#চক্রব্যুহ (শেষ পর্ব)
[আটাশ]
আবরার হোসেন কোথায়, প্রশ্নটি শুনে বেশ খানিকটা বিরতি নিলেন হাসিব। আরিফের মনে হল খুব সম্ভবত ইচ্ছেকৃত বিরতি। ওকে টেনশনে রেখে দেয়ার জন্য এমনটা করেছেন। কফির মগে চুমুক দিলেন হাসিব। চোখে মুখে হাসির উজ্জ্বলতা।
-আবরার হোসেন? দ্যাট ক্যারেক্টার ইজ নাউ ইন ইউএসএ!
-মানে? সে সেই ছিনতাই নাটক থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিল অবশেষে? আমি তো ভেবে নিয়েছিলাম তাকে গুম করা হয়েছে। সামিহা ম্যাডাম তো এ ব্যাপারে কিছু বলেননি! উনি কি জানতেন না? নাকি লুকিয়ে রেখেছিলেন? বরং উনার হাজব্যান্ডকে খুঁজে বের করে দিতেই তো আমাদের হায়ার করলেন! তাছাড়া উনি নিজের মুখেই বলেছিলেন আবরার সাহেব ইউএস থেকে একবার ডিপোর্টেড হয়েছিল। ইউএস ঢোকাটা তার জন্য সহজ ছিল না! কী করে সম্ভব হলো ইউএস বর্ডার গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে সে দেশে ঢোকা! মাথায় তো কিছুতেই ঢুকছে না স্যার!
-হ্যা আরিফ। এটা ছিল গল্পের সবচেয়ে বড় টুইস্ট। আমার ইনটুইশন বলছিল সে বিদেশে পালিয়ে গেছে। তুমি আমার তদন্তের স্টাইল জান। অবজারভেশন। গভীর অবজারভেশনের শেষে কোন এক সময় আমার ইনটুইশন হঠাৎ করেই ঘটনাবলি জোড়া দিয়ে চেইন বানিয়ে ফেলে। এরপর খুব সহজ। সেই চেইনের লিংকগুলো নির্ভুল কিনা সেটা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। এখানেও তাই করেছি। লিংক জোড়া দিয়ে চেইন বানাতে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলতে হয়েছে। লিংকগুলো মজবুত কিনা সেটা নিশ্চিত হতে হয়েছে। গল্পের ঠিক এইখানে রুনি ম্যাডামের প্রবেশ!
-রুনি ম্যাডাম! রুনি ম্যাডাম আর আবরারের ইউএস পালিয়ে যাওয়া। ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার। রুনি ম্যাডামের সাথে তো আবরার সাহেবের দা কুড়াল সম্পর্ক ছিল। রুনি ম্যাডাম তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন?
-আমার ইনটুইশন বলছিল কিছু একটা আছে। অবজারভেশন আরিফ। ইউ নিড টু বি ভেরি ভেরি অবজারভেটিভ হোয়াইল গোয়িং ফর সাচ ইনভেস্টিগেশন। ইউ উইল নিড টু কিপ ইওর মাইন্ড ওপেন ফর এনি আনএক্সপেক্টেড থিং। ইউ ক্যান নেভার ক্লোজ ইওর মাইন্ড। রুনির ফ্ল্যাটে দুই ভাইয়ের ছবি দেখে বেশ খটকা লেগেছিল আমার।
একটু থামলেন। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারী করলেন কিছুক্ষণ। তারপর এসে চেয়ারে বসলেন। আরিফ আর সাইফুদ্দিন অধীর আগ্রহে বসে আছে। আরিফের মনে আছে কী ভীষণ মিল দুই ভাইয়ের চেহারার গঠনে, চুলে, গড়নে এবং উচ্চতায়।
-আবরার হোসেন সহজ মানুষ ছিলেন না। খেয়াল করেছ? রুনি কিন্তু আবরারকে এখনো নাম ধরে ডাকে। কী মনে হয় তোমার? কোন সন্দেহ হয় না?
