#চন্দ্ররাতের_মায়া [৩]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
– মা বিষ খেয়েছে মানে?কি বলছো তুমি ভাবী?
– হ্যা, সত্যিই মা বিষ খেয়েছে। বাবা এখনি ফোন করে বললো।
– মা এখন কোথায়?
– বাবা বললো এখানে নিয়ে আসছে।
– ভাবী আমি আর পারছি না।এইদিকে এই চিন্তা আবার ওদিকে মা এরকম একটা কাজ করে বসলো।আমি পাগল হয়ে যাবো ভাবী,আমি পাগল হয়ে যাবো
– তুমি চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি দেখি ওরা এখন কোথায়।তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলো
– চলো আমিও যাবো।
ডাক্তারের রুম থেকে বেড় হতেই ডাক্তার বললো,”মিঃতীব্র, আপনার স্ত্রীকে অপারেশন করাতে হবে খুব শীঘ্রই। সেটার বিষয়ে বলে যান”। তীব্র মাথা ঘুরিয়ে শুধু বললো ” যদি অপারেশন করা লাগে তাহলে করুন।আমার স্ত্রীর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।আর হ্যা,আমি আসার পর তবেই করবেন”।
বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো।বেড় হতেই তীব্রর বাবা শেখর চৌধুরীর সাথে মুখোমুখি দেখা।তীব্র মূহুর্তেই বললো
– বাবা, মা কোথায়?
– এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই তীব্র। তোমার মা’কে ওটিতে নিয়ে গেছে।তেমন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারেনি।ওই মহিলা কি খেয়েছে শুনতে চাও?
– কি খেয়েছে?
– গত পরশুদিন আমি যে আরশোলা মারার বিষ এনেছিলাম সেটা খেয়েছে।একটু মুখে ঢেলে দিতেই আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই।তারপর এখানে নিয়ে আসলাম।গাধা মহিলা
ভাবি- কিন্তু মা বিষ কেন খেতে গেলো?
বাবা-কেন আবার।আমার বিপক্ষে চলতে হবে না? আমি ভাবলাম পরিবারে অশুভ ছায়া নেমে এসছে।একটা পূর্ণ্যর কাজ করা দরকার।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রাইমারি স্কুলের পাশে যে পুকুরটা আছে,ওটা ভরাট করে ওখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম তুলে দিবো।
ভাবি- এজন্যই বিষ খেলো?
বাবা- হ্যা।গাধা মহিলা বলে কিনা কোনো বৃদ্ধাশ্রম হবে না।এভাবে দু,এক কথা হতে হতে সে বিষ খেয়ে নিলো।এসব বাদ দাও।বৌ’মার কি খবর তীব্র?
– বাবা ডাক্তার বলেছে ওর অপারেশন করাতে হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব। সেই বিষয়েই কথা বলছিলাম তখন ভাবী এসে বললো মা বিষ খেয়েছে।
– এখন যাও ডাক্তারের সাথে কথা বলো তুমি।আমি এদিকে আছি।
তীব্র কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে পুনরায় ডাক্তারের ঘরে গেলো।দরজায় কড়া নাড়তেই ডাক্তার সাহেব একটা বইয়ে চোখ রেখেই বললো ” ইয়েস কাম ”
– ডাক্তার সাহেব,অপারেশনটা কি এখনি করাবেন?
– হুম,যত সময় যাবে ব্যাপারটা তত জটিল হবে।বাই দ্যা ওয়ে।আপনার স্ত্রীর রিপোর্টটা এসে গেছে।ওনার পেটে টিউমার হয়েছে।তাও একটা না,দু দুইটা।রীতিমতো সেগুলা অনেক বৃহদাকার ধারন করেছে।এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
তীব্র ডাক্তারের কথা শুনে তীব্র চমকে উঠলো। নন্দিতার পেটের টিউমারকে এতোদিন নিজের সন্তান ভেবে রেখেছিলো সে।অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গাল বেয়ে মাটিতে পড়লো।হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে করুন স্বরে বললো-
– নন্দিতার পেটে দু,দুটো টিউমার?
– হুম
– হায় রে ভাগ্যর পরিহাস।আমরা ভেবে বসলাম
– আমার একটা কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মিঃতীব্র।এতে বড় ভুল আপনারা করলেন কিভাবে? সন্তান গর্ভে ধারনের ব্যাপারটা আর টিউমার ধারনের ব্যাপারটা তো একই না।এই পার্থক্যটুকু কি মিস নন্দিতা বুঝতে পারেনি?
– আমি জানিনা ডাক্তার সাহেব।
– সেসব বাদ দিন।হিউম্যান নিউরন অনেক পাওয়ারফুল একটা জিনিস বুঝলেন। আপনি যদি দৃঢ় ভাবে ভেবে বসে থাকেন যে আপনার ডান হাত অবশ হয়ে আছে।তাহলে দেখবেন আপনি সত্যিই হাত নাড়াতে পারছেন না।আমার মতে মিস নন্দিতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।মানষিক ভাবে তিনি দূর্বলচিত্তের।চা খাবেন?
– না, চা খাবো না।আপনারা তাহলে অপারেশনের ব্যাবস্থ করুন।
– হুম
– ডাক্তার, আমার স্ত্রীর কি কোনো সমস্যা হবে? আই মিন সে সুস্থ হবে তো?
