চন্দ্ররাতের_মায়া [৫]

0
204

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৫]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

পেনড্রাইভটা কম্পিউটারে ওপেন করতেই দেখলাম হাত, পা বাধা একটা বাচ্চা মেয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায়।ভাইয়া বাচ্চা মেয়েটার মাথায় বন্দুক তাক করে ধরে আছে।বাচ্চা মেয়েটার চোখ বাঁধা,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।ভাইয়ার মধ্যে কোনো মমতা লক্ষ্য করছি না।ভাইয়াকে এরুপ হিংস্র রুপে কখনো দেখিনি আমি।ভিডিওর সাথে সাউন্ড কানে ভেসে এলো

– যা বলছি সেটা কর,নইলে তোর মেয়েকে আজীবন ঘুম পাড়াতে দুই বার ভাববো না।

ভাইয়া এসব কি বলছে?যে ভাইয়া একটা তেলাপোকা দেখলে ভয়ে আড়াল হয়ে থাকে,বাড়িতে থাকা বিড়ালগুলিকে নিজে না খেয়ে সেই ভাত ওদের খাওয়ায়,এতোটাই কোমল স্বভাব,সে কি না এসব বলছে? তাও এতো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়েকে বেঁধে রেখে? কে এই মেয়ে? ভাইয়া কি কোনো দূর্নীতিতে যুক্ত হচ্ছে?

এসব ভাবতে ভাবতে নিচ থেকে শেখর চৌধুরী তীব্র তীব্র বলে ডাকতে লাগলেন।তীব্র তরিঘরি করে পেনড্রাইভটা আবার লকারে রেখে লকারটা বন্ধ করে নিচে আসলো।শেখর চৌধুরী তীব্রকে বললো

– এই কাগজ আনতে এতোক্ষন লাগে?

– বাবা অনেক কাগজের ভিড়ে খুজতে দেরি হয়ে গেলো।

-আচ্ছা দাও।

তীব্র হাত বাড়িতে দলিলটা দিলো।শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে ওখান থেকে রুমে চলে আসলো।বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো,”মাথায় অনেক প্যাচ জমা হয়েছে।এগুলা ছুটানো খুব দরকার”।ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমে তলিয়ে গেলো

ঘুম ভাঙলো বিকেলে।ঘুমের মাঝে ধরফর করে উঠে চশমটা চোখে দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে কাজের বুয়াকে স্যুপ বানাতে বলে ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে থাকলো।

বারবার ঘড়িতে সময় দেখছে তীব্র। “রহিমের মা,তারাতারি করো,সময় নেই ” বলে কয়েকবার চিল্লাচিল্লি করে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো।তখনই লক্ষ্য করলো মিহির ভাইয়া সদর দরজা খুলে হাতে ক্যামেরায় কিছু একটা গভীর আগ্রহে দেখতে দেখতে লাগলো হেলেদুলে হাটছে।এক পা এগুচ্ছে, তারপর থামছে,আবার এগুচ্ছে এভাবেই নিজের মতো আসছে।মিহির ভাইয়ার উদ্দেশ্য তীব্র বললো

-ভাইয়া,আজকাল শুটিং নিয়ে অনেক ব্যাস্ত মনে হচ্ছে?

– হ্যা রে,প্রচুর কাজ।নতুন একটা ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছি।নাম শুনেই তুই পাগল হয়ে যাবি।

– নাম শুনতে চাচ্ছি না।পাগল হওয়ার ইচ্ছে নেই

– আরে শোন,অনেক ইন্টারেস্টিং সিরিজ।সিরিজের নাম ” কিডন্যাপারের পেটে ইঁদুরের বিষ “।নামটা কেমন লাগলো?

– অনেক ইন্টারেস্টিং নাম।ভাইয়া তোমায় একটা কথা বলার ছিলো

– কি কথা?

– না মানে আমার মনে হচ্ছে তাই বললাম,কিছু মনে করবে না প্লিজ

– মনে করার মতো কি আর বলবি,বলে ফেল

– তুমি অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত হচ্ছো না তো?

– কি বলতে চাচ্ছিস তুই তীব্র

ক্যামেরার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়া।আমি স্বাভাবিক স্বরেই বললাম-

– দেখো ভাইয়া,আমি এতোটা ভেঙ্গে বলতে পারছি না।বাবার কথাটা মাথায় রেখে কাজ করিও।বাবার অপমান হবে এমন কাজ করবে না এটা আমার বিশ্বাস।

– আম..আম..আমি কিছু করিনি,আমায় এসব কেন বলছিস,? আমি তো কিছুই করিনি

– তোমার ঘরে লকারের মধ্যে পেনড্রাইভে একটা ভিডিও পেয়েছি আমি।একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় বন্দুক তাক করে রেখেছে কাউকে হুমকি দিচ্ছো।

– হ্যা,ওটাতো আমার শুটিং ছিলো।কিডনাফ করে মুক্তিপণ চাইবে,শেষে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মারা যাবে এটাই আমার নতুন সিরিজটার কনসেপ্ট।অভিনয় কেউ করতে পারছে না।তাই আমি দেখিয়ে দিয়েছিলাম কিভাবে করতে হয়।

– ওহহ আচ্ছা,সরি ভাইয়া।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অন্যায় পথে চলছো।তাই তো বলি,আমার ভাইয়ার মতো ভালো মানুষ একটাও নাই অভিনয় জগতে।

ভাইয়া মুচকি হেসে ক্যামেরায় চোখ দিয়ে নিজের রুমে গেলো।নিজের কাছে নিজেই লজ্জিতবোধ হচ্ছে। সত্যিই তো,ভাইয়া শুটিংয়ের অনেক কনসেপ্ট রেকর্ড করে রাখতেই পারে। সেটা দেখে ভাইয়াকে সন্দেহ করা ঠিক হয়নি।এসব ভাবতে ভাবতে কাজের বুয়া স্যুপটা টিফিনবাক্সে করে দিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হবো তখনি মা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে এসে বললেন

– তীব্র

– হ্যা মা,তোমার শরীরের অবস্থা কেমন? নিচে আসতে গেলে কেন?