আরিফের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লেন হাসিব। আরিফের মাথায় এত কিছু ঢুকেনি। আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে লাগল খাবার টেবিলের ওপর। সত্য স্বীকার করল।
-না স্যার। কিছুই ঢুকেনি।
-তুমি জান কোন প্রশ্ন মনে জেগে উঠলে তার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যেতেই থাকি। দুই ভাইয়ের চেহারায় এত অদ্ভুত মিল আর রুনিকে আবরারের নাম ধরে ডাকার পেছনের রহস্য বের করতে যেয়ে চমকে উঠি। বিয়ের আগে রুনির সাথে আবরারের প্রেম ছিল!
থামলেন হাসিব। আরিফের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করলেন। প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলেন এবার।
-মনে আছে? আবরার ওর বাবা মা’কে ব্ল্যাক মেইলিং করত? বিভিন্ন প্রয়োজন অপ্রয়োজনে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা পয়সা মদ, নারী আর জুয়ার পেছনে ওড়াত? আবরারের নিজ মা’ও তাকে পছন্দ করত না? ওর মদ, নারী আর জুয়া প্রীতি রুনি জেনে গেলে ওদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। ওর ছোট বেলার বন্ধু আজিম, মহসীন আর পলাশ থেকে এটা নিশ্চিত হই। দুজনের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল আবরারের বিয়ের আগেই। সম্পর্কের টানপোড়েনের এক পর্যায়ে ফাইয়াজের সাথে প্রেম হয়ে যায় রুনির। ইন্টারেস্টিংলি আবরারের বিয়ের আগে ফাইয়াজ-রুনির বিয়ে হয়ে যায়। সংসারে পদার্পণ করেই পারিবারিক সম্পত্তি আর ব্যবসা বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে রুনি। শ্বশুরের মৃত্যুর পর আবরারের হাত থেকে ঠিকাদারি ব্যবসা ফাইয়াজ আর রুনি এক রকম ছিনিয়ে নেয়। ফাইয়াজের নিখোঁজ হবার পরে আবরার চেষ্টা করেছিল ব্যবসা দখলে নিতে। বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিত। এমনকি মদ্যপ অবস্থায় বেশ কয়েকবার অফিস ভাঙচুর করে এসেছিল। রুনির ব্যক্তিত্ব আর কঠোর মনোভাব প্লাস রুনির ভাই এর রাজনৈতিক প্রভাবে সে বেশি কিছু করতে পারেনি। যতই শত্রুতা থাকুক, আল্টিমেটলি দেশ ছেড়ে পালাতে কিন্তু সেই রুনিকেই দরকার পড়ল আবরারের!
-আশ্চর্যজনক সব ঘটনা স্যার! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে সব।
সাইফুদ্দিন কাজু বাদাম এনে রেখেছিল টেবিলে। সেখান থেকে কয়েকটি বাদাম মুখে তুলে নিলেন হাসিব।
-দুই ভাইয়ের চেহারায় অদ্ভুত মিল। ছবিতে নিজের চোখেই দেখেছ তুমি?
-জ্বী স্যার!
-রাইট! এই মিলটাই আবরারকে বাঁচিয়ে দেয়। সে ফাইয়াজের ইউএস ভিসা লাগানো পাসপোর্ট চুরি করে!
-হোয়াট! কী বলছেন স্যার! কেমন করে চুরি করল?
-ঠিক সে নিজে চুরি করেনি। চুরি করিয়েছিল। বোরকা পরা এক মহিলা রুনির ফ্ল্যাটে ট্রাসপাস করেছিল। ভুলে গেলে? সেই মহিলাই রুনির ফ্ল্যাটে ঢুকে ফাইয়াজের পাসপোর্ট চুরি করেছিল!
