#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি,১০,১১
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১০
জীবনের গতি কোথায় এগিয়ে যায়,তা আমরা কেউ জানি না। সুখ কখন আসবে বা দুঃখ কখন ধরা দেবে তা-ও জানি না। তবুও মানুষ বাঁচতে চায়। সুখ-দুঃখ নিয়েই তাঁরা বাঁচতে চায়। জীবনের পায়ে কোন চাকা নেই! তবুও দেখ সে গরগর করতে করতে গড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রজনীও হয়তো জানে না,তাঁর জীবনের চাকার মোড়টা অন্যদিকে ঘুরে গেছে। সে আজও মনে করে,হয়তো হুট করে মঈনুল আসবে,তাঁর গলায় ছুরি ধরে তাঁকে মেরে চলে যাবে। এই একটা ভয়ে সে বারবার গুটিয়ে নেয় নিজেকে। ভোর বেলার পাখির কলরব গুলো বড্ড সিগ্ধ। থেমে থেমে আসা দক্ষিণা বাতাস ছুঁয়ে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় শরীর। সর্দ ফোঁটা ফুল থেকে ভেসে আসা মিষ্টি গন্ধ মনকে এক নিমেষেই ভালো করে দেয়। রাতের তিমির কাটিয়ে যখন সূর্যের রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে,তখন পুরো পৃথিবী নতুন রূপে সেজে ওঠে। বাগানের এক কোণে শিউলি গাছের ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। সেদিকে তাকিয়ে রজনী মুচকি হাসলো ছোটবেলার কথা ভেবে। মক্তবে যাওয়ার জন্য মা ডেকে ডেকে প্রায় গলা ভেঙে দিতো! কিন্তু রজনীর ঘুম পরিরা যেতে নারাজ। কিন্তু যখন শিউলি বকুল ফুলের সময় আসতো! তখন ঘুম পরিদের রজনী তাড়িয়ে দিতো। কড়া সুরে বলতো! এই ক’মাস তোরা আমার থেকে দূরে থাকবি,না হলে কিন্তু আমি অনশন ডাকবো। তোদের নামে বিচার দিবো তোদের রাজার কাছে। আর রজনীর কথা শুনে ঘুম পরিবার বলতো– আজ্ঞে মহারাণী। রজনী এই কথা শুনে খিলখিল করে হাসতো। সেই হাসি দেখে তাঁর মা বলতো– কিরে পাগল হয়ে গেলি নাকি। মায়ের গলা জড়িয়ে বলতো– হ্যা মা আমি পাগল হয়ে গেছি। ওই শিউলি, বকুল আমায় পাগল করে দিয়েছে। আচ্ছা মা ওদের নামে যদি নালিশ করতে চাই! কোথাও পাবো সেই রাজাকে। মা তখন রজনীর কানটা চেপে ধরে বলতো– রাজপুত্র আসবে আমার রাজকন্যার জন্য! তাঁকেই না-হয় করে দিস নালিশ। সে ঠিক শিউলি, বকুলের বিচার করবে। আর মায়ের এমন কথা শুনে ওতোটুকু রজনী লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলতো। মা সেটা দেখে আরো একটু লজ্জা দিতে বলতো– রাজপুত্র যদি সেই শিউলি বকুলের মালা দিয়ে আমার মেয়ের সাথে মালাবদল করতে চায়! আমি কিন্তু কিছু মনে করবো না। আর এই কথাগুলো শুনে রজনী দৌড়ে ঘরে চলে আসতো। আজ সব অতীত। নিজের অতীতের কথা চিন্তা করতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো রজনীর ঠোঁটে। আর সেই হাসি দেখেই কেউ পাগল হয়ে গেলো,তা হয়তো রজনী খেয়াল করলো না। খেয়াল হলো,যখন তাঁর পাশে কারো উপস্থিত টের পেলো। চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই পল্লবকে চোখে পরলো। পল্লবকে দেখতেই রজনীর ভেতরে অস্বস্তি হচ্ছে। কালকে এতোগুলা মিথ্যা বলার পর যেন রজনীর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো! তাঁকে