গ্রামের মেয়েটি❤️,পর্ব_৬
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
আলিশার চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে দৌড়ে রাস্তায় গেলাম। গিয়ে দেখি আলিশা রাস্তার মাঝখানে পরে আছে আর তার উপর সাইকেল। আমি আগেই বলছিলাম এই মেয়েটা একটা অঘটন ঘটাবেই। কাছে গিয়ে বললামঃ-
_ দেখ বড়দের কথা না শুনলে কেমন হয়। বড়রা যা বলে ছোটদের তা শুনতে হয়। কথাগুলো শুনেই আলিশা হো হো হো করে পাগলের মত হাসতে লাগলো। বুঝতেছি না ও হাসতেছে কেন। ব্যথা পাইলে কেউ হাসে নাকি। আলিশার উপর থেকে সাইকেল উঠাতেই আলিশাও উঠে পরলো। আর বললোঃ-
_ ভাইয়া আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি জেনেশুনে সাইকেল নিচে পরছি।
_ কিন্তু কেনো.?
_ দেখলাম সত্যি সত্যি আমার এমন হলে তুই কি করিস।
_ আমি আগেই বলেছি সাইকেল চালাতে গিয়ে তোর যদি হাতপা ভেঙে যায় তাহলে হাতপা ভাঙা ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো।
_ আমারো কোনো আপত্তি নাই। আমারো হাত পা ভাঙা উনারো হাত পা ভাঙা। ইশশ কি মিল।
_ হয়েছে আর সাইকেল চালাতে হবে না। এইবার আমার সাথে আয়। বলেই এক হাতে সাইকেল আরেক হাতে আলিশাকে ধরে বাড়ি আসলাম।
.
বিকেলবেলা শ্বশুর আব্বাজান আসলো। অবন্তী রুমে এসে বললোঃ-
_ শুয়ে না থেকে চলেন বিল থেকে ঘুরে আসি।
_ আচ্ছা চলো। কিন্তু তোমার বোন অহনাকে দেখছি না যে.?
_ ও বেড়াতে গেছে।
_ আচ্ছা ঠিক আছে চলো যাই। এর মাঝে আলিশা শুনতে পেয়ে বললোঃ-
_ আমিও যাবো।
_ তোর যেতে হবে না। তুই সাইকেল চালানো শিখ।
_ না আমি বিলে যাবো, নৌকায় উঠবো তারপর পদ্মফুল তুলবো। আমার খুব ইচ্ছা না করিস না ভাইয়া। এর মাঝে অবন্তী বললোঃ-
_ আচ্ছা ঠিক আছে আসো।
অবন্তীর কারণেই আলিশা দিনদিন লাই পেয়ে মাথায় উঠছে।
যাহোক তারপর অবন্তী আর আলিশাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির পিছন দিক দিয়ে বের হলাম। হাঁটতে হাটতে রসুলপুর নামের একটা জায়গায় গিয়ে একটা নৌকায় উঠলাম। রসুলপুর আসতে না আসতেই আলিশা লাফাতে শুরু করলো পদ্মফুল তুলবে। বিলের মাঝখানে গিয়ে আলিশা অনেকগুলো পদ্মফুল তুললো। ও যদি পারতো সারা বিলের পদ্মফুল তুলে নিতো।
আলিশা মাঝখানে বসে আছে আমি আর অবন্তী নৌকার মাথায় বসে আছি।
জেলেরা মাছ ধরছে। কেউ বরশি দিয়ে মাছ ধরছে কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এটাই তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান হাতিয়ার। মাছ পেলে মুখ হাসি ফুটে আর না পেলে হাসি ফুটে না। অনেকসময় না খেয়ে থাকতে হয়। এসব ভাবছিলাম।
এদিকে সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম দিক দিয়ে অস্ত যাচ্ছে আর সন্ধ্যে হয়ে আসছে। তবুও বাড়ি ফেরার নাম নেই। আমারো ইচ্ছে করছে না বাড়ি ফিরে যেতে।
.
