চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ১

0
5765

চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ১
Tasmima Yeasmin

-ফাদার দয়া করে বলুন কে আমি? কি আমার পরিচয় আর কেনই বা রোজ আমি এই একই স্বপ্ন দেখি। আমি এর ব্যাখা চাই?
-আজও কি তুই একই স্বপ্ন দেখেছিস? ফাদার চন্দ্রা কে প্রশ্ন করে।
-হ্যা ফাদার।রোজকার মত আজও দেখলাম, আমি একটা গুহার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। চারপাশে অন্ধকারে আচ্ছন্ন অথচ আমি স্পষ্ট চলার পথ দেখতে পাচ্ছি। চারপাশে পাগল করার মত মোহনীয় সুর বাজছে। সেই গুহার মধ্যে একটা নিষ্প্রাণ রাজপ্রসাদ। হঠাত করে সেই সুর থেমে যায় আর এক ঝটকা বাতাস এসে সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে থেমে যেতেই সারা রাজপ্রসাদ আলোকিত হয়ে ওঠে। ক্যাচক্যাচ শব্দে সদর দরজা খুলে যায় আর দরজার ওপাশ থেকে অস্পষ্ট কেউ আমাকে ডাকতে থাকে করুন সুরে। আমি দরজা পেরিয়ে প্রসাদে পা দিতেই স্বপ্নটা ভেঙে যায়।” বলুন ফাদার কেন আমি রোজ এই একই স্বপ্ন দেখি আর কেন এখানে এসেই স্বপ্নটা ভেঙে যায়?আর অই অস্পষ্ট অবয়বটাই বা কে?
-সময় হোক তোকে আমি সব বলবো। এখন যা চন্দন কাঠগুলো ঠিক করে সাজা।
-ঠিকআছে ফাদার। কিন্তু কবে সেই সময় হবে?
-খুব শীঘ্রই
-আচ্ছা।
চন্দ্রা খুব মিহি স্বরে বলে ফাদারের পূজোর কক্ষ ত্যাগ করলো।
চন্দ্রা খুব ছোটবেলা থেকে ফাদারের কাছেই বড় হয়েছে। সে জানেনা কোথা থেকে সে এসেছে। কি তার পরিচয়। ছোটবেলা থেকে এই সতেরো বছর পর্যন্ত ফাদারের কাছে এই চার্চেই চন্দ্রা বড় হয়েছ। চন্দ্রা দেখতে বেশ লম্বা। স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি ই। গায়ের রঙ ফরসা আর চোখের মনিদুটো নীলচে। মেয়েটার চন্দ্রা নামটা সার্থক কারণ চন্দ্রা চাদের মতই সুন্দরি।
এক স্নিগ্ধ প্রভাতে চন্দ্রা ফুল কুড়াতে কুড়াতে জংগলের খানিকটা ভিতরে চলে গেল। ফুল তুলছে আর গুণগুণ করে গান গাইছে। গানের শব্দে আচমকা ছেলেটা মাথা তুলে তাকালো। চন্দ্রা ছেলেটাকে দেখে ভয়ে দু পা পিছিয়ে গেল। ছেলেটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে হাটুর মধ্যে মাথা দিয়ে গুটিসুটি এমনভাবে বসে ছিল যে ভালোমত খেয়াল না করলে বোঝাই যায়না যে ওখানে একটা মানুষ বসে আছে। চন্দ্রা ছেলেটার দিক খানিকক্ষণ তাকানোর পরে ভয়টা একটু কাটলো। ছেলেটাকে সে চেনে রথযাত্রায় দেখেছিল। নাম চার্লস। ছেলেটা বেশ লম্বা, পেশিবহুল শরীর, আর চোখের মনিদুটো ঘন বাদামী। চেহারায় একটা কাঠিন্য ভাব। সচরাচর এরকম কাউকে দেখা তো দুরের কথা কখনো কাউকে দেখেছে কিনা বলে মনে করতে পারে না চন্দ্রা।
তবে এই চেহারা ভোলার নয়।
