চন্দ্ররাতের_মায়া [৯]

0
229

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৯]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

কিছুক্ষণ পর তীব্র নন্দিতাকে ছেড়ে দিলো।নন্দিতা এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।লজ্জায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে পাশ ফিরে দারিয়ে রইলো।

চোখ খুলে দেখলো তীব্র বাইক নিয়ে হাজির।চোখের ইশারায় বাইকে উঠতে বললো।নন্দিতাও বাধ্য মেয়ের মতো বাইকে উঠলো।উঠে তীব্রর ঘাড়ে এক হাত রাখলো।ফুসকাওয়ালা মামার দিকে তাকাতেই দেখলো সে মুচকি হাসছে।নন্দিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।তীব্রও একটু লাজুক হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে চললো।

– কোথায় যাচ্ছি আমরা? (নন্দিতা)

– বাড়িতে

– কার বাড়িতে?

– কার বাড়ি মানে? আমার বাড়ি কি তোমার না?

– আমি সেটা বলিনি,ধুর তুমি সারাক্ষণ ঝগড়া করো।কথা বলবো না যাও তো

– তোমার শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি

– আমার বাড়িতে একটা কথা বললে কি হতো,বাবা মা তো চিন্তা করবে

– আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যে আপনাদের মেয়ে আমার সাথে আসবে

– কেনো বলতে গেলে? তুমি জানো যে আমি আসবো?

– হুম।তোমায় তো আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না।

বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঠান্ডা বাতাস।নন্দিতার শীত শীত হতে লাগলো।তবে ভালোই লাগছে তার। পেছন থেকে তীব্রকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকলো।

বাড়িতে ঢুকেই তীব্র নিজের মতো ঘরে গেলো।নন্দিতা জীর্ণ পায়ে এগুচ্ছে। ভেজা শাড়ি লেপ্টে যাওয়ায় হাটতে সমস্যা হচ্ছে। শেখর চৌধুরী সেখানে উবু হয়ে খবেরে কাগজ পড়ছে।নন্দিতা কাছে যেতেই তিনি বললেন

– বৌমা চলে এসছো,হাহাহাহা, কেনো ঝগড়া করতে যাও বলোতো।জানোই তো রাগ করে যতবার ই বাবার বাড়িতে যাবা ততবার ই তীব্র গিয়ে নিয়ে আসবে।

নন্দিতা লজ্জা পেলো।মুচকি হেসে মাথা নিচ করে রইলো।শেখর চৌধুরী বললেন

– বৌমা যাও,ঘরে গিয়ে ভেজা কাপর পাল্টে নাও।আর আমার জন্য একটু চা করতে পারবে? তোমার হাতের চা না খেলে আমার তৃপ্তি আসে না।

– হ্যা বাবা আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।দুই মিনিট দারান।

একপ্রকার হনহন করেই নিজের ঘরে গেলো নন্দিতা।ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাড়িটা খুলে ওয়াসরুমে চলে গেলো।ওয়াসরুমে গিয়ে দেখে তীব্র সারা শরীরে বডিওয়াস দিয়ে ফেলায় ভরিয়ে ফেলেছে।নন্দিতা পিছু পা হয়ে মনে মনে ভাবলো ” এই লোকটা এমন কেন,দরজাও লাগায় না,প্রাইভেসি বলতে কিচ্ছু নাই”।নন্দিতা বেড় হয়ে আসতেই তীব্র নন্দিতার হাত ধরে টেনে ওয়াসরুমে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো।নন্দিতা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো

– কি? হ্যা?

– কিছুনা,একটু আদর করতে মন চাচ্ছে

– ধুর,তুমি স্নান করো।আমি বাইরে আছি।

নন্দিতা চেঞ্জ করে নিচে গেলো চা বানাতে।যেতেই আরোহীর বাবা আহনাফ চৌধুরী নন্দিতাকে ডাকলো।তিনি বই পড়ছেন।বইয়ে চোখ রেখেই বললেন-

– কেমন আছো নন্দিতা

-আরেহ চাচা,কেমন আছেন, কখন এসেছেন?

– এসেছি সকালে।তোমাদের ছেলে হয়েছে না মেয়ে?

নন্দিতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।এই প্রশ্ন তাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করে দেয়।ক্ষত বিক্ষত মনটা যেনো নির্জীবিত হয়ে ওঠে।নন্দিতা চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো সেখান থেকে।আহনাফ চৌধুরী কিছুটা অবাক হলেন।তিনি শেখর চৌধুরীর কাছে গেলেন।এই বিষয়ে জানতে চাইলে শেখর চৌধুরী তাকে সবটা খুলে বললো।শুনে আহনাফ চৌধুরী মনে মনে নিজের কাছে নিজেই ছোট বোধ করলেন।

তীব্র বিছানায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিলো।নন্দিতা দরজা খুলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়েই হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।তীব্র ফোনটা রেখে নন্দিতার পাশে গিয়ে

– কি হয়েছে নন্দিতা?কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?

নন্দিতা কিছুই বললো না।তীব্রকে জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করলো।অনেক্ক্ষণ কান্নার পর তীব্রকে বলে

– তীব্র, তুমি কি আমায় নিয়ে খুশি?

– হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?

– আমি তো তোমায় বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারলাম না এখনো।আচ্ছা তুমিও কি মনে মনে এজন্য আমাকে ঘৃণা করো?

