গ্রামের মেয়েটি❤️,পর্ব_৩
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
মিনিট পাঁচেক পর অবন্তী ঘর গুছানোর কাজ সেরে বিছানায় আসলো। অবন্তী বিছানায় উঠতেই তার হাত টান দিলাম। অবন্তী আমার বুকের উপর শুয়ে পরলো। অবন্তীর চোখে চোখ রেখে এক পলকে তাকিয়ে আছি। অবন্তীও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবন্তীকে বললাম চোখ বন্ধ করতে। অবন্তী চোখ বন্ধ করলো। তারপর অবন্তীর কপালে একটা চুমু একে দিলাম। আমার বুকের উপর থেকে অবন্তীকে নামিয়ে দুজনের উপর লেপের চাদর দিয়ে ঢেকে ফেললাম। অবন্তী আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর গরম অনুভব করতেছি। তারপর বুঝলাম শীতকালে বউ থাকলে কত্ত শান্তি। তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ টের পেলাম অবন্তী তার পা দিয়ে আমার পায়ে খোচা মারতে লাগলো। আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুয়ে আছি। অবন্তী ফিসফিস করে বললোঃ-
.
_ এইযে শুনছেন। উত্তর না পেয়ে অবন্তী আবার আমাকে রাগীস্বরে ডাকতে লাগলো।
_ এইযে আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না.?
_ হ্যা এক কান দিয়ে যাচ্ছে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
_ একদম ফাজলামো করবেন না। আর আপনি এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন কেনো?
_ ঘুম পাইছিলো আমার।
_ আজ রাতে ঘুমানো যাবে না।
_ কেনো আজ রাতে কী?
_ আজ রাতে আমি আর আপনি গল্প করবো।
_ কিহ..!! সাধের ঘুম রেখে গল্প করবো.?? না না আমি ঘুমাবো।
_ আমি আপনাকে ঘুমাতে দিবো না। বলেই অবন্তী গায়ের উপর থেকে লেপ উঠিয়ে ফেললো।
_ এই এই কি করছো। আচ্ছা ঠিক আছে আজ রাতে গল্প হবে। তবুও গায়ের উপর থেকে লেপ সরিয়ে নিবা না।
.
তারপর অবন্তী আমার খোচাখোচা দাড়িতে হাত দিয়ে বলতে লাগলো।
_ আচ্ছা আমাদের কী বাচ্চাকাচ্চা হবে না.?
_ হ্যা, অনেক বাচ্চাকাচ্চা হবে। এইবার ঘুমাই.?
_ উফফফ, শুনেন না।
_ বলো।
_ আমাদের দুটো বাচ্চা হবে।
_ হ্যা, হবে।
_ একটা মেয়ে আরেকটা ছেলে।
_ সবার এরকম স্বপ্ন থাকে কিন্তু পরে দেখা যায় দুটোর জায়গায় চারটে হয়। এখন আমি ঘুমাই.?
_ না না না না।
_ এখন ঘুমাতে না পারলে কাল শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমের জন্য তাকাতেই পারবো না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমান। বলেই অবন্তী অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে পাগলীটা অভিমান করছে।
.
অভিমান ভাঙানোর জন্য অবন্তীকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরতে হাত দিলাম অমনি অবন্তী আমার হাত সরিয়ে ফেললো। অভিমানটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। কি করবো বুঝতেছি না। অবন্তীকে অনেকবার ডাকলাম কিন্তু ও শুনলো না। তাই অবন্তীর মত আমিও অভিমান করে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে রইলাম। তারপর কখন জানি ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো আমি আপনার কিছুই হতে দিবো না। চোখ খুলে দেখি অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে এই একটাই কথা বারবার বলতেছে আর কাঁদতেছে।
_ অবন্তী কী হয়েছে তোমার.? অবন্তীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারপাঁচবার ডাকার পর অবন্তী উত্তর দিলো।
_ আমি আপনাকে নিয়ে একটা ভয়ানক স্বপ্ন দেখছি।
_ স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি হয়না রে.. পাগলী।
_ যদি হয় তখন.?