এত সব ঘটনা আর চরিত্র। তদন্তকাজে একসাথে থেকেও আরিফের তাল মেলাতে কষ্ট হচ্ছিল। বড় বড় চোখ করে হাসিবের দিকে তাকিয়ে রইল। হাসিবের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে আছে।
-সেই বোরকা পরা মহিলা আর কেউ নয়, আমাদের ক্লায়েন্ট স্বয়ং সামিহা আবন্তি!
আরিফের চোখ দুটি আরো বড় হয়ে গেছে। সাইফুদ্দিন খুব সম্ভবত তাল মেলাতে পারছিল না। অবাক দৃষ্টিতে সে চেয়ে আছে হাসিবের দিকে।
-রুনির ফ্ল্যাটের একটা চাবি আবরারের মা’য়ের কাছে থাকত, উনি মাঝে মাঝে বাচ্চাদের দেখতে যেতেন। আবরারের বুদ্ধিতে সামিহা শাশুড়ির কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি চুরি করে। এরপর রুনিদের ফ্ল্যাটে ঢুকে পাসপোর্ট চুরি করে নিয়ে আবরারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এটা ষোলো তারিখের ঘটনা। আবরার পাসপোর্ট পেয়ে আর দেরি করেনি। পরেরদিন, অর্থাৎ সতের তারিখেই সে দেশ ত্যাগ করে। সাইফ খানের খুন হবার আগের দিন।
-কিন্তু রুনি বলছিলেন আদালতে ফাইয়াজকে মৃত দেখানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে তার পাসপোর্ট ব্যবহার করা সম্ভব কি স্যার?
-না, রুনি মিথ্যে বলেছিল। জানি না কেন। আমি খোঁজ নিয়েছি। সিটি করপোরেশন থেকে ডেথ সার্টিফিকেট ওঠানোর জন্য আবেদন করা হয়নি। তার পাসপোর্ট আর ইউএস ভিসার মেয়াদ ছিল। আবরার খুব সহজেই ফাইয়াজ নাম নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পেরেছে।
-আরেকটা প্রশ্ন স্যার। ট্রাসপাস করা মহিলা তো আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা ছিল। হাতে পায়ে মোজাও পরা ছিল! তাকে আইডেন্টিফাই করলেন কী করে!
-সুন্দর প্রশ্ন আরিফ। জানো তো! আসামী মনের অজান্তে কোন না কোন ক্লু ফেলে রেখে যায়। সামিহা অবন্তি ছোট্ট একটা ভুল করেছিল।
-ভুল! মানে স্যার?
-সাইফুদ্দিন!
জোরে হাঁক দিলেন হাসিব। গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কথাবার্তা। জোর ডাকে চমকে উঠেছে সে।
-জ্বে স্যার!
-তোকে জুতোর ছবি আনতে পাঠিয়েছিলাম না?
-জ্বে স্যার। আমি তো ঘুষ দিয়া সামিহা ম্যাডামের সব জুতার ছবি তুইল্লা আনলাম!
-রাইট! সিসি ক্যামের ভিডিওতে সেই বোরকা পরা মহিলার পায়ের জুতো হাল্কা দেখা যাচ্ছিল।সাইফুদ্দিনের তুলে আনা ছবি মিলিয়ে আমার সন্দেহ প্রমাণিত হয়ে যায়। আবার সেই ইন্টুইশন। আমার মন বলছিল আবরার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু কোথায় কী করে পালাল সেটা বুঝতে পারছিলাম না। সত্যি বলতে ভিডিও ক্যামের রেকর্ডিং বারবার দেখার পরেও বুঝতে পারছিলাম না কী করব। হঠাৎ চোখে মহিলার পায়ে পরা এক জোড়া হাইহিল। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়। তোমার মনে নেই? জুতোর ছবি দেখে সামিহা অবন্তি কী ভীষণ চমকে উঠেছিল? রুনির সাথে দেখা করে পাসপোর্ট চুরি যাবার ব্যাপারটা নিশ্চিত হই। যদিও তাকে বলা হয়নি কাজটা কে বা কেন করেছে!
