চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ৩

0
4148

চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ৩
Tasmima Yeasmin

ভ্যাম্পায়ার কিং চার্লিয়াম এর কাছে খবর পৌছে গেছে প্রিন্স চার্লস ঠিক জ্যোতিষির ভাষ্যমত একটা নাগকন্যাকে বিয়ে করে তাদের রাজ্যের ধংসের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তাদের সন্তানই হবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য ধংসের কারন। সাথে সাথেই কিং এক শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার পাঠিয়ে দেয় চন্দ্রাকে হত্যা করার জন্য।
আমাবস্যা আসতে আর মাত্র এক দিন বাকি। এই কয়টা দিন চন্দ্রার চার্লস এর সাথে ছোট্ট কুটিরে ভালোই কেটেছে। প্রতিটা দিনই মনে রাখার মত। এখন যদি ওর পিতামাতা হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে মরেও যায় ওর কোন দুঃখ নেই।
পরের দিন রাতে চন্দ্রা আর চার্লস ঘুমিয়ে ছিল। চন্দ্রা পা টিপে টিপে সাবধানে উঠে যাতে চার্লস এর ঘুম না ভেঙে যায়। চার্লস এর কপালে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে বলে,
আমাকে ক্ষমা করে দিও চার্লস। আমি তোমার বন্ধনে বাধা পড়তে পারলাম না। ভালোবাসি।
চন্দ্রা আস্তে দরজা ভিজিয়ে দিয়ে বের হয়ে যায়। চার্লস তখন জেগেই ছিল কিন্তু ঘুমের ভান ধরে। এত রাতে চন্দ্রা কোথায় যাচ্ছে। চার্লস ও লুকিয়ে লুকিয়ে চন্দ্রার পিছু নেয়। দেখে যে চন্দ্রা আশ্রমের দিকে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে ফাদার এর সাথে দেখা করে। চার্লস আড়াল থেকে চন্দ্রার কথা শুনতে পায়,
-ফাদার আমি এসেছি। এবার বলুন আমাকে কি করতে হবে?(চন্দ্রা)
-আশ্রম বরাবর সোজা উত্তর দিকে আধা মাইল হাটবি। সেখানে একটা অতি বৃদ্ধ বটগাছ আছে। তার ঠিক কোটরের কাছে ছোট একটা গর্ত দেখতে পাবি। গরতের কাছে পা দিলেই সেটা একটা গুহার আকার ধারন করবে। গুহা দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই একটা রাজপ্রসাদ দেখতে পাবি। ওটাই নাগপুরী। কিন্তু খবরদার নাগপুরীর ভিতরে প্রবেশ করবি না। নানা মায়াজাল করে তান্ত্রিক তোকে ভিতরে নিতে চাইবে। তুই সোজা নাগপুরীর পিছনদিকে চলে যাবি সেখানে একটা দীঘি আছে আর দীঘীর নিচেই সেই মনি। মনি হাতে নিয়ে ঢুকলে তোকে কেউ কিছু করতে পারবে না। তারপর নিবি তোর প্রতিশোধ।
এতক্ষণ চন্দ্রা ফাদারের প্রতিটা কথা মনযোগ দিয়ে শুনছিল। ফাদার একটা আংটি এনে চন্দ্রার হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
-এটা তোর বাবা আমাকে দিয়েছিল। এটা তোকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু চন্দ্রা তুই তো একটা খুব বড় ভুল করে ফেলেছিস?
চন্দ্রা কেপে উঠে বলে,
-কি ভুল ফাদার?
তুই যাকে বিয়ে করেছিস সে কোন সাধারণ মানুষ নয়। সে একটা ভ্যাম্পায়ার।
-কি বলছেন ফাদার?
-হ্যা। আর তোরই গর্ভে বড় হচ্ছে সেই ভ্যাম্পায়ার শিশু। যে কিনা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যকে ধংস করে দিবে আর তোর মৃত্যুর কারন হবে।
-আমার সন্তান আমার মৃত্যুর কারন?আর যদি এ সন্তান কে আমি মেরে ফেলি?
-তাহলে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য বেচে যাবে কিন্তু তোর স্বামী চার্লস মারা যাবে।
