ঘুণপোকা,পর্ব_১৬
– আপনাকে ওভাবে শুনিয়ে গেলো, ভাবী রাহাতকে কিছু বলেনি?
– না। কেন বলবে? রাহাত তো ভুল বলেনি তাই না?
– পুরো বিকাল-সন্ধ্যা যা নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় ডুবে মরছিলেন ঐ ঘটনার পর কি তা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন তো?
– না৷ প্রশ্ন আমার রয়েই গিয়েছিলো।
– কি প্রশ্ন?
– নাদিম রিকশা আটকে রাখার সাহস পায় কিভাবে? রুপু কেন মিনমিন করে কথা বলছিলো? ও একটু জোরেশোরে চিৎকার করলেই তো নাদিমের সাহস হয় না রুপুর রিকশা আটকে রাখার। খুব সরল একটা যুক্তি দেখাই, ধরো তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তোমার ঝগড়া হয়েছে। তুমি তার সাথে কথা বলে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে চাচ্ছো৷ সেও চাচ্ছে ঝগড়া মিটে যাক কিন্তু তার ইচ্ছে তুমি তার রাগটা আরেকটু যত্ন নিয়ে ভাঙাও। সেই মুহূর্তে তোমার গার্লফ্রেন্ড মিনমিনে স্বরে তোমার সঙ্গে অভিমান দেখাবে, অভিযোগ করবে। দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে। যদি তার ঝগড়া মিটানোর ইচ্ছা না থাকে তো কখনোই মিনমিনে স্বরে কথা বলবে না।
– ওহ! আপনি তাহলে এই যুক্তি ধরে বসেছিলেন!
ভাবী রাহাতের সঙ্গে বাসায় চলে গেলো?
– হুম।
– আপনাকে কিছুই বলেনি?
– না৷
– আপনিও আটকানোর চেষ্টা করেননি?
– উহুম।
– কেন?
– আসলে তখন রুপুর প্রতি খুব অভিমান কাজ করছিলো৷
– কিসের অভিমান?
– রুপু নাদিমকে ভালো কেন বাসে?
– ভাবী নাদিমকে ভালোবাসে এটা কিন্তু ভাবী নিজ মুখে একবারও বলেনি। শুধুমাত্র নাম্বার ব্লক করেনি কিংবা রাস্তায় ঝগড়া করেনি সেই কথার প্রেক্ষিতে আপনি এটা বলতে পারেননা ভাবী নাদিমকে এখনও ভালোবাসে।
– ঈর্ষা কোনো যুক্তি দেখে না ইমরান। আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্য কাউকে ভালোবাসবে এটা তো আমি মেনে নিবো না৷
– ভালোবাসলো কোথায়? ভাবী তো আপনাকেই ভালোবাসে। হ্যাঁ, হতে পারে নাদিম ভাবীর প্রথম প্রেম ছিলো তাই হয়তো মনের কোনো এক কোণায় নাদিমের আলাদা একটা জায়গা ছিলো। এটা থাকবেই, খুব স্বাভাবিক। প্রথম প্রেমগুলো এমনি হয়৷ তারমানে তো এই না যে ভাবী আপনাকে ফেলে নাদিমের হাত ধরে কোথাও চলে যাবে৷
– তুমি যতটা সহজে বলে দিলে প্রথম প্রেমিক মনের এককোনায় ঘাপটি মেরে বসে থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক, ব্যাপারটা আসলে আমার কাছে মোটেও স্বাভাবিক না৷ রুপু আমার মানে শুধুমাত্র আমার। ওর সবটা জুড়ে শুধু আমিই থাকবো। আমি রুপুর প্রথম প্রেম হতে পারিনি সেই আফসোসেই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আমার বেলা যায়, আর তুমি বলছো আমার সঙ্গে জীবন শুরু করার পরও ঐ ছেলেকে আমি মেনে নিবো? অসম্ভব! মনের এক কোণা কেন? রুপুর দূর দূরান্তেও আমি নাদিম নামক আপদকে কল্পনা করতে পারি না৷ বিশ্রি রকমের অসহ্য লাগে।
– ভাবীর নিশ্চুপ চলে যাওয়াও সহ্য হয়নি নিশ্চয়ই?
