গ্রামের মেয়েটি❤️,পর্ব_৪
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
অবন্তী লেপ উঠিয়ে দেখলো আমি বিছানায় নেই। আর সেটা আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে দেখছি। হঠাৎ আলিশা রুমে আসলো।
_ ভাবী কি করো.? কি ব্যাপার ভাবী তোমার হাতে পানির বালতি কেনো.? (আলিশা)
_ তোমার অলস ভাইয়াকে গোসল করাবো। (অবন্তী)
_ ভাবী ভাইয়া তো একবার গোসল করছে। আবার গোসল করাবা কেন.?
_ তোমার ভাইয়ার মিরকি ব্যারাম হইছে তাই পানিতে চুবাবো।
_ মিরকি ব্যারাম কী?
_ আমাদের গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মিরকি ব্যারাম বলে।
_ ভাবী তোমার যা ইচ্ছা করো কিন্তু এখন আমাকে টাকা দাও।
আমি দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে পালাবো অমনি আলিশা আমাকে দেখে ফেললো।
_ ভাইয়া কই যাস.? আমারে টাকা দিয়ে যা। এর মাঝে অবন্তী বললোঃ-
_ এইযে জনাব আপনি চোরের মত কই পালাচ্ছেন.? হুম.? কাছে আসুন।
_ তোমার হাতে পানি থাকলে যাবো না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে পানি বাথরুমে ফেলে দিচ্ছি। বলেই অবন্তী পানির বালতি বাথরুমে নিয়ে গেলো। এদিকে আলিশা টাকার জন্য ঘ্যানঘ্যান করতেছে।
.
বিছানায় বসতেই অবন্তী এসে বললোঃ-
_ আবার বসলেন কেনো??
_ কি করবো তাহলে.?
_ কি করবো মানে..!! আজকে যে আমাদের বাড়ি যাবার কথা সেটা কি ভুলে গেছেন.?
_ অহ, সরি। দাড়াও আমি এক্ষুনি রেডি হচ্ছি।
_ ভাবী আমিও তোমাদের সাথে যাবো। আমার খুব ইচ্ছে গ্রাম দেখবো। গ্রামের বিষয়ে শুধু বইয়ে পড়েছি কোনোদিন দেখিনি। প্লিজ প্লিজ না কইরো না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে যাও রেডি হউ।
_ থ্যাংক ইউ আমার গুলুমুলু ভাবীতা।
_ কিন্তু আলিশা ম্যাডাম আমি আপনাকে আমাদের সাথে নিচ্ছি না।
_ ভাইয়া তুই কী সারাজীবন আমার শত্রু হয়ে থাকবি.? যেখানেই যেতে চাই তুই বাধা দিবিই কিন্তু কেনো.?
_ দেখ সামনে তোর এক্সাম তাই আমি তোকে যেতে দিবো না।
_ এক্সামের এখনো দুমাস বাকি আছে। দুএকদিনের জন্য কিচ্ছু হবে না
_ আচ্ছা ঠিক আছে যা কিন্তু এক্সাম খারাপ হলে খবর আছে।
_ কয়টার খবর.? কথাটা শুনে অবন্তী হাসতে লাগলো। ধমক দিয়ে বললামঃ-
_ চুপপপপ…..। এক ধমকে সব ঠান্ডা হয়ে গেলো।
.
তারপর সবাই রেডি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরলাম। অবন্তীকে জানালার পাশে দিয়ে মাঝখানে আমি বসলাম আর আমার পাশে আলিশা বসলো। ট্রেন তার নিজস্ব গতিতে চলতে লাগলো। এর আগে কখনো ট্রেন দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া হয়নি। আলিশা তার প্রাণের ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত আর অবন্তী বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত। আমাদের সামনে তিনজন লোক বসছে। ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে ওরাও কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে। হাতে রসগোল্লার হাড়ি। উফফ, দেখে জ্বিবে পানি এসে গেলো। গাড়িতে বা ট্রেনে উঠলে অনেকেরই খেতে ইচ্ছে করে না। কারন খেতে গেলেই বমি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমার ক্ষিদে থাকুক বা না থাকুক আমার খেতে ইচ্ছে করবেই। মনেমনে এসব কথা ভাবছিলাম হঠাৎ এক হকার বাদাম, বুট, চানাচুর এসব নিয়ে ডাকতে লাগলো।
অবন্তী আর আলিশার জন্য চানাচুর আর আমার জন্য বাদাম দিতে বললাম। খেতে খেতে অবন্তীকে বললামঃ-
_ কোথায় আসছি আমরা.?
_ এইতো আরেকটু সামনেই ভৈরব স্টেশন।
_ আলিশা মোবাইল রেখে বাইরে তাকিয়ে দেখ কত সুন্দর।
_ ভাইয়া আমি চ্যাট করতেছি বিরক্ত করিস না।
_ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি চ্যাট করেন।
একটু পর অবন্তী বললোঃ-
_ আমার ঘুম পাইছে আমি একটু ঘুমাই.?
_ আচ্ছা ঘুমাও।
আলিশা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুম দিলো। অবন্তীকে ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগছে। এখন আমার ইচ্ছামত দেখতে পারবো। অবন্তী তাকিয়ে থাকলে অবশ্য বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারতাম না। মেয়েদের চোখে চোখ রেখে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। কিন্তু এবার অবন্তীকে যতক্ষণ ইচ্ছা দেখতে পারবো। মনভরে দেখছি আর ভাবছি। যতই দেখছি ততই ভালো লাগতেছে।
.
দশ মিনিট পর ট্রেন হরেন দিতে লাগলো। তার মানে স্টেশনে এসে গেছি। ভাবনা থেকে ফিরে আসলাম। এদিকে আলিশা এখনো মোবাইল টিপেই যাচ্ছে। স্টেশনে এসে ট্রেন থামলো। আমার কাধ থেকে অবন্তীর মাথা সরিয়ে সিটের উপর রাখলাম। আর আলিশাকে বললাম অবন্তীকে খেয়াল রাখতে।
ট্রেন থেকে নেমে একটা দোকানে গেলাম। একটা পানির বোতল কিনে আবার ট্রেনে উঠলাম। গিয়ে দেখি অবন্তী আছে কিন্তু আলিশা নেই। সামনে সিটের লোকদের জিজ্ঞেস করলাম ওরা কিছুই বলতে পারে না। তারপর আলিশাকে ফোন দিলাম। রিং হলো কিন্তু ফোন ধরলো না। এই মুহূর্তে অবন্তীকে রেখে আলিশাকে কোথায় খুজবো? এই সময়টুকুর মধ্যে আলিশা উধাও হয়ে যাবে ভাবতেই পারছি না। পানির বোতলটা সিটের উপর রেখে অবন্তীকে আস্তে করে ডাক দিলাম। চার পাঁচবার ডাকার পর অবন্তী সজাগ হলো।
_ এই শুনছো আলিশাকে পাচ্ছি না। অবন্তী আশ্চর্য হয়ে বললোঃ-
_ পাচ্ছেন না মানে.? আলিশা কই গেছে.?
_ জানি না। আমি আলিশাকে আর তোমাকে রেখে পানি আনতে গেছিলাম এসে দেখি আলিশা নেই।
তারপর অবন্তীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।