চক্রব্যুহ,১২,১৩

0
128

#চক্রব্যুহ,১২,১৩
মোহাম্মদ মনোয়ার
[বারো]

রাত বারোটা বেজে দশ মিনিট। হাসিবের মাজদা এমএক্স ফাইভ মিয়াটা ক্লাব ২০২১ মডেলের টু সিটার গতির ঝড় তুলে প্রায় উড়ে এসেছে নিকুঞ্জ দুই এ। লা মেরিডিয়ান হোটেলকে পাশ কাটিয়ে নিকুঞ্জ দুই এর মূল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা বার নম্বর রোডের পয়ত্রিশ নম্বর হাউজের সামনে এসে থামালেন হাসিব। নির্জন রাস্তা। লোক চলাচল নেই। আশেপাশে কাউকে দেখা গেল না। পয়ত্রিশ নম্বর হাউজটি ছয়তলা বিল্ডিং। পাঁচ কাঠার প্লট হবে। একেক ফ্লোরে দুটি করে ইউনিট। গাড়ি থামাতেই আরিফ নেমে এক নজরে আশেপাশে দেখে নিল। হাসিব গাড়ির ইগ্নিশন বন্ধ করে নেমেই এক দৌড়ে গেটের কাছে গিয়ে চিৎকার করে দরোজা খুলে দিতে বললেন। ডান হাতে ধরে রেখেছেন বহু বছরের বিশ্বস্ত সাথী ওয়ালথার টিপিএইচ পয়েন্ট টু টু বোরের পিস্তল। খুব একটা ব্যবহার করতে হয়নি। কিন্তু প্রয়োজনের সময় চিতা বাঘের ক্ষিপ্রতায় এই ছোট পিস্তল হাতে উঠে এসেছে হাসিবের। লক্ষ্য ভেদ করেছে বহুবার। আরিফ কোমরে হাত বুলিয়ে অনুভব করে নিল তার অতি প্রিয় বেরেটা ৯২ এফএস পিস্তল ঠিক জায়গায় আছে কিনা। পিস্তলের ব্যারেলে হাত রেখে বাড়ির মেইন গেটের দিকে এগিয়ে গেল সে ও। চিৎকার চেঁচামেচিতে দুজন দারোয়ান ছুটে এসেছে। ঢোকার মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। হাসিব “লাইট জ্বালাও” বলে চিৎকার দিতেই একজন সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। দরোজা খুলে দিয়েই দুই হাত উপরে তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে দুজনেই। ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। হাসিব দুজনের দিকে পিস্তল তাক করে আরিফকে ইশারা করল। আরিফ ডান হাত পিস্তলের ব্যারেলে রেখে বা হাতে পকেট থেকে পুলিশের পরিচয়পত্র এক ঝলকের জন্য দুজনের চোখের সামনে তুলে দেখাল। দেখিয়েই সাথে সাথে ব্যাক পকেটে চালান করে দিয়ে কোমর থেকে নিজের পিস্তল উঁচিয়ে ধরল।

-আমরা পুলিশের লোক। সাফোয়ান ফ্ল্যাটে নিয়ে চল। কুইক!

ভয়ে ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল দারোয়ান দুজন। এখনো ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না। আরিফ একজনের কলার খামচে ধরে লিফটের দিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল। হাসিব তখনো আরেক দারোয়ানের মুখের উপরে তার পিস্তল তাক করে রেখেছে। লিফট আসতেই হাসিব তার সামনে দাঁড়ানো দারোয়ানের কলার চেপে একইভাবে টেনে নিয়ে আসল। প্রথম দারোয়ান লিফটের চার এ চাপ দিয়েছে। লিফট থেকে নেমে দুপাশে দুটি ফ্ল্যাট। “কোন ফ্ল্যাট?” গর্জে উঠল আরিফের গলা। ডান পাশেরটা ইশারা করে দেখিয়ে দিল এক দারোয়ান। ওদেরকে টানতে টানতে ফ্ল্যাটের সামনে চলে এসেছে দুজনে। হাসিব দরোজার হাতল ঘুরিয়ে দেখলেন। ভেতর থেকে বন্ধ। কলিং বেল চেপে ধরল আরিফ। এক দুই করে দশ পর্যন্ত কাউন্ট করে ফের কলিং বেল বাজাল। কোন সাড়া নেই!

-আরিফ। দরোজা ভাঙতে হবে। সময় নেই হাতে!

