গল্প – #চাচাতো_বোন_যখন_বউ,পর্ব-০৮,০৯
✍️ #লেখক_আহমেদ_রাহী
০৮
” ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আপু এখনও বসে আছে।
তখন আমি বললাম..
– চলেন ?
– হুম চল ।
” রুমে থেকে বের হবো তখনি আপু আমাকে ? শক্ত করে হাত চেপে ধরে নিয়ে গেলো । আমি কিছু বুঝলাম না । এসব দেখে সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমরা এলিয়েন ।
সবার কাছে যেতেই দেখি সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। এসব দেখে আমার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করলো ।আর নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে।
কিন্তু কি আর করার মাথা নিচু করে টেবিলে বসে পড়লাম। তার পর শুরু হলো জামাই আদর । জীবনে প্রথম জামাই আদর পাচ্ছি। সবাই ওঠার পর ওঠা খাওয়াচ্ছে। আর আমি বলির পাঁঠার মতো খেয়ে যাচ্ছি। কোনো রকম জামাই আদর খেয়ে রুমে চলে এলাম। এসে শুয়ে পড়লাম । শরীর আর নরাতে পারছি না ।
আপনাদের একটা কথা বলি ? সবাই বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যদি যান তাহলে তার এক মাস আগে থেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে যাবেন । তা না হলে আমার মতো অবস্থা হবে । এবার বলতে পারেন যদি একমাস আগে থেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেই তাহলে আমরা তো মরে যাবো ?
এইটার উওর খুব সুজা । খিদা যখন লাগবে তখন অল্প খেয়ে নিবেন । এবার প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আমার বিয়ে আমি খাবো না ? উওর খুব সুজা। না খেয়ে রোজা রাখবেন । যাই হোক সাবধানে শ্বশুর বাড়ি যাবেন। তখন আপু রুমে আসলো । এসে আমাকে বলতে লাগলো ?
– কি রে জামই আদর কেমন হলো?
– আর জামাই আদর , তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না তাহলে এটা জামাই আদর কিভাবে হলো।
– বেশি কথা বলিস কেনো?
– কোথায় বেশি কথা বললাম?
” কথা শেষ না হতেই আপু চলে গেলো ? তখন রুমে শালিকাদের আগমন।
– দুলাভাই কি করেন?
– ওই তো দেখতে পাচ্ছো কি করছি?
– হুম দেখছি? আচ্ছা দুলাভাই আপনে না কি গল্প লিখেন ?
– কে বলছে?
– দেখলাম । এবার একটা গল্প শুনাতে হবে ?
” বলেই সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করলো । কি আর করার এখনতো শুনাতে হবে ।
– আচ্ছা তোমাদের একটা কবিতা শুনাই ?
– হুম বলেন ?
কবিতার নাম
শালা আমিতো অবাক
______ ______ _____ _____
– নিশিরাতে জেগে দেখি,
গাছের ডালে কাক,
শালা আমিতো অবাক!!
– চোর ঢুকেছে ঘরের ভেতর,
দরজা ছিলো ফাঁক?
শালা আমিতো অবাক!
– মোবাইল নিলো,টিভি নিলো,
রিমোট না হয় থাক?
শালা আমিতো অবাক!!
– পাচ্ছে যা নিচ্ছে ভরে, দুই হাতেরই মুঠোয় করে,
চোরটা তো আচ্ছা খারাপ
শালা আমিতো অবাক!!
– সব মালামাল বস্তা ভরে,চোর
পালালো চুরি করে, যাক না চলে যাক,
শালা আমিতো অবাক!!
– মধ্যরাতে অন্ধকারে,
কুত্তা ডাকে জোরে জোরে, শিয়ালরা দেয় হাক?
শালা আমিতো অবাক!!
– ভয়ে শরীর শিউরে ওঠে,
না জানি আজ কি যে ঘটে?
আবার ডাকে কাক?
শালা আমিতো অবাক!
হয়নি রাতে তেমন কিছু !
কোন ভূতই নেয়নি পিছু..!
বেঁচে গেছি যাক।
শালা আমিতো অবাক!
– সকালে দেখি পুরো পাড়া, চিল্লাচিল্লি করছে তাঁরা
চোরটা নাকি পড়ছে ধরা, চোরের
মাথায় টাক,
শালা এবারতো আমি পুরাই অবাক…!!