আরো একটু কষ্ট বাড়াতেই হয়তো পল্লব হাত সরিয়ে নিয়েছিলো,যে হাত দিয়ে রজনীকে সে আগলে ধরেছিলো। রজনীর নিজের উপর তখন অনেক রাগ হচ্ছিলো। তাঁর জীবনটা কেন এমন হলো! বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো কেন নয়? পরে অবশ্য পল্লব জানিয়েছে সে কেন তখন হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। পল্লবের হাত সরিয়ে নেওয়ার কথা শোনার পর এখন যেন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এতোগুলা মিথ্যা বলে লাভ হলো কী? যদি সত্যিটাই লুকিয়ে রাখতে না পারলো। এই একটা কথা ভাবলেই লজ্জাটা আরো দ্বিগুণ হচ্ছে। কিন্তু রজনীর এমন লজ্জা দূর করতেই খুব স্বাভাবিক ভাবে পল্লব বললো–
_ আজ আপনার হাতে ড্রেসিং করতে হবে! পুরোপুরি শীত আসার আগেই ক্ষতটা সেরে গেলে ভালো। তা নয়তো আপনাকে অনেক ভুগতে হবে। আর ঘাড়ের ক্ষতটা কি অবস্থা এখন।
এতটা স্বাভাবিক পল্লবকে দেখে রজনী অবাক হলো। অবশ্য অবাক হওয়ারি কথা। এতগুলো মিথ্যা বলার পর অন্য কেউ হলে! হয়তো বাড়ি থেকেই বের করে দিতো। আর তিনি কতটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে যেন কিছু হয়নি। রজনী নিজের ভেতরের অনুশোচনা দমিয়ে রাখতে পারলো না। তাই হুটকরে পল্লবের হাতটা ধরে বললো–
_ আসলে আমি মিথ্যা বলতে চাইনি,কিন্তু ভয় হয় যদি সবাই আবার আমাকে ধর্ষিতার অপবাদ দেয়। আমার খুব কষ্ট হয় তখন। মনে হয় মৃত্যুটা দূরে কেন কাছে আসুক। আমি জানি মৃত্যু কামনা করা ঠিক না। তবুও মানুষ তো, ভুল আমার হয়েই যায়। প্লিজ আমায় মাফ করবেন! আর এই কথাগুলো আন্টিকে বলবেন না।
রজনী কথাগুলো শেষ করে নিরবে চোখের জল বিসর্জন দিলো। আর তা সযত্নে মুছে দিয়ে পল্লব রজনীর ধরে রাখা হাতের উপর নিজের আরেকটা হাত দিয়ে চেপে ধরলো। আর বললো–
_ মা সবটা জানে,আপনার বাবা শুরুতেই সবটা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমার সামনে সেটা প্রকাশ করতে চাননি। রাতে মায়ের সাথে কথা বলতেই তিনি বললেন,তিনি সবটা আগে থেকেই জানেন। তাই কোন ভয় নেই। আর এই কথা বলার মতো বাড়িতে কেউ নেই বা খোঁটা দেওয়ার মতো কাউকে দেখছি না। আজ অবশ্য বাবা আসবে,কিন্তু তিনি সাংসারিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমিও ঘামাই না, কিন্তু কীভাবে যেন আপনার বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে নিলাম। সে যাইহোক, চলুন ঘুরে আসি।
_ কোথায়
_ আমাদের এলাকায়, এসেছেন ধরে তো ঘরেই আছেন।
_ আমি কোথাও যাবো না।
_ আরে চলুন ভালো লাগবে। এখন মাত্র পৌঁনে ছয়টা বাজে! সাত টার মাঝেই চলে আসবো।
একপ্রকার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো রজনীকে। রজনীর কিছুই করার নেই এখানে। রজনী আর পল্লব পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। কিছু মর্নিং ওর্য়াকের মানুষ ছাড়া কাউকে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। ছোট ছোট বাচ্চারা নিজেদের স্কুল গাড়ির কাছে জমা হচ্ছে। বিষয়টা খুব সুন্দর। একজন আরেকজনের জন্য কি নির্দ্বিধায় অপেক্ষা করছে। ছোটবেলার এই অপেক্ষাটা দীর্ঘ হলেও বড় হলে তা হারিয়ে যায় দূর অজানায়। সেও তো তাঁর বান্ধবীদের জন্য অপেক্ষা করতো। কখনো মিনিট কখনো ঘন্টা। তবুও সেই অপেক্ষার মাঝে শান্তি ছিলো। সেই শান্তির বিশ্লেষণ করা যাবে না।
