ঘুণপোকা,পর্ব_১৩
ডায়েরী পড়া শেষ হলো রাত সাড়ে চারটায়। মাথায় চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। সারারাত জেগে ডায়েরি পড়েছি সেজন্য না৷ ব্যাথা হচ্ছিলো অন্য কারণে। কারণটা রুপন্তি। ডায়েরি যত শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তত আমার অস্থিরতা বাড়ছিলো। আমি অনুতপ্ত হচ্ছিলাম। সেই পৃষ্ঠায় বারবার চোখ বুলাচ্ছিলাম যেখানে রুপু প্রথম লিখেছিলো আমাকে ও ভালোবাসে। শব্দগুলো স্পর্শ করছিলাম। অন্যরকম অনুভূতি ছিলো। অদ্ভুত ক্ষমতা লুকিয়ে ছিলো সেই শব্দগুলোর মাঝে৷ সমস্ত শব্দগুলো একজোট হয়ে আমার ভিতরটা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছিলো। প্রথম! সেদিনই প্রথম আমার মাঝে আমি রুপুকে খুঁজে পেলাম। কোন এক ফাঁকে এই মেয়ে আমার সবটা দখল করে নিলো আমি বুঝতেই পারলাম না।
– প্রেম তাহলে দ্বিতীয়বারের মত আপনার জীবনেও চলেই এলো।
– সেদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা এবং একটা সত্য আবিষ্কার করেছি।
– কি?
– প্রেম আমার জীবনে একটাই এসেছে। সেটা হলো রুপন্তি। নবনীকে আমি কখনো ভালোবাসিনি৷ ওর আর আমার মাঝে যা ছিলো তা হলো খুব ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং। সেই থেকে দুজনকে দুজনের ভালো লাগা। ভালো লাগাকে আমরা দুজনে ভেবে নিয়েছিলাম ভালোবাসা। সেজন্যই হয়তো নবনী চলে যেতে চাইলো আর আমি যেতে দিলাম।
– তখনই আমার মনে হয়েছিলো কথাটা। নবনীকে আপনি ভালোবাসেননি৷ বাসলে উনার এ্যাফেয়ার কিংবা ডিভোর্স কোনোটাই এত সহজে মেনে নিতেন না৷
– রুপুকে একটু দেখার জন্য ভীষণ অস্থির লাগছিলো৷ খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে আমার সামনে বসিয়ে ওর হাতজোড়া ধরে রাখি। ওকে বলি, যা খুশি করো। যত কথা বলতে ইচ্ছে হয় বলো। যত ধরনের পাগলামি করতে ইচ্ছে হয় সব করো৷ আমি আর কখনোই অভিযোগ করবো না।
– কল করেছিলেন ভাবীকে?
– না৷
– কেন?
– রুপুকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি এই কথাটা কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না৷ যাকে এত বকেছি তাকেই ভালোবেসে ফেলেছি ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। ছোট হয়ে যাবো না রুপুর সামনে?
ইমরানের চোখে মুখে একরাশ বিস্ময় জায়গা দখল করে নিলো। কথোপকথনের এই পর্যায়ে এসে সৈকতকে বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো সৈকতের দিকে। ইমরানের বোকা বোকা চেহারা দেখে সজোরে হেসে উঠলো সৈকত। বললো,
– আমি একটা ছাগল। তাই না?
– ভাবী আপনাকে ডিভোর্স দেয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছে। এমন মুহূর্তে এসে আপনি আবিষ্কার করলেন ভাবীকে আপনি ভালোবাসেন। অথচ আপনি তাকে জানাবেন না ভালোবাসার কথা?
– না, আমি জানাইনি৷
– তাহলে কি চাচ্ছিলেন? ডিভোর্স হয়ে যাক?
– একদমই না৷ রুপুকে আমি কখনোই ডিভোর্স দিবো না৷ আমি যদি মারা যাই তবেই রুপু আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া কখনোই সম্ভব না৷
– আপনার উচিত ছিলো ভাবীকে অবশ্যই একটা কল করা। কাজটা একদমই ঠিক হলো না।
– হুম, তা তো হয়ই নি। সতেরো দিন আমার কাছে সতেরো যুগের সমান মনে হচ্ছিলো। ওর সাথে কথা বলার চেয়ে ওকে একটুখানি দেখতে বেশি ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার। মনে হচ্ছিলো না দেখতে পারলে আমি মারা যাবো। কিন্তু আমি ওর বাসায় যাবো না৷ আবার না দেখেও থাকতে কষ্ট হচ্ছে। কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে উপায় পেয়েই গেলাম।
– কি উপায়?