[ কবিতা লিখছেন : সোহাগ হাসান ]
“এটা শুনে সবাই হাসতে হাসতে মরে যাওয়া মতো অবস্থা । এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ দিন । আজ আমরা বাড়ি ফিরলাম। কথায় বলে না হাসির পর কান্না আসে । তেমনি শুরু হলো আমাদের সংসারে টানাটানি। দোকান নেই আব্বু কোনো কাজ করে না এমনি আমি ও কাজ করিনা। বলে না বসে বসে খেলে রাজার রাজত্বে ও শেষ হয়ে যায়। তেমনি আমাদের জমানো টাকা ও শেষ হতে শুরু করলো । সংসারে অনেক টানাটানি। এসব আর ভালো লাগছে না । তাই আফিকুল এর কাছে এলাম।
– দোস্ত আমার চাকরির কি করলি ভাই ?
– হুম হয়েগেছে।
– জয়েন কবে থেকে করতে হবে?
– কাল এক থেকে জয়েন করবি ।
– ঠিক আছে। কিন্তু তুই অনেক বড় একটা উপকার করলি ভাই। ধন্যবাদ তোকে।
– আরে ধন্যবাদ দিতে হবে না । বন্ধু তো বন্ধুর বিপদে আপদে পাশে থাকা । আমার জায়গায় তুই থাকলে করতি না বল?
– হুম করতাম।
– আচ্ছা তুই পরিক্ষা ফিস দিয়েছিস?
– আমার হয়তো আর পড়ালেখা হবে না রে ..!!
– পড়ালেখা ছাড়বি কেন??
– তো কি করবো বল?
– জানি তোর কাছে টাকা নাই । তাই এই কথা বললি?
– আরে না ।
– আমি সব জানি । আমার কাছে নাটক করবি না। আমি তোর টাকা দিয়ে দিব ।
– ওকে দোস্ত ।
– আচ্ছা চল কলেজ গিয়ে সব দিয়ে আসি ।
– না দোস্ত এ সময় না । তুই গিয়ে আমার টাকা টা জমা দিয়ে দিস ।
– আচ্ছা ঠিক আছে । আমি যাচ্ছি পরে দেখা যাবে।
” এর পর আফিকুল চলে যায়। মনের মধ্যে একটু শান্তি অনুভব করতে লাগলাম। আফিকুল কে বিদায় দিয়ে বাড়ি চলে এলাম।
” রাতে সবার সাথে খাবার খেয়ে একটু ছাদে চলে এলাম। কিছুক্ষণ পর আমার কাঁধে কেউ হাত রাখলো । চেয়ে দেখি আব্বু ..
– আব্বু কিছু বলবা?
– আসলে কিভাবে যে বলবো?
– বল তো ?
– তানিশার রেজিস্ট্রেশন এর টাকা দিতে হবে বাবা।
– কতো টাকা লাগবে?
– ৬ হাজার টাকার মতো লাগবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কবে দিতে হবে?
– কালকের পরের দিন ।
– আচ্ছা ঠিক আছে কালকে দিয়ে দিব।
– ঠিক আছে।
– আব্বু তুমি এভাবে কান্না করছো কেন ?
-এমনি বাবা ..
– বলেই আব্বু কান্না করতে করতে চলে গেল। আব্বুর কান্না দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না নিজেও কান্না করে দিলাম। আব্বু চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ ছাদে রইলাম। তার সেখান থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
” সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম। কাউকে কিছু না বলে অফিসে চলে এলাম। আগে থেকেই সব কিছু বলা ছিল তাই সুজা জয়েন করে ফেললাম। তার পর ম্যানেজার স্যারের কাছে এলাম।
– আসতে পারি স্যার?
– আরে রাহী আসো ?
– স্যার আমার কাজ টা কি জানতে পারি ।
– হুম অবশ্যই।
– আমার কাজ টা কি?
– তোমার কাজ সেল করা ।
– ঠিক আছে স্যার ।
– আর হ্যা প্রতিদিন সকাল ৮ টায় আসতে হবে দেড়ি হলে বেতন থেকে টাকা কাঁটা যাবে।
– ঠিক আছে স্যার।
” বলেই একটা গাড়ি সাথে চালক বেরিয়ে পড়লাম। সকালে কিছু খাওয়া হয়নি । তাই এক দোকানে সেল করে চা আর বিস্কুট খেতে লাগলাম। আর বেশি কিছু খেলাম না । কারন আমার কাছে টাকা নেই ! অন্য কিছু খেলে আর দুপুরে কিছু খাওয়া হবে না । সেল করতে করতে কখন যে দুপুর হয়ে গেছে খেয়াল ওই নেই। দুপুরের খাবার খেয়ে আবারো সেল করতে লাগলাম। সেল করা শেষ করতে করতে রাত হয়ে গেল ।গাড়ি জমা দিতে ফোন এর দোকানে চলে এলাম। আমার দুইটা ফোন ছিল তাই একটা বিক্রি করে দিলাম। ১০ হাজার দিয়ে বিক্রি করে দিলাম। তার পর বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে আব্বুর কাছে এলাম।
– আব্বু টাকা ?
