গ্যাসবেলুন #পর্ব_৮,৯

0
1013

#গ্যাসবেলুন
#পর্ব_৮,৯
লেখাঃ Nobonita Ferdows

অরূপ প্রতিদিন ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যেই অফিস থেকে ফিরে আসে। মাধূর্যকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে সে প্রায় প্রতিদিনই বিকাল পাঁচটার মধ্যে অফিস থেকে ফিরার চেষ্টা করে। কিন্তু আজ সে ফিরলো রাত সাড়ে আটটায়৷ অফিসে একটা উটকো ঝামেলা হয়েছে। একসপ্তাহের মধ্যে চারজনের ফোন হারিয়েছে। প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে গুরুত্বে না নেয়া হলেও এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বিষয়টা। একদিন পরপর দুজনের ফোন টেবিল থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে।
তারপর আবার একদিন পর টানা দুদিনে দুজনের ফোন পকেট থেকেই হারিয়েছে। এদের সবারই ফোন হারিয়েছে অফিসে ঢোকার পর।
.
অরূপদের অফিসে প্রচন্ডরকম কড়া গার্ডের ব্যাবস্থা রয়েছে। অফিসের প্রতি ফ্লোরে ঢোকার দরজায় ফইস রিকগনিশন ব্যাবস্থা থাকায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যতীত কেউ সহজে অফিসে প্রবেশ করতে পারেনা। এত কড়া ব্যবস্থা সত্ত্বেও যখন চুরী হচ্ছে, তার মানে অফিসের কেউ বা কেউকেউ এর সাথে জড়িত। চোর ধরার জন্য গোপন মিটিং করা হয়েছে। সকল কর্মকর্তাদেরকে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হচ্ছে৷ এইসব ঝামেলার কারণে অরূপের অফিস থেকে বেরোতে বেরোতেই আটটা পেরিয়ে গিয়েছে।
.
অরূপ বাসায় ফিরে কলিংবেল চাপতেই প্রতিদিনের মতোই অন্তু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অরূপ বাড়িতে ঢুকেই সিড়ির মাথায় খেয়াল করলো। অরূপ বড় ধরণের ধাক্কা খেলো। অরণী এবাড়িতে আসার দুমাস পেরিয়ে গিয়েছে৷ আর এই গত দুমাসে অরূপ প্রতিদিনই বাড়িতে ঢুকে সিড়ির মাথায় খেয়াল করেছে। সিড়ি দিয়ে উঠেই হাতের ডানের প্রথম ঘরটা অরণীর; এঘরের দরজায় সাদা ভারী পর্দা লাগানো। ঠিক এসময় করে সেই সাদা পর্দার আড়াল থেকে দুটো চোখ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে৷ এই দুইমাসে কোনোদিন এর ব্যতিক্রম হয়নি। যেদিন অরূপ অরণীকে অপমান করে তার ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো, তারপর দিনেও অরূপ খেয়াল করেছে, অরণী তাকে লুকিয়ে দেখেছে। অরূপের সামনপ না এলেও তার খোঁজ রেখেছে। আজ এমন কি হলে যে অরণী তার কলিংবেলের আওয়াজে ছুটে এলোনা? অরণী কি বাড়িতে নেই? নাকি তার আজ ফিরতে দেরী হলো বলে বুঝতেই পারেনি অরূপ এসেছে!
.
“উপরে তাকিয়ে কি দেখতিছো, ভাইয়া?”
.
“কই কি দেখতিছি? হাবলার মতো দাঁড়ায় আছির ক্যান তুই আমার সামনে? যা নিজের ঘরে যা।”
.
ধমক খেয়ে ভ্যাংচি কেটে উপরে চলে গেলো অন্তু।
.
অরূপের মন খারাপ হলো। কেনো হলো, সে নিজেও জানেনা। সিড়ি দিয়ে উঠে নিজের ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকে গেলো সে। হেভি শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাধূর্যের খোঁজে মায়ের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে অরণীর ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। অজানা কৌতুহল নিয়ে ঘরের মধ্যে উঁকি দিতেই দেখলো অরণী বিছানার ওপর দু’পা মেলে বসে আছে। দুই পায়ের ফাঁকে মাধূর্যকে বসিয়ে তার চুল বেঁধে দিচ্ছে।
.
