#চন্দ্ররাতের_মায়া [২]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
– মিঃতীব্র,আপনার স্ত্রীর পেটে কোনো সন্তান নেই।কখনো ছিলোও না।
তীব্র অনেকটা চমকে উঠলো। এটা কিভাবে সম্ভব? নন্দিতা তো সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।ওরা সবাই এতোদিন এটাই জানতো যে নন্দিতার গর্ভে তীব্রর সন্তান বেড়ে উঠছে।ডাক্তারের কথায় তীব্র ক্ষিপ্র কন্ঠে বলে ওঠে-
– আপনারা এসব কি বলছেন ডাক্তার সাহেব? আমার স্ত্রী গর্ববতী।আর আপনারা কি না বলছেন তার পেটে কোনো সন্তান নেই।
– দেখুন মিঃতীব্র আমরা ডাক্তাররা কখনো শুধু কথায় বিশ্বাসী না।আমরা সবসময় রিপোর্টে বিশ্বাসী হই।
– রিপোর্টে কি লেখা?
– আপনি নিজেই দেখুন।তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন।
কথাটা বলে ডাক্তার সাহেব তার হাতের রিপোর্টটা তীব্রকে দেয়।তীব্র হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রিপোর্টের পানে।এই জীবনে এতোটা বিষ্ময় হয়তো সে হয়নি।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো।চোখের চশমাটা হাতে নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটের কাছে হাল্কা স্লাইড করে পরিষ্কার করে আবারো চোখে দিয়ে রিপোর্টের দিকে তাকালো। নাহ্,রিপোর্ট সে প্রথমে যেটা দেখেছিলো সেটাই আছে।রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা,প্রেগন্যান্সি কোয়ালিটি নেগেটিভ। তীব্র কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মনে মনে ভাবছে,তাহলে এতোদিন ধরে নন্দিতার গর্ভে কি বেড়ে উঠছে? ওর গর্ভে কি আমার সন্তান বেড়ে উঠছে না? সেখানকার একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে সে।হঠাৎ ফোনে রিং বেজে উঠলো।ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো-
– তীব্র?
– হ্যা বাবা বলো
– বউমার কি অবস্থা? আমাদের তো জানালেও না,আমরা কতোটা চিন্তায় আছি
– বাবা একটা বিরাট সর্বনাশা কান্ড ঘটে গেছে
– কি হয়েছে?তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন তিব্র? বউমা ঠিক আছে তো? কি হলো চুপ করে আছো কেন?
– বাবা,এতোদিন আমরা যা ভেবেছিলাম তা সম্পুর্ন মিথ্যে ছিলো
– কিহ্? কোনটা মিথ্যে ছিলো?
– নন্দিতার গর্ভে কোনো সন্তান নেই বাবা।ডাক্তাররা আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেছে ওর পেটে কোনো বাচ্চা নেই।
কথাটা শোনা মাত্র শেখর চৌধুরী থম মেরে কানে ফোন ঊরে দারিয়ে রইলো।তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না।তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মিসেস রামেয়া চৌধুরী বললেন
– তীব্র কি হয়েছে রে?কি বললি তোর বাবাকে?উনি এভাবে ভয় পেয়ে গেলেন কেন?
– সেটা বাবার কাছেই শুনে নিও মা।এখন রাখি
টুট টুট শব্দে ফোনটা কেটে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো তীব্র।রিপোর্টটা হাতে নিয়ে বসে থাকা ঠিক হবে না।ভাইয়া,ভাবিকে জানা দরকার ঘটনাটা।এক পা দু পা করে সে তার স্ত্রীকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেখানে গেলো।গিয়ে দেখলো নন্দিতা একাই শুয়ে আছে।তার ভাবীকে দেখা যাচ্ছে না।তীব্র নন্দিতার কাছে গেলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
– নন্দিতা তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?
– না,হচ্ছে না (মলিন কন্ঠে বললো)
– ভাবী কোথায় নন্দিতা?