– না৷ রুপু আমাকে পাত্তা দিচ্ছিলো না একদমই। বিকেলে একটু রাগ করে কি বললাম, সে তার লম্বা লম্বা ঠ্যাং নিয়ে তরতরিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। এখন আসলাম ওর বাসা পর্যন্ত। আমার সঙ্গে কথা না বলেই চলে গেলো বাসায়। একটু তো বুঝা উচিত ছিলো হয়তো আমি কিছু বলতে চাচ্ছি! রুপুর কাছে হঠাৎ করে আমি এতটাই মূল্যহীন হয়ে গেলাম! কাউকে ভালোবাসলে বুঝি নিজের মূল্য এভাবে হারিয়ে যায়!
– আপনি তো ভালোবাসার কথাই বলেননি। না বলেই দুঃখ করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছেন ভাবী আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এত দুঃখবিলাসী কেন আপনি?
– ভালোবাসার কথা অবলীলায় বলে দেয়ার ক্ষমতা সবার থাকেনা৷
– বিয়ের কত বছর হলো আপনাদের?
– সাড়ে তিনবছর।
– এতগুলো সময়ে ভালোবাসার কথা বলতে পেরেছেন?
– হুম, বলেছি তো৷ পরদিনই বলেছি। পরদিন দুপুরে রুপু আমার বাসায় আসলো৷ আমি আমার রুমে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি৷ ঘুমাইনি, এমনিই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। রুপু আমার মুখের উপর থেকে লেপটা টেনে সরালো৷ কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– জ্বর তো নেই৷ পালস রেটও ঠিকাছে শুনলাম৷ তাহলে তোমার সমস্যাটা কোথায়? অসুখটা কি সেটাই তো কেউ বুঝতে পারছে না।
রুপু এসেছে, আমার খুশিতে আটখানা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমার মোটেই খুশি লাগেনি৷ একরাশ চিন্তায় আমি জর্জরিত ছিলাম। আমাকে এতগুলো দিন ধরে সীমাহীন চিন্তায় জর্জরিত রেখে অসুস্থ করে দেয়ার পর রুপুর মুখে এমন প্রশ্ন একদমই মানায় না৷ মেজাজ বিগড়ে দেয়া প্রশ্ন ছিলো সেটা। বিয়ের পর থেকে রুপু আমার মেজাজ বিগড়ে দেয়া ছাড়া আর কিছু করেছে বলে আমার মনে পড়ে না৷ ঠিক সেই মুহূর্তে বারবার একটা প্রশ্নই নিজেকে করে যাচ্ছিলাম,
– কেন আমি এই মেয়েটাকেই ভালোবাসলাম?
রুপু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো জবাবের আশায়৷ আমি কিছুই বলিনি। কি বলতাম? আমাকে তোমার অসুখে পেয়েছে? এই কঠিন কথাটা কি এত সহজেই বলে দেয়া যায়!
উত্তর না পেয়ে রুপু আমার পাশে এসে বসলো। বললো,
– শুনলাম, গতকাল দুপুর থেকে কিছুই খাওনি। কেন?
– ইচ্ছে হয়নি।
– সমস্যাটা কোথায় সৈকত?
– এই মেয়ে, আমাকে সৈকত বলে ডাকবা না।
– তাহলে কি বলে ডাকবো?
– কিছুই ডাকার দরকার নেই।
– আচ্ছা কিছুই ডাকবো না৷ এখন বলো তো কি হয়েছে? ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো না। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে বাসায় পড়ে আছো। জ্বর-ঠান্ডা কিচ্ছু নেই৷ পালস রেট ঠিকাছে। তবুও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছো না। তুমি মুখ ফুটে না বললে সমস্যা বুঝবো কিভাবে?
– তুমি বুঝো না সমস্যা কোথায়?