“এই তো, আমার ছোট্ট মামনিটার চুল আমি বেঁধে দিয়েছি। আমার মামণিটাকে কেমন লাগছে দেখি!”
.
এতটুকু বলতেই মাধূর্য উঠে দাঁড়িয়ে অরণীর দিকে ঘুরতে গিয়ে আবার বিছানার ওপর ধপাস করে বসে পড়লো। অরণী হাসতে হাসতে মাধূর্যের হাত ধরে উঠে আবার দাঁড়া করিয়ে দিলো। মাধূর্য খিলখিল করে হেসে উঠলো। অরূপ স্বস্তির হালকা করে নিশ্বাস ফেললো। মুচকি হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে এলো। মা টেবিলে খাবার সাজিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
.
“আয় বাবা, খেতো বোস। আজকে দেরী হলো কেনো এতো, বাবা?”
.
“অফিসে কিছু সমস্যা হয়েছিলো?” চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললো অরূপ।
.
অরূপের মা চোখ বড়বড় করে অস্থির হয়ে বললো, “কি সমস্যা, বাবা? তোকে নিয়ে কোনা সমস্যা? বড় কিছু হইছে বাবা?”
.
অরূপ চোখ সরু করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো, “আম্মা, তুমি তোমার সিনেমাটিক রিয়েকশন না দিয়ে আমার সাথে একটু কথা বলবা, প্লিজ?”
.
অরূপের মা ধপ করে নিভে যাওয়া আগুনের মতো ফ্যাকাসে চেহারায় তাকালেন। তারপর অরূপের প্লেটে ভাত তুলে দিতে দিতে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, “আমার কথা তোরা কেউ বুঝিসনা! মায়ের টেনশন তোরা কিভাবে বুঝবি?”
.
“আম্মা….” অরূপের ঝাঁঝানি শুনে চুপ করে বসে পড়লেন তিনি।
.
“আমি আর কোনো কথাই বলবোনা। খেয়ে নে চুপচাপ!”
.
অরূপ খেতে শুরু করার পরপরই তার চাচি এলেন খাওয়ার ঘরে।
.
“কিরে অরূপ, এতো দেরী কেনোরে তোর আজকে?”
.
“ওকে কিছু প্রশ্ন করিসনা রেনু। কিছু বললেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দেয়!” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো অরূপের মা।
.
ছোটচাচি হাসতে হাসতে বললেন, “আবার মা-বেটার ঝগড়া লাগছে?”
.
তারপর অরুপের পাশেই চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন, “ভাবি, মাধূর্যকে যে সারাদিন অরুর কাছে ছেড়ে দিয়েছো; অরণী তো নিজেই একটা বাচ্চা, নিজেরই খেয়াল নিতে পারেনা; ও আবার ওইটুক বাচ্চা সামলাতে পারে?”
.
“আরে আমিই তো ভাবছিলাম, ও সামলাতে পারবেনা। এখন তো দেখতিছি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ও একাই মাধূর্যকে সামলাচ্ছে!”
.
“ভার্সিটি বাদ দিয়ে যে সারাদিন বাড়িতে পরে আছে, ভাই কোনদিন যে আমার উপর রাগ হয়…”
.
“আমি তো ওকে বলেছিলাম, ভার্সিটি থেকে এসে নাহয় মাধূর্যকে দেখে রাখবে ও। কথা তো শুনেই না!”
.
অরূপ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বিড়বিড় করলো, “দুটো চড় বসায় দিলেই কথা শুনবে!”
.
অরূপের মা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো, “কি বললি?”
.
“কই কি? কিছুনা!”
.
“ভাবি, আমি বলি কি, অরুর কাছে সারাদিন এভাবে মাধূর্যকে রেখোনা। মাধূর্য তো এখন অরুকে ছাড়া কিছু বুঝেইনা। সেদিন দেখি অরুকেই মা মা বলছে। পরের বাড়ির মেয়ে; একদিন তো চলেই যাবে। তখন যদি মাধূর্য আর ওকে ছাড়া থাকতে না চায়?”
.
অরূপের মা গম্ভীরমুখে মাথা নাড়তে নাড়তে বললো, “কথাটা ঠিকই বলেছিস, রেনু!”