– জানুয়ারীর শেষ সময় চলছে তখন৷ বাহিরে কনকনে ঠান্ডা। গায়ে সোয়েটার, জ্যাকেট লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুপুর বাসার উদ্দেশ্যে। ওদের এলাকার রাস্তা পুরো ফাঁকা। রাস্তায় মানুষ তো দূরের কথা, একটা কুকুরও নেই। আমি ভেবেছিলাম ওর জানালায় ঢিল ছুঁড়বো৷ গ্লাস ভাঙার শব্দে নিশ্চয়ই জানালায় এসে উঁকি দিবে কে ভেঙেছে দেখার জন্য।
– জানালায় ঢিল ছুঁড়ে গ্লাস ভেঙে ফেলবেন তবুও দোতলা সিঁড়ি ভেঙে শ্বশুরের বাসায় গিয়ে বউকে এক নজর দেখে আসতে পারবেন না?
– মোটেই না৷ ঝগড়া করার পর এতরাতে শ্বশুরবাড়িতে বউকে দেখতে গেলে সবাই ভাববে আমি বউ পাগলা লোক। হাসাহাসি করবে সবাই। কেন সবার হাসির পাত্র হবো?
– আপনি কি সবসময় প্রয়োজনের চেয়ে দুই লাইন বেশি বুঝেন? হাসতে যাবে কেন? আর হাসলে হাসুক। তাতে আপনার কি? ভাবীকে আবারো বাসায় ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই তো মূখ্য।
– হ্যাঁ, রুপুকে ফিরিয়ে আনা জরুরী। তবে নিজে ছোট হয়ে না।
– এত্ত ইগো কিন্তু ঠিক না।
– তখন তো এই ব্যাপারটা রিয়েলাইজ করতে পারিনি৷
– শ্বশুরবাসায় গেলে সবাই আপনাকে নিয়ে হাসবে, আর ঢিল ছুঁড়ে গ্লাস ভাঙলে আপনাকে নিয়ে হাসবে না?
– কিভাবে জানবে গ্লাস আমি ভেঙেছি?
– জানবে না? ভাবী জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই তো আপনাকে দেখতে পেতো।
– সুযোগ নেই। জানালা বরাবর গাছ আছে। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম।
– খুব সহজ একটা ঘটনাকে আপনি জটিল করে ফেললেন। চুপচাপ ভাবীর বাসায় চলে গেলেই হতো। তা না করে ১৬-১৭ বছর বয়সী ছেলেদের মত আচরন করলেন।
– করতে পারিনি৷
– কেন? ঢিল ছুঁড়ার জন্য ইট, পাথর কিছু পাননি?
– সমস্যা ইট পাথর না৷ আমার কষ্ট করে ঢিল ছুঁড়তেই হয়নি। রুপু জানালার পাশেই বসে ছিলো৷ কাঠের ফ্রেমবন্দী জানালার লম্বা লোহার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলো রুপু। নিয়ন বাতির আলোয় ওর মলিন মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম। পুরো সতেরোদিন পর মেয়েটা আমার চোখের সামনে ছিলো। কি বিষন্নতা ঘিরে রেখেছিলো ওর মুখটা! এতগুলো দিন পর ওকে দেখতে পাচ্ছি, আমার খুশি হওয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু আমি খুশি হতে পারছিলাম না। যেই বিষন্নতা দেখার জন্য আমি মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম সেই বিষন্নতা আমাকে ভীষণ খোঁচাচ্ছিলো। কষ্ট পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমি একটা হাসিখুশি মেয়েকে মেরে ফেলেছি। আমি এই রুপুকে দেখতে চাইনি। আমি সেই আমার আগের রুপুকে একনজর দেখতে চাচ্ছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো চিৎকার করে বলি,
– রুপু, সতেরো যুগ পেরিয়ে গেলো তোমার হাসি দেখি না৷ তোমার হাসির ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দিবে প্লিজ!
সৈকতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ইমরান। এই লোকটাকে খুব বিরক্তিকর লাগছে। কষ্টে মরে যাবে অথচ বলবেনা ভালোবাসি। এ কেমন ধাঁতের লোক! মুচকি হেসে সৈকত জিজ্ঞেস করলো,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
– ধুর, এগুলো কেমন কথা? কষ্ট পাচ্ছেন অথচ ভাবীকে একবার সরি বলে বাসায় ফিরে আসার কথা বলতে পারলেন না?
– নাহ্, বলিনি। আত্মসম্মান যে খুব আমার!
– প্লিজ এই ফালতু যুক্তিটা আমার সামনে বারবার দাঁড় করাবেন না।
– এই ফালতু যুক্তিকেই তো আমি ভালোবেসে খুব যত্নে মনে গেঁথে রেখেছিলাম।
– সম্পর্কটা ভেঙে যাচ্ছে সৈকত ভাই! ঐ মুহূর্তে এরচেয়ে বড় আর কি হতে পারে?
– রুপন্তি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে এটা আমার বিশ্বাস হয়নি৷ বুঝতে পারছিলাম খুব রাগ করেছে। কিন্তু ডিভোর্স ওর দ্বারা সম্ভব না। চিরতরে আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মত রাগ ও করতে পারে না৷ ভেবেছিলাম মা হয়তো আমাকে একটু ভয় দেখানোর জন্য কথাটা বলেছে কিংবা মা ভাবছে ডিভোর্সের কথা শুনলে আমি রুপন্তিকে সরি বলবো। পরদিন রুপন্তি আমার সেই ধারণাও মিথ্যা প্রমাণ করলো।
– লিগ্যাল নোটিশ?
– হ্যাঁ। পরদিন বাসায় আসতেই বাবা আমার হাতে খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে দেখি রুপু আমাকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছে।
– মানুষটা ভালোবাসতেও জানে, খুব অভিমানও করতে জানে। সবই বুঝলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার ধরতে পারছি না। আপনি উনার সাথে এতগুলো দিন এত রুড বিহেভ করলেন, উনি আপনাকে ছেড়ে যায়নি বা কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি। হঠাৎ করেই এমন কি হয়ে গেলো যে উনি ডিভোর্স পর্যন্ত চলে গেলো?
– সব মানুষেরই কোথাও না কোথাও একটা দুর্বলতা থাকে৷ সেই দুর্বলতাটা খুব স্পর্শকাতর হয়। কেও সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করুক সেটা তারা পছন্দ করে না। বিশেষ করে খুব প্রিয় কেও যদি ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তাহলে সেটা তারা মানতে পারে না৷ এমনিতে আমার রুপন্তিকে সহজে কোনো বিষয় নাড়া দিতে পারে না৷ যেকোনো কথা হালকাভাবে নেয়ার গুনটা ওর আছে৷ কিন্তু ঐ যে বললাম দূর্বল জায়গা থাকে। ও যেদিন বাসা থেকে বের হয়ে যায় সেদিন আমি একটা মিসটেক করে ফেলেছিলাম। সেটা হচ্ছে নাদিম৷ নাদিমের ইস্যুটা ছিলো রুপুর উইক পয়েন্ট। এত হাসিখুশি একটা মেয়ে যে মনের মধ্যে এতখানি কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে আমি কখনো টেরই পাইনি৷ কেও টের পাবেও না৷ ওকে দেখলে মনে হয় জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ। ভেবেছিলাম অন্যসব কথাগুলোর মত নাদিমের কথাগুলোও ও খুব হালকাভাবে নিবে৷ কিন্তু ও নিলো না। সেদিন সত্যি সত্যি রুপন্তি কষ্ট পেলো। কথাগুলো আমি বলেছিলাম তাই হয়তো কষ্টটা একটু বেশিই পেয়েছিলো৷ আমি তো ওর খুব প্রিয় মানুষ। আমার কাছ থেকে এই কথাগুলো ও আশা করেনি৷
যেই রুপন্তিকে আমি চিনতাম এটা সে না, এ যেন অন্য আরেক রুপন্তি। ওর অন্যসব ঘটনা মেনে নিতে পারলেও এই ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি৷ লেটার হাতে নিয়ে আমি কতক্ষণ ঝিম ধরে বসেছিলাম আমি জানি না৷
– বাসার লোকজন কিছু বলেনি আপনাকে?