– মা গতকাল বললো তুমি কেন ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো না৷ দেখো, তুমি আমাকে পছন্দ করো না। কয়েকমাস ধরেই ডিভোর্স চাচ্ছো আমার কাছে। আমিও চাচ্ছি না সংসার করতে। যেই সম্পর্কটা আমরা কেউই চাচ্ছি না সেটা শুধুমাত্র মানুষের ভয়ে কেন আমরা টিকিয়ে রাখবো? আজীবন একটা বোঝা আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে।
ঐ মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিলো রুপু আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে আর আমি খুব শীঘ্রই এই পরীক্ষায় ফেল করবো। পা জোড়া আমার ভীষণ নিশপিশ করতে লাগলো৷ ইচ্ছে হচ্ছিলো তক্ষুনি রুপুকে লাত্থি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেই।
– আপনার কি সত্যিই এমন ইচ্ছে হচ্ছিলো?
– হ্যাঁ, সত্যিই। গায়ের উপর থেকে লেপটা খাটের আরেক মাথায় ছুঁড়ে মারলাম। বললাম,
– তুমি আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিচ্ছো রুপন্তি। চড় খেতে না চাইলে এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বের হও।
– কি আশ্চর্য! চড় লাগানোর মতন কি করলাম আমি? আর কথায় কথায় রেগে যাচ্ছো কেন? খুব সাধারণ কথা বললাম, এখানেও এত রাগ করার কি আছে?
– ভং ধরো? বুঝো না কিছু?
– সবকিছুই তোমার খেয়াল খুশিমত কেন হবে? এতদিন চেয়েছো ডিভোর্স দিতে। আমি রাজি হয়েছি৷ রাজি হওয়ার পর এখন এসে বলছো ডিভোর্স দিতে চাওনা, মানুষ তোমাকে খারাপ ভাববে। মানুষের জন্য কি এখন ডিভোর্স আটকে রাখবো আমি? সারাজীবন এক ছাদের নিচে ঝগড়া করে কাটাবো? আমার পক্ষে এত অপমান সহ্য করা আর সম্ভব না। প্লিজ এবার আমাকে মুক্তি দাও।
– ডিভোর্সের জন্য মন ছুটে গিয়েছে তাই না রুপন্তি? মানুষটা হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আমার হাত না ছেড়ে তার হাত ধরবে কিভাবে তাই না? এজন্যই তো ডিভোর্স দিতে উঠেপড়ে লেগেছো।
– কে অপেক্ষা করছে আমার জন্য?
– কে আবার! নাদিম। তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড, যার হাত ধরে ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলে।
– তোমাকে এসব কে বলেছে?
– তোমার ডায়েরি আর তোমার ইনবক্স৷
– আমার ডায়েরি তোমার কাছে? তুমি আমার ডায়েরি পড়েছো কেন?
– পড়বো না আমি? কে পড়বে তাহলে? তোমার নাদিম?
– কি আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছো! ওর সাথে কেন আমাকে জড়াচ্ছো?
– ওকে ভালোবাসতে পারো আর আমি ওর সাথে তোমাকে জড়িয়ে কিছু বললেই আমার দোষ!
– কে বলেছে নাদিমকে আমি এখনো ভালোবাসি?
– তো কাকে বাসো? বলো? আমাকে ভালোবাসো? বাসো না তো। একদমই ভালোবাসো না৷ এজন্যই তো এত যন্ত্রণা দিচ্ছো। তোমাকে ভালোবাসি বলে এত যন্ত্রণা দিবে আমাকে!
– আহ্! যাক, অবশেষে বলেই ফেললেন!