.
অরূপের খাওয়া শেষ। অরূপ কখনো প্লেটে হাত ধোয়না। উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধোয়। আজ অন্যমনস্ক হয়ে প্লেটেই হাত ধুয়ে ফেলে উঠতে উঠতে বললো, “মাধূর্য যদি ওনার কাছে থাকতে পছন্দ করে, তাহলে থাকুক।”
.
ছোটচাচি ঝাড়ি লাগিয়ে বললেন, “অরুর ভার্সিটির পড়া শেষ হলেই তো ও চলে যাবে। আর একটা সেমিস্টার হলেই তো শেষ। তারপর কি করবি?”
.
তারপরের কথা তারপর ভাবা যাবে চাচি।
.
.
অরূপ উপরে উঠে নিজের ঘরে দিকে যেতে গিয়ে অরণীর ঘরে গিয়ে ঢুকলো।
“আপনার ভার্সিটির ক্লাস হচ্ছেনা?”
.
অরূপের আওয়াজ শুনে মাধূর্য উঠে বিছানার চাদর দুহাতে খামচে ধরে আস্তে আস্তে নামলো বিছানা থেকে। তারপর ধপাধপ্ পায় ছুটে এসে “বাবাই… বাবাই…” করে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো অরূপকে। অরূপ তাকে কোলে তুলে নিয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করেছি।
.
অরণী চমকে উঠে তাকালো অরূপের দিকে। তারপর মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে বললো, “জি। হচ্ছে!”
.
“তাহলে ভার্সিটি যান না কেনো?”
.
“এমনি!”
.
“এমনি মানে কি? কাল থেকে যেনো আপনাকে ভার্সিটিতে যেতে দেখি!”
.
অরণী চুপ করে থাকলো। এই ছেলেটার বারণের ওপর কথা বলার শক্তি তার নেই।
.
“কি হলো? কি বলেছি শুনেছেন?”
.
“জি!”
.
“গুড। ভার্সিটি শেষ হলে বাসায় এসে মধুকে নিয়ে থাকিয়েন। ওর জন্য পড়াশুনার ক্ষতি করিয়েন না। পরে তো আপনার বাবা আমাকে কথা শুনাবেন যে, আমার জন্য আপনার ক্ষতি হয়েছে।”
.
“জি আচ্ছা!”
.
“মধু মা… বাবাই চলে এসেছে। এখন আমরা বাবাইয়ের সাথে খেলবো। চলো মা। আন্টিকে বাই করে দাও!”
.
মাধূর্য বললো, “আন্নি খেলবেনা বাবাই?”
.
“না মা, আন্নি ঘুমাবে এখন। আন্নির বাবা বকুনি দেবে নাহলে। আমরা যাই?”
.
“আত্তা। তাতা আন্নি! তাতা! তুমি ঢুমাও।”
.
অরণী হাসলো। “টাটা, মা!”
.
.
অরণী পরদিন ভার্সিটিতে গেলো প্রায় একমাস পর। এই একমাস সে পড়াশুনো থেকে পুরোপুরি বিচ্ছেদ করেছিলো। এখন ভার্সিটিতে এসেই সে বিরাট বড় ধরণীর ধাক্কা খেলো। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা ডেট দেয়া হয়েছে; রুটিন দেয়া হয়েছে। অথচ সে সিলেবাস পর্যন্ত জানেনা। হঠাত যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো তার মাথার ওপর।
.
ফ্রেন্ডদের কাছে হেল্প নিয়ে সব নোটসগুলো জোগাড় করলো সে। পরীক্ষার আগের কয়দিন তাকে কোমর বেঁধে পড়াশুনা করতে হবে; নয়তো পাশ ঠেকানো সম্ভব হবেনা।
.
.
রাতে খেতে বসে অরূপ খেয়াল করলো, সবাই খেতে আসলেও, অরণী আসেনি। ছোটচাচিকে প্রশ্ন করতেই বললেন, অরণীর পরীক্ষা সামনে, পড়তে বসেছে। আমি খাবার দিয়ে আসছি ওর ঘরে!
.
