয়ে আমার! শত মায়ের যাতাকলে মেয়ে আমার পিসে যাচ্ছিলো। তাই উপায় না পেয়ে আপনাদের ওখানে পাঠালাম। দেখে রাখবেন।
_ ইনশাআল্লাহ,
_ আপা মেয়ে আমার বড্ড কঠিন। নিজের ভেতরের খবর কাউকে বলে না। জ্বর হলে বুঝতে দেয় না,কষ্ট হলে তখন বেশি হাসে। আমার মতো করে কি কেউ মেয়েটারে বুঝবে। চেয়েছিলাম বিয়ে দিতে। কিন্তু বিয়ের জীবনটা যে আরো কঠিন। আমার কঠিন মেয়েটা ওই কঠিন জীবনে মানিয়ে নিতে পারবে না এতো তাড়াতাড়ি! তাই এটাও বাদ দিলাম। অবশেষে আপনাদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
_ আল্লাহ ভরসা ভাই।
_ আচ্ছা আপা রাখি।
_ হুম
তারপর ফোনটা এগিয়ে দিলো রজনীর দিকে। হাত বারিয়ে ফোনটা নিলো সে। প্রাণ ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। অবশেষে বাবাকে বোঝাতে সে সক্ষম। না হলে হাজারটা কথার বেড়াজালে বাবা জড়িয়ে নিতো। সকালে ডাক্তারকে বোকা বানানো,এখন বাবাকে। কিভাবে বোকা বানালো তা ভাবতেই রজনী মনে মনে হাসলো। নিজের বুদ্ধির প্রসংশাও করলো। কিছুটা বুদ্ধি না খাটালে,আজ বাবা-র পায়ের চিকিৎসা হতো না। কিছু মানুষের কাছে খারাপ হলে দোষ নেই! নিজের কাছের মানুষের ভালো করতে গিয়ে। কথাগুলো ভেবে একটু মন খারাপ হলো রজনীর। ডাক্তার সাহেব কি ভাবলো কে জানে। কিন্তু সেই ভাবনা দূরে ঠেলে সোফায় খুব আরামে বসলো রজনী। লিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
_ এতো বড় বাড়ি আন্টি,অথচ থাকি বলতে আমরা দু’জন।
_ তাতে কি, ছুটিতে তো সবাই আসে।
_ আমি আসার আগে তো আপনি একাই থাকতেন।
_ হুম,তুমি আসাতে আমি একজন সঙ্গী পেলাম। ছেলেটা এই শহরেই থাকে! কিন্তু শুক্রবার ছাড়া আসে না। একবেলা থেকে আবার চলে যায়। মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি নিয়েই ব্যস্ত,তাঁর এই মায়ের কথা মনে পড়ে না। আর তোমার আঙ্কেল তো ব্যবসা ব্যবসা করেই বাহিরে থাকে বেশি। আমি সাধারণ মানুষ এই বাড়ি আমার সম্ভল।
_ আন্টি ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিন। দেখবেন বউয়ের লোভে বাড়িতে এসে থাকছে।
_ কি মনে হয় চেষ্টা করিনি। বরাবরই ব্যর্থ হয়েছি।
_ তাহলে তো বিরাট সমস্যা। চিন্তা নেই আমি এসে গেছি সব ঠিক করে দেবো।
_ আচ্ছা দিও। এইটুকুন পুচকি মেয়ে আমার সমস্যা দূর করবে।
_ দেখেন না কিভাবে সমস্যার সমাধান করি।
তাঁদের কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো। লিমা বেগম যেতে চাইলে তাঁকে বাঁধ সাধলো রজনী। নিজে উঠে গেলো দরজা খোলার জন্য। কিন্তু তাঁর জন্য দরজার ওপাশে কি অপেক্ষা করছে, সে কী তা জানে?
দরজা খোলার সাথে সাথেই দুই পাশ থেকে দু’জন বলে উঠলো।
_ আপনিই??
চলবে,,