– ইচ্ছে করে বলিনি। মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো।
– যেভাবেই হোক, বলতে তো পেরেছেন! ঐ কঠিন মুহূর্তে ভাবীকে এই কথাটা জানানো ভীষণ জরুরি ছিলো। ভাবীর ঐ মুহূর্তের মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
– রুপু হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। কথাটা বলে আমিও ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কিছু মুহূর্ত কড়া নীরবতার মধ্যে কেটে গেলো। আমরা কেউই কিছু বলিনি। রুপু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর আমি জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম। কয়েক মুহূর্ত পর রুপু বললো,
– দেখো, তুমি আমাকে কেন ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো না সেই কারণটা আমি জানি। হ্যাঁ, হতে পারে তোমার এই আবদার আমি মেনে নিচ্ছি না৷ তারমানে তো এই না তুমি এখন আমাকে মানানোর জন্য মিথ্যা ভালোবাসার গল্প শোনাবে! তুমি কখনোই ভালোবাসোনি, কখনোই বাসবে না। শুধু শুধু এই নোংরামি করো না।
ভ্রু কুঁচকে এলো ইমরানের। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো,
– ওহ! তারমানে ভাবী আপনার কথা বিশ্বাসই করেনি?
– না। ওর ধারণা ছিলো আমি লোকের কথার ভয়ে ওকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না৷
– ভুলটা কিন্তু আপনারই। আপনিই আপনার মা বাবাকে কথাটা বলেছিলেন।
– হ্যাঁ বলেছিলাম। তখন তো আর অতকিছু ভেবে বলিনি। রুপুকে আমি ভালোবাসি এটা রুপুর কাছে মিথ্যা নোংরা নাটক মনে হচ্ছে, এই ব্যাপারটা মেনে নেয়া ডিভোর্সের চেয়েও আরো বেশি কষ্টের মনে হচ্ছিলো। রুপুকে খুব বেশি অসহ্য লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো এই মেয়েটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ধাতুতে গড়া একটা নির্দয় ডাইনি। এই ডাইনিটার মাথা দেয়ালে ঠুকে ঠুকে মেরে ফেলি। আমাকে ডিভোর্স দেয়ার চেয়ে ভালো হবে রুপন্তি মরে যাক। আমাকে ছেড়ে যদি যেতেই হয় তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাক, আমাকে ছেড়ে এই পৃথিবীর বুকে বিচরণ করা রুপুর জন্য নিষিদ্ধ!
– অন্যায় করলেন আপনি। ভালোবাসা সত্ত্বেও স্বীকার করছেন না আপনি আর ডাইনি ডাকছেন ভাবীকে!
– তখন আমার হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়ার দশা। ঐরকম কঠিন সময়ে ন্যায়-অন্যায় মাথায় আসে নাকি?
– নবনীকে নিয়ে প্রশংসায় মেতে উঠলে ভাবী ঠিক একইভাবে কষ্ট পেত এই অনুভূতিটা কি একবারের জন্যও তখন অনুভব করেছিলেন?
– হুম।
– সরি বলতে ইচ্ছে হতো না?
– হুম, খুব ইচ্ছে হতো।
– কিন্তু বলতে পারতেন না৷ ভিতর থেকে জড়তাগুলো আপনাকে আঁকড়ে রাখতো। তাই না?
