ঘুণপোকা,পর্ব_১৯

0
1195

ঘুণপোকা,পর্ব_১৯

– আপনার উচিত ছিল নমনীয় হওয়া৷ যতটা সম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলা৷ এমন মুহূর্তে শান্ত থাকা উচিত। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে। কিন্তু আপনি বারবার রেগে যাচ্ছেন। একটা মেয়ে আপনাকে ডিভোর্স দিবে, সে নিশ্চয়ই আপনার বিছানায় এসে রাতে ঘুমোবে না! উনার অন্য ঘরে থাকা খুব স্বাভাবিক।
– মনে ঝড় চলছিলো আমার। কাউকে দেখানোর ক্ষমতা ছিল না৷ কঠিন অনিশ্চয়তায় দিন পার করছি তখন। এমন মুহূর্তে শান্ত কিভাবে থাকবো?
– হ্যাঁ মুহূর্ত শান্ত থাকার মত না। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় শান্ত থাকা খুব জরুরি ছিল। ঐ সময়ে আপনার রাগ হয়তো সম্পর্কটাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারত তাই না?
– রুপুর এমন কঠোর রুপের সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম না৷ হঠাৎ মেয়েটা এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাকে ফেলে দিলো, সেখানে নিজেকে কিভাবে খাপ খাওয়াবো সেটাই আমি জানতাম না৷ আমি সবসময় রুপুকে হাসিখুশি, ভীষণ নরম মনের মানুষ হিসেবে জেনেছি। হঠাৎ করে এই মেয়ে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে সেটা আমি কল্পনাও করিনি৷ কতশত দ্বিধার মাঝে ভাসছিলাম আমি! নাদিমের ইস্যুটা শেষ হলেও অন্য দ্বিধা আমার মনে রয়েই গিয়েছিলো।
– কোন দ্বিধার কথা বলছেন?
– রুপু কি আমাকে মন থেকে একদম মুছে ফেললো? এত দ্রুত কি করে কেউ কাাউকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে! মেয়েটা তো আমাকে ভালোবাসতো। ভালোবাসা কি মুছে গেল নাকি শুধুমাত্র অভিমান থেকেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়া?
– দ্বিধার একমাত্র সমাধান কথা বলা৷ আপনি কথা না বলে উল্টো রাগারাগি করেই যাচ্ছেন। রাগ দেখিয়েই তো কতগুলো সময় নষ্ট করলেন!
– তা তো করেছিই। সেদিনও করেছি। কথাগুলো বলে নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে বসে ছিলাম প্রায় আধাঘন্টা। কিছুটা শান্ত হওয়ার পর ভেবে দেখলাম আমার কথা বলা উচিত। রুপুর আসতে হবে না, আমিই সাবিহার ঘরে যাবো।
– সাবিহার সামনেই কথা বলেছেন?
– না। ওকে আমার ঘরে এসে ঘুমোতে বলেছিলাম। ও প্রথমে রাজি হয়নি৷ সেইবার জীবনে প্রথম আমি সাবিহাকে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য৷ হয়তোবা সাবিহার একটু হলেও মায়া হয়েছিলো আমার জন্য! আমি রিকুয়েষ্ট করছি সাবিহাকে, সাবিহা তাকিয়ে আছে রুপুর দিকে৷ ভীষণ দ্বিধায় কয়েক সেকেন্ড কাটিয়ে ও আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলো৷ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রুপুকে সাবিহা বলে গেল,
– ভাবী, কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডাক দিও।
ভেবে দেখো অবস্থা! আমার বউকে আমার বোন আমার কাছে রেখে যাচ্ছে অথচ বলে যাচ্ছে কোনো সমস্যা হলে যেন ওকে ডাকা হয়! আমার বউ আমার সঙ্গে থাকবে এখানে সমস্যা আসবে কোত্থেকে? আমার বোন আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না!
