#চন্দ্ররাতের_মায়া,০৯,১০
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৯
কিছুক্ষণ পর তীব্র নন্দিতাকে ছেড়ে দিলো।নন্দিতা এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।লজ্জায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে পাশ ফিরে দারিয়ে রইলো।
চোখ খুলে দেখলো তীব্র বাইক নিয়ে হাজির।চোখের ইশারায় বাইকে উঠতে বললো।নন্দিতাও বাধ্য মেয়ের মতো বাইকে উঠলো।উঠে তীব্রর ঘাড়ে এক হাত রাখলো।ফুসকাওয়ালা মামার দিকে তাকাতেই দেখলো সে মুচকি হাসছে।নন্দিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।তীব্রও একটু লাজুক হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে চললো।
– কোথায় যাচ্ছি আমরা? (নন্দিতা)
– বাড়িতে
– কার বাড়িতে?
– কার বাড়ি মানে? আমার বাড়ি কি তোমার না?
– আমি সেটা বলিনি,ধুর তুমি সারাক্ষণ ঝগড়া করো।কথা বলবো না যাও তো
– তোমার শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি
– আমার বাড়িতে একটা কথা বললে কি হতো,বাবা মা তো চিন্তা করবে
– আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যে আপনাদের মেয়ে আমার সাথে আসবে
– কেনো বলতে গেলে? তুমি জানো যে আমি আসবো?
– হুম।তোমায় তো আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না।
বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঠান্ডা বাতাস।নন্দিতার শীত শীত হতে লাগলো।তবে ভালোই লাগছে তার। পেছন থেকে তীব্রকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকলো।
বাড়িতে ঢুকেই তীব্র নিজের মতো ঘরে গেলো।নন্দিতা জীর্ণ পায়ে এগুচ্ছে। ভেজা শাড়ি লেপ্টে যাওয়ায় হাটতে সমস্যা হচ্ছে। শেখর চৌধুরী সেখানে উবু হয়ে খবেরে কাগজ পড়ছে।নন্দিতা কাছে যেতেই তিনি বললেন
– বৌমা চলে এসছো,হাহাহাহা, কেনো ঝগড়া করতে যাও বলোতো।জানোই তো রাগ করে যতবার ই বাবার বাড়িতে যাবা ততবার ই তীব্র গিয়ে নিয়ে আসবে।
নন্দিতা লজ্জা পেলো।মুচকি হেসে মাথা নিচ করে রইলো।শেখর চৌধুরী বললেন
– বৌমা যাও,ঘরে গিয়ে ভেজা কাপর পাল্টে নাও।আর আমার জন্য একটু চা করতে পারবে? তোমার হাতের চা না খেলে আমার তৃপ্তি আসে না।
– হ্যা বাবা আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।দুই মিনিট দারান।
একপ্রকার হনহন করেই নিজের ঘরে গেলো নন্দিতা।ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাড়িটা খুলে ওয়াসরুমে চলে গেলো।ওয়াসরুমে গিয়ে দেখে তীব্র সারা শরীরে বডিওয়াস দিয়ে ফেলায় ভরিয়ে ফেলেছে।নন্দিতা পিছু পা হয়ে মনে মনে ভাবলো ” এই লোকটা এমন কেন,দরজাও লাগায় না,প্রাইভেসি বলতে কিচ্ছু নাই”।নন্দিতা বেড় হয়ে আসতেই তীব্র নন্দিতার হাত ধরে টেনে ওয়াসরুমে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো।নন্দিতা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো
– কি? হ্যা?
– কিছুনা,একটু আদর করতে মন চাচ্ছে
– ধুর,তুমি স্নান করো।আমি বাইরে আছি।
নন্দিতা চেঞ্জ করে নিচে গেলো চা বানাতে।যেতেই আরোহীর বাবা আহনাফ চৌধুরী নন্দিতাকে ডাকলো।তিনি বই পড়ছেন।বইয়ে চোখ রেখেই বললেন-
– কেমন আছো নন্দিতা
-আরেহ চাচা,কেমন আছেন, কখন এসেছেন?
– এসেছি সকালে।তোমাদের ছেলে হয়েছে না মেয়ে?