– জানিনা তো,আমি তখন থেকে এখানে একা-একা শুয়ে আছি
– কি বলছো।ভাবী ছিলো না রুমে?কোথায় গেলো ভাবী?ওয়াসরুমে নেই তো?
– ওখানে নেই।থাকতে তো এতোক্ষন থাকার কথা না
– নন্দিতা তোমাকে একটা সংবাদ দেওয়ার আছে।আমি নিজেও বিষয়টা মানতে পারছি না এখনো।আদৌ এরকম ঘটনা কখনো ঘটেছে কিনা জানিনা আমি।
– কি হয়েছে তীব্র,আমার সন্দেহ কি ঠিক?
বলেই নন্দিতার চোখের কোনে জল চলে এলো।এই অবস্থায় যদি ওকে বলি যে তোমার গর্ভে কোনো সন্তান আদৌ ছিলো না,তাহলে সে এই ব্যাথা সইতে পারবে না।বরং ওকে পড়ে জানাই বিষয়টা।অনেক মিথ্যে অজিহাত দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে অন্য কথায় ফাঁদে ফেলিয়ে তীব্র এই ভয়ংকর সত্যটা নন্দিতাকে জানালো না।
তখনি কোথা থেকে যেনো ভাবী তোরজোর করে ছুটে এসে আমায় বললো-
– তীব্র ডাক্তার সাহেব তোমায় ডাকছে।
– তুমি কোথায় ছিলে ভাবী?নন্দিতাকে এভাবে একা রেখে?
– ডাক্তার এই ঔষধ গুলি আনতে বলেছিলো।তুমি তো কোথায় যেনো ছিলে,তোমার ভাইয়াও নেই।তাই বাধ্য হয়ে আমিই নিয়ে আসলাম।
– ও আচ্ছা। তুমি এখানে ওর সাথে থাকো।আমি শুনে আসি ডাক্তার কি বলে।
রুম থেকে বেড় হয়ে ডাক্তারের কেবিনে গেলাম।দরজায় কড়া নাড়লাম –
– ডাক্তার সাহেব আসতে পারি?
– হুম আসুন
তীব্র ভেতরে ঢুকে চেয়ারটায় বসলো।রুমে ফিনাইলের তীব্র গন্ধ নাকে আসছে।ডাক্তারের দিকে চোখ পড়তেই তীব্র লক্ষ করলো ডাক্তার আলোয় কি যেনো একটা ফেলে গভীর মনোযোগ দিয়ে ইকুয়েশন করছে।তীব্র হাল্কা কাশি দিয়ে নিজের উপস্থিতি বোঝাতে চাউলেও ডাক্তারের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ই নেই।তিনি বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছছেন। তাকে অনেক চিন্তিত,এবং হতাশ লাগছে।তবে কি ডাক্তার নন্দিতার বিষয়ে কোনো জটিল বিষয়ে কথা বলবে?সেটাই এতো মনোযোগ দিয়ে ইকুয়েশন করছে?। তার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার বললেন-
– মিঃতীব্র,আপনি তো মিস নন্দিতার হাসবেন্ড তাই না?
– জ্বি
– আমরা তার পেটে একটা অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি লক্ষ্য করছি।
তীব্র একটু ভয় পেয়ে গেলো।বিষন্ন কন্ঠে বললো
– কিরকম অস্বাভাবিক ডাক্তার সাহেব ?
– গর্ভে শিশু থাকলে যেরকম একটি মাংসপিণ্ড বুঝা যায়,সেরকম একটি বস্তু আপনার স্ত্রীর পেটে রয়েছে।
তীব্র চেয়ার থেকে দারিয়ে চরম উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ডাক্তারের দিকে অনেকটা ঝুকে বললো
– তাহলে কি ডাক্তার সাহেব নন্দিতার গর্ভে আমার সন্তান আছে?
– আমাদেরও তো সেরকমই মনে হচ্ছে। আমাদের জীবনে এটাই প্রথম ঘটনা।
তীব্র ডাক্তারের সাথে কথা বলছে এমন সময় হঠাৎ ভাবী এসে তীব্রকে বললো,
– তীব্র,মা বিষ খেয়েছে।
চলবে?