– কিসের টাকা বাবা ?
– তোমার মেয়ের রেজিস্ট্রেশন এর ফিস ।
” আমি আর কিছু না বলে আব্বুর কাছে টাকা দিয়ে রুমে চলে এলাম। একটু পর আপু মানে তানিশা খাবারের জন্য ডাক দিল। সবার সাথে খাবার খেয়ে ছাদে চলে গেলাম। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর লাগছে। এসব ভাবছিলাম তখন কেউ কাঁদে হাত দিল । তাকিয়ে দেখি আপু।
– কিছু বলবে?
– টাকা তুই দিয়েছিস না ?
– না মানে ।
– তুই দিয়েছিস নাকি সেটা বল ?
– হুম আমি দিয়েছি কেনো?
– তুই এতো টাকা কোথায় পেলি?
– আমার ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি।
– কেনো?
-জানিনা।
– জানিনা মানে কি ?
– আমার ভালো লাগছে না আমি ঘুমাব ।
” বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম। আর বেশি কথা বললাম না । কথা বললে হয়তো কথা আরো বেড়ে যেতো। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
নামাজের সময় ছিল তাই নামাজ টা আদায় করে নিলাম। সকালে সবার সাথে নাস্তা করতে বসে পড়লাম। হটাৎ করে তানিশা আপু বললো…
– আব্বু আমি একটা কথা বলি?
– হুম মা বলো ।
– বলছিলাম কি রাহীতো একাই চাকরি করে এখন সংসার চালায় । আর তাতে ওর অনেক কষ্ট হয় !আমি বলি কি আমি যদি একটা চাকরি করি তাহলে ওর কষ্ট একটু কম হত ।
– এই পরিবারের আর কারো ইনকাম করতে হবে না । আমি এখনো মরে যাইনি। মরে গেলে করো ।
” বলে সেখান থেকে রুমে চলে এলাম। আসলে আমি চাইনা তানিশা আপু কোনো কাজ করুক। আমি রেডি হয়ে অফিসে চলে এলাম। প্রতিদিন এর মতো আজকে একটা চালক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেল করতে। সেল করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো । তখন সাথে থাকা সোহাগ ভাই বললেন …
– ভাই চলেন কিছু খেয়ে আসি।
– হুম চলো
” দোকানে বসে পাউরুটি খাচ্ছিলাম। সামনে চেয়ে দেখি কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আপু ওর ফ্রেন্ড দের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। তাই আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে সোহাগ ভাইকে নিয়ে চলে এলাম। তার পর আবার দোকানে সেল করতে লাগলাম। সেল করতে করতে রাত হয়ে গেল গাড়ি জমা দিয়ে হাঁটছিলাম পকেটে হাত দিয়ে দেখি টাকা নেই । তাই বাধ্য হয়ে হাতের ঘড়িটা বিক্রি করে দিলাম। বাড়ি এসে সুজা রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে পড়লাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে আসি কারণ আমার মন খারাপ থাকলে ছাদে এসে সময় কাটাই । আর চাঁদ দেখতে থাকি। অনেক সময় থাকার পর রুমে আসলাম। খেতা বালিশ নিয়ে নিচে শুতে যাবো তখনি ?
– একটা কথা বলতাম ..
চলবে….?
গল্প – #চাচাতো_বোন_যখন_বউ ( পর্ব-০৯ )
✍️ #লেখক_আহমেদ_রাহী
________________________
– একটা কথা বলতাম ?
– হুম বলেন ।
– তুই উপরে ঘুমা আমি নিচে ঘুমাই ।
– আমি কাপুরুষ নয় ? একটা মেয়েকে নিচে ঘুমাতে দিয়ে আমি উপরে ঘুমাব ! আপনে ঘুমান ।
” আর কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আপু গোসল করে আসছে । এটা দেখে তো আমি আপুর উপরে আবারো ক্রস খাইছি।ভেজা চুলে আপুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না। আপু আমার দিকে তাকাতেই আমি ঘুমের ভান ধরে রইলাম। তখন আপু বললেন ..