– আমার আর শরীর।কই যাচ্ছিস?

– হসপিটালে যাচ্ছি মা

– ওই অপয়া মেয়েকে দেখতে?

– মা কিসব বলছো তুমি

– নয় তো কি? অপয়া না হলে তিন তিন বার পর্ভপাত হয়?

– এসব এখন থাক মা,আমি আসি

– দ্বারা,আমার একটা কথা আছে

– হুম বলো

– আমার,তোর বাবার তো বয়স হয়েছে,আমাদের তো ইচ্ছে করে নাতি নাতনির মুখ দেখতে? তাদের সাথে খেলা করতে,তাদের আদর করতে,বল মন চায় না?

– হ্যা

– তোর বড় ভাইয়া তার ও কোনো সন্তান নাই।এখন শেষ ভরসা তুই

– এসব নিয়ে পড়ে কথা বলি মা,এখন…

– না রে,বলতে দে আমায়।জানিস তোর বাবা রাতে ঘুমায় না এসব ভেবে।সারাক্ষণ ছটফট করে।পারে না বলতে,পারে না সইতে।বুড়ো বাপ,মার দিকে তাকিয়ে তোর কিছু একটা করা দরকার আছে কি না?

– কি করতে বলছো তোমরা বলো

– তুই আরেকটা বিয়ে কর বাবা।আমি জানি তুই নন্দিতাকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু একটা সন্তান তো প্রয়োজন তাই না? আমাদের ইচ্ছের কথা বাদ দে।তোর নিজেরও তো ইচ্ছে করে বাবা ডাক শুনতে।আমাদের কথাটা একটু শোন বাবা,আরেকটা বিয়ে করে নে।

তীব্রর কাছে এই বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।সে মাথা নিচু করে চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে প্রস্থান করলো।এরুপ প্রশ্ন উঠলেই সে নিরব থাকে।ইচ্ছে করে দূর কোথাও চলে যেতে। যেখানে তার থাকবে না কোনো পিছুটান।





এরপর কেটে গেলো দুইটি বছর।তীব্র লক্ষ্য করলো নন্দিতা এখন তাকে আর আগের মতো সময় দেয় না।অফিস থেকে বাসায় আসলে সে আর অধির আগ্রহে বসে থাকে না।রাতে বেশিরভাগ সময় ই কোনো কারন ছাড়াই সোফায় গিয়ে ঘুমায়।আগের মতো কথাও বলে না।এরকম আচরণ তিলে তিলে তীব্রকে জ্বালিয়ে দেয়।

অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই দেখলো নন্দিতা আয়নার সামনে বসে চুল আচরাচ্ছে।তীব্র মনে শয়তানটা ভর করে বসলো।টাওয়ানটা ঘাড়ে রেখে পেছন থেকে নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে গাঢ় একটা চুমু খায়।কোমড় থেকে তীব্রর হাতটা নন্দিতার পেটে স্পর্শ করলো।নন্দিতা কেঁপে উঠলো।মুহুর্তেই নন্দিতাকে কোলে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তীব্রর সারা শরীর নন্দিতার ওপর।নন্দিতার নড়াচড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই।তীব্র ওর হাত দিয়ে নন্দিতার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ঠোঁট গাঢ় চুমু খেতে থাকে।নন্দিতা ছটফট করছে,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।তীব্র ইচ্ছে করেই নন্দিতার ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।নন্দিতা ব্যাথায় শুধু উহু উহু করতে থাকে।ঘাড় থেকে চুলগুলি সরিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবাতেই নন্দিতা একটা ঝটকা দিয়ে তীব্রকে সরিয়ে দেয়।তীব্র এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।কশিয়ে একটা চড় মেরে বসলো নন্দিতর গালে।চড়ের তাল সামলেতে না পেরে সোফায় ধপ করে পড়ে যায়।তীব্র ওর কাছে গিয়ে গালে চাপ দিয়ে বললো

– কি সমস্যা কি তোমার? এভাবে এড়িয়ে চলো কেন আমায়? যখনি আদর করতে চাই তখনি এভাবে সরিয়ে দিচ্ছো।কেন?

– তীব্র গাল ছাড়ো,আমার লাগছে।আর কত বার বলবো আমার ভালোলাগে না এসব।

– ভালোলাগে না মানে কি? কি ভালো লাগে তোর? এখন আমার স্পর্শ ভালোলাগেনা? অন্য কাউকে পেয়েছিস নাকি? যে আমার স্পর্শ এখন আর ভালোলাগে না।অনেক সহ্য করেছি,আর না।

বলেই তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল’পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here