ঘুণপোকা,পর্ব_১২
মিম
– ডায়েরিটা এখনো আমার কাছে আছে৷ ঐ ডায়েরির ১০৩ নাম্বার পেইজটা আমার ভীষন প্রিয়। প্রতিদিন ঐ পৃষ্ঠায় একবার হলেও চোখ বুলাই।
– কি আছে সেই পৃষ্ঠায়?
– ১০২ নাম্বার পেইজ পর্যন্ত কোথাও আমি ছিলাম না৷ ১০৩ নাম্বার পেইজে রুপুর ডায়েরিতে প্রথমবারের মত জায়গা পেলাম। ঐ পৃষ্ঠার প্রতিটা শব্দ আমার মুখস্থ। শুনবে?
– অবশ্যই।
– শুনেছি ভালোবাসা নাকি জীবনে একবারই আসে৷ আমার বেলায় তো কথাটা মিথ্যে হয়ে গেলো৷ মানুষটা সৈকত। তার বাবার আইডিতে প্রথমবারের মত তাকে দেখলাম। কি মোহ তৈরী হলো আমি জানি না৷ ইচ্ছে হলো তাকে আরেকটু দেখি। আরেকটু দেখতে গিয়েই ঝামেলা বেঁধে গেলো৷ খুঁজে খুঁজে তার আইডিটাও বের করে ফেললাম৷ তারপর…… এক সপ্তাহ ধরে তার আইডিতেই আটকে আছি৷ এক সপ্তাহ পর আজ আবিষ্কার করলাম তাকে ভালোবেসে ফেলেছি৷ শুধু দূর থেকে দেখেই কি করে কেউ কাউকে ভালোবাসে আমি জানি না৷ আপাতত জানতে চাচ্ছিও না৷ শুধু জানি ভালোবাসি। এতটুকুই চোখ বন্ধ করে সবটুকু অনুভূতি অনুভব করতে চাই৷ বহুবছর পর কাউকে খুব করে ভালোবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার হাত ধরে আবারও নতুন করে বাঁচার সাধ হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে বলি, আমাকে একটু সমুদ্র পাড়ে নিয়ে যাবে? বহুবছর হয়ে গেলো প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেই না। তুমি আমার হাতজোড়া শক্ত করে ধরে রেখো, আমি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিবো।
– উনি তখন জানতো আপনি ডিভোর্সি?
– না। ১০৪ নাম্বার পেইজে লিখা ছিলো, ডিভোর্সি কাউকে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। ভাবি, আহা! সংসারটা ভেঙে গেলো! এই প্রথম কারো ডিভোর্সের খবর শুনে ভীষণ সুখ সুখ লাগছে। তুমি জানো, আমি তো ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যাবে। ভেবেছিলাম তুমি অবিবাহিত। আমার মত মেয়েকে একটা অবিবাহিত ছেলে বিয়ে কেন করবে? তোমার বাবা এসেছিলো বিকেলে। কথায় কথায় বললো তোমার ডিভোর্সের কথা। কি অদ্ভুত আমি তাই না? তোমার ডিভোর্সের কথা শুনে খুশিতে টলমল অবস্থা হচ্ছে আমার৷ প্রেমে পড়লে মানুষ অদ্ভুত আচরন করবে এটা খুব স্বাভাবিক। সুতরাং আমার খুশি হওয়াও স্বাভাবিক।
– বিয়ের প্রস্তাব কি আপনাদের তরফ থেকে দেয়া হয়েছিলো নাকি ভাবীদের তরফ থেকে?