ততক্ষণে এক দারোয়ান কিছুটা সাহস ফিরে পেয়েছে। লিফটের পাশে সিঁড়ির সামনে ফায়ার ফাইটিং এর যন্ত্রপাতি আর বক্স রাখা। দৌড়ে সে বক্স খুলে একটা ফায়ার এক্স নিয়ে ফিরে এসেছে। “গুড জব!” বললেন হাসিব। “এই তোমরা দাঁড়িয়ে দেখছ কী?” দারোয়ান দুজনকে কষে ধমক লাগালেন। “দ্রুত ভাঙ দরোজা। আর আরিফ। তুমি নিকুঞ্জ থানায় ফোন করে ইনস্পেক্টর হাবিবকে আসতে বলে দাও। কুইক!” বলে নিজেও হাত লাগালেন। ফায়ার এক্স এর দুটো কোপ পরতেই দরোজার লক খুলে আসল। কাঁধের এক ধাক্কায় দরোজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন হাসিব। ডান হাতে উঁচিয়ে ধরা পিস্তল। চারিদিকে রেকি করে হাত বাড়িয়ে লাইটের সুইচ খুঁজে চাপ দিলেন। সামনেই ডাইনিং টেবিল। ওপাশের এক চেয়ার উল্টো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। তার পাশে এলোমেলো আলুথালু বেশে একটা মেয়েও পড়ে আছে। কাছে যেতেই দেখা গেল মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে।

-আরিফ! সবগুলো ঘর খুঁজে দেখ কেউ আছে কিনা এখনো। তোমরা দাঁড়িয়ে দেখছ কী? কমিটির কাউকে খবর দাও। এম্বুলেন্স ডেকে পাঠাও। ভাগো এখান থেকে এখন!

হাসিবের চিৎকারে পুরো ফ্ল্যাট কেঁপে উঠেছে। বাইরে শোরগোল শোনা গেল। “কাউকে ঢুকতে দেবে না আমরা ক্লিয়ারেন্স না দেয়া পর্যন্ত। বুঝেছ?”

আরিফ পিস্তলটা ডান হাতে রেখে বা হাতে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে ডানে বায়ে সতর্কতার সাথে দেখতে দেখতে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল। নেই! কেউ নেই! পাখি ভোজভাজের মত উড়ে পালিয়েছে।

রাত চারটা বিশ মিনিট। স্থান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ।

এই ধরণের পুলিশের কেস প্রাইভেট হাসপাতাল সবসময় এড়িয়ে চলে। সাফোয়ানকে নিয়ে সোজা তাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছিল হাসিব। নিকুঞ্জ থানার ইনস্পেক্টর হাবিবের সাথে কলাবাগান থানা থেকে আজিমও যোগ দিয়েছে হাসিব উদ দৌলার সাথে। অপেক্ষা করে ছিলেন সাফোয়ান কখন জ্ঞান ফিরে পাবে এবং কথা বলার মত অবস্থায় ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে আসায় একটু আগেই সাফোয়ানকে সাধারণ বেডে শিফট করা হয়েছে। হাতে স্যালাইন লাগানো। জ্ঞান ফিরে আসলেও এখনো কোন কথা বলেনি। নড়াচড়াও করছে না। ডাক্তারেরা বলেছেন আপাতত স্ট্যাবল কন্ডিশন। মাঝে কয়েকবার পিট পিট করে তাকিয়েছে মাত্র।

সাফোয়ানের মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। ও বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ছাড়া আর কোন কিছুই চুরি যায়নি। ইন্ট্রুডারদের ট্রেস করা যায়নি। গত সাত আটদিন ধরে সিকিউরিট ক্যামেরা সিস্টেম নষ্ট হয়ে আছে। এটা ওই এপার্টমেন্টের কেউ জানতই না। এ মাসেই উঠেছিল সাফোয়ান সেই ফ্ল্যাটে। এখনো কারো সাথে তেমন পরিচয়ও হয়ে ওঠেনি ওর। পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলার মতে রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটার দিকে আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা দুজন ভদ্রমহিলাকে লিফটে উঠতে দেখেছিলেন। উনি তখন ওষুধ কিনতে নিচে নামছিলেন। এই ফ্ল্যাটে ভিজিটর’স লগ মেইন্টেইন করা হয় না। কোন ফ্ল্যাটে যাচ্ছে বা কে যাচ্ছে সেটা লেখা হয় না। বোরকা পরা মহিলারা যখন আসেন, তখন দুজন দারোয়ানের কেউ মেইন গেটে ছিল না। তিনতলার এক ফ্ল্যাটে দুজনে “বাজার” উঠিয়ে দিতে গিয়েছিল।

প্রাথমিক তদন্তে এটেম্পটেড মার্ডার বলে মনে হচ্ছে। নাসিমের কাছে কল লিস্ট জানতে চাওয়া হয়েছে। হাসিব উদ দৌলার চাপে পড়ে বেচারা নাসিমের রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। হাসিব আবরার হোসেনের ব্যাপারে আলোচনা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন ইনস্পেক্টর হাবিবের সামনে। আরিফ বুঝতে পেরে আজিমকে কানে কানে বলে দিয়েছে আবরার প্রসঙ্গ না আনতে।

-স্যার সাফোয়ান নামের এই মেয়েটি আপনাদের খোঁজ পেল কি করে? আমাদের থানায় তো কোন রিপোর্ট করেনি!