নন্দিতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।এই প্রশ্ন তাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করে দেয়।ক্ষত বিক্ষত মনটা যেনো নির্জীবিত হয়ে ওঠে।নন্দিতা চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো সেখান থেকে।আহনাফ চৌধুরী কিছুটা অবাক হলেন।তিনি শেখর চৌধুরীর কাছে গেলেন।এই বিষয়ে জানতে চাইলে শেখর চৌধুরী তাকে সবটা খুলে বললো।শুনে আহনাফ চৌধুরী মনে মনে নিজের কাছে নিজেই ছোট বোধ করলেন।
তীব্র বিছানায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিলো।নন্দিতা দরজা খুলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়েই হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।তীব্র ফোনটা রেখে নন্দিতার পাশে গিয়ে
– কি হয়েছে নন্দিতা?কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?
নন্দিতা কিছুই বললো না।তীব্রকে জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করলো।অনেক্ক্ষণ কান্নার পর তীব্রকে বলে
– তীব্র, তুমি কি আমায় নিয়ে খুশি?
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?
– আমি তো তোমায় বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারলাম না এখনো।আচ্ছা তুমিও কি মনে মনে এজন্য আমাকে ঘৃণা করো?
– তোমার কি সেটাই মনে হয়?
– না,আমি জানি তুমি আমায় কখনো ঠকাবে না।কিন্তু আমার জন্য তুমি,তোমার মা বাবা কষ্ট পাচ্ছে।একটা কথা বলবো,রাখবা?
– কি কথা?
– তুমি বিয়ে করো নাও।প্লিজ আমার কথাটা শুনো।আমার জন্য তুমি সারাজীবন বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত হবা,এটা আমি মানতে পারবো না
– নন্দিত লা থামো তুমি।আমিতো বলেছিই, বাবা না হতে পারায় আমায় কোনো সমস্যা নেই,তবুও কেন এসব বলো তুমি?
– দেখো এখন হয়তো তুমি বলছো।কিন্তু যখন আমাদের বয়স হবে,তখন তো আমাদের কাউকে লাগবে তাই না?জীবন তো সব সময় একই থাকে না।পাল্টায়,সাথে মন মানষিকতাও।এখন তোমার মনে হচ্ছে এরকম।কিন্তু কিছুদিন পর গিয়ে ঠিকি তুমি বুঝতে পারবে।তখন আমায় ঘৃনা করবে।আমি এটা সহ্য করতে পারবো না।সারা জীবন আমি এই দোষের ভাগী হয়ে থাকতে পারবো না।
– এখন আমায় কি করতে বলছো তুমি?
– যা করার সব আমিই করবো। তুমি শুধু সেটাতে হ্যা বলবে।কথা দাও তুমি আমার কথা শুনবে?
তীব্রর হাত নন্দিতা ওর মাথায় রেখে কথাটা বললো।তীব্র হতভম্ব হয়ে গেলো।এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ সে বুঝতে পারছে না।হাত সরিয়ে নিলেও নন্দিতার প্রবল জোরে সে রাজি হয়ে গেলো।
রাতে সবাই ডিনার করতে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত। নন্দিতা সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।আরোহী গুনগুন করতে করতে তীব্রর পাশের চেয়ারটায় বসলো।নন্দিতার খুব ঈর্ষা হতে লাগলো। তীব্রর পাশে কাউকে সে সহ্য করতে পারে না। তীব্র বিষয়টা লক্ষ্য করেও এড়িয়ে গেলো।নন্দিতার শাশুড়ী রাবেয়া চৌধুরী নাক ছিঁচকাচ্ছে।সব রান্না নন্দিতা করেছে।আহনাফ চৌধুরী খাবারের প্রসংশা করছেন।এটা রাবেয়া চৌধুরীর সহ্য হচ্ছে না।
খাওয়া শেষে নন্দিতা ছাঁদে গেলো।একাকিত্ব কিছু সময় কাটাতে।উঠে দেখলো সেখানে আগে থেকেই শেখর চৌধুরী দারিয়ে আছেন।ওনার খাওয়া শেষে হাটাহাটি করার অভ্যাস।নন্দিতা কাছে গেলো।
– বাবা
– কে বৌমা? তুমি এতো রাতে ছাদে?
– একটু আসলাম ভালোলাগছে না।আপনাকে কিছু বলার ছিলো
– কি বলো?
– কিভাবে যে বলবো।
– বৌমা, আমার কাছে কিছু বলতে তো তুমি কখনো সংকোচ বোধ করোনি।তাহলে আজ সংকোচ বোধ করছো যে?
– বাবা আমি চাই তীব্র আবার বিয়ে করুক।ওকে আমি বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারিনি।এর দায় আমায় সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।আমি এটা চাই না বাবা।আপনাদের বয়স হয়েছে।আপনারাও তো চান আপনাদের নাতি নাতনির মুখ দেখতে।তাদের সাথে সময় কাটাতে।আমি সেটাতো অক্ষম বাবা।
– বৌমা তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?