– কি উঠবি না আর কত ঘুমাবি সবাই নাস্তা করার জন্য অপেক্ষা করছেন ।
– হুম উঠছি। তুমি যাও?
” তার পর আপু চলে যায়। আসলে আপুকে যতো দেখছি ততই আপুর প্রতি ফিলিংস হচ্ছে। আমার কপালে হয়তো বউয়ের ভালোবাসা নেই । জীবন টা বেদনা আপু কেনো আমার ফিলিংস টা বুঝে না। ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে নাস্তা শেষ করে রুমে এসে শুয়ে ছিলাম। আজকে শুক্রবার তাই কাজ নাই ।
একটু পরে আপু আসলো । ওকে দেখে কেমন যেনো লাগলো । মনে হয় অস্বস্তিত আছেন ।
– আপনার কি কিছু হয়েছে?
– কই নাতো ।
– সত্যি বলছেন তো।
– হুম ।
– মিথ্যা বলছেন না তো ?
– মিথ্যা বলতে যাবো কেনো?
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আচ্ছা একটা কথা বলি ?
– হুম বলেন ?
– আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবি?
– কত টাকা ?
– ২০০ টাকা ।
” ওই দিন হাত ঘড়ি বিক্রি করে যা পেয়েছিলাম ওই টাকা আপুকে দিয়ে দিলাম। আজকে ছুটি তাই একটু ঘুম দিলাম। বিকালে একটু ঘুরতে বের হলাম। বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে মাগরিবের আজান হয়ে গেলো তাই নামাজ টা আদায় করে রুমে চলে এলাম। রুমে আসতেই দেখলাম আপু বাথরুমে থেকে বের হচ্ছে। আপু কে দেখে একটু সন্দেহ হচ্ছে আজ এমন তো আগে কখনো মনে হয় নি ।
– এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
– এই একটু বাইরে ঘুরছিলাম ।
– আমাকে নিয়ে গেলি না কেনো?
– আপনাকে নিয়ে যাবো কেনো?
– কেনো আমি যেতে পারিনা বুঝি ?
– না আমার সাথে যেতে পারেন না । আমাকে তো স্বামী হিসেবে মানেন না ।
– তার সাথে ঘুরতে না যাওয়ার কি আছে ?
– ওকে সামনের ছুটির দিন নিয়ে যাবো ।
– লাগবে না আমি তোর সাথে যাবো না ।
– ওকে না গেলে আমার কি।আর কতো আছে যাওয়ার জন্য ।
– ওই কি বললি?
– কই কিছু না ।
– আমি যাবো।
– এখন না বললেন যাবেন না ?
– এখন যাবো তোর কোনো সমস্যা?
– না সমস্যা নেই ।
” তারপর রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন ভোর সকালে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নিলাম। তার পর একটু গ্রাম টা ঘুরে দেখতে লাগলাম। সকালের আবহাওয়া মনটা অনেক ভালো করে দেয় ।কতো সুন্দর লাগে সকাল বেলা । কিছুক্ষণ গ্রামটা ঘুরাঘুরি করে রুমে চলে এলাম। এসে দেখি আপু এখনও ঘুমিয়ে আছে । ভাবলাম ঠেকে দিবো কিনা । অতকিছু না ভেবে ডাক দিলাম..
– আপু উঠেন সকাল হয়ে গেছে?
-….
– আর কত ঘুমাবেন ?
- ওই আপু উঠবেন না ?
– কি হয়েছে আম্মু এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো?
– হেতি কয় কি আমি না কি তার আম্মু; আরে আমি রাহী ?
– ও তুই ?
– কখন থেকে ডাকছি?