ইনস্পেক্টর হাবিব দু দুবার গলা পরিষ্কার করে অবশেষে হাসিবকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল। প্রশ্নটা খুবই স্বাভাবিক। নিকটবর্তি থানায় না জানিয়ে প্রাইভেট ডিটেক্টিভকে কেন জানাতে গেল সাহায্য করার জন্য!

-হাবিব, এটা মূল বিষয় নয়। কাজের সূত্রে সে আমার পরিচিত। এসব প্রশ্ন না করে আমাদের খুঁজে বের করা দরকার কেন তাকে আক্রমণ করা হয়েছে। লাকিলি শি সারভাইভড ডিউ টু আওয়ার টাইমলি ইন্টারভেনশন।

-জ্বী স্যার। তা তো অবশ্যই!

শুকনো হাসি। জোর করে হাসার চেষ্টা করেছে ইনস্পেক্টর হাবিব। তাতে তাকে বেশ বোকা বোকা দেখাচ্ছে। আরিফের কাছে বেশ মজা লেগেছে তার অভিব্যক্তি। এমন সময়ে আরিফের ফোনের রিং টোন বেজে উঠল।

-স্যরি স্যার। একটু উঠতে হচ্ছে।

আরিফ আজিমকে সাথে নিয়ে একটু দূরে যেতেই ইন্সপেক্টর হাবিব টুল টেনে হাসিবের কাছে চলে আসল।

-স্যার। এই মেয়ের নামে থানায় দুইবার অভিযোগ জানানো হয়েছিল। প্রথমবার মৌখিকভাবে সাবধান করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার তাকে মুচলেকায় সই দিতে হয়েছিল।

-তাই নাকি! কী বিষয়ে বলুন তো!

একটু এদিক সেদিক তাকাল ইনস্পেক্টর হাবিব। ওর চোখে মুখে শেয়ালের ধুর্ততার ছাপ আছে। হাসিবের কাছে তেমনটাই মনে হল।

-আমি তো স্যার ভেবেছিলাম আপনার পরিচিত। আপনি হয়ত তার সম্বন্ধে সব কিছু জানেন।

-হাবিব। একটা ইনফো দেয়া প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। এই মেয়েটির সাথে আমাদের প্রথম কথা হয় গতকাল সন্ধ্যার দিকে। সেটাও আমার হাতে আসা নতুন এক তদন্তের সূত্রে।

-স্যার বলা যাবে কী বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন?

-না। বলা যাবে না। আপনার কাছে সাফোয়ান নামের এই মেয়েটির সম্বন্ধে কোন খবর থাকলে জানাতে পারেন। ইচ্ছে না হলে থাক। আমার তদন্তের সাথে ওসবের কোন যোগসুত্র নেই।

-বুঝতে পেরেছি স্যার! এই সাফোয়ান মেয়েটি সহজ ভাষায় বলতে গেলে একজন সামাজিক নুইসেন্স। দুইবার তাকে বাড়ি বদলাতে হয়েছে। রাত বিরাতে প্রচুর ছেলেমেয়ে নিয়ে পার্টি করে বেড়ায়। স্বভাব চরিত্র ভাল না স্যার।

-আচ্ছা! সে আগাগোড়াই কি নিকুঞ্জবাসী?

– জ্বী স্যার।

-মানে সে ঘুরে ফিরে নিকুঞ্জ এলাকায়ই থাকছে। নিকুঞ্জ ছেড়ে যাচ্ছে না কেন?

-সেটাও এক রহস্য স্যার। দ্বিতীয় অভিযোগের পরে তাকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সচিব পর্যায়ের এক স্যারের ফোন পেয়ে আর করা হয়নি স্যার।

-এই অল্প বয়সী মেয়েটির তো তাহলে ভালই যোগাযোগ আছে উঁচু পর্যায়ের সাথে। তাহলে তাকে এই অবস্থায় পড়তে হলো কেন!