– হুম। সেটাও ছিলো আমার ভুলগুলোর মধ্যে একটা৷ নিজের অন্যায়গুলো দেখা সত্ত্বেও আমি রুপুকে সরি বলিনি৷ রুপু আমাকে ক্ষমা করুক কিংবা না করুক, একটাবার ক্ষমা চাওয়া খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো৷ খুব ছোট ছোট ব্যাপারগুলোও সম্পর্কের শক্ত শেকড় হয়ে দুটো মানুষকে সম্পর্কের বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। সরি খুব ছোট্ট একটা শব্দ। তখন আমি রুপুকে অনুশোচনায় কাতর হয়ে সরি বললে হয়তো পরিস্থিতি তখনই সামলে নেয়া যেত। কিংবা রুপু আমার ভালেবাসা অবিশ্বাস করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যদি আমি ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের সমস্ত অনুভূতিগুলো সাজিয়ে ওকে বলতাম হয়তো ও আমার কথা বিশ্বাস করে নিতো। আমি আশায় বসে ছিলাম রুপু নিজ থেকে আমার অনুভূতিগুলো বুঝে নিবে। আমি কিছুই বলবো না৷ এটা ছিলো আমার সবচেয়ে বড় ভুল। আমি ভুলে গিয়েছিলাম রুপু মানুষ, অন্তর্যামি না। মানুষরা কখনো অন্যের অনুভূতি চেহারা দেখে বুঝে ফেলতে পারে না। তুমি কারো চেহারায় তখনি অনুভূতিগুলো বুঝতে পারবে যখন সে অনুভূতিগুলো চেহারার ভাঁজে ফুটিয়ে তুলবে৷ আমি কখন কাকে নিয়ে কি ফিল করছি সেটা প্রকাশ করা ভীষণ জরুরি। যে প্রকাশ করতে জানে তার সম্পর্ক খুব যত্নে থাকে। তাদের সম্পর্কের বয়স বাড়ে, মায়ার সুতো আরও মজবুত হতে থাকে। সবার সামনে না হোক, সবাইকে না হোক এটলিস্ট ভীষণ প্রিয় মুখগুলোকে, যাদের আমরা ভালোবাসি তাদেরকে একটু সময়ের জন্য হলেও আড়ালে পাশে বসিয়ে নিজের অনুভূতিগুলো জানাতে হয়। নয়তো নিজের অজান্তেই সম্পর্কগুলো একটু একটু করে ভাঙতে থাকে৷
– ভাবীর সঙ্গে এই ব্যাপারে আর কথা বলেননি?
– রুপু আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর আমি আমার ঘরের দরজা আটকে বসে রইলাম। সবকিছুর প্রতি প্রচুর বিতৃষ্ণা ছেয়ে যাচ্ছিলো। ঐ ঘর, ঘরের প্রতিটা দেয়াল, ঘরের সব মানুষ আর রুপু। রুপুর সমস্ত স্মৃতিগুলো এসে মাথায় একনাগাড়ে হাতুড়িপেটা করে যাচ্ছিলো। প্রতিদিন ঘুমুতে যাওয়ার আগে আমার কাঁধে নাক মুখ ঘষে বলতো,
– এ্যাই সিকু, ভালোবাসি৷
তাহলে কি ঐ কথাগুলো মিথ্যা ছিলো? প্রতিদিন কি ও আমাকে নিয়ম করে মিথ্যা বলতো? কিংবা আমাকে ছাড়া রাতে ঘুম হয় না ঐ কথাটা? সেটাও কি মিথ্যা? সব মিথ্যা? সব? আমার সঙ্গে কাটানো এই পুরো সাড়ে সাতমাস সংসারের পুরোটাই মিথ্যা? তুমি কারো কাছ থেকে ভালোবাসা এক্সপেক্ট করছো কিন্তু সেই মানুষটা তোমাকে ভালোবাসে না, সেই মুহূর্তে নিজেকে জগতের সবচেয়ে অবহেলিত এবং অসহায় প্রাণী মনে হবে৷ আমারও নিজকে তাই মনে হচ্ছিলো। নিজের এমন দুর্দশা মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি কখনো কাউকে ভালোবাসিনি৷ শুধু রুপুকে ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসা সে কিভাবে পারে অবিশ্বাস করতে! হয়তো বিশ্বাস অবিশ্বাস কিছুই না। এটা শুধু একটা বাহানা। রুপু আমাকে ডিভোর্স দিবে, এসব ভালোবাসার কথা শোনার সময় আছে নাকি? তাই হয়তো অবিশ্বাসের বাহানা ধরে সম্পর্কটা আরেকবার গুছিয়ে নেয়ার পথ বন্ধ করে দিতে চাইছে।
– অবিশ্বাস তো আপনার মনেও ছিলো৷
– হ্যাঁ, তা তো ছিলোই৷ নাদিমকে ঘিরে কতশত ভাবনা যে তৈরী হচ্ছিল মনে! আমি রুপুকে অবিশ্বাস করছি সেটা আমার খেয়ালে একবারও আসেনি৷ রুপু আমাকে অবিশ্বাস করছে এটাই আমাকে চুরমার করে দিচ্ছিলো।
(চলবে)
#মিম