– না। সবাই স্বাভাবিক ছিলো। বাসার লোকদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন রুপুর সাথে আমার ডিভোর্স হওয়া খুব স্বাভাবিক।
– আপনার মা তো বলেই দিলো উনি চান ভাবী আপনার কাছ থেকে দূরে গিয়ে ভালো একটা জীবন কাটাক। হয়তো বাসার সবাই এটাই চাচ্ছিলো।
– হুম৷ আমি সেদিন রাতেই ল’ইয়ারের সাথে যোগাযোগ করলাম। অবজেকশন পেপার রেডি করতে বললাম। পেপার রেডি করে রুপুর কাছে পাঠালাম। রুপু আমাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালো এটা নিয়ে কেউ আমাকে কিছু বললো না অথচ আমি অবজেকশন পেপার পাঠাতেই আমার মা বাবা আমাকে ধরে বসলো।
– কেন?
– আমি কেন ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না সেটা জানার জন্য। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম জানো! আমি ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না এটা জেনে উনাদের খুশি হওয়ার কথা ছিলো৷ খুশি তো হয়নি উল্টো দুজনই রেগে গেলো। বেশ রাগ করেই কথাটা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো।
– কি বলেছিলেন?
– বললাম, আগেও একটা ডিভোর্স হয়েছে৷ এখন কি চাও এবারও ডিভোর্স হোক? মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবো আমি? বিয়ে হয়েছে দুটো। একজন আড়াইবছরে ডিভোর্স দিলো আরেকজন তো একবছরও পার করলো না। আটমাসেই ডিভোর্স দিলো। আশপাশের লোকদের কাছে কত আজেবাজে কথা শুনতে হবে তা জানো?
– তবুও বললেন না উনাকে আপনি ভালোবাসেন!
– উহুম।
– ভাবী জানতে চায়নি ডিভোর্স কেন দিতে চাচ্ছেন না?
– হুম। পরদিন রুপু ফোন করেছিলো। এতগুলো দিন পর আমি রুপুর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। অফিসে ছিলাম তখন। লাঞ্চ আওয়ারের আগ মুহূর্তে কল করলো। বললো বিকেলে আমার সাথে কোথাও বসে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে চায়। রুপুকে একনজর কাছ থেকে দেখার জন্য, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য আমি ছটফট তো করছিলামই, রুপুর কল পাওয়ার পর মনে হলো এবার বুঝি অস্থিরতায় আমার নিঃশ্বাসটাই আটকে আসছে। আমি ঠিকমত ওর সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না৷ জিহ্বায় জড়তা চলে আসছিলো। কোনোমতে হুম, হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দিলাম৷ কয়েক মিনিট চেয়ারে চোখ বন্ধ করে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমি পারছিলাম না। বারবার গলার কাছে গিয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। জীবনে প্রথমবারের মত অনুভব করলাম কারো জন্য আমার নিঃশ্বাসও আটকে যায়! পাশের ডেস্ক থেকে তামান্না খেয়াল করলো আমাকে। জিজ্ঞেস করলো,
– সৈকত, তুমি কি সিক?
আমি তামান্নাকে কোনো রিপ্লাইও দিতে পারছিলাম না৷ আমার দুনিয়া ভেঙে কান্না পাচ্ছিলো। কিন্তু আমি কাঁদতে পারছিলাম না৷ অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো। এসির মাঝে থেকেও ঘামছিলাম খুব৷আমার শুধু বারবার মনে হচ্ছিলো রুপন্তি আমার কপালে একটু হাত রাখলেই আমি আবার নিঃশ্বাস নিতে পারবো। তামান্না মাঝে আরো দুইবার জিজ্ঞেস করলো। আমি একবারও কিছুই বলতে পারলাম না৷ সৈকত মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে, কেউ একটু পানি আনো, কথাটা তামান্না চিৎকার করে বলতে লাগলো। আমি হৈ চৈ শুনতে পাচ্ছিলাম। চোখে স্পষ্ট কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না৷ তামান্না আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো, আমি টের পাচ্ছিলাম। কোনো একভাবে আরেক হাতে তামান্নার হাত টেনে কাছে এনে বললাম,
– রুপন্তিকে একটু আসতে বলবে প্লিজ?