– হ্যা বাবা।আমি ভেবেই বলেছি।আমি সারা জীবন আপনাদের এরুপ না পাওয়ার কারন হতে চাই না।
বলেই নন্দিতা চোখ মুছতে মুছতে নিচে নেমে গেলো।কেন যাবি আজ ওর প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে সেটা ওর অজানা নয়।তীব্রকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে ক্রমশ ঘিরে ধরছে।কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।
সকালে তীব্রর ডাকে ঘুম ভাঙলো।ঘুমঘুম চোখে তীব্রকে বললো
– কয়টা বাজে?
– দশটা
– কিহ? এতে বেলা হয়ে গেছে আর আমি টের ই পাই নি
– তুমি উঠে ফ্রেশ হও।ডাক্তারের কাছে যাবো আমরা।
– ডাক্তার কেন?
– দীর্ঘদিন হয়ে গেলো।কিন্তু তুমি সন্তান সম্ভবা হচ্ছো না।এটা নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
নন্দিতার বুকটা ধুক করে উঠলো।এই বিষয়ে যেকোনো কথাই নন্দিতার কেমন কাটার মতো বুকে বাঁধে। ফ্রেশ হয়ে রওনা হলো ডাক্তারের চেম্বারে।
কয়েকটা টেস্ট করে রিপোর্ট হাতে ডাক্তার বসে আছে।সামনের চেয়ারে নন্দিতা তীব্র বসে আছে।দু’জনই চিন্তায় সংকুচিত হয়ে আছে।ডাক্তার হাতে রিপোর্ট নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকালো।ভারি ভারি স্বরে বললেন…….
চলবে?
#চন্দ্ররাতের_মায়া [১০]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
কয়েকটা টেস্ট করে রিপোর্ট হাতে ডাক্তার বসে আছে।সামনের চেয়ারে নন্দিতা তীব্র বসে আছে।দু’জনই চিন্তায় সংকুচিত হয়ে আছে।ডাক্তার হাতে রিপোর্ট নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকালো।ভারি ভারি স্বরে বললেন..
– মিঃতীব্র,আপনাদের বিয়ের কতদিন হলো?
– ছয় বছর
– ছয় বছরে আপনার স্ত্রী দুইবার প্রেগন্যান্ট হয়,আর কোনো কারনে বেবি দুইটা বেঁচে নেই
– জি
– কেন?কারনটা কি বলুন তো
– একবার ও মৃত বেবির জন্ম দেয়,আরেকবার জন্মের পর বেবিটাকে খুজে পাওয়া যায়নি।
– লাস্ট কবে আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হয়?
– দুবছর আগে,
– সেই বেবি কোথায়?
– সাত মাস পর জানতে পারি ওর পেটে কোনো বেবি ছিলো না।টিউমারের জন্য পেটের আকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছিলো
– তাহলে প্রেগ্ন্যাসি টেস্টে হয়তো ভুল ছিলো।কোথায় করিয়েছিলেন টেস্ট?
– হসপিটালে।
– সম্ভাবনা আছে প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট কারোর সাথে বদল হয়েছে।সে যাই হোক।টিউমার অপারেশন করিয়েছিলেন?
– জি
– কতদিন আগে?
– প্রায় দুই-বছর আগে
– মিঃতীব্র আপনি কাল একবার আসুন।আজ তেমন কিছু বলবো না।আপনি কাল দেখা করুন আমার সাথে।
বলেই ফাইলটা রেখে দিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন।বেলে চাপ দিতেই তার পি এ আসলো।তাকে বললো ” আজ আর রোগী দেখবো না।তাদের বলো কাল আসতে”।
তীব্র আর নন্দিতা কেবিন থেকে বেড় হলো।হসপিটালে আসলে নন্দিতার খুব কান্না পায়।কেননা এখানে আসলেই নবজাতকের দেখা মেলে।যা নন্দিতার মনকে কাচের ন্যায় ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।তীব্র বিষয়টি লক্ষ্য করে।কিন্তু তার কিছু করার উপায় থাকে না।
তারা বাড়িতে আসলে রাবেয়া চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নন্দিতাকে দেখে।তীব্রকে কর্কষ গলায় বললো” কি,ডাক্তার কি কোনো আশা দিলো?আমার দীর্ঘ বিশ্বাস, এই মেয়ের দ্বারা আমাদের বংশে নতুন কেউ আসবে না. “। রাবেয়া চৌধুরীর কথায় তীব্রর অনেক রাগ হয়।সে কিছু বলে না।মায়ের ওপর দিয়ে কথা বলার অধিকার তার নেই।মা বলতেই পারে।মা বলবে না তো কে বলবে?