আরিফ বিস্ময়াভূত হয়ে বসে ছিল। দুই হাতে মাথা চেপে ধরা। সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে এত জটিল ভাবনা ভাবা সম্ভব নয়। হাসিব উদ দৌলাকে মাঝে মাঝে মহামানব বলে ভ্রম হয়। জ্বলজ্যান্ত প্রবাদ পুরুষ। এমন একজনের সহকারী সে। ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে উঠে।
-স্যার। সব কিছু এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। সামিহা ম্যাডাম কর্পোরেট জবে দেশ বিদেশ ঘুরতে যেতেন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভ হয়ে। তার আগে থেকেই ইউএস ভিসা করা ছিল। আপনার এক বন্ধু ওর কোম্পানির ডিরেক্টর। আপনার কাছে শুনেছিলাম এসব।
এটুকু বলে আমতা আমতা করতে লাগল আরিফ। প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, অথচ সাহস করে উঠতে পারছে না।
-কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছ?
-হ্যা স্যার। কিছু প্রশ্ন ছিল। করব?
আরো কয়েকটি কাজু বাদাম মুখে পুড়লেন হাসিব।
-নিশ্চিন্তে কর। চেইন জোরা লাগাতে এতদিনের দৌড়ঝাঁপ স্বার্থক হয়েছে। গল্পটা বলতে পেরে ভালোই লাগছে আমার!
-স্যার। আবরার সাহেব তো লুজার ছিলেন। জুয়া ভাগ্য তেমন ভাল ছিল না। আবার সম্পত্তি বিক্রি করতে করতে ফতুর হয়ে গিয়েছিল। সাথে তৈয়ব শামসের থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণও করেছিল। তাহলে এত টাকা পেলেন কোথা থেকে? ইউএস সেটেল করতে তো প্রচুর টাকার প্রয়োজন!
মৃদু হাসিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে হাসিব উদ দৌলার। যেন এমন প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলেন।
-শান্তিনগরের বাড়িটা কিন্তু মোটা দামেই রুনির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। নগদ সাড়ে চার কোটি টাকায়! আর ওর স্বভাবই ছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ না দেয়ার। আফসানা সাফোয়ানকে জিসান আহমেদের হাতে তুলে দিতে একটুও বাঁধেনি ওর। আফসানা সাফোয়ানকে মুক্ত করার নাম করে তৈয়ব শামস থেকে নেয়া টাকাটাও সে ইউএস পাচার করে দিয়েছে।
-ওহ! বুঝেছি স্যার। একজন না মানুষের সমস্ত বদগুণ আবরার হোসেনের ছিল। আরেকটা প্রশ্ন স্যার। ড্রাইভার বেলায়েতকে জীবন দিতে হলো কেন?
-দুর্ভাগ্য আরিফ। নিতান্তই দুর্ভাগ্য ছিল। ও কিন্তু জানতে পেরেছিল আবরার কোথায় ছিল। রুনির সাথে ওর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সত্যিকারে রুনিকে ওই বাড়ির সবাই খুব পছন্দ করত। এখানে ওর দুর্ভাগ্য বলতে পার। সেই বিকেলে আমরা কলাবাগানের বাড়ি গেলাম। সাথে আবরারের গতিবিধি। এসব জানাতে রুনিকে সে-ই ফোন করেছিল। পুরো ঘটনা সে শেয়ার করতে পারেনি। রুনির সাথে কথা বলতে বলতে এলোমেলো পায়ে হাঁটছিল সে। এমন সময়ে দ্রুত বেগে আসা গাড়িটার নিচে চাপা পড়ে যায়। ফোনে ভীষণ এনগ্রোসড ছিল সে। ও এতটাই অমনোযোগী ছিল যে, গাড়ির হর্ণও শুনতে পায়নি। ভাল একটা লেসন আরিফ। মনে রাখবে, রাস্তায় পথ চলতে কখনোই মোবাইল ব্যবহার করবে না!