(চলবে)#ঘুণপোকা
#পর্ব_১৩
ডায়েরী পড়া শেষ হলো রাত সাড়ে চারটায়। মাথায় চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। সারারাত জেগে ডায়েরি পড়েছি সেজন্য না৷ ব্যাথা হচ্ছিলো অন্য কারণে। কারণটা রুপন্তি। ডায়েরি যত শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তত আমার অস্থিরতা বাড়ছিলো। আমি অনুতপ্ত হচ্ছিলাম। সেই পৃষ্ঠায় বারবার চোখ বুলাচ্ছিলাম যেখানে রুপু প্রথম লিখেছিলো আমাকে ও ভালোবাসে। শব্দগুলো স্পর্শ করছিলাম। অন্যরকম অনুভূতি ছিলো। অদ্ভুত ক্ষমতা লুকিয়ে ছিলো সেই শব্দগুলোর মাঝে৷ সমস্ত শব্দগুলো একজোট হয়ে আমার ভিতরটা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছিলো। প্রথম! সেদিনই প্রথম আমার মাঝে আমি রুপুকে খুঁজে পেলাম। কোন এক ফাঁকে এই মেয়ে আমার সবটা দখল করে নিলো আমি বুঝতেই পারলাম না।
– প্রেম তাহলে দ্বিতীয়বারের মত আপনার জীবনেও চলেই এলো।
– সেদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা এবং একটা সত্য আবিষ্কার করেছি।
– কি?
– প্রেম আমার জীবনে একটাই এসেছে। সেটা হলো রুপন্তি। নবনীকে আমি কখনো ভালোবাসিনি৷ ওর আর আমার মাঝে যা ছিলো তা হলো খুব ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং। সেই থেকে দুজনকে দুজনের ভালো লাগা। ভালো লাগাকে আমরা দুজনে ভেবে নিয়েছিলাম ভালোবাসা। সেজন্যই হয়তো নবনী চলে যেতে চাইলো আর আমি যেতে দিলাম।
– তখনই আমার মনে হয়েছিলো কথাটা। নবনীকে আপনি ভালোবাসেননি৷ বাসলে উনার এ্যাফেয়ার কিংবা ডিভোর্স কোনোটাই এত সহজে মেনে নিতেন না৷
– রুপুকে একটু দেখার জন্য ভীষণ অস্থির লাগছিলো৷ খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে আমার সামনে বসিয়ে ওর হাতজোড়া ধরে রাখি। ওকে বলি, যা খুশি করো। যত কথা বলতে ইচ্ছে হয় বলো। যত ধরনের পাগলামি করতে ইচ্ছে হয় সব করো৷ আমি আর কখনোই অভিযোগ করবো না।
– কল করেছিলেন ভাবীকে?
– না৷
– কেন?
– রুপুকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি এই কথাটা কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না৷ যাকে এত বকেছি তাকেই ভালোবেসে ফেলেছি ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। ছোট হয়ে যাবো না রুপুর সামনে?
ইমরানের চোখে মুখে একরাশ বিস্ময় জায়গা দখল করে নিলো। কথোপকথনের এই পর্যায়ে এসে সৈকতকে বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো সৈকতের দিকে। ইমরানের বোকা বোকা চেহারা দেখে সজোরে হেসে উঠলো সৈকত। বললো,
– আমি একটা ছাগল। তাই না?
– ভাবী আপনাকে ডিভোর্স দেয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছে। এমন মুহূর্তে এসে আপনি আবিষ্কার করলেন ভাবীকে আপনি ভালোবাসেন। অথচ আপনি তাকে জানাবেন না ভালোবাসার কথা?
– না, আমি জানাইনি৷
– তাহলে কি চাচ্ছিলেন? ডিভোর্স হয়ে যাক?
– একদমই না৷ রুপুকে আমি কখনোই ডিভোর্স দিবো না৷ আমি যদি মারা যাই তবেই রুপু আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া কখনোই সম্ভব না৷
– আপনার উচিত ছিলো ভাবীকে অবশ্যই একটা কল করা। কাজটা একদমই ঠিক হলো না।
– হুম, তা তো হয়ই নি। সতেরো দিন আমার কাছে সতেরো যুগের সমান মনে হচ্ছিলো। ওর সাথে কথা বলার চেয়ে ওকে একটুখানি দেখতে বেশি ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার। মনে হচ্ছিলো না দেখতে পারলে আমি মারা যাবো। কিন্তু আমি ওর বাসায় যাবো না৷ আবার না দেখেও থাকতে কষ্ট হচ্ছে। কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে উপায় পেয়েই গেলাম।
– কি উপায়?