রাতে খাওয়ার পর তীব্র ছাঁদে গিয়ে সিগারেট ধরালো।এক হাতে ছাদের কার্নিশ আরেক এক হাতে জলন্ত সিগারেট। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের আলোয় কানায় কানায় ভয়ে গেছে ছাঁদ।কারোর পায়ের শব্দ কানে এলো।তীব্র মগ্ন হয়ে চাঁদ দেখতে থাকলো।যে এসেছে তাকে তীব্র চিনে ফেলেছে।তার শরীরের গন্ধ তার চেনা।যদিও অনেক বছর আগেই তাদের বিচ্ছেদ হয়, তবুও ভালোবাসার মানুষ কখনো পুরোনো হয় না।তীব্র করুন স্বরে বললো
– মিহিতা (তীব্রর ভাবী)
– হুম
– আমি ভালো নেই,জানিনা কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি
– একই তাপে পুরছি আমি নিজেও।
– আমি তোমায় ঠকাইনি মিহিতা।তোমার ভালো চেয়েছি আমি
– এই ভালো তো আমি চাইনি তীব্র,বলো চেয়েছিলাম?
– তখন আমি কেবল ভার্সিটি উঠি।আমার নিজের জীবনের নিশ্চয়তা নেই,তোমায় কিভাবে ভালো রাখতাম বলো ? আমি ভালোবাসার মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।ভাইয়া তখন মোটামুটি স্যাটেল হয়ে গেছে।তোমার অন্তত দেখতে পারবো এই আশায় ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ের ব্যাবস্থা করেছিলাম।তোমায় আমি ঠকাইনি মিহিতা,বিশ্বাস করো,আমি তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম,তাই এমনটা করেছি।
– আমি জানি তীব্র।কি করবো বলো,আমি যে ভুলতে পারছি না।কিন্তু আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।তুমি কাউকে এতোটা কিভাবে ভালোবাসতে পারো,? পরিবারের এতো কথা,বাইরের মানুষের কথা, নন্দিতার বাচ্চা না হওয়া,এর পরেও তুমি ওকে এতোটা ভালোবাসো।কিভাবে?
(তীব্র সিগারেট মুখে দিলো)
– আমার খুব হিংসে হয় জানো,এই ভালোবাসা আমার প্রাপ্য ছিলো, কি ছিলো না?
– ভালোবাসা জিনিসটা কত অদ্ভুত!
– আমায় ক্ষমা করে দিও তীব্র, তোমার ওপর রাগে,ঘৃণায় আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।একটা মেয়ে সব সহ্য করে,ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে দেখলে তা সহ্য করতে পারে না।অনেক রাত হয়েছে।ঘরে যাও,নন্দিতা অপেক্ষা করছে।
মিহিতা চলে গেলো।তীব্র সিগারেটটা শেষ করে নিজের রুমে গেলো। নন্দিতা শুয়ে পড়েছে,চোখের কোনে জল বেঁধে আছে।কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।তীব্র অনেকক্ষণ ঘুমন্ত নন্দিতাকে দেখলো।মুচকি হেসে নন্দিতার কপালে একটা চুমু দিয়ে শরীরে কাঁথাটা জরিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে তীব্র নাস্তা না করেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বেড়িয়ে গেলো।ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে।তিনি একটা পান মুখে দিলেন।তীব্রর দিকে সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলেন। তীব্র না সূচক মাথা নাড়লো।ডাক্তার তার পি এ কে ডাকলো।ডেকে কি যেন বললো।কিছুক্ষণ পর একজন লোক আসলো চেম্বারে।তীব্র কিছুটা অবাক হলো।ডাক্তার তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
– মিঃতীব্র, দেখুনতো,ইনিই কি আপনার স্ত্রীর পেটের টিউমারের অপারেশন করিয়েছিলেন?
তীব্র অস্ফুট স্বরে বললো ” হ্যা “।ডাক্তার তখন বললো
– ডাঃ সিহাব,আপনি কি জানেন ডাক্তার প্যাশনটা কি?
সিহাব- জ্বি স্যার (ভয়ার্ত কন্ঠে)
– আপনি যে এরকম একটা কাজ করলেন,নিজেকে ক্ষমা করতে পেরেছেন তো ?