– রুপুদের তরফ থেকে৷ কান্ডটা রুপুই করেছিলো। বাবা কোনো এক কথার প্রসঙ্গে আমার শ্বশুরের সাথে আমার জন্য মেয়ে খোঁজার ব্যাপারে আলাপ করছিলো। রুপু রাহাতের সাথে আমার ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলো। সেদিন বাবার কাছে পাত্রী খোঁজার কথা শোনামাত্রই রাহাতকে দিয়ে ওর ভাবীর কাছে জানালো সে আমাকে বিয়ে করতে চায়৷ সেদিনই রাতে ঐ বাসা থেকে আমার বাবাকে ফোন করা হলো।
– আচ্ছা! অপরিচিত মেয়েটা আপনাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো তাই আপনাকে দূরের কিংবা অপরিচিত কেউ ভাবেনি৷ আপনি তো তার কাছে আপন ছিলেন আরো আগে থেকেই৷
– হুম, ভীষণ আপন। ১০৭ নাম্বার পেইজটা লিখেছিলো আমাদের বিয়ের আগ মুহূর্তে।
– কি লিখেছিলো?
– একটু পরেই নতুন জীবন শুরু হবে৷ একটা সংসার হবে আমার, যেই সংসারের স্বপ্ন অনেকবছর আগে একবার দেখেছিলাম। নতুন একটা জগত হবে। সেই জগতে আমাকে মুখ লুকিয়ে থাকতে হবে না৷ কেউ আমার অতীত নিয়ে কথা শোনাবে না৷ প্রতিদিন নিয়ম করে অপমান সহ্য করতে হবে না৷ সেখানকার মানুষগুলো আমার দোষ জানা সত্ত্বেও আপন করে নিচ্ছে। তাদের কাছে আমি চিরঋণী।
– ভাবী অনেক আশা নিয়ে আপনার সংসারে পা রেখেছিলো৷
– হুম। সবই ঠিক ছিলো। শুধু আমি বাদে। ওর সমস্ত আশা আকাঙ্খাগুলো পূর্ণ । আমি ভাবতাম ও কষ্ট পায় না৷ কোনো কথাই ওকে আঘাত করতে পারে না। আমি ভুল ছিলাম। ওর ডায়েরির পাতাগুলো আমার একের পর এক করতে থাকা অন্যায়গুলোর দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছিলো আঘাত রুপন্তিরও লাগে। কষ্ট রুপন্তিরও হয়৷
– ডায়েরির পাতায় লিখা আছে সেসব?
– হুম। বিয়ের রাতে ডায়েরি লিখার পর দুই সপ্তাহ ও ডায়েরি লিখেনি৷ লিখেছে পুরো ১৪ দিন পর।
– কি লিখেছিলো?
– আমি জানি তুমি ইচ্ছে করেই আমার কল রিসিভ করো না৷ বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান আমি খুব নিখুঁতভাবে করতে পারি৷ গত দশবছরে এই বিষয়ে আমি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছি। এক কথায় বলতে পারো, এই বিষয়ে আমি গ্র্যাজুয়েট।
– আর আপনি তো ভেবেছিলেন উনি সত্যিই বুঝে না৷
– রুপুকে নিয়ে আরো কত ভাবনাই তো ভেবেছি! ও বেড়াতে গেলেই সাবিহাকে টানাটানি করে এটা আমার বেশ অপছন্দ ছিলো৷ এটাও রুপু বুঝতে পারতো। ডায়েরিতে সেটাও লিখেছিলো, যা শিক্ষা পাবো সেটাই তো করবো। ভাবী আমাকে ছোট থেকে বুকে আগলে রেখে বড় করেছে। কখনো ভাবেনি আমার কারণে ওদের দুজনের একান্ত সময়গুলো নষ্ট হবে। আমার মত সাবিহারও একটাই ভাই। সৈকত তার দায়িত্ব থেকে কয়েকশো হাত দূরে থাকে৷ তাই বলে আমিও থাকবো? থাকবো না৷ আমি যা শিখে এসেছি আমি তাই করবো৷ বাবা মায়ের পর আমি ছাড়া আছে নাকি আর কেউ আপন করে ওকে আগলে ধরার মত? আমি জানি সৈকত ভীষণ অপছন্দ করে। কেন করে আমি জানি না। সাবিহাকে বাসায় রেখে যেতে আমার মায়া হয় তো আমি কি করবো? শান্তি পাই না ওকে রেখে বেড়াতে যেতে। ওর মুখটা চোখের সামনে ভাসতে থাকে৷ নিজের ছোটবেলা চোখের সামনে ছুটাছুটি করতে থাকে৷ মনে হয় ভাবী যদি আমাকে ফেলে নিজের মত জীবন গুছিয়ে নিতো তাহলে আমার কি হতো?
