গ্রামের মেয়েটি ❤️,পর্ব_৫
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
অবন্তীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম। অবন্তী আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। ঘুমঘুম ভাব কেটে যাওয়ার জন্য অবন্তী বোতলের পানি দিয়ে চোখেমুখে দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিবে। এদিকে আলিশাকেও কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। সব যাত্রী ট্রেনে উঠে গেলো আমি আর অবন্তী আলিশাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ আলিশা ভাইয়া বলে ডাক দিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি আলিশা ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে আমাদেরকে ডাকছে। এই মুহূর্তে ট্রেনও ছেড়ে দিয়েছে। ট্রেনের গতি কম ছিলো বলে উঠে পরলাম। ট্রেনে উঠেই ইচ্ছে করছে আলিশাকে দুচারটে থাপ্পড় মারি। এতক্ষণ আমাদের দুজনকে যে হয়রানি করছে। যাইহোক তারপর আমাদের যারযার সিটে গিয়ে বসে পরলাম। আলিশাকে রাগীস্বরে জিজ্ঞেস করলাম।
.
_ এতক্ষণ কই ছিলি?
_ ভাইয়া আমি আগেই সরি বলি কারণ তোদেরকে না বলে আমার যাওয়াটা একদম ঠিক হয়নি। আমি ভাবীকে বলে যেতাম কিন্তু ভাবী ঘুমাচ্ছিলো তাই বলতে পারিনি আর তুই বাইরে গিয়েছিলি। ভাবলাম তোর আসতে দেরি হবে তাই আমি দেখা করতে চলে গিয়েছি।
_ সবই বুঝলাম কিন্তু কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি.?
_ একটা জাস্টফ্রেন্ডের সাথে।
_ মিথ্যে বলবি না।
_ কসম ভাইয়া একদম সত্যি।
_ আচ্ছা পুরো বাংলাদেশে কী তোর ফ্রেন্ড আছে।
_ হ্যা, অবশ্যই আছে। তোর বোন বলে কথা।
_ হইছে চোরের মায়ের বড় গলা। একে তো না বলে দেখা করতে গেলি তার উপর উলটাপালটা বকবক।
_ ভাবী ভাইয়ার বক্তব্য শেষ এইবার তোমার পালা। তুমি কিছু বলো।
_ আমার আর কিচ্ছু বলার নাই।
_ ভাবী তোমার শ্বশুরবাড়ি আর কতদূর.?
_ কিহ.!!
_ অহ, সরি তোমাদের বাড়ি কতদূর?
_ আরো দেরি আছে। ঘন্টাখানেক লাগবে।
_ আচ্ছা ভাবী তোমাদের এলাকায় হ্যান্ডসাম ছেলেপেলে আছে নাকি?
_ হ্যাঁ, অনেক আছে। কেনো প্রেম করবা নাকি.?
_ আরে নাহ। এসব প্রেম টেম আমার দ্বারা হবে না।
_ তোমার ফেইসবুক থাকতে প্রেম করার কি দরকার।
_ ভাবী তুমিও ভাইয়ার মত আমার ফেইবুকের পিছু লাগছো। উফফফ, বুচ্ছি তোমরা কেউ আমার পক্ষে থাকবা না।
.
দুজন কি সুন্দর করে কথাবার্তা বলতেছে আমি নিরব দর্শক হয়ে দুজনের কথা শুনে যাচ্ছি। আলিশা ভুলে গেছে যে তার ভাই সাথে আছে। নয়তো আমার সামনে কেমনে জিজ্ঞেস করলো গ্রামে হ্যান্ডসাম ছেলেপেলে আছে কিনা। নির্লজ্জ মেয়ে একটা। এই কারণেই আলিশাকে সাথে আনতে বারণ করছিলাম। শ্বশুরবাড়িতে গেলে কি হয় আল্লাহ জানে। নিশ্চয় কোনো না কোনো অঘটন ঘটাবেই।
কিছুক্ষণ সবাই নিস্তব্ধ হয়ে একেকজন একেক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ঘন্টাখানেক পর ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে গিয়ে থামলো। সবাই যারযার মত নেমে গেলো। আমরাও নেমে গেলাম। স্টেশন থেকে একটা অটো ভাড়া করে শ্বশুরবাড়ির পাশের গ্রাম অব্দি গেলাম। শ্বশুরবাড়ির এলাকার রাস্তাটা কাচা। একটা ভ্যান ভাড়া করলাম। আলিশা ভ্যান দেখেই তাড়াহুড়ো করে ভ্যানে উঠে পরলো। তারপর ইচ্ছেমত সেলফি নিতে লাগলো। মাঝেমধ্যে খুবই বিরক্ত লাগে কিন্তু। একটা জিনিস লক্ষ করলাম। আলিশা গ্রামের মাটিতে পা রাখতেই মোবাইলের নেশাটা একটু কমে গেছে। এদিকওদিক তাকিয়ে গ্রামের প্রকৃতিকে দেখছে।
.