_ পিঠা খাবেন রজনী, ভাপা বা চিতই।
হঠাৎ পল্লবের কথায় রজনীর চিন্তায় বাঁধা পড়লো।
_ জ্বি
_ পিঠা খাবেন
_ না
_ আরে খেয়ে দেখেন। আমাদের এই শহরের পিঠাগুলো অনেক বিখ্যাত।
_ না,আপনি খান আমি আছি।
_ আরে আপনিও খেয়ে দেখুন কেমন লাগে। চলুন, চলুন
তারপর ওরা দু’জন পিঠা ওয়ালা কাকির নিকটে দাঁড়ালো।
_ কাকি চিতই পিঠা দিন, সাথে মরিচ ভর্তা।
_ আচ্ছা
_ গরম গরম পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা কি যে মজা রজনী আপনি জানেন না। আমি প্রায় এসব খেয়ে থাকি। আজ আপনিও ট্রাই করুন।
_ এই নাও বাবা
ধোঁয়া উঠা গরম গরম পিঠা তুলে দিলো পল্লবের হাতে। পল্লব হাতে নিয়ে একটা পিঠা রজনীর দিকে এগিয়ে দিলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে পিঠা তুলে নিলো রজনী। কাগজে রাখা মরিচের ভর্তা মাখিয়ে দু’জনেই মুখে পুরলো। বাহ মজাই তো? হাতের পিঠা শেষ হতেই রজনী পল্লবের দিকে তাকালো। পল্লবের দিকে চোখ পড়তেই রজনী চোখ বড়বড় করে তাকালো। কারণ পল্লবের চোখে পানি টলটল করছে! নাকের সাথে ঠোঁট প্রচুর লাল। তারমানে পল্লবের ঝাল লেগেছে। রজনী পল্লবের হাত থেকে মরিচের কাগজ ফেলে দিয়ে বললো–
_ আপনার ঝাল লেগেছে, তাহলে আপনি খাচ্ছেন কেন?
রজনীর কথায় চোখ তুলে তাকালো পল্লব। আর তখনই টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। তা দেখে রজনী খুব অবাক হলো। এইমাত্র না মানুষটা বললো! সে প্রায় এসব খায় তাহলে? হঠাৎ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ জানান দিলো পল্লব রজনীর মন ভালো করতেই এই মিথ্যাটা বলেছে। নিজের কষ্ট হবে জেনেও মানুষটা তাঁর মন খারাপ দূর করতে এসব করলো।আসলেই রজনী খুব বোকা। পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও বুঝতে পারলো না মানুষটার কষ্ট হচ্ছে। রজনী জলদি একটা ভাপাপিঠা চাইলো কাকির কাছে, সাথে একটা পানির বোতল। হাতে নিয়ে সেগুলো পল্লবের দিকে এগিয়ে দিলো।
_ এক কামড় পিঠা আর এক ঢোক পানি পান করুন ঝাল কমে যাবে।
এতো কষ্টের মাঝেও পল্লব হেঁসে দিলো রজনীর এই অস্থিরতা দেখে। সে আসলেও ভাবতে পারেনি এতো ঝাল হবে ঝাল ভর্তটা। আবার পরক্ষণেই ভাবলো! ঝাল ভর্তা ঝাল তো হবেই। অবশেষে রজনীর কথামতো পিঠা আর পানি খেতেই কিছুটা ঝাল কমলো। পিঠা ওয়ালা কাকিকে টাকা পরিশোধ করে তাঁরা বাড়ির দিকে রওনা হলো। আসার পথে কিছু কড়া কথা শুনাতেও ছাড়লো না রজনী পল্লবকে। আর রজনীর সেই কড়া কথা গুলোর মাঝে আনন্দ খুঁজে নিলো পল্লব। তাহলে এভাবেই কি শুরু তাঁদের নতুন জীবনের সূচনা।
চলবে,,,
#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১১
আমি সদরে করেছি গ্রহণ দুঃখ তোমায়!