অরূপ কিছু বললোনা। খেয়ে উঠে মাধূর্যকে নিয়ে অরণীর ঘরে গিয়ে দরজায় নক করলো। দরজা খোলাই ছিলো। অরণী বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়তিছিলো। অরূপকে দেখেই ঠিক হয়ে বসে, ওড়না মেলে নিয়ে বললো, “জি! আসুন। কিছু বলবেন?”
.
“আপনার পরীক্ষা শুনলাম চাচির কাছে। কোনো দরকার হলে আমাকে বলিয়েন! এটাই বলতে এসেছিলাম! আর কয়দিন মাধূর্যকে দেখতে হবেনা আপনার। মা আর চাচি মিলে ওকে দেখে রাখতে পারবেন। আপনি পরীক্ষাটা ভালো করে দিয়েন!”
.
“শুনুন, আমি মাধূর্যের খেয়াল রাখি, আমার ভালো লাগে জন্য। এটা আমার ডিউটির মধ্যে পড়েনা যে আপনি বারণ করবেন।”
.
অরূপ মুচকি হাসলো। কিছু না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
.
.
চলবে……

#গ্যাসবেলুন
#পর্ব_৯
লেখাঃ Nobonita Ferdows
.
অরণীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে আজ থেকে। পরীক্ষার সময় দিয়েছে বিকালে। সে যতটা ভয় পেয়েছিলো, পরীক্ষা ততটাও খারাপ হয়নি। অরণী বাড়িতে ফিরলো বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নামতেই দেখলো অরূপের বাবা সোফারঘরে সেই প্রথমদিনের মতো পেপারে মুখ ঢেকে বসে আছে। অরণী এই বাড়িতে আসার পর থেকে এই লোককে পেপার থেকে মুখ তুলে তাকাতে দেখেনি। সারাদিন যেনো পেপারে মুখ ঢেকে রাখা আর খাওয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই। অরণী ঠিক করেছে, আজ সে এইলোকের সাথে কথা বলবেই।
অরণী তাকে দেখে গিয়ে বসে বললো, “আঙ্কেল, ভালো আছেন?”
.
ভদ্রলোক মুখের সামনে থেকে পেপার নামিয়ে গম্ভীর মুখে অরণীকে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে বললো, “জি। ভালো!” এতটুকু বলেই আবার পেপারে মুখ ঢাকলেন।
.
অরণী চোখ সরু করে তাকালো। আজব তো! এভাবেও কেউ কথা বলে! এই জন্যই ছেলেও এমন গম্ভীর হয়েছে।
.
“আঙ্কেল, আন্টিকে কোথাও দেখছিনা! আপনি জানেন, আন্টি কোথায়?”
.
তিনি পেপার পড়তে পড়তেই বললেন, “উনি রেনুকে নিয়ে বাইরে গিয়েছেন সকালেই!”
.
অরণীর আচমকা মনে পড়লো আন্টি আর ছোটফুপু সকালে মার্কেটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে ভাবতেই পারেনি তারা এখনো ফিরে আসেনি৷ অবশ্য ঢাকা শহরের জ্যামে কোনোকিছুই অসম্ভব না।
.
অরণী উঠে রান্নাঘরে গেলো। সে যা ভেবেছিলো ঠিক তাই। সকালের নাস্তার পর বাড়িতে আর কোনো রান্না হয়নি!
.
“অরুপু, তুমি রান্নাঘরে? মা, আর চাচি এখনো আসেনি জানো?”
.
“হ্যাঁ তো, শুনলাম। তোমরা তো মনে হয় দুপুরে কেউ খাওনি!”
.
“হ্যাঁ। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। তুমি একটা কিছু রান্না করে দাও না। আমি তো কিছু বানাতে পারিনা!”
.
অরণী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাড়িতে সে, অন্তু আর আঙ্কেল ছাড়া কেউ নেই। কোনোদিন রান্নাঘরের ধারেকাছেও যায়নি সে, এখন এই বাচ্চা মেয়েকে সে কিভাবে বলে যে সে, এক পোয়া ভাত ও রান্না করতে জানেনা!
.
অরণী ফ্যাকাসে হেসে বললো, “অন্তু, আমি তো জীবনেও রান্না করিনি!”
.
অন্তু ফিক করে হেসে ফেলে বললো, “আচ্ছা, চলো তুমি আমি মিলে ইউটিউব দেখে কিছু বানিয়ে ফেলি। বাবাও না খেয়ে আছে!”