-আমার তো মনে হয় ড্রাগ নিয়ে কিছু একটা হবে স্যার। এইসব পার্টির প্রধান উপজীব্য ড্রাগ। বড় ঘরের সব ছেলেপেলে জড়িত। এদের কেউ হয়ত ওকে বাধা মনে করে দুনিয়া থেকে বিদেয় করতে চেয়েছিল। খেয়াল করেছেন স্যার? ড্রাগের ওভারডোজ ছিল। ডাক্তার কিন্তু এমনটাই বলছিলেন।

-হুম। ভাবনার বিষয়। ঠিক সময়ে ওয়াশ করতে না পারলে অন্য কিছু ঘটে যেতে পারত। মেয়েটি মনে হয় চোখ মেলে চাইছে।

সাফোয়ান খুব মৃদু স্বরে কিছু একটা চাইছিল। হাসিব টুল টেনে ওর মাথার কাছে নিয়ে গিয়ে বসলেন।

কান পাততে খুব অস্পষ্ট শুনতে পেলেন। “পানি, পানি”। আজিম আর আরিফ ফিরে এসেছে ফোন কল শেষ করে।

-আরিফ। একজন নার্সকে ডেকে নিয়ে এসো। সাফোয়ানের পালস আর প্রেশার মাপতে হবে। সাথে সে পানি খেতে চাচ্ছে।

“জ্বী স্যার” বলে আরিফ নার্স ডাকতে চলে গেল।

-সাফোয়ান, সাফোয়ান। চোখ মেলুন। আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?

ইনস্পেক্টর হাবিব আর আজিম সাফোয়ানের মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সাফোয়ান কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। হাসিব কান পেতে দিলেন সাফোয়ানের মুখের কাছে। বা’হাত দিয়ে ওর হাতের কব্জির কাছটায় ধরে রেখেছেন, পালস দেখার চেষ্টা করছেন। খুবই অস্পষ্ট কথা। ঠিক বুঝতে পারলেন না। নার্স আসতেই হাসিব সাফোয়ানের পালস আর প্রেশার চেক করতে বললেন। সাফোয়ান তখনো বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইশারায় হাসিব ওকে থামতে বললেন। মুখে বললেন, “পরে কথা হবে।“

-স্যার। ওর পালস প্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেশার ভীষণ লো। একজন ডাক্তার ডাকা দরকার। ভেন্টিলেট করতে হবে!

নার্স চিৎকার করে কয়েকজন আয়াকে ডেকে নিয়ে আসল। ইনস্পেক্টর হাবিব আর হাসিব মিলে মাথা উঁচু করে ধরেছে সাফোয়ানের। সবার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে পানি খাওয়াতে পারলে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যেতে পারে। মাথার কাছের স্টিলের ছোট কেবিনেট। ওখানে একটা “মাম” পানির বোতল। একটা কাপ। কাপ তুলে নিয়ে পাশে রাখা পানির বোতল খুলে পানি ঢেলে নিয়েছে আরিফ। হাসিব বা হাতে সাফোয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। নিজেকে খুব বিপন্ন মনে হচ্ছে। নার্স আর আয়াদের দৌড়াদৌড়ির মাঝেই কাপ থেকে পানি তুলে মুখে আলতো করে ঢেলে দিল আরিফ। সাফোয়ানের দৃষ্টিটা খুব উদভ্রান্তের মত লাগছে। এক ঢোক গিলতে পেরেছে। অবাক দৃষ্টিতে সে হাসিব উদ দৌলার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল। তিরতির করে চোখের পাতা কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে কিছুপর চোখ দুটো বুজে আসল ওর। বাকি পানি দু’ ঠোঁট গড়িয়ে পড়ে গেল।

-স্যার স্যার। রোগীর পালস খুঁজে পাচ্ছি না। পালস খুঁজে পাচ্ছি না!

এটেন্ডেড ডাক্তার চলে এসেছে ততক্ষণে। নার্স সাফোয়ানকে আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটর দিতে দুহাত ভাঁজ করে সাফোয়ানের বুকের ওপর রেখে চাপ দিতে দিতে বলল।

আয়ারা ট্রলি নিয়ে এসেছে। তড়িঘড়ি করে সবাই ধরাধরি করে সাফোয়ানকে ট্রলিতে তুলে নিল। ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ হাসিবের মনে হল সাফোয়ানের একটি শব্দ সে মনে করতে পারছে। “বিষ!”

(চলবে।)

#চক্রব্যুহ

[তের]

-আপনি কি আফসানা সাফোয়ান নামের কোন মেয়েকে চেনেন?