– উঠছেন ওইতো না ।
– সরি ।
” বলেই আপু ফ্রেশ হতে চলে গেলো । সকালে নাস্তা করে কাজে চলে এলাম। দোকানে সেল দিতে দিতে একজায়গায় দাঁড়িয়ে গেলাম। আপুর মতো কাউকে দেখতে পাচ্ছি? একটু কাছে গিয়ে দেখি আসলেই ওটা আপু কিন্তু আপু এই জায়গায় কি করে ? দেখলাম একটা ফার্মেসি তে ঢুকলো সাথে চুটকি। তার পর কিছু একটা কিনে চলে গেলো । আমি বুঝতে পারছি কি নিয়ে গেছে আপু। ভাবছি এখন গিয়ে জিজ্ঞেস করবো কিনা। আপু সেখান থেকে চলে গেলো আমি ও সেল দিতে চলে এলাম। রাতে খাবার খেয়ে রুমে আসলাম । আর আপুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি আপু রুমে আসলো। চোখ মুখ কেমন যেন হয়ে গেছে। নিজেকে একটু সাহসী বানিয়ে বললাম…
– আপনার সাথে কিছু কথা ছিল ?
– বল
– আপনে আজ ১১ টার সময় কোথায় ছিলেন?
( আমার কথায় কিছু টা ভয় পেয়ে গেলো আপু)
– বান্ধবী দের সাথে ; কে কে কেনো?
– না এমনি। আপনে ঠিক আছেন তো?
– হুম ঠিকই তো আছি ।
– না আপনে ঠিক নেই । আমার কাছ থেকে কিছু কি লুকাতে চাচ্ছেন?
– কি লুকাবো আমি ? তুই কিসের কথা বলছিস?
– এইটার কথা বলছি ?
( প্যাকেট টা সামনে ধরে । আসলে আপনার হয়তো বুঝতে পারছেন না কিসের প্যাকেট এর কথা বলছি । ওইটা প্যাড ছিল অনেক কে হয়তো এখন বুঝতে পারছেন । এসব বলায় আপু কিছু টা লজ্জা পেয়ে যায়।
– লুকানো কি আছে এসব।জানি আপনি আমাকে স্বামী হিসেবে মানেন না। কিন্তু নিজের সমস্যার কথা তো বলতে পারেন । না এখনো আমাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেন নি ?
– না তেমন কিছু না । আসলে বলতে লজ্জা লাগছিলো।
– লজ্জার কি আছে এতে শুনি ? কবে থেকে শুরু হয়েছে?
– দুদিন হলো ।
– ওকে তুমি এখনে বসো আমি আসছি ।
( আপুর জন্য গরম পানি করে নিয়ে আসলাম। )
– কি ওগুলো?
– আপনার জন্য গরম পানি নিয়ে এসেছি।
– তুই এতো কষ্ট করতে গেলি কেনো? আমি করে নিতাম।
– হুম তা তো জানিই কতো ব্যাথা সহ্য করে হাঁসি মুখে কথা বলছেন । আপনার আর কয়েক দিন কিছু করতে হবে না রেস্ট নিন।
(তুই এতো ভালো কেন । সবার কতো খেয়াল রাখিস । আমার পিরিয়ড এর কথা শুনে এতো কেয়ার করছিস । যদিও তোকে স্ত্রী অধিকার দেই নি । যদি দিতাম আরো কত কিছু করতি আমার জন্য। সরি রাহী। আমি জানি তুই অনেক ভালো । তোর মতো স্বামী সবার কপালে জোটে না । কিন্তু আমি কেন যে তোকে মেনে নিতে পারছি না । আপু মনে মনে বলতেছে।)
– কি ভাবছেন?
– কিছু না তুই ঘুমিয়ে পর ?
– না যদি আপনার কিছু লাগে?
– লাগবে না দরকার হলে তোকে ডাক দিবো ।
– ওকে
” তার পর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন আর কাজে যাই নি । আপুর শরীর টা খারাপ হয়ে পড়ছিল । তাই সারাদিন আপুর পাশে ছিলাম। যখন যেটা লাগে সব করলাম। ইশ যদি আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতো তাহলে এই মুহূর্ত আর কতো সুন্দর হতো। আমার কপালে টাই খারাপ। আচ্ছা ও কি বুঝে না আমি ওকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। এক মুহূর্ত ভালো লাগে না আপুকে ছাড়া। রাতে আবার আপুর জন্য গরম পানি করলাম । তার পর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। আমিও ঘুমাতে আসলাম।
– রাহী..
– হুম বলেন?
– তোকে একটা কথা বলার ছিল ?
– কি??
– আমি প্রথম দিন তোকে একটা কথা বলেছিলাম।আমি তোকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না ।
– হুম
– কিন্তু এতো দিন তোকে কাছে থেকে দেখে । তোর কেয়ার গুলো দেখে সত্যি আমি তোকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ তুই আমাকে তোর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ কর ?