– আপনি বিশ্বাস করার মত কখনো কিছু করেছেন? ঘরে আপনার পজিশন খুবই নড়বড়ে ছিল। দোষটা কিন্তু আপনারই৷
– হুম, তা তো আমারই! নয়তো বাবা মা কি আর ছেলেকে বাদ দিয়ে ছেলের বউকে বুকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে! যাই হোক, গল্পে ফিরে আসি৷ সাবিহা চলে গেল। রুপু লেপের ভিতর থেকে বেরিয়ে উঠে বসলো। আমি দরজা লক করে দিলাম। প্রশ্নবিদ্ধ নজরে রুপু তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। রুপুর পাশে আমি চুপ করে বসে রইলাম। অনেক কিছু বলার ছিলো রুপুকে। বিকেল থেকে মনে মনে অনেক প্রিপারেশন নিয়েছি, কিন্তু রুপুর সামনে গিয়ে আর কিছুই বলতে পারছিলাম না। রাগে কষ্টে আমার কান্না পাচ্ছিলো কেন আমি এমন? কেন আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি না? খারাপ ব্যবহারের বেলায় তো এমন হয়নি! তাহলে আজ যখন সবকিছু গুছিয়ে আনতে চাচ্ছি এখন কেন এমন হচ্ছে? অনেকটাসময় চুপ করে কাটানোর পর রুপু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কিছু বলতে এসেছিলে। বলছো না যে?
– রুপন্তি আমাকে জিজ্ঞেস করো না। শুধু আমার হাতটা ধরে বসে থাকো প্লিজ।

রুপু বোকা বোকা চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি চিন্তায় ডুবে যাচ্ছো সৈকত, তোমার চেহারায় স্পষ্ট ভেসে উঠছে। মানুষ কি ভাববে না ভাববে এসব নিয়ে ভাবার মানুষ তো তুমি না। কবে থেকে শুরু করলে এত ভাবনা!

রুপুর প্রশ্নে আমি মনে বেশ জোর পাচ্ছিলাম। যে কথাগুলো জমা ছিলো সেগুলো একটু আধটু করে মুখ ফুটে বেরিয়ে আসতে লাগলো৷ বললাম,
– তোমার কাছে কি মনে হয় রুপন্তি? আমি শুধু লোকের কথা ভেবে তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি না?
– তুমিই তো বললে! আমি কেন মনে করতে যাবো!
– আমি বললেই বিশ্বাস করবে?
– তুমি কি চাও? তোমার কথা আমি অবিশ্বাস করি?
– দেখো, সেই সন্ধ্যা থেকে কথা গুছাচ্ছি তোমাকে বলবো বলে। কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছে, পারছি না আমি৷ বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে৷ হাবিজাবি প্রশ্ন করে আমাকে আরো এলোমেলো করে দিও না।
– আচ্ছা জিজ্ঞেস করবো না। কি কি গুছিয়ে রেখেছো বলতে থাকো।
– তুমি আমাকে বুঝো না কেন রুপন্তি? কেন আমাকে সব বলতে হবে? আমি সব কথা বলতে পারি না। অস্বস্তি হয় আমার! একটু তো বুঝার চেষ্টা করো আমাকে!
– কি বুঝবো আমি?
– আমি চাচ্ছি না ডিভোর্স হোক৷
– আচ্ছা, ধরে নিলাম লোকের ভয় না অন্য কারণে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো না৷ কিন্তু কারণটা কি?
– আর কি কারণ হতে পারে?
– হ্যাঁ, বলো আর কি কারণ? আমি তো শুনতেই চাচ্ছি।
– দুপুরে যে বললাম!
– কি বলেছো?
– মনে নেই তোমার?
– আমাকে ভালোবাসো?
– হুম।
-…………
– বিশ্বাস করো রুপন্তি, কথাটা সত্যি৷ বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই। তুমি চলে যাওয়ার পর…….
অনেক অনেক কথা গুছিয়ে রেখেছিলাম তোমাকে বলার জন্য। তোমাকে আমি কতটা অনুভব করি সবটা তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিচ্ছু বলতে পারছি না আমি৷ শুধু বলতে পারবো তোমাকে ভালোবাসি৷ আমার এই ছোট্ট কথাটা তুমি বুঝতে পারছো তো না?