_ হবে না। এইবার ঘুমাও।
_ আমি আপনাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।
_ হা হা হা, আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর আবার ঘুমোতে গেলাম।
.
সকালবেলা লেপের নিচ থেকে মুখ বের করতেই জানালা দিয়ে রোদের আলো এসে চোখ পরলো। অবন্তী সেটা দেখতে পেয়ে জানালার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। ভাবছিলাম অবন্তী আমার ঘুম ভাঙাবে এখন দেখছি ঘুমানোর সুযোগ করে দিলো। আবার কিছুক্ষণ ঘুমালাম। হঠাৎ টের পেলাম অবন্তী আমার কাছে আসতেছে। শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগলো। বিষয়টা বুঝতে পেরেও ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি। তারপর অবন্তী তার ভেজা চুল দিয়ে আমার নাকমুখে কাতুকুতু দিচ্ছে। যাতে আমি ঘুম থেকে উঠে পরি। অবন্তী বারবার আমার নাকমুখে চুল দিয়ে কাতুকুতু দিচ্ছে আমি অবশেষে অবন্তীর হাত টান দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলাম।
_ এই এই এখন এসব চলবে না। যান উঠেন আর ফ্রেশ হয়ে আসুন।
_ একটু থাকো না।
_ না এখন আমাকে সবার জন্য নাস্তা বাড়তে হবে।
_ ধুর… লাগবে না যাও।
_ বাচ্চাদের মত আচরণ করেন কেনো.? বুঝার চেষ্টা করুন। আজ আমাদের বাড়ি না গেলে আপনি আমাকে নিয়ে সারাদিন শুয়ে থাকলেও সমস্যা ছিলো না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি উঠতেছি।
_ শুধু উঠলেই হবে না। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে তারপর নাস্তার টেবিলে আসবেন।
_ এই শীতে আমি গোসল করতে পারবো না।
_ কিহ.!! আপনি গোসল না করে শ্বশুরবাড়ি যাবেন??
_ তা না।
_ তাহলে কী?
_ বলছিলাম কি গরম পানি দিয়ে গোসল করবো।
_ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি উঠেন আমি পানি গরম করে দিচ্ছি।
.
অবন্তী পানি গরম করতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর গরম পানি এনে আমাকে ডাকতে লাগলো।
গোসলখানায় গিয়ে ধাপধুপ কয়েক মগ পানি ঢেলে কোনোরকম শরীর ভিজালাম। দরজা খুলতেই দেখি অবন্তী তোয়ালে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
_ এত তাড়াতাড়ি গোসল শেষ.?
_ শীতের দিনের গোসল তো তাই।
_ আপনি আসলেই একটা খাচ্চর।
_ খাচ্চর বলো আর যাই বলো এইবার তোয়ালেটা আমাকে দাও।
তোয়ালে দিয়ে অবন্তী সোজা নিচে চলে গেলো।
আমি ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে খেতে বসলাম। সারা শরীরে কাপুনি হচ্ছে আর খাবার খাচ্ছি। খাওয়া শেষে দৌড়ে রুমে গিয়ে আবার লেপের নিচে গেলাম। অবন্তী রুমে এসে আমাকে লেপের নিচে দেখতে পেয়ে ভীষণ ক্ষেপে গেলো। আমি লেপের ছিদ্র জায়গা দিয়ে অবন্তীকে দেখছি। অবন্তী রাগে দাত কটমট করতেছে।
_ আচ্ছা আপনি কী উঠবেন নাকি পানি ঢেলে দিবো?
_ তুমি রেডি হউ আর সেই সময়টুকুতে আমি একটু গরম হই।
লেপের ছিদ্র জায়গা দিয়ে দেখলাম অবন্তী বাথরুমের দিকে যাচ্ছে। অমনি লেপের নিচ থেকে উঠে পরলাম। আজ লেপের ছিদ্র না থাকলে পানিতে ভিজতে হত। যাইহোক তারপর অবন্তী পানি এনে দেখলো আমি বিছানায় নেই।
চলবে…….
কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।