সুখকে দিয়েছি বিদায়। জীবন আমার ছোট্ট তীর,বৈঠা ছাড়া চলছে উজান। তবুও তুমি বারবার কেন উঁকি মারো মোর এই ভাঙা তরীর দিকে। আমি যে পারবো না দ্বিতীয়বার নিজেকে গুছিয়ে নিতে।
আর কিছু লেখা নেই সাদা এই কাগজে। যেটা কিনা একটু আগে উড়ে এসে পল্লবের পায়ের কাছে এসে পড়েছে। কাগজটা পড়া শেষ করে উপরের দিকে তাকালো। যেখানে কিনা রজনীর জানালাটা স্পষ্ট। পল্লবের বুঝতে বাকি নেই লেখাটা রজনীই লিখেছে। যতো দিন যাচ্ছে কেমন জানি মেয়েটা নিজের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। কেন এই মেয়েটা তাঁর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। এই যে সেদিন তাঁর বাবা আসতেই রজনী নিজেকে ঘর বন্দী করেছে আর বের হয়নি। এই নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখার মাঝেও পল্লব মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছে। অবশ্য একটু রাগও হয়েছে। আর কতদিন নিজেকে সে আড়াল করে রাখবে। গত দু’দিন দরজার কাছ থেকে অনেকবার ডেকে খালি হাতেই পল্লবকে ফিরে আসতে হয়েছে। বারবার রজনী শুধু বলেছে! সে এখন বের হবে না। কেন হবে না,সেটা সে স্পষ্ট না করলেও পল্লব জানে। রজনী তাঁর বাবাকে ভয় পাচ্ছে। মানুষটা যদি তাঁকে উল্টো পাল্টা কিছু বলে। এটা ঠিক পল্লবের বাবা একটু রাগী,আর একটু বদমেজাজী। অল্পতেই রেগে যায়। সবার প্রতি তার ভালোবাসা আসে না। কিন্তু তাঁর বাবা-র বিপরীতে তাঁর মা। তিনি সবাইকে অল্পদিনের মাঝেই আপন করে নিতে পারে। তেমনটা হয়েছে পল্লব। অবশ্য কিছু বাবা-র স্বভাবও সে পেয়েছে। খুব সহজে কাউকে সে আপন করতে পারে না। কিন্তু কাউকে একবার আপন করতে পারলেই, তাঁকে আর মন থেকে সরাতে পারে না। কিন্তু রজনী তাঁর বাবার বিষয়ে যা ভাবছে! ওতোটাও খারাপ নয় তাঁর বাবা, যতটা রজনী মনে করছে। তাই আজও পল্লব রজনীকে ঘর থেকে বের করতে গিয়েছিল। কিন্তু কি হলো! বরাবরই যা হয় তাই। সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রজনী ঘর থেকে বের হয়! বেঁচে থাকার তাগিদে কিছু খেয়ে আবারও নিজের ঘরে পা বারায়। কিন্তু সময়টা পল্লব জানে না। অনেক রাত জেগে থেকেও রজনীর দেখা পাওয়া যায়নি। কখন যে রজনী ঘর থেকে বের হয়, আল্লাহ মালুম। আর কতোদিন নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখবে রজনী। তাই পল্লব একটা ফন্দি আঁটে। যদি কাজে লাগে,তো কেল্লাফতে। আজ বাবা-মা কেউ থাকবে না বাড়িতে,কারণ দু’দিন পর তাঁদের বিবাহবার্ষিকী। কিছু আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত দিতেই মূলত গেছে। তাই পল্লবের এমন দুষ্ট ফন্দি। অবশেষে সে ঘরে আসে। তাঁদের দারোয়ান চাচার দিকে এগিয়ে যায়।
_ কেমন আছেন চাচা
_ এইতো বাজান,বালা
_ বালা না চাচা,বলেন ভালো।
