ঘুণপোকা,পর্ব_১১

0
730

ঘুণপোকা,পর্ব_১১
মিম

– ডায়েরিটা কি সেদিন পেয়েছিলেন?
– হুম। মায়ের সাথে ঝগড়া করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকটা সময়৷ মনে হচ্ছিলো মাথা থেকে বুঝি গরম ধোঁয়া উড়ছে। হঠাৎ মনে পড়লো ডায়েরির কথা। কি এমন লেখা আছে ডায়েরিতে যে এটা খুঁজতে রুপন্তি বাসায় চলে এলো! তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম৷ ওয়্যারড্রব, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল সব খুঁজলাম। কোথাও নেই৷ এরপর খুঁজতে লাগলাম ফার্ণিচারের চিপায়। খুব দরকারী কাগজগুলো এসব জায়গাগুলোতেই খুঁজে পাওয়া যায়। আমার ধারণা মিথ্যা হয়নি। ডায়েরিটা খুঁজে পেলাম ওয়্যারড্রবের পিছনের ছোট্ট ফাঁকা জায়গা থেকে। দরজা আটকে দ্রুত ডায়েরিটা নিয়ে বসে পড়লাম। রুপু প্রতিদিন ডায়েরি লিখতো না। শুধু মাত্র বিশেষ কিছু স্মৃতি, কিছু গোপন কথা যেগুলো কেউ জানে না সে কথাগুলোই লেখা। ডায়েরির প্রথম পাতা শুরু হয়েছে নাদিমকে নিয়ে। ওদের প্রেম কিভাবে হয়েছিলো সেসব আরকি। সেদিনই আমি জানতে পারি ওর প্রেমিকের নাম আর পরিচয়৷
– কিভাবে পরিচয় হয় দুজনের? একই এলাকার ছিলো? নাকি ক্লাসমেট?
– নাদিম ওর ছোট ফুফুর ছেলে। একই বাড়িতে থাকতো।
– ওহ, কাজিন!
– হ্যাঁ। একই বাড়ির বাসিন্দা। রুপু তখন ক্লাস এইটের স্টুডেন্ট আর নাদিম এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। নাদিমের আরো আগে থেকেই রুপুকে পছন্দ ছিলো৷ সরাসরি কখনো বলেনি কিন্তু বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে। রুপু তখন ছোট৷ অত ইশারা ইঙ্গিতের কথা বুঝতো না৷ ও ক্লাস এইটে ভর্তি হওয়ার পর নাদিম সরাসরি ওকে বললো। বুঝোই তো উঠতি বয়স, সবেমাত্র মনের কোণে আবেগ অনুভূতি জন্মাচ্ছে। ছেলেটা এসে ভালোবাসি বললো আর আমার ওয়াইফও খুশিতে বাকবাকুম করতে করতে রাজি হয়ে গেলো। কেউ জানতো না ওদের দুজনের ব্যাপারে। বাসার লোকজন বিশ্বাস করে রুপন্তির সাথে স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে নাদিমকে পাঠাতো। সেই সুযোগে রুপু স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতো নাদিমের সাথে ঘুরতে৷ দেড় বছর দুজন খুব প্রেম করেছে। কত কিছু লিখা আছে ডায়েরিতে! কোথায় কোথায় ঘুরেছে, কবে প্রথম হাত ধরেছে, কবে প্রথম ফুল বিনিময় হয়েছে, নাদিমকে নিয়ে রুপুর অনুভূতিগুলো বিস্তারিত লিখা আছে ডায়েরিতে। আমি এত বিস্তারিত ঘটনা বলতে পারবো না৷ অন্য প্রসঙ্গে আসি৷

ভ্রু কুঁচকে সৈকতের দিকে ঝুঁকে বসলো ইমরান। অভিযোগের স্বরে বললো,

– কেন বলবেন না? ডায়েরির লাইনগুলো জানার জন্য আমি ভীষণ এক্সাইটেড। পুরো গল্পের সব আকর্ষণ আমার আটকে আছে ডায়েরির দিকে৷ অথচ আপনি বলছেন শোনাবেন না! পুরো রাত পড়ে আছে। সবটুকু শোনাতে হবে৷
– রুপু নাদিমকে নিয়ে কি ফিল করতো কিংবা ওদের প্রেমের গল্প কেমন ছিলো আমার সেসব নিয়ে আলোচনা করতে ভালো লাগে না৷ আমি সহজে গল্পের ঐ অংশটুকু মাথায় আনি না। শুধু এতটুকু বলি রুপন্তি ছেলেটাকে ভীষণ ভালোবাসতো৷ বিশ্বাসও করতো খুব৷
– আপনি ঐ অংশটুকু বলতে কেন চাচ্ছেন না?