.
“আচ্ছা, তাই করি। কি আর করা!”
.
অরণী বেশি কিছু করতে পারলোনা। কোনোমতে আনাড়ি হাতে ভাত, ডিমভুনা, বেগুনভাজা আর ফ্রিজে মুরগীর মাংস কেটে রাখা ছিলো; সেটা দিয়ে বুটের ডাল করে ফেললো।
.
সাহস করে অরূপের বাবার সামনে গিয়ে খেতে ডাকতে পারলোনা। অন্তু গিয়ে বাবাকে ডেকে এনে খেতে দিলো। তিনি খাবার মুখে দিয়ে শুধু প্রশ্ন করলেন, “রান্না কে করেছে?”
.
অন্তু অরণীর দিকে তাকিয়ে বললো, “কেনো বাবা, খাওয়া যাচ্ছেনা?”
.
“ভালো হয়েছে। তুমি করেছো?”
.
“না বাবা৷ আমি তো রান্না পারিনা। অরণী আপু করেছে!”
.
তিনি আর কিছু বললেন না। খেয়ে উঠে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। এরপর অরণী ভয়ে ভয়ে প্লেটে ভাত নিয়ে খেতে গিয়ে বুঝলো, রান্না অতটাও খারাপ হয়নি। ডালে লবণের পরিমাণ কম হয়েছে, আর বেগুনটা একটু বেশি পোড়া পোড়া হয়েছে। তবে খিদের পেটে অন্তু, অরণী দুজনেই পেট ভরেই খেলো।
.
অরণীদের খাওয়ার মাঝেই ছোটফুপুরা চলে এলো। এসেই তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে ঢুকে দেখলো, রান্নাঘরের বেহাল অবস্থা। অন্তু আর অরণী সবকিছু খুঁজে খুঁজে কোনোমতে রান্নাটা সেরেছে। অরণীর রান্না দেখে দুজনেই হেসে কুটিকুটি। নিঁখুত রান্না না হলেও, প্রথমবার করা রান্না হিসেবে অনেক ভালো হয়েছে। অরণী তিনজনের রান্না করতে গিয়ে ছয়-সাতজনের রান্না করে ফেলেছে। ছোটফুপু আর আন্টি ওগুলোই নিয়ে খেতে বসে গেলো।
.
.
রাত তিনটে বাজছে। মাধূর্য আজ প্রথম অরূপের কাছেই ঘুমিয়েছে। একয়দিনে কখনো ওর বুবুর কাছে, আর কখনো অরণীর কাছেই থেকেছে। আজকে অরূপের সাথে খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা। অরূপ একহাতে সাবধানে মেয়েকে টেনে বিছানার মাঝখানে এনে তার দুপাশে দুটো বালিশ দিয়ে দিলো। তারপর মেয়েটার কপালে চুমো এঁকে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে অরণীর কথা ভাবলো। মেয়েটার বয়সই বা কতো! মা-বাবাকে ছাড়াই একা একা বড় হওয়া একটা মেয়ে, বিশাল বাড়িতে যার দেখাশোনা করার জন্যই তিন-চারজন লোককে রাখা হতো, সেই মেয়েটা মধ্যবিত্ত পরিবারে কয়েকদিনের জন্য এসেই কত আপন করে নিয়েছে সবাইকে। রাতে খেতে বসে শুনলো, অরণী নাকি কাল থেকে মায়ের কাছে রান্না শিখবে, আজ নাকি রান্নাও করেছিলো। বিকালে সবাই খাওয়ার পরেও কিছু খাবার বেচে গিয়েছিল। অরূপের মা, ওগুলো অরূপকে আর খেতে দেয়নি, সে খেতে পারবেনা বলে। অরূপ খাওয়া নিয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে হলেও অরণীর রান্না খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো তার৷ মাকে সে কথা সাহস করে বলে উঠতে পারেনি সে।
.
অরণীর কালকেও পরীক্ষা আছে। অরূপ মাধূর্যের কপালে আরেকবার চুমো এঁকে দিয়ে গায়ে চাদরটা ভালো করে টেনে দিয়ে উঠে পড়লো। রাতে ঘুম হয়না তার, রাত জাগতে জাগতে বাজে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অরূপ উঠে ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখলো অন্তুর আর অরণীর দুজনের ঘরেই আলো জ্বলছে; দরজা ভিজিয়ে দেয়া! দুজনেই কি তাহলে জেগে আছে?