-স্যার সাইফ খান কে বা কেন খুন হয়েছে, সবই তো এখন জানা হয়েছে। মামলা বা বিচার পর্যায়ে আপনি থাকবেন কি? বিশেষ করে এসপি হামিদুল্লাহ বাশার স্যার যদি আপনাকে চান?
-হা হা হা! এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। এই মামলায় আমি থাকব না। তবে স্যার যেন কোন ঝামেলায় না পড়েন সেজন্য যতটুকু করা সম্ভব করব। স্যারের সাথে দেখা করব দু একদিনের মধ্যে। বিফোর দ্যাট, আই ওয়ান্ট টু মেক শিউর সামিহা অবন্তি মেড হার জার্নি আউট অফ দিস কান্ট্রি।
-স্যার। ফাইয়াজ হোসেনের কেসটা অনেক ইন্টারেস্টিং হবার কথা। রুনি ম্যাডাম চাইলে তদন্তটা করবেন?
হাসিব উদ দৌলা তার স্বভাব সুলভ “হো হো” “হা হা” হাসিতে ঘর প্রকম্পিত করে ফেলল। আরিফ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।
-যদিও আশি ভাগ রহস্য উদ্ঘাটন করেই ফেলেছি। তবে কেসটা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। তুমি তো জান স্বার্থ না থাকলে হাসিব উদ দৌলা কোন কেস হাতে নেয় না!
উত্তর পাবার পরেও আরিফ প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে ছিল। “আর কিছু জানতে চাও আরিফ?” বলে টেবিলের ওপর দুই হাতের দশ আঙ্গুল দিয়ে দুই তিনবার হাল্কা করে টোকা দিলেন হাসিব।
-স্যার, শেষ প্রশ্ন। সামিহা অবন্তিকে ইউএস পালাতে দিচ্ছেন কেন!
-প্রতারিত জীবন থেকে মুক্তির আলোয় যেতে চাইছে সে। আমার কাছে তাকে যে রেফারেল করেছে, তার নামটা শুনলেও চমকে যাবে তুমি আরিফ।
-কে স্যার?
উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল আরিফ।
-ইউএস এর ডালাসে থাকা সেই মনোয়ার হোসেন। জানোই তো, তার “ডাবল ক্রস” রহস্য তদন্তের মধ্য দিয়ে আমার প্রাইভেট ডিটেকটিভ হয়ে ওঠা। সে জানত আমি সামিহাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করব। আবরার ইউএস পালিয়ে গেছে নিশ্চিত হয়ে গেলে আমার সন্দেহ হয়েছিল মনোয়ার হোসেনের সাথে কোন না কোন ভাবে তার দেখা হয়েছে। এবং সামিহাকে সে-ই আমার কাছে রেফারেল করেছে। মনোয়ার হোসেনের সাথে ফোনে কথা বলে সত্যতা যাচাই করে নিয়েছি আরিফ।
-এক্সট্রা অর্ডিনারি স্যার। ভেরি ভেরি এক্সট্রা অর্ডিনারি!
-তোমার কি মনে হয় না সামিহা অবন্তির নতুন একটা জীবন প্রাপ্য? হোক তা আবরারের সাথে নতুন করে সংসারে বা একাকী। এটুকু তার জন্য করা যেতেই পারে ।
-অবশ্যই স্যার। অবশ্যই নতুন একটা জীবন পেতে পারে সামিহা অবন্তি!
হাসিব উঠে দাঁড়ালেন। হাতে কফির মগ। একটা সফল তদন্ত শেষে তার মুখে স্বর্গীয় এক আভা খেলা করছে।
[সমাপ্ত]