– উনি হয়তো সাবিহাকে নিজের সাথে তুলনা করতো।
– হ্যাঁ। মা ছাড়া ভাবীর কাছে যত্নে বড় হয়েছে। ওর মাথায় গেঁথে গিয়েছে মা বাবার পর ভাই আর ভাই বউরাই ছায়া হয়ে বোনদের মাথার কাছে দাঁড়ায়৷ সেই ধারণা থেকেই সাবিহার প্রতি এতটা মায়া ছিলো।
– আপনি উনার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতেন সেসব কিছু লিখা ছিলো না?
– হুম ছিলো। অনেক অনেক লিখা আছে আমাকে নিয়ে। রুপন্তি বুঝে গিয়েছিলো সে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে। আমার ব্যবহারে কষ্ট পেতো। আবার নিজেই নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা দিতো, শান্ত হ রুপু। বিপরীত মনের মানুষকে ভালোবাসলে কষ্ট পেতেই হবে৷
– আর নবনী? উনাকে নিয়ে কিছু লিখতো?
– হুম, লিখতো। ও সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতো যখন নবনীকে নিয়ে কথা শোনাতাম। প্রথম যেদিন নবনীকে নিয়ে কথা শোনাই সেদিন ও নাকি খুব কেঁদেছিলো।
– ডায়েরিতে লিখেছিলো সেদিনের কথাগুলো?
– হুম।
– কি লিখেছিলো?
– নবনীকে এখনো ভালোবাসো তাই না? কেন বাসো? ও তো তোমাকে রেখে চলে গেলো। ভালোবাসে না তাই চলে গিয়েছে। আমাকে তুমি খুব অবহেলা করো৷ এড়িয়ে চলতে চাও। আমি সব বুঝতে পারি৷ তবুও তো আমি চলে যাইনি৷ আছি তো তোমার সঙ্গেই৷ ভালোবাসি বলেই তো হাসিমুখে সব মেনে নেই৷ ভালোবাসি বলেই কি আমাকে এত অবহেলা সহ্য করতে হয়? ভালোবাসি বলেই কি আমাকে তোমার ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় না? হাসিমুখে তোমার সবকিছু মেনে নেই৷ এখন নবনীকে আজও ভালোবাসো এখন কি এই কথাটাও আমার হাসিমুখে মেনে নিতে হবে সিকু? কষ্টটা কি আজ একটু বেশিই দিয়ে ফেললে না? খুব কাঁদালে আজ। চোখ মুছতে মুছতে চোখের নিচের চামড়া জ্বালা করছে৷ জানো না চোখের নিচের চামড়া পাতলা হয়? বারবার ঘষাঘষি করলে চামড়া জ্বলতে শুরু করে? জেনেশুনেও কেন এভাবে কাঁদালে? এইযে আমার চোখ জ্বালা হচ্ছে এখন এটার সমাধান কি বলতে পারো?
– শেষ কথাগুলো হাস্যকর শোনালেও উনার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সত্যিই তো ভাইয়া, কেউ আমাদের মনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসলে আমরা কেন তাকে তার মতন করে ভালোবাসতে পারি না?
