গ্রামের মেয়েটি❤️,পর্ব_২
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
এমন রোমান্টিক মুহুর্তে ছোট বোনের আগমন মোটেও আশা করিনি। মনেমনে বলছি আর এক মিনিট পরে আসলে হয়তো অবন্তীর ঠোঁটে আমার ঠোঁট স্পর্শ করে ফেলতাম। উফফ, একটুর জন্য পারলাম না। যাইহোক তারপর অবন্তী গিয়ে দরজা খুললো। আলিশা ভিতরে ঢুকেও ঢুকলো না। কারন ও আমার দিকে তাকিয়েই বুঝে গেছে যে আমি এখন ওকে হাতের কাছে পেলেই থাপ্পড় দিবো। খুব চালাকচতুর মেয়েটা। অবন্তী এসবের কিছুই বুঝলো না। অবন্তী একদম সাদাসিধে একটা মেয়ে। যার ভিতর কোনো হিংসা,ক্ষোভ, লোভ, লালসা কিচ্ছু নাই। এই কারণেই আস্তে আস্তে অবন্তীকে আমার ভালো লাগতে শুরু করলো। আলিশা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বোবা মানুষের মত হাত পেতে আমার কাছে টাকা চাচ্ছে। আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে বললাম।
_ কি জন্য ডাকছিস তাড়াতাড়ি বল.? (আমি)
_ টাকা দে স্কুলে যামু। (আলিশা)
_ টাকার জন্য তুই আমাকে ডাকছিস?
_ তাহলে কাকে ডাকবো।
_ আম্মার কাছে টাকা চাইতি।
_ আম্মার কাছে টাকা নাই। চিন্তা করিস না কয়দিন পর তোর
কাছে আর টাকা চামু না।
_ তাই নাকি। তাহলে কার কাছে চাইবি.?
_ আমার লক্ষী গুলুমুলু ভাবীর কাছে চাইবো। তাই না গো ভাবী.?
_ হ্যা গো তাই।
_ একজন বেলুনে পাম্প দিচ্ছে আরেকজন ফুলতেছে। অবন্তীকে গুলুমুলু, টুলুমুলু বলে পাম্প দিচ্ছে আর উনি বেলুনের মত ফুলতেছে। এর মাঝে অবন্তী বললোঃ-
_ আচ্ছা আপনার বোন কি দশটা যে টাকা দিতে এত কিপটেমো করছেন.? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বোন তাকে রাজরানীর মত করে রাখবেন। যখন যা চাইবে তাই দিবেন।
.
কথাগুলো শুনে আলিশা এত্ত খুশি যে বলে শেষ করা যাবে না।
_ ভাবী তুমি আসলেই অনেক অনেক ভালো। তুমি আগে আসলে হয়তো ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিতে এত ঘ্যানঘ্যান করতে হত না।
_ হয়েছে অনেক পাম দিছেন। এইবার দাড়ান আমি টাকা নিয়ে আসি। বলেই অবন্তী আমার প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে নিয়ে আসলো।
_ আলিশা তোমার কত টাকা লাগবে.?
_ ভাবী একশত টাকা দিলেই হবে।
_ ভাংতি টাকা তো নাই সব পাঁচশত টাকার নোট। এক কাজ করো তুমি পাঁচশত টাকাই নিয়ে যাও। বলেই অবন্তী মানিব্যাগ থেকে কচকচে পাঁচশত টাকার নোটখানা আলিশাকে দিয়ে দিলো। মনেমনে বলছি এতক্ষণ বকবক করে কী লাভ হলো? আমার কাছে এসে একশত টাকা চাইলো আর অবন্তী পাঁচশত টাকা দিয়ে দিলো। এখন থেকে আমার কচকচে নোটগুলো আলিশা হজম করবে আর বোকা অবন্তী সব দিয়ে দিবে।
.