_ ওই হইলো এক্কান।
_ ওই হইলো এক্কান, না, হলো কিছু একটা।
_ কি কবা কওদি বাজান,আমি এ-র থিক্কা আর বালা ভাসা কইতে পারুম না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। এবার মন দিয়ে শুনুন আমি কী বলি। আমাদের বাড়িতে যে মেয়েটা থাকে! ওকে বলবেন আমি এক্সিডেন্ট করেছি! আর খুব গুরুতর অবস্থা আমার। বাড়িতে কেউ নাই,তাই উপায় না পেয়ে আপনি ওর কাছে গেছেন।
_ ছি ছি কি কও বাজান। আমি মিছা কতা কই না। আল্লাহ পাপ দিতো।
_ আরে চাচা দিতো না,সরি দিবে না। মেয়েটা সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে দেখেন না। তাই মন ভালো করার জন্য এইটুকু চেষ্টা। আপনি চান না দুঃখী মেয়েটা একটু হাসুক।
_ হ হেইডা তো চাই। কিন্তু,হেয় যদি রাক করে।
_ আরে চাচা আপনি শুধু এতোটুকু বলে চলে আসবেন। বাকিটা আমি সামলে নিবো।
_ আইচ্ছা
_ হুম তাহলে চলুন।
অগত্যা সোহরাব চাচা আমার সাথেই গেলেন। রজনীর ঘরের দরজা সামনে এসে অসহায় চোখে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। ফিসফিস আওয়াজ করে বললো।
_ কি কইতাম
আমি গলার স্বর নিচু করে বললাম।
_ বলেন,রজনী মা পল্লব বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। বাড়িতে কেউ নাই,তাই আমি একা কি করবো বুঝতে পারছি না। তুমি আসলে একটু ভালো হতো। আমায় একটু সাহায্য করতে।
_ এইটুকুন কইলেই অইবো।
_ অইবো, না মানে হবে। আপনারা সাথে দুই ঘন্টা কথা বললে চাচা বিশ্বাস করেন,রোগী দেখা ছেড়ে দিয়ে দেখা যাবে! আমি আপনার ভাষা নিয়ে রিসার্চ করছি।
_ ওমনে কইয়ো না বাজান। এইডা আমার মাতৃভাষা।
_ হ্যা বুঝতে পারছি। এবার বলেন।
আমি দরজার কোণে দাঁড়িয়ে পড়লাম। চাচা দরজায় কড়া নাড়লো। দরজার কড়ার শব্দে ভেতর থেকে রজনী বললো।
_ কে?
_ আমি গো মাইয়া,সোহরাব। তোমাগো দারোয়ান চাচা।
_ কি হয়েছে চাচা।
_ এক্কান কথা আছিলো।
_ বলেন কাকা
_ দরজাডা খুলবা না মা,আসলে একটা অতি জরুরি কতা আছিলো।
_ সমস্যা নাই কাকা বলেন, আমি শুনছি এখান থেকেই।
_ রজনী মা পল্লব বাবায় এক্সিডেন্ট করছে। বাড়িতে তো কেউ নাই। তাই আমি তোমারে ডাকবার আইছি।
সোহরাব চাচা কথা শেষ করতেই আমি ইশারায় বললাম চলে যেতে। আর তখনি দরজা খোলার আওয়াজ হলো। আমি দাঁত বের করে হেঁসে দিলাম। আর রজনী আমার দিকে দৌড়ে এগিয়ে এলো। অস্থির কন্ঠে বলতে রইলো।
_ কি হয়েছে আপনার। কোথায় লেগেছে। আর এক্সিডেন্ট কীভাবে হলো? আল্লাহ আন্টি আঙ্কেল কোথায়। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। চলুন চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।