রুপু একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বসে রইলো। আমি তাকিয়ে রইলাম রুপুর দিকে৷ আমি চাচ্ছিলাম ও কিছু বলুক। ভালো কিংবা মন্দ কিছু একটা তো বলুক। ও কিছুই বলছিলো না। রুপু কেন মাথানিচু করে মুখ লুকিয়ে রেখেছিলো আমি জানি না৷ হয়তো ওর কান্না পাচ্ছিলো তাই। আমি আবার বললাম,
– রুপন্তি প্লিজ অবিশ্বাস করো না আমাকে। সত্যিই ভালোবাসি। এই প্রথম কাউকে ভালোবেসেছি আমি! ডিভোর্স পেপারে সাইন করার মত ক্ষমতা আমার এই হাতে নেই৷ এই হাতে তোমার হাত বেঁধে রাখতে চাই আজীবন৷ তুমি বুঝতে পারছো তো আমার কথাগুলো না? দেখো, আমি অত বুঝিয়ে বলতে পারি না। প্লিজ আমার কথাগুলো একটু বুঝে নাও৷ আমার ভীষণ কান্না পায় তোমার জন্য৷ আমি কাঁদতে পারি না, কখনোই না। আমি কেঁদে কেঁদে ভালোবাসি বলছি না বলে কি আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে?
– কেন সৈকত? সম্পর্কের শেষ মুহূর্তে এসে এই কথাগুলো কেন বলছো?
– অনুভূতি যখন অনুভব করবো তখনই তো বলবো।
– এভাবে শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অনুভব করলে?
– কিচ্ছু শেষ হয়নি৷ চাইলেই আগের জায়গায় সব নতুন করে শুরু করা যায়৷
– কি শুরু করবে তুমি? ভাঙা মন কি করে জোড়া লাগাতে তা কি তুমি জানো? জানো না। কাঁচ জোড়া লাগানোর মত মন জোড়া লাগানো অত সহজ না। যে ভাঙে সে জানে না ভেঙে কতখানি টুকরো হলো, যার ভাঙে শুধু সে জানি কতখানি টুকরো হলো। টুকরো হওয়া সংখ্যাই জানো না, জোড়া লাগাবে কি করে?
– সব ঠিক হয়ে যাবে রুপন্তি। একটু সময় দাও আমাকে।
– ভাঙা মনটাকে ঠিক করতেই তো এসেছিলাম তোমার কাছে। ভেবেছিলাম খুব যত্নে জোড়া লাগাবে তুমি। একটা দাগও খুঁজে পাবো না আমি। কিন্তু কি করলে তুমি বলো তো? টুকরোগুলোকে আরো হাজারখানেক টুকরো করে দিলে। এখন মনে হয় ভাঙা টুকরোতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জোড়া লাগাতে আর ইচ্ছে হয় না একদমই। আমি চাইনা আর কখনো জোড়া লাগুক, যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক।
– এভাবে বলো না প্লিজ! আমি পারবো না ডিভোর্স দিতে। আমাকে দিয়ে হবে না।
– ডিভোর্স পেপার শুধু সমাজকে দেখানোর একটা কাগজ মাত্র। মনের দূরত্ব তো সেই প্রথম থেকেই ছিল। কখনো কি আমরা এক হতে পেরেছি? পারিনি তো। তখন দূরত্ব তোমার পক্ষ থেকে ছিল, এবার আমার পক্ষ থেকে। আমি চাই না এই দূরত্ব আর কখনো মিটে যাক। নিজের দেখা স্বপ্নগুলোর প্রতি খুব বিতৃষ্ণা ধরে গেছে। কেউ আমাকে খুব ভালোবাসবে, সেই ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে জনম পার করবো সেই সাধ আর হয় না। আমি আমার পিছনের জীবনে যখন তাকিয়ে দেখি খুব হতাশ হই। কি করেছি আমি আজ পর্যন্ত নিজের জন্য? কিচ্ছু না। চাইলে আমি জীবনটা খুব সুন্দর করে সাজাতে পারতাম। তা না করে আমি দুজনকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেয়ে গেলাম। একজন নাদিম, আরেকজন তুমি। তোমরা দুজন ছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল এবং জঘন্য সিদ্ধান্ত।
– স্যরি।
– দেখো সৈকত, এখন আমি স্যরি কিংবা ভালোবাসি কিছুই শুনতে চাচ্ছি না৷ আমার যা সিদ্ধান্ত নেয়ার ছিল আমি নিয়েছি৷ আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়বো না।
– কি সিদ্ধান্ত? ডিভোর্স?