কচকচে নোটটি নিয়ে আলিশা নাচতে নাচতে চলে গেলো। বিয়ের আগে ব্যাংক থেকে কচকচে টাকাগুলো তুলে আনলাম। মানিব্যাগ ভরতি টাকা ছিলো।
অবন্তী দরজাটা লাগিয়ে আবার আয়নার সামনে গিয়ে বসলো। আমি অবন্তীর পাশে গিয়ে বসলাম।
_ আচ্ছা আপনি এত কিপটে কেন.? (অবন্তী)
_ কিপটে কি সাধে হই.? টাকা কামাই করলে বুঝবা টাকা কি জিনিস? (আমি)
_ তাই বলে একমাত্র বোনের সাথে কিপটেমো করবেন।
_ আচ্ছা বাদ দাও।
_ দিলাম।
_ বলছিলাম।
_ কী?
_ তোমার শাড়ীটা ঠিকমত পরা হয়নি। কুচিকুচি ভাজ গুলো আমি আরো সুন্দর করে পরিয়ে দিতে পারি । আমি কী পরিয়ে দিবো?
_ কিহ..! আপনি আর কোন মেয়েকে পরিয়ে দিছেন?
_ আমার ফুফাতো বোনকে পরিয়ে দিছিলাম।
_ আজকের পর থেকে আমাকে ছাড়া আর কাউকে পরিয়ে দিতে পারবেন না।
_ আচ্ছা ম্যাডাম। বলেই অবন্তীর শাড়ি খুলে ফেললাম। আবার নতুন ভাজ করে কোমড়ে গুজে দিলাম। গুজে দিতেই অবন্তী চোখ বন্ধ করে ফেললো।
.
অবন্তী বললোঃ-
_ অনেক সুন্দর হয়েছে।
_ আমি কিন্তু মাঝেমধ্যে তোমাকে শাড়ী পরিয়ে দেওয়ার বাহানা করবো।
_ বাহানা করার কি আছে.? আমার সৌভাগ্য যে আমার হাজবেন্ড আমাকে শাড়ী পরিয়ে দিবে। এরকম ভাগ্য সব মেয়ের হয়না। অনেক হাজবেন্ড আছে সারাদিন-রাত অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্ত্রীকে একটুও সময় দেয়না। স্ত্রী কি চায় না চায় তার মূল্যই দেয় না। আর আপনি অফিসের পাশাপাশি আমাকেও সময় দিবেন, আমার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দিবেন এতেই আমি খুশি। আমার টাকা-পয়সা লাগবে না। একটু সুখ চাই।
_ অবন্তী তোমার কথা শুনে মন ভরে গেলো। তোমাকে আমি সুখ দিতে পারবো কিনা জানি না কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
_ সুখ দিবেন বলছেন এইটুকুতেই শান্তি।
_ এই চলো না কোথাও ঘুরতে যাই।
_ চলেন।
অবন্তীকে নিয়ে ঘুরতে বের হইলাম। কাল শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যেতে একটু সময় লাগবে।
অবন্তীকে নিয়ে সারাদিন ঘুরলাম। অবন্তী শহরের মেয়েদের মত এত স্টাইল করতে পারে না। যেখানেই যাই সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। অবন্তী গ্রামের মেয়ে তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। সুন্দর চেহারা আর স্টাইলিশ মেয়ে হতে না পারে কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো। অবশ্য আজকালকার যুগে বেশিরভাগ মানুষ চেহারা আর স্টাইলিশ মেয়ে খুজে। ভালো মনের অধিকারী মেয়েদের মূল খুবই কম। যাইহোক।
.
রাতে ঘুমানোর সময় অবন্তী বিছানা ঠিক করতেছে আর আমি অপেক্ষা করছি কখন অবন্তীকে নিয়ে ঘুমাবো। বিছানা ঠিক করা শেষে আমি শুয়ে পরলাম আর অবন্তীকে বললামঃ-
_ এই কি হলো তাড়াতাড়ি আসো না। উহ, উহ, উহ শীতে করতেছে আমার।
_ আসছি বাবু আরেকটু অপেক্ষা করেন।
_ আর পারছি না গো।
_ এইতো আসছি।
_ এই কাজগুলো পরেও করতে পারবা।
৫ মিনিট পর অবন্তী বিছানায় আসলো। অবন্তী বিছানায় উঠতেই জড়িয়ে ধরে লেপের নিচে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর গরম অনুভব করতেছি। তারপর বুঝলাম শীতকালে বউ থাকলে কত্ত শান্তি। অবন্তী পা দিয়ে আমার পায়ে খোচা মারলো।
চলবে…..
কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।