চার্লস ছেলেটা মৃদু পায়ে হেটে চন্দ্রার কাছে এসে দাড়ালো। মুহূর্তেই মুখটা কোমল করে বললো,
-কেমন আছো চন্দ্রারানী?
-এই ছেলে আমার নাম কিভাবে জানলো চন্দ্রা মনে মনে ভাবে।
-মনের টান থাকলেই জেনে নেয়া যায়। ছেলেটার মুখে মৃদু হাসি।
-সর্বনাশ। এই ছেলে দেখছি মনের কথাও পড়তে পারে।
-ওই যে বললাম না মনের টান থাকলে। তুমি চুপ করে থাকলেও আমি সব বুঝি।
চন্দ্রার অবাক হওয়ার কথা। কিন্তু ও বুঝতে পারছে ওর লজ্জা লাগছে। চার্লস উঁচু থেকে কিছু নাম না জানা বুনোফুল তুলে চন্দ্রার ঝুড়িতে দিয়ে বললো চল তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি। চন্দ্রা বাধ্য মেয়ে হয়ে চার্লস এর সাথে হেটে চলছে। যেতে যেতে অনেক কথা বললো দুজন। চন্দ্রা চার্লসকে রথযাত্রায় দেখলেও চার্লস চন্দ্রাকে অনেক আগে থেকেই চেনে। কথা বলতে বলতে গির্জার আশ্রমের সামনে এসে থামলো।
-তুমি এখন যাও চন্দ্রা।
-তুমিও ভিতরে চলো চার্লস। ফাদারের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
-আমাদের গির্জার ভিতরে যাওয়া নিষেধ। ফাদার তো তাহলে আমাকে চিনে ফেলবে। বিড়বিড় করে বলে চার্লস।
-কি বলছো বিড়বিড় করে, যাবেনা?
-আজ না আরেকদিন বলেই চার্লস হাটা দিলো।
চন্দ্রা একাই ফিরলো। আজ আমাবস্যা তিথি। এই দিনে চন্দ্রাকে উপোষ করতে হয়। সন্ধ্যার দিকে ফাদার এক বাটি নীল রঙের একটা পানীয় খেতে দেন। এটা খেলেই চন্দ্রার সারা শরীর জ্বলতে থাকে। ফাদার তখন কাচা হলুদ, আর সিঁদুর মিশিয়ে মন্ত্র পরে এক বালতি পানিতে ঢেলে দেন। পরে এই পানি দিয়ে গোসল করলেই জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়। এরপর একবাটি গরম দুধ খেয়ে চন্দ্রা ঘুমিয়ে পড়ে। চন্দ্রার ছয় বছর থেকে প্রতিটা আমাবস্যায় এটাই হয়ে আসছে।
একদিন ফাদার চন্দ্রাকে ডেকে বললো,
-চন্দ্রা এই আমাবস্যায় তোকে ব্রত করতে হবে না।
-কেন ফাদার?
-সেটা সময় হলে জানবি।
আজ আমাবস্যা। সকাল থেকেই চন্দ্রার শরীরটা কেমন জানি লাগছে। চার্লস ছেলেটার কথা মনে পড়তেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। এত কেন মনে পড়ছে তবে কি চন্দ্রা ওকে ভালোবাসে। কি জানি।
সন্ধ্যা হতেই চন্দ্রার সারা দেহ জ্বলতে শুরু করলো। সহ্য করতে না পেরে সে ফাদারের কাছে গিয়ে বলে,
-ফাদার আমার সারা শরীর এভাবে জ্বালা করছে কেন? মনে হচ্ছে যেন মরে যাচ্ছি।
-এটা খেয়ে শান্ত হয়ে বস। বলে একটা বাটিতে সেই নীল পানীয় দিলো।
চন্দ্রা পানীয়টা খেয়ে দেখলো এবার আসলেই শান্তি লাগছে।
-এখনি উপযুক্ত সময় চন্দ্রা তোর আসল পরিচয় জানার। সব রহস্য জানার সময় হয়ে এসেছে।
-বলুন ফাদার।
ফাদার বলতে শুরু করলো….

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here