-কেন ফাদার?
-কারন তোর স্বামী রাজ্য বহির্ভূত। তাকে সবাই মারার জন্য খুঁজে চলছে। তোর সন্তান সেইসব ভ্যাম্পায়ারদের মারবে যারা মানুষের রক্ত খায়। তাতে ভ্যম্পায়ার রাজ্যের প্রায় নিরানব্বই ভাগ ভ্যাম্পায়ারই মারা যাবে সেখানের রাজাসহ। তোর সন্তানের থাকবে অসীম ক্ষমতা। সে হবে ভ্যাম্পায়ার নাগ।
-ফাদার এ থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন উপায় নেই?
-নারে মা। এটাই তোর ভাগ্য। তুই যা তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর ভ্যাম্পায়ার রাজা এতক্ষনে তোর কথা জেনে গেছে। তোর এখন প্রতিমুহূর্তে বিপদ। তাই সাবধানে থাকবি নিজের বুদ্ধি আর ক্ষমতা ঠিক মত ব্যাবহার করবি।
-আচ্ছা ফাদার চলি।
চার্লস এতক্ষন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। চন্দ্রা তাহলে একটা নাগিনী। ওকি চন্দ্রার পিছু পিছু যাবে। গিয়েই দেখা যাক না কি হয়।
চন্দ্রা উত্তর দিক বরাবর হাটছে আর চার্লস গোপনে চন্দ্রাকে ফলো করছে।
হঠাত করে চার্লস অনুভব করলো আশেপাশে কোন ভ্যাম্পায়ার আছে। ভ্যাম্পায়াররা এক মাইল দূর থেকেই বুঝতে পারে তাদের অস্তিত্ব। চন্দ্রাকে রেখেই বামদিকে হাটলো চার্লস। এদিক দিয়ে নিশ্চই চন্দ্রাকে আক্রমণ করতে কোন ভ্যাম্পায়ার আসছে। কারন তার বাবা এ কথা জানার পর অবশ্যই চন্দ্রাকে মেরে ফেলার নির্দেষ দিবে। চার্লস এর ধারনাই সঠিক। এক শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার আসছে কিন্তু প্রিন্স চার্লস এর সামনে সে কিছুই না। চার্লস শুধু নিজের নখ বিধিয়ে দিয়েই ওকে মেরে ফেলে।
এদিকে চন্দ্রা সেই বটগাছের কাছে পৌছে যায়। বটগাছটা ভালো করে দেখেও কোন গর্ত দেখতে পায়না চন্দ্রা। তখনি ওর হাতের আংটিটা দিয়ে একটা নীল আলো বের হয়। আলোটা নিচে পরতেই চন্দ্রা একটা গর্ত দেখতে পায়। সেখানে পা দিতেই একটা গুহার আকার ধারন করে। চন্দ্রা গুহার মধ্যে দিয়ে ঢুকে দেখে এগারটা গুহামুখ। সবগুলো দেখতে একই রকম। চন্দ্রা বুঝতে পারেনা কোনটা দিয়ে ঢুকবে। ফাদার তো কিছু বলে দেয়নি। আংটিটা সামনে বাড়িয়ে ধরতেই একটা নীল আলো একটা গুহাকে আলোকিত করে দিল। চন্দ্রা বুঝতে পারলো এটাই সেই পথ। চন্দ্রা ভিতরে ঢুকতেই সব অন্ধকার। অথচ ও চলার পথ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। চারদিক থেকে বীণ বাজার মোহনীয় সুর আসছে। আবছা আলোয় চন্দ্রা দেখতে পেল সামনে একটা রাজপ্রসাদ। হঠাত করেই বিনের শব্দ থেমে গেল। এক ঝটকা বাতাস এসে পুরো শরীরে শিহরন লাগিয়ে দিল। রাজপ্রসাদ আলোকিত হয়ে উঠেছে। সদর দরজা ক্যাচক্যাচ করে খুলে গেল। চন্দ্রা ভিতরে ঢুকে সেই অস্পষ্ট অবয়বটি দেখতে পেল। প্রায় চন্দ্রার মতই একটি মহিলা।
-আপনি কে? আকস্মিকভাবে চন্দ্রার মুখ থেকে বের হয়ে যায়।
-আমি তোর মা। কাছে আয় চন্দ্রা মা আমার। এত বছর তোর জন্য অপেক্ষা করেছি।
চন্দ্রা একদৌড়ে মায়ের কাছে যেতে চায়। তখনি মনে পড়ে ফাদারের কথা। মনি ছাড়া নাগপুরীতে যাওয়া যাবে না। এটা নিশ্চই কোন মায়াজাল। চন্দ্রা আস্তে করে পাশ কাটিয়ে যায়। পৌছে যায় নাগপুরীর পেছনে দিঘীর কাছে। চন্দ্রা দিঘীতে নামে। এক ডুবে দিঘির চলে যায় কিন্তু পাতালপুরীর কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here