গ্রামের মানুষ শহরে গেলে যেমন শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে তেমনি শহরের মানুষ গ্রামে আসলেও দেখতে ইচ্ছে করে। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। ছোটছোট রাস্তা। তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরু আঁকাবাঁকা একটি নদী। নদীর নাম তিতাস নদী। নদীতে পানি নেই বললেই চলে। অবন্তীর থেকে শুনছিলাম শীতকালে এ নদীতে তেমন পানি থাকে না। আলিশা গ্রামের দৃশ্য যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে।
হঠাৎ আলিশা বলে উঠলো।
_ এই মামা ভ্যান থামাও।
ভ্যান থামতেই আলিশা নেমে নদীর দিকে যেতে লাগলো।
আলিশার পাগলামি আবার শুরু হয়ে গেলো। আগেই বলছিলাম এই মেয়েটাকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবো না।
আলিশার পিছু দৌড়তে দৌড়তে কাহিল হয়ে গেলাম।
অবশেষে আলিশা নদীর পাড় দাঁড়িয়ে কয়েকটা সেলফি নিলো। তারপর আবার দৌড়ে এসে ভ্যানে উঠলো।
.
শ্বশুরবাড়ির কাছে এসে ভ্যান থামলো। আলিশা বললোঃ-
_ মামা ভ্যান থামালেন কেনো.? এর মাঝে অবন্তী বললোঃ-
_ আমরা এসে গেছি।
ভ্যানওয়ালা কয়েকটা বেল বাজাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে শাশুড়ি আম্মাজান আসলো। সাথে একমাত্র শালিটাও আসলো।
শালি আমার কাছে এসেই আমার হাতে ধরে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো। অবন্তী ব্যাগ নিয়ে ঘরে গেলো। বাড়ির উঠোনের এক কোণে শ্বশুর আব্বাজানের সাইকেল দেখতে পেয়ে আলিশা বায়না ধরলো সাইকেল চালাবে।
সব দোষ অবন্তীর। অবন্তীর লাই পেয়ে আলিশা মাথায় চড়ে বসছে। শ্বশুরবাড়ির মানুষজন কি না কি মনে করবে কে জানে।
আম্মাজান আলিশাকে বুঝিয়ে ঘরে নিলো। এদিকে শালি আমার হাত ধরেই আছে। অবন্তীর চেয়ে শালিটা বেশি কিউট। একটা মাত্র শালি আমার।
যাইহোক তারপর রুমে গিয়ে কাপড়চোপড় চেঞ্জ করলাম।বিছানায় শুইতেই আলিশা পাগলীকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। এই মেয়েটা কখন কি করে বসে বলা যায় না।
.
রুম থেকে বের হয়ে আলিশাকে খুজতে লাগলাম। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারলাম না। রাস্তায় এসে দেখি সাইকেল চালানো শিখতেছে।
আলিশার পাগলামো আর ভালো লাগছে না।
সাইকেল থেকে পরে পা না ভাঙলে ঠিক হবে না।
দৌড়ে গিয়ে সাইকেলের পিছনে ধরলাম।
_ আলিশা তুই কী আমার কথা শুনবি না.?
_ ভাইয়া প্লিজ আমাকে সাইকেল চালানো শিখতে দে। এমন সুযোগ শহরে পাবো না।
_ সাইকেল শিখতে গিয়ে যদি পা ভেঙে যায় তখন তোকে কে বিয়ে করবে.?
_ সমস্যা নাই একটা পা ভাঙা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবা। বলেই সাইকেল চালাতে লাগলো।
কথাটা শুনে সত্যিই হাসি পেলো। হাসতে হাসতে রাস্তা থেকে বাড়ির ভিতর যেতেই শুনলাম আলিশার চিৎকার।
চলবে…..