– ঠিক যেই মুহূর্ত থেকে আমরা বুঝে যাই পাশের মানুষটা আমাকে ভীষণ ভালোবাসে, ঠিক তখন থেকেই মনের এককোণে অবহেলাগুলো জায়গা নিতে শুরু করে৷ তাকে দুর্বল ভাবতে শুরু করি। আর নিজেকে বিশাল ক্ষমতাসীন কেউ৷ আমরা একপ্রকার ধরে নেই সে কোথাও যাবে না৷ সে আমাকে ছাড়া অচল। থাকতে পারবে না আমাকে ছাড়া, কষ্ট পাবে৷ আমরা বারবার তাকে ছেড়ে যাওয়ার ভয় দেখানো শুরু করি। মানুষটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। তাকে ছেড়ে না যাওয়ার মিনতি করতে থাকে৷ তার সেই ভয় পাওয়া চেহারা, মিনতি আর কান্না দেখে আমরা ভীষণ আনন্দ পাই৷ নিজেকে আরো বেশি ক্ষমতাসীন ভাবতে থাকি আর তাকে আরো বেশি দুর্বল। রুপু চলে যাওয়ার আগে শেষবারের মত কিছু পৃষ্ঠা লিখে গিয়েছিলো। খুব সম্ভবত চলে যাওয়ার চার পাঁচদিন আগে।
তুমি আমার মাঝে নবনীকে খুঁজে বেড়াও। আমি তো নবনী না সিকু৷ আমি রুপন্তি। তোমার নবনী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ৷ আমাকে কেন নবনীর মত হতে হবে? আমার কোনোকিছুই তোমার পছন্দ না৷ আমাকে দেখলেই তোমার চোখজোড়া বিষিয়ে উঠে। তোমার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। এত ঘৃনা কেন করো সিকু? আমি বেশি কথা বলি এটাতে তোমার আপত্তি। বলবো না আমি কথা? তোমার সাথে বলবো না তো কার সাথে বলবো? তোমার মা বাবার সাথে বসে মুভি দেখি, হাসতে হাসতে বাবার গায়ে ঢলে পড়ি, মায়ের আঁচলে চোখ মুছি৷ বাসার বৌ হয়ে তোমার মা বাবার সাথে এভাবে মেলামেশা তুমি অপছন্দ করো। তোমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়৷ বাড়াবাড়ির কি দেখলে তুমি? আমি তো কখনো শ্বশুর শাশুড়ি ভাবিনি। ভেবেছি আমারই মা বাবা৷ আমার মা আমাকে কোলে নিয়ে মরতে পারেনি৷ তার আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। নাদিমের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর বাবা আমাকে আর কখনো মন থেকে কাছে টানেনি৷ হ্যাঁ, বাবা আমার সাথে কথা বলতো। আমার যা কিছু প্রয়োজন সব বাবা পূরন করতো। কিন্তু অদৃশ্য এক দূরত্ব চলে এলো আমাদের মাঝে। বাবা আর কখনো আমাকে মা বলে ডাকেনি, আমিও কখনো বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারিনি। যার কোলে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছি, যেই মানুষটা কখনো আমার মাথায় হাত না বুলিয়ে ঘুমাতে যায়নি সেই মানুষটা হুট করে আমার পর হয়ে গেলো। একটু না হয় তোমার মা বাবার কাছে ভালোবাসা কুড়াতে গিয়েছিলাম, তাই বলে তুমি এত অভিমান করবে? তোমার অফিসের কলিগরা আমার সাথে যোগাযোগ করে, আমাকে প্রায়ই কফিশপে কিংবা অফিসে গিয়ে কিছুক্ষন গল্প করে আসতে বলে। আমি সাত পাঁচ না ভেবে চলে যাই। আর তুমি বলো জোকার সেজে বিনোদন দিতে যাই। আমার মত অবহেলা পেয়েছো কখনো? পাওনি৷ কত ছটফট করেছি সবার সঙ্গে