সন্ধ্যেবেলা হালকা বাতাস, শীত শীত লাগতেছে। শ্বশুরবাড়ি ফিরতেছি অবন্তী আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে আলিশা আমাদের ঠিক সামনে। কিছুটা ভয়ভয় করছে। অবন্তী বলেছিলো এ জায়গাটা ভালো না। এটা মনে হলেই ঘা ছমছম করে উঠে। আরেকটু সামনে যেতেই একটা লাইটের আলো দেখতে পেলাম। কিছুটা শান্তি লাগলো। লোকটা কাছে আসতেই দেখতে পেলাম শ্বশুর আব্বাজান। শ্বশুর আব্বাজান আমাদের বকাঝকা করতে লাগলো। সবাই মাথা নিচু করে বাড়ি চলে গেলাম।
পরেরদিন সকালে অবন্তীর প্রচন্ড জ্বর। বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। কাল রাতে ভয় পেয়ে এখন জ্বর এসে গেছে।
অবন্তীর জ্বর দেখে আমার কোনোকিছুই ভালো লাগতেছে না। এমনকি সকালে নাস্তা না খেয়েই অবন্তীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। আগে অবন্তী সুস্থ হোক তারপর খাবো।
ডাক্তারের কাছ থেকে এসে অবন্তীর জোরাজুরিতে হাল্কা নাস্তা করলাম তাও দুপুর বারোটা নাগাদ।
ভাবছিলাম আজকে বিকেলবেলা বাড়ি ফিরে যাবো কিন্তু অবন্তীর এই অবস্থায় যাওয়া ঠিক হবে না।
অবন্তীকে সময় দিতে গিয়ে আলিশার খোজ খবর ঠিকমত রাখতেই পারছি না। সেই সকালবেলা আলিশাকে একবার দেখছিলাম তারপর থেকে আলিশাকে আর কোথাও দেখিনি। বোনটাকে নিয়ে বড্ড টেনশন হচ্ছে।
.
অবন্তীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার উপর কম্বল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসলাম। এইবার আলিশাকে খুজতে বের হলাম। আলিশা মেয়ে হয়ে ছেলেদের মত সারা গ্রাম টইটই করে ঘুরে বেড়ায়। খুঁজতে খুঁজতে আরেকবার দেখতে পেলাম আলিশা ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে নদীতে গোসল করতেছে। মেজাজ ঠান্ডা রেখে আলিশাকে নদী থেকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে আসলাম। এলাকার মানুষ নানান ধরনের কথাবার্তা বলতেছে। এই মেয়েকে নিয়ে আর থাকা যাবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
বিকেলবেলা অবন্তীর বোন মানে আমার একমাত্র শালি অহনা বেড়ানো শেষে বাড়ি ফিরলো।
শালিটা যদি বাড়ি থাকতো তাহলে আলিশাকে নিয়ে আমার কোনো টেনশন হত না।
এমনিতে কাল সকালে আমরা বাড়ি ফিরে যাবো। শালি যখনই শুনতে পায় আমরা চলে যাবো তখনি বলে।
_ দুলাভাই আর কয়টাদিন থেকে যান। এখনি যাইয়েন না।
_ আরেকবার আসলে অনেকদিন থাকবো।
শালিকা অনয় বিনয় করলেও থাকা সম্ভব না। কারণ আলিশা গ্রামে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণই বিপদে পরার সম্ভাবনা আছে।
.
রাতে অবন্তীকে বিছানায় থাকা অবস্থায় নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম তারপর ওষুধপাতি খাইয়ে ঘুমোতে বললাম। অবন্তীর চোখে জল দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কিছুই বললো না। যাহোক এক রুমে আমি অবন্তী শুয়ে আছি আরেক রুকে আলিশা আর অহনা শুয়ে আছে। আর আরেক রুমে শাশুড়ি আর শ্বশুর।
হঠাৎ রাতে অবন্তী আচমকা বলতে লাগলো
_ আপনি অনেক ভালো। এমন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আপনার এমন সেবাযত্ন দেখে ঐসময় চোখে জল এসে গিয়েছিলো। আপনি এত ভালো কেনো.? অবন্তীর মুখ থেকে বোকামো প্রশ্ন শুনে হাসি পেলো।
_ অবন্তী আমি ভালো কিনা জানি না তবে ভালোকিছু করার চেষ্টা করি।
_ সেটা আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।
_ জ্বী মহারাণী।
ছোট্ট একটা কম্বের নিচে দুজন শুয়ে আছি। ঠিকমত হয়না তবুও অবন্তীকে বুঝতে দেইনি। আমার নাহয় শীত করুক কিন্তু ওর যেনো শীত না করে। হঠাৎ করে অবন্তী আমাকে বললোঃ-
_ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন শীত করতেছে।
_ এক কাজ করো পুরো কম্বলটাই তুমি নিয়ে নাও।
_ না কম্বল দিয়ে হবে না জড়িয়ে ধরতে হবে।
_ এক কাজ করো আমার জ্যাকেট গায়ে দাও তাহলে আর শীত করবে না।
_ না এসবে শীত কমবে না।
_ কেন জানি অবন্তীকে জড়িয়ে ধরতে আনইজি ফিল করতেছি। হাত পা থরথর করে কাপছে।
আরেকবার অবন্তী আমাকে ধমক দিয়ে বললো
_ জড়িয়ে ধরেন।
আমি সাথেসাথেই অবন্তীকে শক্ত করে আমার বুকে জড়িয়ে ধরি। কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। জড়িয়ে ধরতেই মনে হচ্ছে অবন্তীর জ্বর চলে গেছে।
চলবে…..