– বললাম তো আমার ভালো লাগে না৷
– কেন লাগে না?
– রুপন্তির প্রথম ভালোবাসা হচ্ছে নাদিম যাকে ও অন্ধের মত ভালোবেসেছে৷ আমি ছাড়া অন্য কেউ রুপন্তির ভালোবাসা পেয়েছে এটা আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়। হতে পারে নাদিম রুপন্তির জীবনে একটা বাজে অধ্যায় যেটা অতীত হয়ে গেছে বহুবছর আগে৷ তবুও আমি মেনে নিতে পারি না।

মুখ টিপে হাসলো ইমরান। বললো,

– আচ্ছা বলতে হবে না৷ আপনি যতটুকু বলবেন অতটুকুই শুনবো।
– হাসি পাচ্ছে তাই না?
– উহুম।
– মেয়েটাকে ভালোবাসি তো। ওকে অন্য কারো পাশে রেখে ভাবতে পারি না৷ খুব হিংসে হয়।
– হুম, হুম। বুঝতে পেরেছি।
– রুপুর হুটহাট ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নেয়ার রোগ আছে। তেমনই এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত হলো নাদিমের সাথে পালানো। রুপু তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। সামার ভ্যাকেশন চলছে। মামার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখানে রাত জেগে কাজিনদের সঙ্গে মুভি দেখলো। মুভিতে নায়ক নায়িকা পালিয়ে বিয়ে করে। ব্যস, ঐ মুভি দেখে রুপুর মাথায় ভূত চাপলো সে পালিয়ে বিয়ে করবে এবং দুদিনের মধ্যেই করবে। সেদিন মুভি শেষ করে রাত তিনটায় নাদিমকে ফোন করে জানালো ও নাদিমের সাথে পালাবে। ওরা বিয়ে করবে, দূরে কোথাও চলে যাবে। সেখানে ছোট্ট সংসার হবে। ভালোবাসায় মাখামাখি থাকবে ওদের সংসার। দিনভর সময়ে অসময়ে চুমু আদান-প্রদান হবে৷ আরো কত কি যে হাবিজাবি লিখা ছিলো! জানো ইমরান, এই লাইনগুলো পড়ার পর আমার ইচ্ছে হয়েছিলো রুপুর কানের নিচে থাপ্পড় দিয়ে আসি৷ এইটুকু একটা মেয়ে এত পাকা পাকা কথা বলবে কেন? কিসের সংসার ওর? সংসারের বয়স হয়েছে তার?
– ভাবী কম বয়সে ঐসব কথা বলেছে সমস্যা সেটা না৷ আপনার থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হয়েছে অন্য কারণে। আর সেটা হচ্ছে ভাবী অন্য কাউকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে সেটা আপনার সহ্য হচ্ছিলো না।
– হয়তো।
– নাদিম রাজি হয়েছিলো পালানোর জন্য?