বসে একটু গল্প করার জন্য! আত্মীয় স্বজনের কাছে একটু মূল্য একটু সম্মান পাওয়ার জন্য! কেউ দিতো না জানো! সবাই কেমন যেনো করতো আমার সাথে। কেউ কেউ তাদের ছেলেমেয়েকে ইশারা করতো আমার কাছ থেকে যেনো দূরে থাকে৷ হয়তো আমার সাথে মেলামেশা করলে তাদের ছেলেমেয়েকেও আমি পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিবো সেই ভয়ে৷ আমি কারো ভয়ের কারণ হতে চাইনি সিকু। কারো বিরক্তির কারণও না। তাই সবার কাছ থেকে দূরে সরে ছিলাম পুরো দশটা বছর৷ তুমি আমাকে যেদিন বিয়ে করলে সেদিন বাবার বাসার দরজা পেরিয়ে আসার সময় মনে হচ্ছিলো আমি মুক্তি পাচ্ছি। নতুন জগতের সব নতুন মানুষের আমার পরিচয় হবে। তোমার সাথে জড়িত সবাইকে আমার খুব কাছের আত্মীয় বানিয়ে ফেলবো। সবার সঙ্গে আমার খুব ভাব হবে। ছোট বড় কেউ বাদ যাবে না৷ দশ বছরের সমস্ত অপ্রাপ্তিগুলো এবার পূর্ণ করবো। কেউ আমার সঙ্গে একটু হাসিমুখে কথা বললে আমার খুব আনন্দ হয়। মনে হয়, মানুষটা আমাকে খুব মূল্য দিচ্ছে। ইচ্ছে হয় তাকে মাথায় করে রাখতে। তোমার অফিসের বড় আপুগুলো, হাসিব ভাইয়া আমাকে খুব আদর করে। মাসে একবার ওদের সাথে দেখা করতে বলে। আমি না করতে পারি না। কারো দেয়া সম্মান কিংবা ভালোবাসা কোনোটাই দূরে ঠেলে দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমাকে বকা দেয়া সত্ত্বেও আমি শুধরে যাই না, আমার আত্মসম্মান বলতে কিছুই নেই এই কথা শোনাতেই থাকো। সারাক্ষন আমাকে আত্মসম্মানের জ্ঞান দিতেই থাকো। আমি বুঝিনা কোন আত্মসম্মানের কথা তুমি বুঝাও। যার সামনে গায়ের জামা খুলতে দ্বিধা করিনা তার সঙ্গে কিসের আত্মসম্মান দেখাবো আমি? তোমার চাওয়া আমি পূরণ করতে পারবো না সিকু। আমার পক্ষে নবনী হওয়া সম্ভব না। আমি রুপন্তি, আমি আমার মতই থাকবো। কেউ কারো মত হয় না৷ কারো রূপ ধারণ করা আর মিথ্যা খোলসে নিজেকে ঢেকে নেয়া একই কথা৷ পারবো না আমি সারাক্ষণ মিথ্যা নাটক করতে৷ নবনীর মায়া যেহেতু কাটাতে পারছো না তার মানে ভালোবাসা রয়ে গেছে নিশ্চিত। ভালোই যেহেতু বাসো তাহলে উনাকে ডিভোর্স কেন দিলে? আমাকেই বা বিয়ে কেন করলে? আমার আজকাল কি মনে হয় জানো? আমাদের সংসারটাও বোধ হয় টিকবে না৷ তোমার চোখে ভীষণ বিরক্তির ছায়া দেখতে পাই। বারবার আমাকে চলে যেতে বলো৷ আমি মজা করে হাসতে হাসতে কথার প্রসঙ্গ বদলে ফেলি। তুমি খুব বিরক্ত আর রাগ হয়ে আমার সামনে থেকে চলে যাও৷ মনে হচ্ছে অতি শীঘ্রই তোমার সহ্যসীমা শেষ হয়ে যাবে। রুপন্তি নামক আপদ থেকে দূরে সরে যাবে৷ চলে যাবে হয়তো অন্য কোথাও!
জানি না কেন এই কথাগুলো মনে আজকাল খুব খোঁচায়। আমি চাইনা আমাদের সংসারের ইতি হোক। চাইনা নাদিমের মত তুমিও আমাকে রেখে চলে যাও৷ আমাকে ভালোবাসো প্লিজ। অনেকটুকু না একটুখানি ভালোবাসো,, যতটুকু ভালোবাসলে এই সংসারটা বেঁচে যাবে।
(চলবে)