– জানুয়ারীর শেষ সময় চলছে তখন৷ বাহিরে কনকনে ঠান্ডা। গায়ে সোয়েটার, জ্যাকেট লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুপুর বাসার উদ্দেশ্যে। ওদের এলাকার রাস্তা পুরো ফাঁকা। রাস্তায় মানুষ তো দূরের কথা, একটা কুকুরও নেই। আমি ভেবেছিলাম ওর জানালায় ঢিল ছুঁড়বো৷ গ্লাস ভাঙার শব্দে নিশ্চয়ই জানালায় এসে উঁকি দিবে কে ভেঙেছে দেখার জন্য।
– জানালায় ঢিল ছুঁড়ে গ্লাস ভেঙে ফেলবেন তবুও দোতলা সিঁড়ি ভেঙে শ্বশুরের বাসায় গিয়ে বউকে এক নজর দেখে আসতে পারবেন না?
– মোটেই না৷ ঝগড়া করার পর এতরাতে শ্বশুরবাড়িতে বউকে দেখতে গেলে সবাই ভাববে আমি বউ পাগলা লোক। হাসাহাসি করবে সবাই। কেন সবার হাসির পাত্র হবো?
– আপনি কি সবসময় প্রয়োজনের চেয়ে দুই লাইন বেশি বুঝেন? হাসতে যাবে কেন? আর হাসলে হাসুক। তাতে আপনার কি? ভাবীকে আবারো বাসায় ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই তো মূখ্য।
– হ্যাঁ, রুপুকে ফিরিয়ে আনা জরুরী। তবে নিজে ছোট হয়ে না।
– এত্ত ইগো কিন্তু ঠিক না।
– তখন তো এই ব্যাপারটা রিয়েলাইজ করতে পারিনি৷
– শ্বশুরবাসায় গেলে সবাই আপনাকে নিয়ে হাসবে, আর ঢিল ছুঁড়ে গ্লাস ভাঙলে আপনাকে নিয়ে হাসবে না?
– কিভাবে জানবে গ্লাস আমি ভেঙেছি?
– জানবে না? ভাবী জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই তো আপনাকে দেখতে পেতো।
– সুযোগ নেই। জানালা বরাবর গাছ আছে। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম।
– খুব সহজ একটা ঘটনাকে আপনি জটিল করে ফেললেন। চুপচাপ ভাবীর বাসায় চলে গেলেই হতো। তা না করে ১৬-১৭ বছর বয়সী ছেলেদের মত আচরন করলেন।
– করতে পারিনি৷
– কেন? ঢিল ছুঁড়ার জন্য ইট, পাথর কিছু পাননি?
– সমস্যা ইট পাথর না৷ আমার কষ্ট করে ঢিল ছুঁড়তেই হয়নি। রুপু জানালার পাশেই বসে ছিলো৷ কাঠের ফ্রেমবন্দী জানালার লম্বা লোহার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলো রুপু। নিয়ন বাতির আলোয় ওর মলিন মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম। পুরো সতেরোদিন পর মেয়েটা আমার চোখের সামনে ছিলো। কি বিষন্নতা ঘিরে রেখেছিলো ওর মুখটা! এতগুলো দিন পর ওকে দেখতে পাচ্ছি, আমার খুশি হওয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু আমি খুশি হতে পারছিলাম না। যেই বিষন্নতা দেখার জন্য আমি মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম সেই বিষন্নতা আমাকে ভীষণ খোঁচাচ্ছিলো। কষ্ট পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমি একটা হাসিখুশি মেয়েকে মেরে ফেলেছি। আমি এই রুপুকে দেখতে চাইনি। আমি সেই আমার আগের রুপুকে একনজর দেখতে চাচ্ছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো চিৎকার করে বলি,
– রুপু, সতেরো যুগ পেরিয়ে গেলো তোমার হাসি দেখি না৷ তোমার হাসির ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দিবে প্লিজ!
সৈকতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ইমরান। এই লোকটাকে খুব বিরক্তিকর লাগছে। কষ্টে মরে যাবে অথচ বলবেনা ভালোবাসি। এ কেমন ধাঁতের লোক! মুচকি হেসে সৈকত জিজ্ঞেস করলো,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
– ধুর, এগুলো কেমন কথা? কষ্ট পাচ্ছেন অথচ ভাবীকে একবার সরি বলে বাসায় ফিরে আসার কথা বলতে পারলেন না?
– নাহ্, বলিনি। আত্মসম্মান যে খুব আমার!
– প্লিজ এই ফালতু যুক্তিটা আমার সামনে বারবার দাঁড় করাবেন না।
– এই ফালতু যুক্তিকেই তো আমি ভালোবেসে খুব যত্নে মনে গেঁথে রেখেছিলাম।
– সম্পর্কটা ভেঙে যাচ্ছে সৈকত ভাই! ঐ মুহূর্তে এরচেয়ে বড় আর কি হতে পারে?
– রুপন্তি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে এটা আমার বিশ্বাস হয়নি৷ বুঝতে পারছিলাম খুব রাগ করেছে। কিন্তু ডিভোর্স ওর দ্বারা সম্ভব না। চিরতরে আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মত রাগ ও করতে পারে না৷ ভেবেছিলাম মা হয়তো আমাকে একটু ভয় দেখানোর জন্য কথাটা বলেছে কিংবা মা ভাবছে ডিভোর্সের কথা শুনলে আমি রুপন্তিকে সরি বলবো। পরদিন রুপন্তি আমার সেই ধারণাও মিথ্যা প্রমাণ করলো।
– লিগ্যাল নোটিশ?
– হ্যাঁ। পরদিন বাসায় আসতেই বাবা আমার হাতে খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে দেখি রুপু আমাকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছে।
– মানুষটা ভালোবাসতেও জানে, খুব অভিমানও করতে জানে। সবই বুঝলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার ধরতে পারছি না। আপনি উনার সাথে এতগুলো দিন এত রুড বিহেভ করলেন, উনি আপনাকে ছেড়ে যায়নি বা কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি। হঠাৎ করেই এমন কি হয়ে গেলো যে উনি ডিভোর্স পর্যন্ত চলে গেলো?
– সব মানুষেরই কোথাও না কোথাও একটা দুর্বলতা থাকে৷ সেই দুর্বলতাটা খুব স্পর্শকাতর হয়। কেও সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করুক সেটা তারা পছন্দ করে না। বিশেষ করে খুব প্রিয় কেও যদি ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তাহলে সেটা তারা মানতে পারে না৷ এমনিতে আমার রুপন্তিকে সহজে কোনো বিষয় নাড়া দিতে পারে না৷ যেকোনো কথা হালকাভাবে নেয়ার গুনটা ওর আছে৷ কিন্তু ঐ যে বললাম দূর্বল জায়গা থাকে। ও যেদিন বাসা থেকে বের হয়ে যায় সেদিন আমি একটা মিসটেক করে ফেলেছিলাম। সেটা হচ্ছে নাদিম৷ নাদিমের ইস্যুটা ছিলো রুপুর উইক পয়েন্ট। এত হাসিখুশি একটা মেয়ে যে মনের মধ্যে এতখানি কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে আমি কখনো টেরই পাইনি৷ কেও টের পাবেও না৷ ওকে দেখলে মনে হয় জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ। ভেবেছিলাম অন্যসব কথাগুলোর মত নাদিমের কথাগুলোও ও খুব হালকাভাবে নিবে৷ কিন্তু ও নিলো না। সেদিন সত্যি সত্যি রুপন্তি কষ্ট পেলো। কথাগুলো আমি বলেছিলাম তাই হয়তো কষ্টটা একটু বেশিই পেয়েছিলো৷ আমি তো ওর খুব প্রিয় মানুষ। আমার কাছ থেকে এই কথাগুলো ও আশা করেনি৷
যেই রুপন্তিকে আমি চিনতাম এটা সে না, এ যেন অন্য আরেক রুপন্তি। ওর অন্যসব ঘটনা মেনে নিতে পারলেও এই ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি৷ লেটার হাতে নিয়ে আমি কতক্ষণ ঝিম ধরে বসেছিলাম আমি জানি না৷
– বাসার লোকজন কিছু বলেনি আপনাকে?