_ রজনী তুমি এতটা অস্থিরের জন্য তো ভালো করে আমার দিকে খেয়ালই করলে না। খেয়াল করলে দেখতে আমি একদম সুস্থ। আমার এক্সিডেন্ট কথা শুনে, তুমি তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছো। ভয়ের জন্য খেয়াল করোনি আমি পুরোই সুস্থ ভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এক্সিডেন্টের মিথ্যাটা ছিলো তোমার ঘরের দরজা খোলার টেকনিক।
পল্লবের এক্সিডেন্ট হয়নি, এটা মিথ্যা ছিলো সেটা শুনে অবাক হওয়ার থেকেও অবাক হলো! পল্লবের তুমি সম্মোধন করায়। এদিক ওদিক চোখ টাকে ঘোরাতে রইলো। এতোটা অস্থিরতা দেখানো উচিত হয়নি। এখন কি ভাববে মানুষটা। আল্লাহ আমি বারবার কেন এই মানুষটার সামনে লজ্জায় পরে যাই। সেদিন পিঠার ঝালের জন্য তাঁকে কীভাবে বকা দিলাম। সেটা নিয়েও মানুষটা আমায় খোঁচা দিয়ে কথা বলেছে। বলে কিনা ঝাল তো আমার লেগেছে, আপনি কেন এতো অস্থির হচ্ছেন। ইসস কথাটা পল্লব বলতেই রজনী লজ্জায় শেষ। আর এখন কিনা আবারও সেই লজ্জার মুখোমুখি হতে হলো।
_ কি হলো রজনী কিছু বলো।
পল্লবের কথায় রজনী আবারও থমকে গেলো। কিছু একটা ছিলো পল্লবের কথায়। তাই কোন রকম নিজেকে সামলে বললো।
_ এভাবে মিথ্যা বলার মানে কী?
_ মিথ্যা তো বলিনি,সত্যি বলেছি। আমার সত্যি এক্সিডেন্ট হয়েছে।
_ যদি হয়ে থাকে কোথায়, আমি তো কোথাও ক্ষত দেখতে পাচ্ছি না।
_ ওই শূন্য চোখে আমার ক্ষত দেখা যাবে না তো?
_ মামানে
_ মনের চোখ খানা খুলে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাও! দেখবে ক্ষতটা কতো গভীর।
_ ফাজলামো হচ্ছে
_ একদম না,আমার বুকে তোমার ওই নরম হাতটা রাখো। দেখো আমার বুকের ধুকপুক কতোটা প্রখর। কীভাবে আমার হৃদয়ে ক্ষতটা ক্ষতি করছে সেই ধুকপুক। কঠিন মনের মেয়েদের হাতের ছোঁয়া সব সময় ক্ষত সারানোর ঔষধ হয়।
এই কথা ব’লেই রজনীর হাত টেনে নিয়ে নিজের বুকের বামপাশে রাখলো পল্লব। এবার রজনীর বুকের মাঝে ঝড় বইতে শুরু করলো। বুকে যেন কেউ ঢোলের কম্বিনেশনে ফিফটি-ফিফটি ধারাম ধারাম করছে। রজনী অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে রইলো। রজনীকে কাঁপতে দেখে পল্লব বললো।
_ ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়া কি তবে এভাবে ঝড় তোলে বুকের মাঝে। আমার ভেতরে শুরু হয়েছে প্রবল স্রোতের জলস্রোত। তাহলে কি তুমি কোন ঝড়। যে এসেই আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছো। এই মেয়ে তুমি কি জাদু জানো নাকি? আমি তো পাগল হ’য়ে গেলাম। আমি কিন্তু তোমার প্রেমে পাগল হতে চাই না। পাগল হলে দেখা যাবে, তুমি বাদে সবাইকে ভুলে গেলাম। কিন্তু আমি তো তোমার সাথে এই পৃথিবীর সব কিছুকেই মনে রাখতে চাই। শুনে রাখো কঠিন মনের মেয়ে,আমি থাকতে চাই প্রেমিক পুরুষ হয়ে!পাগল প্রেমিক হয়ে নয়।
“ওহে শ্যামবতী মেয়ে
তোমার ডাগর ডাগর আঁখিখানায়।
আমার নামে আজ থেকে কাজল দিও।”
চলবে,,