প্রশ্নটি যাকে করা হলো, উনার নাম তৈয়ব শামস। নামটির মতই কথাবার্তা আর আচরণেও গম্ভীর ভদ্রলোক। উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরে অফিস। দুই, তিন আর চার তলা নিয়ে অফিস। প্রতি ফ্লোর দুই হাজার স্কয়ার ফিটের উপরে হবে। ভালোই ব্যবসা জমিয়েছেন। কনফারেন্স রুম তিন তলায়। সবাইকে এখানে এনে বসানো হয়েছে। সবাই বলতে হাসিব, আরিফ, উত্তরা থানার সেকেন্ড অফিসার আনিসুজ্জামান। অফিসিয়ালি বসতে হয়েছে। শুধু হাসিব আর আরিফের সাথে বসতে রাজি হননি। তার সাথে কোম্পানির এইচআর এর জেনেরাল ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন, কোম্পানি ল ইয়ার হাসনাত উল্লাহ। সাথে আছেন হাইকোর্টের একজন সিনিয়র উকিল। ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক। তৈয়ব শামস এর হয়ে আইনি উত্তর দেবেন। এই ভদ্রলোকের সাথে হাসিব উদ দৌলার আগের থেকেই পরিচয় ছিল। অনেক মামলায় তার সাথে দেখা হয়েছে। তাকে এখানে দেখে হাসিব একটু অবাক হলেও মনের ভেতর স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক জানেন হাসিবের কোন কিছুতে লেগে থাকার জেদ। এবং তার তদন্তের সফলতা।

-না।

বেশ সময় নিয়ে উত্তর দিলেন তৈয়ব শামস। কনফারেন্স রুমের এসির তাপমাত্রা খুব সম্ভবত বাইশ ডিগ্রির বেশি হবে না। হাসিব একবার বলেছিল চব্বিশের ঘরে নিয়ে আসা যাবে কিনা। খুব বিনীতভাবেই তাকে না করে দেয়া হয়েছে। এখন বুঝতে পারছেন কেন এত কম করে রাখা। এই প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও তৈয়ব শামস কুলকুল করে ঘামছেন।

-আপনারা দুজন কেমন বন্ধু ছিলেন?

-আমরা দুজন বলতে আবরার আর আমি? আমরা কলেজে একসাথে পড়েছি।

-তারপর?

-স্যরি। বুঝিনি!

-মনে হচ্ছে কলেজের পরে আর যোগাযোগ ছিল না। তাই কি?

-অনেকটা তাই। আমি বুয়েটে ভর্তি হলাম আর ও ঢাকা ভার্সিটিতে। কদাচিৎ দেখা হত। কেননা আমার বাড়ি গুলশান।

-আবার শুরু হলো কী করে। আই মিন, ইউ টুউ হ্যাড স্টারটেড দ্যা বিজনেস অনলি ফাইভ ইয়ারস ব্যাক। ইফ আয়াম নট মিসটেকেন!

-হুম। তারপর আমি এমএস আর পিএইচডি করতে এমেরিকা চলে যাই। এমএস করার পরে অবশ্য আর পড়াশোনা এগোয়নি। ডালাসে বিজনেস শুরু করি এবং দ্রুত সফলতা পেয়ে যাই।

-এখনো কি ওখানে ব্যবসা আছে?

-হ্যা।

-আপনার প্রোফাইল দেখে মনে হচ্ছে আপনি একাই বিজনেস দাঁড় করাতে পারতেন। আবরারকে পার্টনার হিসেবে নিলেন কেন?

এই প্রশ্নের কোন জবাব পাওয়া গেল না। তৈয়ব শামস একবার আইনজীবীর দিকে তাকালেন। মোজাম্মেল হক ভুরু কুঁচকে হাসিবের দিকে ফিরলেন।

-আমার মক্কেল এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছেন না।

-গুড। আমি তদন্তের স্বার্থে কিছু প্যাপারস চেয়েছিলাম। যেটায় সম্মতি পাওয়া গেছে। ওগুলো কি পেতে পারি?

এইচআর এর জিএম কুতুব উদ্দিন একটা ছোট ফাইল এগিয়ে দিলেন।

দুই একটা কাগজে চোখ বুলালেন হাসিব।

-আবরার আপনার ওয়ার্কিং পার্টনার ছিলেন। বিনিয়োগমূল্যে তার শেয়ার ফাইভ পারসেন্ট। একটিভ ওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে টুউ পারসেন্ট। আর ইয়ারলি গ্রস স্যালারি ফাইভ লাখ টাকা। প্রতি বছর যা ফাইভ পারসেন্ট করে বাড়বে। কারেক্ট?

এইচআর এর জিএম উত্তর দিলেন। “হ্যা।“

-পার্টনার হিসেবে নয়। একজন একটিভ ওয়ার্কিং ম্যান হিসেবে তাকে যদি মূল্যায়ন করতে বলি আপনাকে?

প্রশ্নটা তৈয়ব শামসকে করা। একটু আনমনা হয়ে কিছু ভাবার চেষ্টা করলেন।

-ও খুব হার্ড ওয়ার্কিং ছিল।

-কোন বদভ্যাস?