– ডিভোর্স নিয়ে আমার অত মাথাব্যথা নেই। কারো কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইলে ডিভোর্স জরুরী না৷ আমি তো ডিভোর্স দিতে চাচ্ছিলাম তুমি চাচ্ছিলে তাই। যেহেতু এখন আর চাচ্ছো না শুধু শুধু এই একটা কাগজের জন্য এত ছুটোছুটির তো দরকার নেই। ভালোই হলো, নতুন জায়গায় যেয়ে এসব নিয়ে আর বাড়তি ভাবনা ভাবতে হবে না৷
– নতুন জায়গা মানে?
– আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি। সাবিহার বিয়ের পরদিন দুপুরে আমার ফ্লাইট।
-অস্ট্রেলিয়া! ভাবী দেশের বাহিরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো!
– হ্যাঁ। এই দেশ থেকে স্কলারশিপ নিয়ে ওখানে যাচ্ছিলো।
– আপনি আগে এসবের কিছু জানতেন না?
– না।
– আপনি ভাবিকে জিজ্ঞেস করেননি আপনাকে আগে কিছুই জানালো না কেন?
– করেছি৷ রুপু বললো, ইচ্ছে করেই জানাইনি। এপ্লিকেশন যখন করি তখনও তো জানতাম না কনফার্ম হবে কি হবে না৷ ফ্রেন্ডের দেখাদেখি আমিও এপ্লিকেশন করেছিলাম। তাছাড়া ভেবেছিলাম যাওয়ার ঠিক আগেরদিন রাতে হঠাৎ তোমাকে জানিয়ে সারপ্রাইজ দিবো। তুমি তো সবসময় চাইতে আমি দূরে সরে যাই৷ দূরে সরে যাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছে শুনলে খুব খুশি হবে জানতাম। বিয়ের পর কখনো তোমাকে খুশি করতে পারিনি৷ আমি তোমার খুশির কারণ হতে পেরেছি তোমার সেই মুখটা একবার কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। এসব ভেবেই আর বলিনি৷
– এটা কি খুশি হওয়ার মত কোনো খবর ছিল?
– আমার জন্য অনুভূতিগুলো বদলে গেছে তাই হয়তো তোমার খুশি লাগছে না৷ যদি অনুভূতি আগের মতই থাকতো তাহলে কি খুশি হতে না?
– তুমি কোথাও যাচ্ছো না৷ তুমি এখানেই থাকবে, আমার সঙ্গে থাকবে।
– আমি যাবো। নিজের জন্য তো কখনো কিছু করিনি। এবার নাহয় নিজেকে ভালোবেসে নিজের জন্য কিছু করি।
– যা করার এই দেশে থেকে করবে। দেশের বাহিরে গিয়ে এত পড়াশোনার দরকার নেই। আমার এত উচ্চ শিক্ষিত বউ দরকার নেই৷
– আমি তো তোমার মতামত জানতে চাইনি সৈকত।
– মানে কি? আমি কেউ না? তোমার কাছে আমার কোনো ইমপরট্যান্স নেই?
– সম্পর্কের এই পর্যায়ে এসে ইম্পরট্যান্স নিয়ে প্রশ্ন না উঠানোই ভালো।
– তুমি রান্নাবান্না কিচ্ছু জানো না৷ ওখানে গিয়ে কি খাবা তুমি? কে খাওয়াবে তোমাকে?
– নিজে যা পারি তাই বানিয়ে খাবো।
– হাত কাটবে, পুড়বে। কে দেখবে তোমাকে সেখানে? মাইগ্রেন পেইনে তো বিছানায় আধমরা হয়ে পড়ে থাকো। মাথায় তেল লাগিয়ে দিবে কে? চুলে টেনে দিবে কে?
– কে দেখবে আবার! নিজেরটা নিজেই দেখবো। ব্যাথায় কাতর হয়ে চিৎকার করে কাঁদবো, বিছানায় ফ্লোরে গড়াগড়ি খাবো তারপর নিজেকে নিজেই সামলে নিব। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে সৈকত৷
– আর আমি? আমি কিভাবে থাকবো?