তীব্র কিছুটা হতভম্ব হচ্ছে। কি হচ্ছে তার বোধগম্য হলো না।সে যে ডাক্তারের কাছে এসেছে তার নাম ডাঃহাবিব।ডাঃহাবিব তীব্রর উদ্দেশ্য বললেন
– মিঃতীব্র, সরি টু সে,আপনার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবে না।
তীব্র মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।মুহুর্তেই সারা শরীর ঘামতে শুরু করলো।তীব্র নিজের শার্টের ওপরের বোতাম খুলে ফেললো।ডাঃ হাবিব তার দিকে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন।
– আপনি উত্তেজিত হবেন না।নিজেকে সামলাম।আপনি ভেঙে পড়লে আপনার স্ত্রীকে শক্তি জোগাবে কে?
– ডাঃ আপনি এটা কি বললেন?
– হ্যা মি তীব্র, আপনার স্ত্রী আর কখনো মা হতে পারবে না। কারন বাচ্চা হওয়ার যে নাড়ি থাকে সেটা কেটে ফেলা হয়েছে।
তীব্রর মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো।কাজটা কে করেছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।লাথি মেরে চেয়ার থেকে উঠে ডাঃসিহাবের শার্টের কলার ধরে গালে ঠাস ঠাস করে চড় দিতে দিতে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলো।এসব গালির সাথে সে পরিচিত নয়।নিজেকে যেনো হারিয়ে ফেলেছে।মাথার চুল মুঠ করে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো তীব্র। ডাঃসিহাবের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে।সাদা এফ্রোন লাল টকটকে হয়ে গেছে।ডাঃহাবিব বেল চাপতেই বাইরে থেকে ৪জন এসে তাদের সরিয়ে দেয়।প্রথমে ২ জন আসে।তারা তীব্রর হিংস্রতার কাছে টিকতে না পেরে ডাঃহাবিব আবার দুজনকে ডেকে পাঠায়।
থানায় অফিসারের সামনে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে ডাঃহাবিব। ডানে বসে আছে তীব্র।ডাঃসিহাব কে রাখা হয়েছে ডাঃহাবিবের বাম দিকে।তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা।তীব্রর চোখ লাল রক্ত বর্ণ হয়ে আছে।হাতের মুঠ শক্ত।সে কোনো কথা বলছে না।ভেতরে ভেতরে এক পাহাড় কষ্ট নিয়ে বসে আছে।অফিসার গম্ভীর স্বরে বললো
– ডাঃসিহাব,নিজের করা অপরাধ কি শিকার করবেন? না ডলামলা দিতে হবে?
সিহাব- স্যার আমি আমার অপরাধ শিকার করবো।আমি নিজ ইচ্ছেয় করিনি স্যার
অফিসার- সেটা তো জানি,কার কথা বলেছেন বলুন
সিহাব- আমি যখন ওনার স্ত্রীর অপারেশন করছি তখন কেউ একজন আমার ফোনে ফোন করে
অফিসার- থিয়েটারে ফোন সাথে কেন আপনার?
সিহাব- স্যার আমার কাছে সবসময় একটা ফোন থাকে,সেখানে অতিপ্রয়োজনীয় ছাড়া ফোন করেনা কেউ।
– ফোন করে কি বললো?
– ফোন করে বললো নন্দিতা যেন কোনোদিনও মা হতে না পারে সে ব্যাবস্থা করতে।আমি রাজি না হলে একটা ভিডিও পাঠায়।সেই ভিডিওতে দেখলাম কেউ একজন আমার মেয়ের মাথায় পিস্তল তাক করে ধরে আছে।তারা বললো যদি না করি তাহকে আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলবে।বাবা হয়ে মেয়ের এরুপ অবস্থা দেখে তাদের কথা মতো আমি পাপ কাজটা করি।
তীব্র ক্ষিপ্ত হয়ে ডাঃসিহাববের ওপর তেড়ে যেতেই কয়েকজন কনস্টেবল মিলে তীব্রকে আটকালো।অফিসার তীব্রকে বললো ” মিঃতীব্র আপনি শান্ত হোন,আমরা বিষয়টা দেখছি।এর সাথে যুক্ত সবাই শাস্তি পাবে ”
তীব্র চেয়ারে বসতেই পোন আসলো।ফোন স্ক্রিনে ভাবী নামটা ভেসে এলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নামিশ্রিত আওয়াজ আসলো
– তীব্র,তোমার ভাইয়াকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যাচ্ছে।তুমি কিছু একটা করো,প্লিজ ওকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো, প্লিজ।
চলবে?