– না। সবাই স্বাভাবিক ছিলো। বাসার লোকদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন রুপুর সাথে আমার ডিভোর্স হওয়া খুব স্বাভাবিক।
– আপনার মা তো বলেই দিলো উনি চান ভাবী আপনার কাছ থেকে দূরে গিয়ে ভালো একটা জীবন কাটাক। হয়তো বাসার সবাই এটাই চাচ্ছিলো।
– হুম৷ আমি সেদিন রাতেই ল’ইয়ারের সাথে যোগাযোগ করলাম। অবজেকশন পেপার রেডি করতে বললাম। পেপার রেডি করে রুপুর কাছে পাঠালাম। রুপু আমাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালো এটা নিয়ে কেউ আমাকে কিছু বললো না অথচ আমি অবজেকশন পেপার পাঠাতেই আমার মা বাবা আমাকে ধরে বসলো।
– কেন?
– আমি কেন ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না সেটা জানার জন্য। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম জানো! আমি ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না এটা জেনে উনাদের খুশি হওয়ার কথা ছিলো৷ খুশি তো হয়নি উল্টো দুজনই রেগে গেলো। বেশ রাগ করেই কথাটা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো।
– কি বলেছিলেন?
– বললাম, আগেও একটা ডিভোর্স হয়েছে৷ এখন কি চাও এবারও ডিভোর্স হোক? মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবো আমি? বিয়ে হয়েছে দুটো। একজন আড়াইবছরে ডিভোর্স দিলো আরেকজন তো একবছরও পার করলো না। আটমাসেই ডিভোর্স দিলো। আশপাশের লোকদের কাছে কত আজেবাজে কথা শুনতে হবে তা জানো?
– তবুও বললেন না উনাকে আপনি ভালোবাসেন!
– উহুম।
– ভাবী জানতে চায়নি ডিভোর্স কেন দিতে চাচ্ছেন না?
– হুম। পরদিন রুপু ফোন করেছিলো। এতগুলো দিন পর আমি রুপুর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। অফিসে ছিলাম তখন। লাঞ্চ আওয়ারের আগ মুহূর্তে কল করলো। বললো বিকেলে আমার সাথে কোথাও বসে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে চায়। রুপুকে একনজর কাছ থেকে দেখার জন্য, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য আমি ছটফট তো করছিলামই, রুপুর কল পাওয়ার পর মনে হলো এবার বুঝি অস্থিরতায় আমার নিঃশ্বাসটাই আটকে আসছে। আমি ঠিকমত ওর সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না৷ জিহ্বায় জড়তা চলে আসছিলো। কোনোমতে হুম, হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দিলাম৷ কয়েক মিনিট চেয়ারে চোখ বন্ধ করে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমি পারছিলাম না। বারবার গলার কাছে গিয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। জীবনে প্রথমবারের মত অনুভব করলাম কারো জন্য আমার নিঃশ্বাসও আটকে যায়! পাশের ডেস্ক থেকে তামান্না খেয়াল করলো আমাকে। জিজ্ঞেস করলো,
– সৈকত, তুমি কি সিক?
আমি তামান্নাকে কোনো রিপ্লাইও দিতে পারছিলাম না৷ আমার দুনিয়া ভেঙে কান্না পাচ্ছিলো। কিন্তু আমি কাঁদতে পারছিলাম না৷ অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো। এসির মাঝে থেকেও ঘামছিলাম খুব৷আমার শুধু বারবার মনে হচ্ছিলো রুপন্তি আমার কপালে একটু হাত রাখলেই আমি আবার নিঃশ্বাস নিতে পারবো। তামান্না মাঝে আরো দুইবার জিজ্ঞেস করলো। আমি একবারও কিছুই বলতে পারলাম না৷ সৈকত মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে, কেউ একটু পানি আনো, কথাটা তামান্না চিৎকার করে বলতে লাগলো। আমি হৈ চৈ শুনতে পাচ্ছিলাম। চোখে স্পষ্ট কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না৷ তামান্না আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো, আমি টের পাচ্ছিলাম। কোনো একভাবে আরেক হাতে তামান্নার হাত টেনে কাছে এনে বললাম,
– রুপন্তিকে একটু আসতে বলবে প্লিজ?
(চলবে)