– আমি তোমাকে যতটুকু ভালোবাসি ঠিক ততখানি ভালো কি তুমি আমাকে বাসো? না তো। তুমি কখনোই আমার মত করে আমাকে ভালোবাসতে পারবে না৷ তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিলে, আমি দূরে সরেই বাকি জীবনটা পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যদি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারি তাহলে তুমি কেন পারবে না? তুমিও পারবে৷ কষ্টের অনুভূতিগুলো আসলে শুধু সময়ের ব্যাপার৷ সময়ের সাথে কষ্টগুলোও ফিকে হতে থাকে। প্রথমদিকে হয়তো কষ্ট হবে, তারপর অভ্যস্ত হয়ে যাবে তুমি। সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে।
– সবকিছু এত সহজ রুপন্তি?
– সহজ ভাবলেই সহজ।
– আমি তোমার মত সবকিছু এত সহজে মেনে নিতে পারি না৷
– এবার মেনে নিতে হবে। তুমি যত কিছুই বলো আমি থাকবো না এখানে। আমি যাবোই।
– আমি মানবো না৷ তোমাকে যেতেও দিবো না। তুমি আমার সঙ্গেই থাকছো। সম্পর্কটা আমি আবার ঠিক করে ফেলবো। একটু ভাবো রুপন্তি, সম্পর্কটা এভাবে শেষ করে দিও না।
– আমাকে জোর করে বেঁধে রাখবে?
– তুমি যেতে চাইলে জোর করেই বেঁধে রাখবো।
– আমাকে নাহয় বেঁধে রাখবে, আমার মন বাঁধবে কিভাবে? আমার দিকটা একটু ভাবো। খুব ছোট বয়সে একটা ভুল করেছিলাম, সেই ভুলের খেসারত এখনো দিয়ে যাচ্ছি। জীবন কি, জীবনের আনন্দ কি সেসব বুঝার আগেই মস্তবড় পাপ করে বসলাম যেই পাপের ক্ষমা আমি আজও পাইনি। আমার কাছের লোকগুলো হয়তো আমৃত্যু আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না৷ সবসময় বাঁকা নজরেই দেখবে৷ আমি চুপ থাকি, চিৎকার করে কাঁদি না তাই বলে কি আমার কষ্ট হয় না৷ কষ্ট আমারও হয়৷ আমার আপনজনেরা আমার অনুভূতিগুলোকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কতটা ক্ষত-বিক্ষত করেছে সেই খবর কেউ জানে না৷ সেই আপনজনদের মাঝে তুমিও একজন। এতগুলো বছর পার করলাম সবার কাছ থেকে খোঁটা শুনে। যা বলি তাতেই দোষ, যা করি তাতেই দোষ। পৃথিবীর সমস্ত দোষ নিয়ে আমি একাই কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছি। নিজের দোষ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত, ভীষন ক্লান্ত। আমার একটু বিরতি খুব প্রয়োজন। আমি আর পারছি না মেনে নিতে। আপনজনদের প্রতি বিতৃষ্ণা ধরে গেছে৷ আমার অবস্থা আমি কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না, বুঝাতে চাচ্ছিও না। এতগুলো বছরে কখনো ইচ্ছে হয়নি আমি মারা যাই। সবসময় ভাবতাম কেউ একজন একদিন আসবে, তাকে আঁকড়ে আমি বাঁচবো। সেই একজন এলো ঠিকই কিন্তু সে আর আমাকে আঁকড়ে ধরলো না৷ আজকাল হুটহাট মরার সাধ জাগে। কিছুক্ষণ মুখে বালিশ গুঁজে চিৎকার করে কাঁদি তারপর আবার শান্ত হয়ে যাই। নিজেকে নিজেই বুঝাই, আমি আমার নিজেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবো। একাই সুখী হবো, হাসবো, কাঁদবো, ভালো থাকবো৷ আমি তোমাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই কিছুদিন। হয়তোবা তুমি আমাকে জোর করে আটকে রাখতে পারবে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না৷ বরং সম্পর্কটা আরো নষ্ট হবে। প্লিজ এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা করো না। আমাকে যেতে দাও।

চলবে

#মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here