– তোমার কি সেটাই মনে হয়?

– না,আমি জানি তুমি আমায় কখনো ঠকাবে না।কিন্তু আমার জন্য তুমি,তোমার মা বাবা কষ্ট পাচ্ছে।একটা কথা বলবো,রাখবা?

– কি কথা?

– তুমি বিয়ে করো নাও।প্লিজ আমার কথাটা শুনো।আমার জন্য তুমি সারাজীবন বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত হবা,এটা আমি মানতে পারবো না

– নন্দিত লা থামো তুমি।আমিতো বলেছিই, বাবা না হতে পারায় আমায় কোনো সমস্যা নেই,তবুও কেন এসব বলো তুমি?

– দেখো এখন হয়তো তুমি বলছো।কিন্তু যখন আমাদের বয়স হবে,তখন তো আমাদের কাউকে লাগবে তাই না?জীবন তো সব সময় একই থাকে না।পাল্টায়,সাথে মন মানষিকতাও।এখন তোমার মনে হচ্ছে এরকম।কিন্তু কিছুদিন পর গিয়ে ঠিকি তুমি বুঝতে পারবে।তখন আমায় ঘৃনা করবে।আমি এটা সহ্য করতে পারবো না।সারা জীবন আমি এই দোষের ভাগী হয়ে থাকতে পারবো না।

– এখন আমায় কি করতে বলছো তুমি?

– যা করার সব আমিই করবো। তুমি শুধু সেটাতে হ্যা বলবে।কথা দাও তুমি আমার কথা শুনবে?

তীব্রর হাত নন্দিতা ওর মাথায় রেখে কথাটা বললো।তীব্র হতভম্ব হয়ে গেলো।এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ সে বুঝতে পারছে না।হাত সরিয়ে নিলেও নন্দিতার প্রবল জোরে সে রাজি হয়ে গেলো।

রাতে সবাই ডিনার করতে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত। নন্দিতা সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।আরোহী গুনগুন করতে করতে তীব্রর পাশের চেয়ারটায় বসলো।নন্দিতার খুব ঈর্ষা হতে লাগলো। তীব্রর পাশে কাউকে সে সহ্য করতে পারে না। তীব্র বিষয়টা লক্ষ্য করেও এড়িয়ে গেলো।নন্দিতার শাশুড়ী রাবেয়া চৌধুরী নাক ছিঁচকাচ্ছে।সব রান্না নন্দিতা করেছে।আহনাফ চৌধুরী খাবারের প্রসংশা করছেন।এটা রাবেয়া চৌধুরীর সহ্য হচ্ছে না।

খাওয়া শেষে নন্দিতা ছাঁদে গেলো।একাকিত্ব কিছু সময় কাটাতে।উঠে দেখলো সেখানে আগে থেকেই শেখর চৌধুরী দারিয়ে আছেন।ওনার খাওয়া শেষে হাটাহাটি করার অভ্যাস।নন্দিতা কাছে গেলো।

– বাবা

– কে বৌমা? তুমি এতো রাতে ছাদে?

– একটু আসলাম ভালোলাগছে না।আপনাকে কিছু বলার ছিলো

– কি বলো?

– কিভাবে যে বলবো।

– বৌমা, আমার কাছে কিছু বলতে তো তুমি কখনো সংকোচ বোধ করোনি।তাহলে আজ সংকোচ বোধ করছো যে?

– বাবা আমি চাই তীব্র আবার বিয়ে করুক।ওকে আমি বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারিনি।এর দায় আমায় সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।আমি এটা চাই না বাবা।আপনাদের বয়স হয়েছে।আপনারাও তো চান আপনাদের নাতি নাতনির মুখ দেখতে।তাদের সাথে সময় কাটাতে।আমি সেটাতো অক্ষম বাবা।

– বৌমা তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?

– হ্যা বাবা।আমি ভেবেই বলেছি।আমি সারা জীবন আপনাদের এরুপ না পাওয়ার কারন হতে চাই না।

বলেই নন্দিতা চোখ মুছতে মুছতে নিচে নেমে গেলো।কেন যাবি আজ ওর প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে সেটা ওর অজানা নয়।তীব্রকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে ক্রমশ ঘিরে ধরছে।কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে তীব্রর ডাকে ঘুম ভাঙলো।ঘুমঘুম চোখে তীব্রকে বললো

– কয়টা বাজে?

– দশটা

– কিহ? এতে বেলা হয়ে গেছে আর আমি টের ই পাই নি

– তুমি উঠে ফ্রেশ হও।ডাক্তারের কাছে যাবো আমরা।

– ডাক্তার কেন?

– দীর্ঘদিন হয়ে গেলো।কিন্তু তুমি সন্তান সম্ভবা হচ্ছো না।এটা নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।

নন্দিতার বুকটা ধুক করে উঠলো।এই বিষয়ে যেকোনো কথাই নন্দিতার কেমন কাটার মতো বুকে বাঁধে। ফ্রেশ হয়ে রওনা হলো ডাক্তারের চেম্বারে।

কয়েকটা টেস্ট করে রিপোর্ট হাতে ডাক্তার বসে আছে।সামনের চেয়ারে নন্দিতা তীব্র বসে আছে।দু’জনই চিন্তায় সংকুচিত হয়ে আছে।ডাক্তার হাতে রিপোর্ট নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকালো।ভারি ভারি স্বরে বললেন…….

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here