– আমি ও তো আপনাকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি।
– কি?? এতো দিন বলিস নি কেনো?
– আমি কি জানতাম আপনি ও আমাকে ভালোবাসেন ।
– এখন তো জানলি?
– হুম
– এখন ও কি আপনি বলবি?
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করে বলবো । ( আপুর কাছে এগিয়ে গেলাম)
– ওই ওদিকে আসছিস কেন?
– আপনি টাকে তুমি করতে হবে তো ?
” আপুর এমন কথা শুনে আমার তো খুশিতে হিরো আলম এর গান লাগাই নাচতে ইচ্ছে করতেছে । মনে সাহস নিয়ে আপুর ঠোঁট এর কাছে আমরা ঠোঁট এক করতে যাবো ঠিক তখনি?
– ঠাসসসসসসসস?
” চমকে উঠেছিলাম , আপু আমাকে থাপ্পড় মারলো কেনো? তখনি চোখ খুলে দেখি এইটা ছিল স্বপ্ন । মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলাম। এটা যদি বাস্তবে হত তাহলে কেমন হত। কিন্তু ওই যে আমার কপাল খারাপ।
চারদিকে তাকিয়ে দেখি সকাল হয়ে গেছে। বিছানায় চোখ যেতেই দেখলাম আপু কতো সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। ছোট বাচ্চা দের মতো করে। দেখলেই তো পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। কিন্তু কিছু করার নেই। এতো রোমান্টিক হওয়া আমার জন্য মানায় না তাই গিয়ে আপুকে ডাক দিলাম।
– আপু উঠোন সকাল হয়ে গেছে?
– হুম
– আপনার শরীরে কেমন আছে এখন ?
– ভালো
(আপুকে তুলে আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে চলে এলাম। দেখি আব্বু বসে আছে। )
– রাহী তোর সাথে কিছু কথা আছে?
– বলো আব্বু।
– আমাদের দোকানটা নতুন করে শুরু করবো ভাবছি।
– হুম আব্বু এটাতো ভালো কথা।
– হুম দোকানটা চালু হলে তোকে আর চাকরি করতে হবে না। পড়ালেখা কমপ্লিট করবি আর তানিশা মার খেয়াল রাখবি। ।
– আব্বু পরেরটা পরে দেখা যাবে। আগেতো শুরু করো?
-হুম
” এভাবেই আমাদের জীবনটা চলছিল । আপু আগে থেকে বেশি আমার উপর রাগ দেখায় আবার অধিকার ও কাঁটায় মনে হয় যেনো সত্যি আমি ওর বর । কখনো মনে হয় মেনে নিয়েছে আবার কখনো মনে হয় এগুলো সবাইকে দেখানো জন্য করছে ।একদিন আপু বললো
– চল আজকে আমরা ঘুরতে যাই?
– কোথায় যাবেন?
– চা বাগান দেখতে যাই।
– আমার ভালো লাগছে না ?
– কি ? আরেক বার বল ? দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি।
– আচ্ছা চলেন।
– এইতো গুড বয়।
” এ কেমন মেয়ে রে বাবা। একবার রাগ দেখায় আবার রাগ নেই সব শেষ হয়ে যায় । ও আল্লাহ এ কেমন মেয়ের পাল্লায় ফেললে। স্বামী হিসেবে মানে না কিন্তু স্বামী অধিকার ঠিক কাঁটায়। মন চায় কচু গাছের লগে পাশ দিয়ে মরে যাই । আল্লাহ আমায় উঠাই লও। আমি রেডি হয়ে আপুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। মেয়েদের এই একটাই জিনিস । কোথাও যাইতে হলে মেকআপ নামের জিনিস তাদের দিতে হইবো । কতো সময় ধরে অপেক্ষা করতেছি আসার কোনো নামেই নেই।
– হলো আপনার?
– এইতো চল
– আপুর দিকে তাকাতেই আবারো ক্রস খেলাম। নীল জামা সাথে মিচিং করে ছুরি , চোখে কাজল । অসম্ভব সুন্দর লাগছে। পরির মতো লাগছে।
( কি আর বলমু ভাই । এগুলো শুধু নাটকে আর গল্পে সম্ভব । জীবনে তো একটা পরির মতো সুন্দর মাইয়া দেখলাম না । পরি নামের পেত্নি দেখছি )
– কি হলো হাঁ কে কি দেখছিস?
– কই নাতো । চলো।
চলবে…?