– হুম। ঐদিন রাতেই দুজনে প্ল্যান করে ফেললো দুদিন পরই পালাবে। পরদিন সকালে রুপু বাসায় ফিরে এলো। ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে সব রেডি৷ রুপু পরদিন বাসা থেকে পালাচ্ছে এই কথা জানতো শুধু মাত্র রাহাত। একদম প্রথম থেকে নাদিম আর রুপুর ব্যাপারটা রাহাত জানতো। এই প্রেমে রাহাতের যথেষ্ট অবদান আছে। বহুবার পিয়নের দায়িত্বও পালন করেছে ছেলেটা৷ পরদিন দুপুরে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিলো তখন বাসা থেকে রুপু বেরিয়ে গেলো। রাতের ট্রেনে ওরা সিলেট যাবে। বাড়ির বাহিরে এলাকার মোড় থেকে দুজনে এক রিকশায় করে স্টেশন পৌঁছালো৷ নাদিম খুব বেশি নার্ভাস ছিলো সেদিন। আর রুপু তো রুপুই। সে তখন তার নতুন সংসারের স্বপ্নে বিভোর। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নাদিম বললো সে পানি কিনতে যাচ্ছে। এই কথা বলে সেই যে গেলো আর ফিরলো না৷ পুরো স্টেশন খুঁজেছে নাদিমকে। কোথাও খুঁজে পায়নি। রুপু নাদিমকে কল করতেই থাকলো, ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো না৷ একপর্যায়ে মোবাইলের সুইচটাই নাদিম অফ করে দিলো৷ ততক্ষণে ঘড়িতে রাত সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছে৷ বাসা থেকে রাহাত বিকেলেই মেসেজ দিয়েছে রুপুকে খোঁজা হচ্ছে। স্টেশনে বসেই কাঁদছিলো রুপু। সেদিন বৃষ্টি নামের এক মেয়ে সিলেটের ঐ ট্রেনে যাওয়ার কথা ছিলো। মেয়েটা পড়াশোনার জন্য ঢাকায় থাকতো। ওর বাসা ছিলো সিলেটে। ওকে কাঁদতে দেখে ওর পাশে এসে বসলো। জিজ্ঞেস করলো কাঁদছে কেন? প্রথমে রুপু বলতে চায়নি৷ রাত ওদিকে বেড়েই চলছে৷ এমন মুহূর্তে বাসায় ফিরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না আবার স্টেশনে অপেক্ষা করার মত অবস্থাও নেই। উপায় না পেয়ে মেয়েটার সাথে রুপু সব শেয়ার করলো। সব শুনে মেয়েটা রয়ে গেলো রুপুর সাথে। ঐটুকু একটা মেয়েকে স্টেশনে একা রেখে যাওয়ার সাহস বৃষ্টির হয়নি। বৃষ্টি ওকে বারবার বুঝাচ্ছিলো নাদিম চলে গেছে আর ফিরবে না। রুপু বুঝতে চাচ্ছিলো না৷ রুপুর খুব বিশ্বাস ছিলো নাদিমের প্রতি। নাদিম ওর সাথে এমন কিছু করবে এটা কোনোভাবেই সে বিশ্বাস করতে নারাজ। রাত বেড়ে তখন সাড়ে এগারোটা। স্টেশন ফাঁকা হতে শুরু করেছে৷ বৃষ্টি রুপুকে নিয়ে গেলো বৃষ্টির খালার বাসায়৷ রুপু আসতেই চাচ্ছিলো না৷ ওর ধারনা ছিলো নাদিম ফিরে আসবে৷ বৃষ্টি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রুপুকে স্টেশন থেকে নিয়ে এসেছে। রাত দুইটায় নাদিম রুপুকে কল করলো। বললো, তোমার সাথে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না৷ আমি এখনও বেকার। তোমাকে কি খাওয়াবো? তুমি বাসায় ফিরে এসো।
– এটা কেমন কথা হলো? বাসা থেকে পালানোর সময় ওর এই কথা খেয়াল ছিলো না?
– প্রশ্ন তো সেখানেই। ছোট্ট একটা মেয়েকে এই ছেলে স্টেশনে কিভাবে ফেলে চলে এলো? বৃষ্টি মেয়েটা সেদিন ওর পাশে না থাকলে অনেককিছু হতে পারতো। দুদিন বৃষ্টি তার খালার বাসায়ই রুপুকে রেখে দিলো।
– নাদিম এই দুইদিনে খোঁজ নেয়নি ভাবীর?
– না।
– কোথায় আছে সেটাও জানতে চায়নি?
– না।
– স্টেশনে কত আজেবাজে লোক থাকে। মেয়েটা কার না কার খপ্পড়ে পড়েছে! বেঁচে আছে না মারা গেছে সেসব কিছুই ভাবলো না নাদিম!