– হ্যা,আমরা আশাবাদী। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে।
– আমি তাহলে আসি।
-হ্যা আসুন।আর কাউন্টারে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা করুন।আমরা ব্যাবস্থা করছি
– জ্বি আচ্ছা
বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো তীব্র।নন্দিতার কাছে যেতেই দেখলো সেখানে বাবা,ভাইয়া,ভাবী সবাই। ওদের দেখে নিজের মনে কিছুটা সস্তির আভাস ফুটে উঠলো।মৃদু স্বরে সবার উদ্দেশ্য বললো-
– বাবা,ভাইয়া,ভাবী তোমরা একটু বাইরে যাবে প্লিজ?আমার কিছু কথা ছিলো
ভাবী- হ্যা বলো বলো।আমরা বাইরেই আছি।
সবাই বাইরে গেলে তীব্র নন্দিতার কাছে বসলো।পর কপালে হাত বুলিয়ে দিলো।কপালে একটা ভালোবাসার ছোঁয়া একে দিয়ে কাছাকাছি বসলো।নন্দিতা তীব্রর গালে আলতো ভাবে হাত রেখে করুন স্বরে বললো
– তুমি খেয়েছো? সকাল থেকে কিছুই খাওনি তাই না? এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বা।
– আমি সুস্থই আছি নন্দিতা।শুধু তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো প্লিজ
বলেই নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে তীব্র। তার ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে গেছে।নন্দিতা ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো
– এই পাগল,কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
– তোমাকে অনেক ভালোবাসি গো,তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না।মরে যাবো আমি।
তীব্রর এরুপ আচরনে নন্দিতার চোখে জল চলে এলো।সে মৃদু স্বরে তীব্রর কানে কানে বললো
– একবার যখন হাত ধরেছি,তখন মরনের আগ পর্যন্ত ছাড়বো না।তুমি শুধু এভাবেই আমায় ভালোবেসো।
এখন বাজে দুপুর বারোটা।নন্দিতাকে অপারেশন করানোর জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তীব্র এক মূহুর্ত স্থির নেই।এখানে,ওখানে পায়চারি করছে আর বিড়বিড় করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে।শেখর চৌধুরী বসে আছে চিন্তিত গম্ভীর মুখ নিয়ে।তিনি গালে হাত রেখেই তীব্রকে বললো
– তোমার ভাই,ভাবী কোথায় তীব্র? দেখতে পাচ্ছি না যে
– বাবা ওরা বাসায় গেছে।মাঝরাত থেকে ভাবীর ঘুম হয়নি। মাথা ধরেছে।তাই ভাইয়াকে বলে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
– ও আচ্ছা। তুমি খেয়েছো?
– হুম
– মিথ্যে বলো কেন,যাও কিছু খেয়ে এসো নিচ থেকে।আমি আছি এখানে,কিছু প্রয়োজন হলে তোমায় ডেকে নিবো
-আমি থাকি না বাবা। খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।নন্দিতার ভালোয় ভালোয় অপারেশনটা হলেই হয়
ছেলের এই ভালোবাসায় শেখর চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন।মনে মনে ভাবলেন,ছেলেটা দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে।
__________
ডাক্তার সিহাব অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন শুরু করে দিয়েছে।তার একটা আলাদা ফোন থাকে সাথে সবসময়। খুবই প্রয়োজন না হলে সেই ফোনে ফোন দেয় না কেউ।এই নাম্বারটাও সবার কাছে নেই।তার খুব কাছের পরিচিত এবং হসপিটালের কিছু স্টাফের কাছে নাম্বারটা দেওয়া আছে।বারবার করে বারন করা আছে,সেই নাম্বারে ফোন দেওয়ার কারনটা হবে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ।কেননা সেই নাম্বারে ফোন দিলে ডাঃ সিহাবকে ধরতেই হবে। সেই মিনি ফোনটা পকেটে বাজতে থাকলো।
ডাঃসিহাব সাইডে এসে রিসিভ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো-
– কেমন আছেন ডাঃসিহাব?
– কুশল বিনিময় না করে কাজের কথা বলুন
– আপনি এখন আমার হাতের পুতুল ডাঃ সিহাব।
– রসিকতা করছেন?ফোন রাখুন।আমি এখন থিয়েটারে আছি।রসিকতার জন্য পরে দেখে নিবো আপনাকে।রাবিশ ওম্যান
বলে ফোনটা কেটে দিয়ে পকেটে রাখতেই টুং করে একটা মেসেজের আওয়াজ আসলো।ওপেন করতেই দেখলো একটা ভিডিও। ভিডিওটা ওপেন করতেই ডাঃ সিহাব চমকে উঠলেন।সারা শরীর ঘামতে শুরু করে।যে নাম্বারে ফোন এসেছিলো সেই নাম্বারে ডাঃসিহাব ফোন করলো।ওপাশ থেকে ধরতেই অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে এলো
– কি মিঃসিহাব।ভয় পেয়ে গেলেন?
– কি চান আপনি?
– তেমন কিছুই না।এখন যে অপারেশনটা করছেন সেখানে হাল্কা একটা কাজ করতে হবে
– কি কাজ
– আর কোনোদিন ও যেন নন্দিতা মা হতে না পারে,সেই ব্যাবস্থা করবেন আপনি
– কিহ? কি বলছেন এসব?একজন ডাক্তার হয়ে এসব আমি কখনোই করবো না।
– না করলে আমি কি করতে পারি,দেখাবো সেটা?
– নাহ্ প্লিজ,আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।আমি করবো,যা বলবেন তাই করবে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন প্লিজ।
চলবে?