.
অরূপ ভ্রু কুঁচকে অন্তুর ঘরে ঢুকলো। অন্তু বিছানার মাঝখানে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঠান্ডায় হালকা হালকা কাঁপছে। অরূপ তার গায়ে চাদরটা মুড়ে দিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে দরজা ভিজেয়ে বের হলো।
.
অরণীর ঘরের দরজার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। অরণী হয়তো পড়ছে! কিছুটা ইতস্তত করে শেষে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। অরণী ঘরের কোণার টেবিলের ওপর রাখা বইয়ের স্তুপের ওপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে। অরূপ অরণীর ঘুমন্ত মুখ দেখে হেসে ফেললো। কেমন বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে তাকে। অরূপ আস্তে করে অরণীর কোমরের নিচে হাত দিয়ে পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মাথা নিচে বালিশটা টেনে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে, লাইট নিভিয়ে ঘর থেকে বের হলো।
.
আজরাতে তার আর ঘুম আসবেনা। রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। কফি শেষ হতেই ফজরের আজান শুনলো। মা নামাজ পড়তে উঠবেন এসময়। ওযু করে অরূপের ঘর থেকে একবার ঘুরে গিয়ে নামাজে বসবেন। এঘরে এসে যদি দেখেন, ছেলে বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে, তাহলে ধরেই নেবেন, ছেলে ডিপ্রেশনে ভুগছে। অরূপ মাকে এই মানসিক কষ্ট দিতে চায় না। ছেলে কষ্টে আছে, এটা বোধহয় পৃথিবীর কোনো মা ই মেনে নিতে পারেন না।
.
অরূপের ধারণা, সে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষও হয়, তারপরেও তার মা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকবে। কিছু কিছু মানুষের শরীরের শিরায় শিরায় রক্ত সঞ্চালনের সাথে সাথে টেনশন সঞ্চালন হয়। তার মা ঠিক সেই ক্যাটাগরির মহিলা!
.
.
অরণীর পরের পরীক্ষাগুলো তেমন ভালো হলোনা। আগে থেকে পড়ায় অনেক গ্যাপ ছিলো। একসাথে এতকিছু পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হলোনা। পরীক্ষার কয়দিন সে মাধূর্যকে সেভাবে সময়ই দিতে পারেনি৷ সন্ধ্যা হলেই মাধূর্য থপথপ পায়ে হেঁটে অরণীর ঘরের দরজায় এসে কয়েকবার মা মা করবে। এই ডাকটা শুনতেই অরণীর মন খুশিতে ভরে ওঠে। তখনই যা একটু মাধূর্যকে কাছে পায় সে। আবার নয়টা বাজতে না বাজতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে মাধূর্য।
.
.
আতাহার সাহেব এমাসের উনিশ তারিখে ঢাকায় ফিরবেন। এবার টানা দু’সপ্তাহের ছুটি নিয়ে আসছেন তিনি। অরণীর পরীক্ষা শেষ হবে সতেরো তারিখ। সে ঠিক করেছে, পরীক্ষা শেষ হলেই সে বাড়িতে ফিরে যাবে৷ বাবা আসার আগেই নিজের হাতে রান্না করে খাইয়ে বাবাকে চমকে দেবে। অরূপের সাথে তার যোগাযোগ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। একইবাড়িতে থেকেও অরূপ যেনো তাকে কিছুটা এড়িয়েই চলে, অরণীও আর অরূপকে বিরক্ত করতে চায়নি৷ সেই পরীক্ষা শুরুর আগে শেষ কথা হয়েছিলো তার অরূপের সাথে। মাধূর্য না এলে হয়তো সে আর এবাড়িতে থাকতোও না। কিন্তু এখন কি একটা মায়ায় পড়ে গেছে সে। এবাড়িটা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই মন খারাপের ঘন কালো মেঘ এসে মনের ওপড় গাঢ় আস্তরের ফেলে যায়। কিন্তু এবার যখন বাবা এতদিন পর ছুটি নিয়ে আসছে, সে অন্তত দু’সপ্তাহের জন্য তার নিজের বাড়িতে, বাবার কাছে গিয়ে থাকবেই।
.