– নাহ্, ভাবেনি। দুইদিন পর বৃষ্টি নিজে এসে রুপুকে ওর বাসায় রেখে গিয়েছে।
– বাসার লোকজনের রিএ্যাকশন কেমন ছিলো?
– ওর বাবার বিপি হাই হয়ে গিয়েছিল। রুপুর ভাই ওকে খুব বেশিই ভালোবাসে। বোনের কাছ থেকে এমন ধাক্কা সে আশা করেনি। রাগ করে সে বোনের সাথে কথা বলেনি দুইমাস৷ ওর ভাবী ওকে ফেরত পেয়ে ভীষণ খুশি ছিলো। ছয়মাস বয়স থেকে নিজের মেয়ের মত আগলে রেখেছে রুপুকে। রুপু সহি সালামতে আছে এটাই তার কাছে বিশাল ব্যাপার৷ ওর বাসার লোক যতটা না ঝামেলা করছিলো তারচেয়ে বেশি ঝামেলা করেছে রুপুর আত্মীয়রা। বিশেষ করে রুপুর ফুফু।
– নাদিমের মায়ের কথা বলছেন?
– হ্যাঁ।
– বাসায় কি জানাজানি হয়েছিলো নাদিমের সাথে ভাবী পালিয়েছিলো?
– না। রুপু মুখ খুলেনি। ওর ফুফু আর খালা খুব পীড়াপীড়ি করেছে জানার জন্য। ও কাউকেই কিছু বলেনি৷ ওর ভাবী খুব রিকোয়েস্ট করেছে। তবুও মুখ খুলেনি।
– কেন?
– ও চায়নি ওর ফুফুর সাথে বাবার সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরুক। রুপু ফিরে আসার পর শুরু হলো মানসিক অত্যাচার। পুরো এলাকায় জানাজানি হলো৷ আত্মীয়দের মাঝে জানাজানি হলো। এক কথায় বলতে পারো সেইসময় আলোচনার মসলাদার বিষয়বস্তু হলো রুপন্তি৷ এলাকার লোকজন, আত্মীয়রা সবাই রুপুর বাবা ভাইকে রাস্তায় দেখা হলে কিংবা ফোন করে রুপুর সম্পর্কে জানতে চাইতো। আমার শ্বশুর এই চাপগুলো নিতে পারেনি৷ সপ্তাহখানেক বাদে উনি স্ট্রোক করলো৷ প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো বহুদিন। রুপুকে অনেক আজেবাজে কথা শুনতে হয়েছে৷ ও বাসা থেকে বের হতে পারতো না৷ লোকজন পাশ থেকে ওকে নিয়ে হাসি তামশা করতো৷ এলাকায় ওর যেসব বান্ধবীরা ছিলো ওরা রুপুর সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিলো। ওদের পরিবারের নিষেধ ছিলো রুপুর সাথে মেলামেশা করতে। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারতো না। সবাই রুপুকে নিয়ে সমালোচনার আসর জমাতো। কেউ কেউ সামনাসামনি বাজে কথা বলে চলে যেত। বিশেষ করে রুপুর ফুফু ওর জীবনটা নরক বানিয়ে ফেলেছিলো। আমার শ্বশুর স্ট্রোক করার পর থেকে এই মহিলা উঠতে বসতে বলতো, রুপু একটা অলক্ষ্মী। মা খেয়ে হজম করে এখন বাপকে খাওয়ার পায়তারা করছে।
– ছিঃ!
– এই কথাগুলো ওকে আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত শুনতে হয়েছে৷ মহিলাটা ওকে শান্তি দেয়নি৷ প্রচুর জ্বালিয়েছে। আত্মীয়রা সবাই যেখানে একসাথে হয়ে আনন্দ করতো রুপু কখনো সেখানে যেতে পারতো না। ঘরের দরজা আটকে বসে থাকতো৷ দরজার ওপাশ থেকে হাসি আনন্দের শব্দ শুনতো আর কাঁদতো। ঐ ঘটনার পর সবাই ওকে পর করে দিলো৷
– কি আশ্চর্য! ভাবীর পরিবারের কেউ প্রতিবাদ করেনি?