-কাজের বাইরে আর কোন আলোচনা হতো না আমাদের। ও আলাদা ডিপার্টমেন্ট দেখত। মিটিং এ থাকত। কিন্তু সেখানে বন্ধু নয়। কলিগ হিসেবে দুজন দুজনকে ট্রিট করতাম। আর বছরের অর্ধেকের মত সময় আমি ইউএস থাকি। কাজেই ওর বদভ্যাস নিয়ে বলতে পারছি না। যদি অফিসিয়াল কোন পার্টিতে ক্যাজুয়াল হার্ড ড্রিংকস বদভ্যাস বলতে চান। তাহলে অন্য রকম অর্থ হবে।

-না না ঠিক আছে। উনার বাড়িতে যে পার্টি হতো তাতে কখনো যেতেন?

-না। আগেই বলেছি আমি গুলশান বেইজড। ওদিকে খুব কম যাওয়া হয়। তবে খালাম্মাকে দেখতে বেশ কয়েকবার ওই বাড়িতে গিয়েছি।

-একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। উত্তরটা জানা আমার খুব জরুরী।

ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক একটু নড়েচড়ে বসলেন। বাকিরা নীরব দর্শক। হাসিবের প্রশ্নোত্তর পর্ব বেশ উপভোগ করছে সবাই। উনিই তৈয়ব শামসের হয়ে জবাবটা দিলেন।

-কেমন প্রশ্ন সেটার উপর নির্ভর করছে। প্রশ্নটি করুন।

-খুব রিসেন্টলি আবরার সাহেব কি বড় কোন টাকার দেনায় পড়েছিলেন?

“এটার উত্তর দেয়া যায়।“ বলে একটু হাসলেন তৈয়ব শামস।

-ও আমার কাছ থেকে দুই চেকে বিশ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। আরো দশ লাখ টাকা চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ও নিখোঁজ হয়ে গেল।

-শেষ প্রশ্ন। অন্য কিছুর প্রয়োজন হলে অফিশিয়ালি যোগাযোগ করে আসব। প্রশ্নটা কি করব?

এবারও মোজাম্মেল হক তৈয়ব শামসের হয়ে জবাব দিলেন।

-প্রশ্নের মেরিটের উপর নির্ভর করছে উত্তর পাবেন কিনা!

-সে তো অবশ্যই। অন্যেরা না জানলেও আপনি তো জানেন আমার তদন্তের ধরণ। এত সহজ করে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এটাই প্রথম। আমি যে কতটুকু রুড হতে পারি তা মনে করিয়ে দিতে হবে না আশা করি!

যেন কোন খাসা কৌতুক করেছেন। কথাগুলো বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন। আরিফরা একটু সহজ হয়েছে। এমন দম বন্ধ একটা পরিবেশ। কিন্তু মাঝপথেই হাসি থামিয়ে দিলেন হাসিব।

-আপনাকে যদি সন্দেহের তালিকায় রাখি। আপনার উত্তর কেমন হবে?

আচমকা এমন প্রশ্নে ঘর ভর্তি সবাই চমকে উঠেছে। তৈয়ব শামস রীতিমত “ভ্যাবাচ্যাকা” খেয়ে গেছেন। শুদ্ধ বাংলা ভাষায় যাকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় বলে।

আবারো হো হো করে হেসে উঠলেন হাসিব। হাসতে হাসতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন।

-আন্তরিক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য। আরিফ, আনিস। চলো যাওয়া যাক।

বলেই জিএম এর দেয়া ফাইল নিয়ে হনহন করে দরোজার দিকে হেঁটে গেলেন।
—–

সন্ধ্যা ছয়টা। বারিধারা ডিওএইচএস এর চক্রবুহ্য অফিস। উত্তরা থানার সেকেন্ড অফিসার আনিসুজ্জামানকে নামিয়ে দুজনে অফিসে এসে কড়া করে বানানো ব্ল্যাক কফি নিয়ে বসেছেন। সাইফুদ্দিনের আজ মন খারাপ। ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছেন হাসিব। কম্পিউটারের সমনে বসে মেইল চেক করছিলেন হাসিব। একটা কিছুর প্রিন্ট আউট দিলেন।

-এই প্রিন্ট আউটগুলো দেখে বলো দেশের কোথায় নামি বা বেনামি লাশ পাওয়া গেছে গত পাঁচদিনে।

আরিফ কাগজে ডুবে গেল। হাসিব কাফির মগ হাতে উঠে বারান্দায় চলে গেলেন। মিনিট দুয়েক বাইনোকিউলারে লেকের দিকটায় দেখলেন কিছু একটা। রোজকার অভ্যেস। তারপর ফিরে এলেন। চেয়ারে বসতে বসতে ফোন বের করে নিকুঞ্জ থানার হাবিবকে কল দিলেন।

-স্যার!