অরূপ অরণীর চলে যাওয়ার কথা ষোলো তারিখ রাতে ডিনার করতে বসে জানতে পারলো। আচমকা যেনো তার মনে হলো, অরণী না থাকলে এবাড়িটা শূণ্য হয়ে যাবে, মাধূর্য একা হয়ে যাবে, আর…. সে? সে নিজেও হয়তো… কিংবা হয়তো না!”
.
অরূপ রাতে খেয়ে উঠে নিজের ঘরে এসে অনেক্ষ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। হয়তো ভাবলো অনেককিছু। ঘরের এমাথা থেকে ওমাথায় পাইচারি করে একসময় ঘর থেকে বের হয়ে অরণীর ঘরে এসে দরজায় নক করলো। দরজা খোলাই ছিলো। অরূপ ঘরে ঢুকে দেখলো, অরণী ঘুমিয়ে পড়েছে। অরূপ অরণীর বিছানার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।
.
সারারাতে গ্লাস ভর্তি করে তিনবার কফি খেলো। আজরাতে এমনিতেও তার ঘুম আসবেনা; অজানা কিছু হারানোর আশঙ্কায় সে সারারত ছটফট করলো। ভোরের দিকে দুচোখ লেগে আসলো তার। ঘুম ভাঙলো সকাল দশটায়। আজ আর তার অফিসে যাওয়া হলোনা। সকালে নাস্তার টেবিলে আড়চোখে অরণীর দিকে তাকালো। অরণী যখন এবাড়িতে প্রথম এসেছিলো, প্রতিদিনই অরূপ খেতে বসে খেয়াল করতো, মেয়েটা মাথানিচু করে আড়চোখে তাকিয়ে তাকে খেয়াল করে। আজকে অরূপ আঁড়চোখে বেশ কয়েকবার তার দিকে তাকালো। কিন্তু অরণী একবারও চোখ তুলে তাকালোনা তার দিকে। আচ্ছা, অরণী কি আগেরমতো তার কথা ভাবেনা!
.
আনমনে এসব ভাবতে গিয়েই বোধহয় তা গলায় খাবার আটকে গেলো। কাশতে কাশতে তার চোখে পানি এসে গিয়েছে। অরণী তড়িৎ গতিতে উঠে তাড়াহুড়ো করে গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে অনেকটা পানি টেবিলের ওপর ফেলে দিলো। গ্লাসভর্তি পানিটা অরূপের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো, “আস্তে আস্তে খাবেন না? অমন তাড়াহুড়ো করে গিললে তো গলায় খাবার আটকাবেই!”
.
.
অরণীর অস্থিরতা দেখে খাবার টেবিলের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। পানিটা খাওয়ার পর অরূপের কাশি কিছুটা কমলো….
.
অরূপের আজ সারাটাদিন অন্যমনস্কতায় কেটে গেলো। বারকয়েক অরণীর ঘরের সামনে ঘুরঘুর করে নিজের ঘরে ফিরে গেলো। তার বারবারই কেবল মনে হচ্ছে, অরণীর সাথে তার কথা বলাটা খুব জরুরী। কিন্তু সে কি বলবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারতিছেনা!
.
অরণী বিকালে পরীক্ষা দিতে চলে যাওয়ার পরপরই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলো। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে, এই বুঝি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। অথচ বৃষ্টি হচ্ছেনা, কেবল আকাশে আঁধার নেমে আসছে। অরণীর পরীক্ষা শেষ হবে পাঁচটার দিকে। বৃষ্টি আসলে মেয়েটা একা একা আসতে পারবে তো?
.
পাঁচটা বাজতেই অরূপ বাইরে বের হওয়ার জন্য বাইক বের করলো; অরণীর ভার্সিটি সামনে এসে দাঁড়ালো পাঁচটা বাইশে। অরণী ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলো। সে গেটের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। অরূপ বাইক নিয়ে এসে তার ঠিক সামনে দাঁড়ালো। অরূপের দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো, এই ছেলেটাকে এই শার্টটা ছাড়া আর কোনো শার্টে মানাবেনা! হালকা আসমানী রঙের শার্টের হাতাটা গোটানো নেই। অরূপকে কি সে বলবে, হাতাটা গুটিয়ে নিলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতো!