– করেছে। লাভ হয়নি৷ মানুষের মুখ কি বন্ধ রাখা যায়?
– ছোট বয়সে একটা ভুল নাহয় করেছেই। তাই বলে এমন আচরন করবে?
– বাকি আত্মীয় স্বজনরা ভুলে গেলেও রুপুর ফুফু তাদের স্মরণ করাতো৷ উনার বাসায় কেউ গেলেই রুপুর নামে বদনাম শুরু হয়ে যেত।
– ভাবীর উচিত ছিলো উনার ছেলের কথা বলে দেয়া৷
– রুপুকে আমার কখনো কখনো সন্ন্যাসী পর্যায়ের মানুষ মনে হয়। কোনো রাগ নেই, প্রতিবাদ করার ইচ্ছে নেই৷
– আমি উনার জায়গায় থাকলে শুরুতেই সব বলে দিতাম। বাবা ফুফুর সম্পর্ক খারাপ হলে হোক। দরকার নেই এমন বাজে ফুফুর৷
– প্রতিবছর দুই ঈদে ওদের বাসায় গেট টুগেদার হতো৷ সবাই আসতো। বছরে আত্মীয়দের মাঝে দুই একটা বিয়ে হতোই। সবাই সেই বিয়ে এটেন্ড করতো। খুব আনন্দ ফূর্তি চলতো৷ রুপুর খুব ইচ্ছে হতো ওদের সাথে আগের মত মিশতে, আনন্দ করতে। আত্মীয়রা ওকে তেমন একটা কাছে টানতো না৷ এমন একটা ব্যবহার করতো যেন সে উচ্ছিষ্ট পর্যায়ের কিছু একটা! আমার পরিবারকে ও এতখানি আগলে রাখতো কেন জানো?
– কেন?
– আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর ও নতুন একটা পরিবার পেয়েছিলো যারা ওর সব দোষ জেনে আপন করে নিয়েছে। যা কিছু ওর পরিবারের কাছ থেকে বঞ্চিত হয়েছে রুপু চাইতো সেসব অভাব নতুন পরিবারের কাছ থেকে মিটিয়ে নিবে৷ রুপু নতুন করে আলাদা একটা জগত পেয়েছিলো যেখানে একটু নিঃশ্বাস নেয়া যাবে। আবারও প্রাণখুলে বাঁচা যাবে৷
– আর সেখানে বাঁধ সাধলেন আপনি। সরি টু সে, আপনিও ভাবীর ফুফুর চেয়ে কম না৷
– আমি ঐ মহিলার চেয়েও খারাপ। রুপু আমাকে যতটা ভালোবেসেছিলো অতটা ভালো ঐ মহিলাকে সে বাসেনি৷ এতখানি ভালোবাসা পেলে হয়তো ঐ মহিলা রুপুকে এতখানি টর্চার করতো না৷
– ভাবীর সাথে এতসব ঘটে যাচ্ছিলো নাদিমের কি সেগুলো অজানা ছিলো?
– নাদিম জানতো কি না জানি না৷ ঐ ঘটনার চারমাস পর সে লন্ডন চলে গেলো স্টুডেন্ট ভিসায়। এতগুলো বছরে সে আর ফিরেনি৷ তবে যেই চারমাস দেশে ছিলো তখনকার ঘটনা তো জানতোই৷ জানা সত্ত্বেও সে চুপ ছিলো৷ সেদিনের পর রুপু হয়ে গেলো তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিতা। একবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি রুপুর দিকে। এতসব ঘটনার মধ্যে রুপুকে আগলে রেখেছিলো তিনজন। রুপুর ভাবী, রাহাত আর বৃষ্টি। এই মেয়েটা প্রায়ই রুপুকে কল করতো। বছরে দুই চারবার দেখা করতো। যতটা সম্ভব মেন্টাল সাপোর্ট দিতো রুপুকে। এই মানুষগুলো ছিলো বলেই হয়তো রুপু বেঁচে ছিলো। আর নয়তো মরে যেত কবেই!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here