-হাবিব শুনুন। সাফোয়ানের ফ্ল্যাট সিলগালা করতে বলেছিলাম করেছেন?

-জ্বী স্যার। করা হয়েছে সাথে সাথেই।

-আপনাকে বলেছিলাম সাফোয়ানের মোবাইল ফোনের বক্স বা মানি রিসিট কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে।

-স্যার মেয়েটি সম্ভবত আইফোন থার্টিন প্রো ম্যাক্স ইউজ করত। বক্স পাওয়া গেছে বেড রুমের আলমিরায়।

ধূর্ত ছেলেটি ঝেড়ে কাশছে না। আইফোন উচ্চারণ করার সময় অবজ্ঞার একটা “টোন” ছিল। হিংসে? কী জানি!

-গুড। আইএমইআই নম্বরটা হেড অফিসে এসপি আসগর স্যারকে পাঠাতে বলেছিলাম ফোন ট্র্যাক করার জন্য।

-স্যার পাঠিয়ে দিয়ে আপনার নাম বলে দিয়েছি। খোঁজ পেলেই আপনাকে আপডেট করব স্যার।

-আচ্ছা রাখছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

ফোন পকেটে রেখে চেয়ার টেনে আরিফের কাছে চলে আসলেন।

-সাফোয়ানের ফোন নম্বরের কল লিস্ট পেয়েছ? ওর আত্মীয়দের কারো খোঁজ পেয়েছ?

-স্যার পেয়েছি। চৌদ্দ তারিখ থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত চারটা স্পেসিফিক নম্বরে বেশ কিছু কথোপকথন আছে। আমি ওসব নম্বরে কল দিয়েছিলাম। সবগুলোই বন্ধ! আর স্যার, ওর কোন আত্মীয় এখনো পর্যন্ত আসেনি। নিকুঞ্জ থানা দেখছে ওর লাশ কার কাছে হস্তান্তর করা যায়।

-বিষয়টা ভালই ঘোলাটে হয়ে গেল আরিফ। প্রথমে ড্রাইভার বেলায়েতের মৃত্যু। ওটার ঘোর কাটতে না কাটতেই সাফোয়ানের মৃত্যু। দুজনেই আবরার হোসেনের কাছের মানুষ। চেইনের লিংক জোড়া লাগাতে হবে আরিফ।

-স্যার, সে তো অবশ্যই। আমি স্যার একেবারেই দিশেহারা। সামান্য নিখোঁজ তদন্তে এসে এত কিছু গোলমেলে ঘটনা ঘটে যাবে? তাও আবার একের পরে আরেকটা! আমাদের ভালই ঘোল খাওয়াচ্ছে কেউ।

-সাফোয়ানের ডেথ বেড কনফেশানটা পাওয়া গেলে অনেক কিছুর কুল করা যেত। ভাল কথা। ওকে যে পানি খাওয়ালে। সেই মাম বোতলটার ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য দিয়ে এসেছ থানায়, তাই না?

-জ্বী স্যার। আপনার কথামত দিয়ে এসেছি। যদি স্যার সেই পানিতে বিষ মেশানো থাকে, তাহলে তো ধরেই নেয়া যায় খুনি আমাদের আশেপাশেই ছিল! টের পেলাম না কেন!

-বিশাল রহস্য। তবে জেনে রেখ, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব যেমন রহস্যে মোড়ানো ছিল এক সময়, তা কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। তেমনই, কোন রহস্যই রহস্য থাকবে না। অন্তত আমি যেই তদন্তে নেমে গেছি। হ্যাভ সাম কনফিডেন্স অন মি ডিয়ার আরিফ!

আরিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। গভীর ভাবনায় ডুবে গেছে ও। এত কিছুর মধ্যে “লিংক” খুঁজে পাচ্ছে না। অথৈ সমুদ্রে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। হাসিবের কথায় ধ্যান ভাঙল।

-সাফোয়ানের ফোনের কল লিস্টের সন্দেহজনক নম্বরগুলো নাসিমের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওকে আরো কিছু টাকা দিতে হবে। দাও নম্বরগুলো। আরেকটা কথা। সাফোয়ানের মৃত্যু সংবাদ যেন কোনভাবেই সামিহা অবন্তি বা খালাম্মার কাছে না পৌছায়।

“জ্বী স্যার” বলে মাথা উপরে নিচে করল আরিফ। তারপর একটা কাগজে ফোন নম্বরগুলো লিখে হাত বাড়িয়ে দিল। কাগজটি হাতে নিয়ে একবার চোখ বুলালেন হাসিব। পকেট থেকে ফোন বের করে প্রথমে দুই হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দিলেন হাসিব। তারপর নাসিমকে ফোন করলেন।

-নাসিম। তোমার বিকাশে আরো দুই হাজার টাকা চলে গেছে। আমার এই চারটা নম্বরের লোকেশন চাই। চৌদ্দ তারিখ থেকে গতকাল পর্যন্ত। শুধুমাত্র লোকেশন। যদি কোন রেকর্ড পাওয়া যায় জানাবে। নম্বরগুলো কাদের নামে রেজিস্টার্ড সেগুলোও জানা প্রয়োজন। কতক্ষণ লাগবে?