.
না সে বলবেনা, তার সেই অধিকার নেই।
“উঠে পড়ুন!”
.
“আপনি আমাকে নিতে এসেছেন?”
.
“না। আমি আপনার বান্ধুবীদের নিয়ে যেতে এসেছি!” বিরক্তমুখে বললো অরূপ।
.
অরণী এতটাই অবাক হয়েছে যে কথা বলার শক্তিটা পর্যন্ত সে পাচ্ছেনা। অরূপের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে শুধু।
“আরে কি হলো? উঠুন। হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন?”
.
অরণী অরূপের কাঁধে একটা হাত রেখে বাইকে উঠে বসতেইয় পিছন থেকে বাচ্চা একটা ছোকরা চেঁচিয়ে উঠলো, “আপা, চায়ের ট্যাকা?”
.
অরূপ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বললো, “কতো হয়েছে?”
.
“বিশ ট্যাকা!”
.
অরূপের কাছে খুচরো নেই। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো
“রাখো।”
তারপর বাইকে স্টার্ট দিয়ে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আসলো।
.
অরণীর ঘোর এখনো কাটেনি। সে বিশ্বাসই করতে পাচ্ছেনা যে, অরূপ তাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে যেতে এসেছে।
.
“পরীক্ষা কোমন হলো?”
.
“ভালোনা!”
.
“পড়াশুনা না করে ড্যাংড্যাং করে ছেলেদের সাথে রিকশায় করে ঘুরে বেড়ালে অমনই হবে!”
.
অরণী প্রচন্ড বিরক্ত হলো।
.
অরূপ আবার বললো, “ভালোর জন্যই বলি, কথা তো শুনবেন না। যেদিন দেখবেন ওইসব বদ পোলা সর্বনাশ করে দিয়েছে, তখন বুঝবেন!”
.
“আপনি কিন্তু আমার ফ্রেন্ডকে অপমান করছেন!”
.
“কি একটা৷ ছোকরা, তার আবার মান-অপমান!”
.
অরণী আর কোনো কথা বললোনা৷ এই ছেলের সাথে কথা বলা না বলা একই কথা।
.
অরূপ বাসার সামনে এসে বাইক থামালো। অরণী বাইক থেকে নামতেই অরূপ বললো, “আপনাকে আধঘন্টা সময় দিচ্ছি। এখন গিয়ে খেয়ে নিয়ে গোসল করে বিছানার ওপর রাখা কালো শাড়িটা পড়বেন। শাড়ির সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি আর টিপ রাখা আছে৷”
.
অরণী বিস্মিত হয়ে বললো, “কি বললেন?”
.
“কথা শুনতে পাননি? আপনি কি বধির?”
.
“শাড়ি পড়বো কেনো আমি?”
.
“আমি পড়তে বলেছি, আপনি পড়বেন। আর অযথা মুখের মধ্যে রঙচঙ মাখামাখি করবেন না। হালকা কাজল দিলেই হবে!”
.
অরণী আগের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে বললো, “আপনি কি বলছেন, আমি কিছু বুঝতে পারতিছিনা!”
.
অরূপ ধমক দিয়ে বললো, “আপনি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলেন। এখন বাজছে পাঁচটা পঞ্চান্ন। ঠিক ছয়টা পঁচিশে আমি আপনাকে এখানে দেখতে চাই!
.
অরণী ঘরে গিয়ে দেখলো, বিছানার ওপর নতুন একটা শাড়ি রাখা। কালো জর্জেটের ওপর কালো সুতার আর পাথরের কাজ করা! অরণী কিছু বুঝতে পারছেনা; তারপরেও সাজলো। খুব দ্রুতই সাজলো।
.
শাড়ি পড়ে সে যখন বাড়ির নিচে এসে দাঁড়ালো, তখন বাজছে ছয়টা পঁয়ত্রিশ। অরণী অরূপের বাইকে পাশে এসে দাঁড়াতেই অরূপ বাইক থেকে নেমে অরণীর খোঁপার কাটা খুলে দিয়ে বললো…..
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here