অপরপাশ থেকে দুই এক কথায় উত্তর আসল। ফোন কেটে দিয়ে আরিফের উল্টোদিকের এক চেয়ার টেনে বসে পড়লেন।

-স্যার। দুটো পুরুষ লাশের কথা উল্লেখ আছে গতকাল পাওয়া। একটা দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। অন্যটি গাজিপুরের শ্রীপুরের। দুটোই পরিচয়হীন লাশ। এর আগের কোন রেকর্ড পেলাম না কোন থানা থেকে। তবে স্যার নারী লাশ গত পাঁচদিনে পাওয়া গেছে সতেরোটা! কী বীভৎস চিত্র স্যার!

-হুম। তুমি গাজিপুরের শ্রীপুরের লাশের তথ্য জানতে চাও ওখানকার লোকাল থানায়।

-জ্বী স্যার।

-প্রসেস অফ এলুমিনেশনে তৈয়ব শামসকে বাদ দেয়া যেতে পারে। কী বল আরিফ?

আরিফ এটা নিয়েই ভাবছিল। অত বড় বিজনেসম্যান। সে কেন বন্ধুকে গুম করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন। তাছাড়া তাদের মধ্যে ক্যাজুয়াল একটা সম্পর্ক ছিল। কদিন আগে বেশ বড় অংকের ঋণও দিয়েছেন।

-জ্বী স্যার। আমিও তাই ভাবছিলাম। বন্ধুকে গুম করতে হলে তারই অফিস থেকে বের হবার পরে পরে গুম করে দেবেন। অবশ্যই এমন রিস্ক নিতে যাবেন না। ছুটির দিনে বা উনি যখন আমেরিকা থাকেন, সেই সময়টাই বেছে নিতে পারতেন।

-ঠিক বলেছ আরিফ। তবে আমার মনে অন্য সন্দেহ।

-অন্য সন্দেহ? সেটা কী স্যার?

-আবরার হোসেন এই কদিনে এতগুলো টাকা ধার নিতে গেল কেন!

চমকে উঠেছে আরিফ। এভাবে তো ভেবে দেখেনি! হঠাৎ করে কারো প্রয়োজন হতেই পারে টাকার। নিখোঁজ হবার আগে আগে আবরার সাহেব টাকা ধার নিয়েছেন। বেশ বড় অংকের টাকা। সেই টাকার জন্যই কি কেউ উনাকে কিডন্যাপ করেছে? সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে তাকে খুন করে কোথাও ফেলে রেখেছে? এমন কি হতে পারে গাজীপুরে যে পরিচয়হীন লাশের খবর পাওয়া গেছে, সেটা আবরার হোসেনের লাশ? আবারো চোখ ডুবাল থানা থেকে পাওয়া রিপোর্টে। আবরার হোসেনের বয়সের সাথে মিলে যাচ্ছে! লেখা আছে “বয়স আনুমানিক মধ্য চল্লিশ!” তবে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট আশাব্যঞ্জক নয়। মুখ থেঁতলে দেয়া হয়েছে। দুই হাতের দশ আঙ্গুল কাঁটা! লাশ গাজীপুর সদর হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে।

-স্যার। গাজীপুরের লাশটা নিয়ে কাজ করা যায়। লাশের বয়স আবরার হোসেন সাহেবের বয়সের সাথে মিলে যায়! তবে স্যার লাশের মুখ থেঁতলে দেয়া। দুই হাতের দশ আঙ্গুল কেটে ফেলা!

-তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে খুব সহজেই যেন লাশের আইডেন্টিফিকেশন করা সম্ভব না হয়! চেহারা এবং হাতের আঙ্গুলের ছাপ! মাই গড! খুনি তো বেজায় ধুর্ত!

কিছুক্ষণ পায়চারী করলেন হাসিব। তারপর এসে বসলেন চেয়ারে।

-সামিহা অবন্তিকে ফোন দাও। উনি আমাদের সাথে গাজীপুর যাচ্ছেন এখন।

(চলবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here